প্রধানত কৃষি-নির্ভর গ্রামীণ জনপদের বিপন্ন জনগোষ্ঠির কল্যাণে সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রম বাস্তবায়নে বাংলাদেশের রয়েছে সুদীর্ঘ অভিজ্ঞতা ও অনুসরণীয় সাফল্য। তবে বাংলাদেশ ইতোমধ্যেই নিম্ন-মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হয়েছে এবং অল্প সময়ের মধ্যে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে হতে যাচ্ছে। এই নতুন আর্থসামাজিক বাস্তবতার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে তাই সামাজিক সুরক্ষা কার্যক্রমকে ঢেলে সাজানো দরকার। সোমবার উন্নয়ন সমন্বয়ের আয়োজনে ‌‌‘সামাজিক সুরক্ষায় সংস্কার প্রসঙ্গ’ শিরোনামে প্রাক-বাজেট ওয়েবিনারে এমন অভিমত ব্যক্ত করেন আলোচকরা। 

ওয়েবিনারের ধারণাপত্র উপস্থাপনায় উন্নয়ন সমন্বয়ের গবেষণা পরিচালক আব্দুল্লাহ নাদভী বলেন, জাতীয় বাজেটের ১৭ শতাংশের বেশি সামাজিক সুরক্ষায় বরাদ্দ দেয়ার কথা বলা হলেও এই বরাদ্দের এক-তৃতীয়াংশ চলে যাচ্ছে সরকারি কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের অবসর ভাতা দেয়ায় এবং সঞ্চয়পত্রের সুদ বাবদ। প্রকৃতপক্ষে দরিদ্র ও বিপন্ন নাগরিকদের জন্য সামাজিক সুরক্ষার বরাদ্দের মাত্র ১৫ শতাংশ বিনিয়োজিত হচ্ছে বলে জানান তিনি। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বাংলাদেশের জিডিপির মাত্র ০.

৭ শতাংশ বিনিয়োগ করা হচ্ছে সামাজিক সুরক্ষা বাবদ, যেখানে প্রতিবেশী দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এ অনুপাত ১.১ শতাংশ থেকে ১.৫ শতাংশ পর্যন্ত। 

প্যানেল আলোচনায় বাংলাদেশে মাথাপিছু আয়বৃদ্ধির পাশাপাশি আয়বৈষম্য বৃদ্ধির দিকে মনোযোগ আকর্ষণ করেন সমাজতাত্ত্বিক এবং বিআইজিডি-এর রিসার্চ ফেলো খন্দকার সাখাওয়াত আলী। বিদ্যমান সামাজিক সুরক্ষা ব্যবস্থায় প্রধানত কৃষি-নির্ভর পরিবারের দিকে নীতি-মনোযোগ দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে সাখাওয়াত আলী বলেন, কৃষিতে এখনও শ্রমশক্তির বৃহত্তম অংশটি নিয়োজিত থাকলেও শিল্প ও সেবা খাতে নিয়োজিত শ্রমশক্তি দ্রুত বাড়ছে। তাই এই দুই খাতের ওপর নির্ভরশীল প্রান্তিক পরিবারগুলোর জন্য নতুন সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির ওপর জোর দেন তিনি। 

নদী বিশেষজ্ঞ এবং রিভারাইন পিপল-এর সংগঠক শেখ রোকন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বিশেষ ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠিকে সুরক্ষা দেয়ার ওপর জোর দেন। তিনি বলেন, চরাঞ্চলের মানুষ আর্থ-সামাজিকভাবে বিশেষ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় থাকেন। তাদের বিশেষ চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবিলায় সহায়ক হয় এমন সুনির্দিষ্ট সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি গ্রহণ করা একান্ত জরুরি বলে মত দেন তিনি। 

সিডব্লিউসিএস-এর সভাপতি অধ্যাপক ইশরাত শামীম বলেন, শ্রমশক্তির প্রায় ৮৫ শতাংশ যেহেতু অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে নিয়োজিত, তাই অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক পরিবারগুলোর সামাজিক সুরক্ষায় নজর দিতে হবে। গ্রামাঞ্চলের অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিকদের কাছে পৌঁছানো সহজ হলেও, নগরাঞ্চলে শিল্প ও সেবা খাতে নিয়োজিতদের চিহ্নিত করায় অনেক রকম চ্যালেঞ্জ রয়েছে। তাই নগরাঞ্চলের সামাজিক সুরক্ষার সম্ভাব্য উপকারভোগীদের চিহ্নিত করতে আলাদা ডাটাবেজ গড়ে তোলার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। 

অনুষ্ঠানে উন্মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশ নেন চর, হাওড় ও পার্বত্য অঞ্চলের প্রান্তিক জনগোষ্ঠির প্রতিনিধি, স্থানীয় সরকার প্রতিনিধি, উন্নয়ন বিশেষজ্ঞ এবং বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের শিক্ষার্থীরা। ওয়েবিনার সঞ্চালনা করেন উন্নয়ন সমন্বয়ের জ্যেষ্ঠ প্রকল্প সমন্বয়কারি এবং ন্যাশনাল চর অ্যালায়েন্সের সদস্য সচিব জাহিদ রহমান। 

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

৫ আগস্টের মধ্যে জুলাই সনদ না হলে অবরোধের হুঁশিয়ারি আপ বাংলাদেশের

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির দাবিতে অন্তর্বর্তী সরকারকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছে ইউনাইটেড পিপলস (আপ) বাংলাদেশ। আজ শুক্রবার রাজধানীর শাহবাগে গণজমায়েত থেকে এ ঘোষণা দেওয়া হয়। দাবি পূরণ না হলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ কর্মসূচি পালনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে সংগঠনটি।

‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে জুলাই ঘোষণাপত্র ও সনদের দাবি’ শীর্ষক গণজমায়েতে অংশ নেন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আসা আপ বাংলাদেশের নেতা–কর্মীরা। জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পার হলেও জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারি না হওয়াকে অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতা হিসেবে দেখছেন তাঁরা।

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক আলী আহসান জুনায়েদ বলেন, ‘আমরা একটি বৈষম্যহীন বাংলাদেশ চেয়েছিলাম। কিন্তু আহতদের ভাগ্যের পরিবর্তন হয়নি। আমরা দেখেছি, যারা জুলাইয়ের নেতৃত্বে ছিল, জুলাইয়ের পরে তাদের পকেট ভারী হয়েছে। আমি বলতে চাই, আপনাদের এই পকেটের হিসাব দিতে হবে।’

অন্তর্বর্তী সরকারকে উদ্দেশ করে আলী আহসান বলেন, ‘আপনারা জুলাই ঘোষণাপত্র দিতে পারবেন কি পারবেন না, তা জানান; না পারলে আমরা আছি। যারা জীবন দিতে প্রস্তুত ছিলাম, বাংলাদেশের (সেই) ২০ কোটি জনগণ জুলাই ঘোষণাপত্র জারি করবে।’

আপ বাংলাদেশের আহ্বায়ক বলেন, ‘৩৬ জুলাইয়ের মধ্যে যদি জুলাই ঘোষণাপত্র না হয়, তাহলে ৬ আগস্ট থেকে দেশজুড়ে অবরোধ শুরু হবে। এ সরকারের কোনো হুমকি আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না।’

গণজমায়েতে অংশ নিয়ে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরীফ ওসমান বলেন, আপ বাংলাদেশের নেতারা এখনো কোনো প্রটোকল ছাড়া রাস্তাঘাটে হাঁটেন। কিন্তু তাঁরা যেদিন প্রটোকল নিতে শুরু করবেন, সেদিন থেকে তাঁদের বিরুদ্ধেও তিনি কথা বলা শুরু করবেন।

জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্র জারির আহ্বান জানিয়ে শরীফ ওসমান বলেন, এখন পর্যন্ত বিদ্যমান আইনি কাঠামোয় জুলাই শহীদেরা রাষ্ট্রদ্রোহী। তাঁদেরকে আইনি স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। আজকের মধ্যে সরকার দিনক্ষণ না জানালে আগামী ৩ তারিখ (আগস্ট) ইনকিলাব মঞ্চের উদ্যোগে কফিন মিছিল নিয়ে সচিবালয় অবরোধ করা হবে।

বিগত এক বছর থেকে একটি দুর্বল সরকার দেশ চালাচ্ছে উল্লেখ করে আপ বাংলাদেশের সদস্যসচিব আরেফিন মোহাম্মদ বলেন, ‘জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পূর্তিতে ঘোষণাপত্রের জন্য আমাদের আবারও গণজমায়েত করতে হচ্ছে। এর চেয়ে লজ্জাজনক আর কী হতে পারে?’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী এ বি জুবায়ের বলেন, ‘আমরা যে মৌলিক সংস্কার চেয়েছিলাম, এখনো তার কিছুই হয়নি। এখনো শহীদ পরিবারের পুনর্বাসন ও আহতদের চিকিৎসা নিশ্চিত হয়নি। আমি উপদেষ্টাদের উদ্দেশে বলতে চাই, অবিলম্বে জুলাই সনদ ঘোষণা করুন। আপনাদের কাছে আমাদের চাওয়া–পাওয়া খুব বেশি নেই।’

গণজমায়েতে র‌্যাপ গান পরিবেশন করেন আপ বাংলাদেশের কেন্দ্রীয় সদস্য আহনাফ তাহমিদ। স্বাগত বক্তব্য দেন জুলাই শহীদ ওসমান পাটোয়ারীর বাবা আবদুর রহমান। গণজমায়েতে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন আপ বাংলাদেশের প্রধান সমন্বয়কারী রাফে সালমান রিফাত, প্রধান সংগঠক নাঈম আহমেদ, মুখপাত্র শাহরিন সুলতানা প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ