রেফ্রিজারেটরে খাবার সংরক্ষণের নিয়ম
Published: 25th, March 2025 GMT
কাঁচা মাংস সংরক্ষণ
অনেকে ফ্রিজে সংরক্ষণ করার আগে মাংস ভালোভাবে ধুয়ে নেয়। শুনতে বেশ অবাক লাগলেও আসলে এর কোনো প্রয়োজন নেই। সঠিকভাবে সঠিক তাপমাত্রায় রান্না করলে মাংসে থাকা প্যাথোজেন বা ব্যাকটেরিয়া মারা যাবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের দ্য সেন্টারস ফর ডিজিস কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন সতর্ক করে বলেছে, মাংস ধোয়ার ফলে রান্নাঘরের সিংক, কাউন্টারটপ ও অন্যান্য জায়গায় জীবাণু ছড়িয়ে পড়তে পারে।
যেকোনো পশু–পাখির মাংস সংরক্ষণের আগে ৩ থেকে ৪ ঘণ্টা অপেক্ষা করতে হবে। এ সময়ের মধ্যে একটি ঝাঁঝরিতে রেখে মাংসের ভেতরের পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।
একবার ব্যবহারের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী ছোট ছোট অংশে ভাগ করে প্লাস্টিক ব্যাগ বা এয়ারটাইট কনটেইনারে রাখতে হবে।
ফ্রিজারের (মাইনাস ১৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার কম) নিচে সংরক্ষণ করলে মাংস দীর্ঘদিন ভালো থাকে। তবে মনে রাখতে হবে সংরক্ষিত মাংস তিন মাসের মধ্যে খেয়ে নেওয়াই উত্তম। এরপর সময় যত বাড়বে মাংসের গুণগত মান ও স্বাদ খারাপ হতে থাকবে।
ব্যবহার করার আগে মাংস ধীরে ধীরে ডিফ্রস্ট করা উচিত। হঠাৎ গরম পানিতে দিলে মাংসের স্বাদ ও গুণ নষ্ট হতে পারে।
কাঁচা মাছ সংরক্ষণ
কাঁচা মাছ বাজার থেকে এনে দ্রুত সংরক্ষণ করা উচিত।
মাছ সংরক্ষণের আগে ভালোভাবে ধুয়ে প্রয়োজনীয় টুকরো করে নিতে হবে। তবে ছোট বা মাঝারি আকৃতির মাছ গোটা সংরক্ষণ করাই শ্রেয়।
দীর্ঘমেয়াদি সংরক্ষণের জন্য মাছকে প্লাস্টিক ব্যাগে বা এয়ারটাইট কনটেইনারে ভরে ডিপ ফ্রিজে রাখা ভালো।
ছোট মাছ সংরক্ষণ করতে চাইলে হালকা লবণ মেখে ফ্রিজে রাখলে তা দীর্ঘদিন ভালো থাকে। চাইলে লবণের পাশাপাশি সাদা ভিনেগার বা লেবুর রস ও হলুদও মাখিয়ে রাখতে পারেন।
কাঁচা সবজি সংরক্ষণ
সবজি সংরক্ষণের আগে ভালোভাবে ধুয়ে শুকিয়ে নিতে হবে।
সবজিকে পেপার টাওয়েল বা কাগজে মুড়ে জিপার ব্যাগে সংরক্ষণ করা ভালো।
টমেটো, বেগুন, শসা, ঢ্যাঁড়সের মতো সবজি সাধারণত ফ্রিজের বাইরে রাখা যাবে।
ফুলকপি, বাঁধাকপি, ব্রোকলি এবং ক্যাপসিকাম এয়ারটাইট ব্যাগে রেখে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায়।
কাঁচা মরিচ বোঁটা ফেলে টিস্যুতে মুড়িয়ে বক্সে রেখে ২০-২৫ দিন সংরক্ষণ করা যায়।
এক মাসের বেশি সবজি সংরক্ষণ করতে চাইলে তা ভাপিয়ে বা ৫ মিনিট সেদ্ধ করে নিন। এরপর পানি শুকিয়ে এয়ারটাইট কনটেইনার বা জিপ ব্যাগে ডিপ ফ্রিজে সংরক্ষণ করুন।
শাকপাতা সংরক্ষণ
শাকপাতা খুব দ্রুত শুকিয়ে যায় এবং সতেজতা হারায়। তাই এগুলো সংরক্ষণের জন্য কিছু কৌশল অবলম্বন করা জরুরি।
শাকপাতা সংরক্ষণের আগে ভালোভাবে ধুয়ে পানি ঝরিয়ে নিতে হবে।
বেশি দিন ভালো রাখতে হলে কাগজ বা পাতলা কাপড়ে মুড়িয়ে প্লাস্টিক ব্যাগে রেখে ফ্রিজে রাখতে হবে।
স্প্রিং অনিয়ন বা পেঁয়াজকলি, ধনেপাতা, পুদিনাপাতা সংরক্ষণের জন্য কাচের বোতলে অল্প পানি দিয়ে রাখতে পারেন।
কিছু শাকপাতা যেমন পালংশাক বা লালশাক ২ থেকে ৩ মিনিট গরম পানিতে সেদ্ধ বা ব্লাঞ্চ করে ফ্রিজে সংরক্ষণ করলে তা দীর্ঘদিন ভালো থাকে।
সংরক্ষণের আগে জিপার ব্যাগের ভেতরে ছোট ছিদ্র করলে বাতাস চলাচল করতে পারে এবং শাকপাতা দ্রুত পচে না।
বাটা মসলা সংরক্ষণ
আদা, রসুন, পেঁয়াজ, মরিচ ইত্যাদি বেটে এয়ারটাইট কনটেইনারে রেখে ফ্রিজে সংরক্ষণ করা যায়। সাধারণ ফ্রিজে এটি দুই দিন রাখা যায়। ডিপ ফ্রিজে বাটা মসলা মাস দুয়েক পর্যন্ত ভালো থাকে।
তেল দিয়ে হালকা ভেজে নিলে বাটা মসলা অনেক দিন ভালো থাকে।
আলাদা কনটেইনারে সংরক্ষণ করলে প্রয়োজনে নির্দিষ্ট পরিমাণ ব্যবহার করা সহজ হয়।
বরফের ট্রেতে মসলা জমিয়ে ছোট কিউব বানিয়ে সংরক্ষণ করলে তা ব্যবহারের সময় সুবিধা হয়। চাইলে এর সঙ্গে সামান্য লবণ ও তেল মিশিয়ে নিতে পারেন।
রান্না করা খাবার সংরক্ষণ
রান্না করা খাবার সংরক্ষণের আগে সম্পূর্ণ ঠান্ডা করতে হবে।
খাবারকে ছোট ছোট ভাগে ভাগ করে এয়ারটাইট কনটেইনারে রাখা ভালো। প্লাস্টিকের বাক্স ব্যবহার এড়িয়ে চলা উচিত। এর বদলে কাচের কনটেইনারে খাবার সংরক্ষণ করুন। তবে একেবারে না পারলে ফুডগ্রেড প্লাস্টিকের বাক্স ব্যবহার করতে পারেন।
২-৩ দিনের বেশি সংরক্ষণ করতে চাইলে ডিপ ফ্রিজে রাখা উত্তম।
ভর্তা বা সালাদ সংরক্ষণ করতে চাইলে কাঁচা পেঁয়াজ ব্যবহার করা যাবে না। ভর্তার জন্য পেঁয়াজ ভেজে নিন। যে সালাদ সংরক্ষণ করবেন তাতে পেঁয়াজ দেওয়াই যাবে না। কাঁচা পেঁয়াজ দ্রুত খাবার নষ্ট করে দেয়।
ফ্রিজের ঠান্ডা খাবার গরম করার আগে কিছুক্ষণ ঘরোয়া তাপমাত্রায় রেখে নিতে হবে।
রেফ্রিজারেটরের যত্ন
এবার আসা যাক রেফ্রিজারেটরের যত্নের কথায়। যত্ন বলতে এর পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও সঠিক ব্যবহারের কথা বোঝানো হচ্ছে। এর ফলে রেফ্রিজারেটরের আয়ু দীর্ঘ হয় এবং এটি ভালোভাবে কাজ করে। নিয়মিত পরিষ্কার করলে এবং সঠিক তাপমাত্রা বজায় রাখলে খাবারের মান যেমন ভালো থাকে তেমন বিদ্যুৎ খরচও কম হয়। তাই রেফ্রিজারেটরের যত্ন নেওয়ার ব্যাপারে আমাদের সবার গুরুত্ব দেওয়া উচিত।
প্রতি ১৫ দিন পরপর রেফ্রিজারেটরের ভেতরের অংশ পরিষ্কার করুন। এ সময় পানির সঙ্গে সামান্য বেকিং সোডা ও ভিনেগার মিশিয়ে ব্যবহার করতে পারেন। এতে ফ্রিজ যেমন ভালোভাবে পরিষ্কার হবে, তেমন দুর্গন্ধও দূর হবে।
রেফ্রিজারেটরের ভেতরে ৩-৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা বজায় রাখুন। এতে খাবার ভালো থাকবে এবং বিদ্যুৎ সাশ্রয় হবে।
রেফ্রিজারেটরের ভেতরে অতিরিক্ত খাবার রাখলে বেশি এনার্জি ক্ষয় হয়। ফলে বিদ্যুৎ বিল বেশি আসে। এ ছাড়া এর ভেতরে বাতাস চলাচল বাধাগ্রস্ত হওয়ায় খাবার ঠান্ডা হতে পারে না।
ফ্রিজের দরজার রাবার সিল ভালোভাবে আটকানো আছে কি না, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকুন। এটি ঠিকমতো না আটকালে ঠান্ডা বাতাস বেরিয়ে যেতে পারে। এভাবেও বিদ্যুৎ খরচ বেড়ে যায়।
প্রতি ৩-৪ মাস পরপর রেফ্রিজারেটরের পেছনের কনডেনসার কয়েল ও কম্প্রেসর পরিষ্কার করুন। তবে নিজে নয়। এ ব্যাপারে দক্ষ ইলেকট্রিশিয়ান দিয়ে কাজটি করানো উচিত।
অনেক সময় লো-ভোল্টেজের কারণে রেফ্রিজারেটরের কর্মক্ষমতা কমে যায়। তাই প্রয়োজন হলে ভালো মানের ভোল্টেজ স্ট্যাবিলাইজার ব্যবহার করুন।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ব যবহ র কর পর ষ ক র র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
লাখপুরের রংবাহারি রাম্বুটান
১৯ জুলাই সকাল ১০টা। নরসিংদী জেলার রায়পুরা উপজেলার মরজাল বাজারে গাড়ি থেকে নামলাম। ততক্ষণে ব্যাপারীদের পাইকারি কেনাকাটা শেষ। মালপত্র বেঁধেছেঁদে গাড়িতে তোলা হচ্ছে। কিন্তু ফুটপাতে তখনো ভিড়। খুচরা ক্রেতারা পছন্দের জিনিস কিনতে দরদাম করছেন। ভিড়ের মধ্যে ঢুকে পড়লাম, দেখা যাক কী পাওয়া যায়।
কাঁঠালের দোকানে তেমন ভিড় নেই। লটকনের দোকান বেশি, বিক্রিও ভালো। আকার অনুযায়ী দাম। এখানে না এলে জানতামই না, এত বড় আকারের লটকন হতে পারে! এক গৃহস্থ টুকরিতে কলম্বো লেবু নিয়ে বসে আছেন। এই লেবু আকৃতি ও সুগন্ধের জন্য বিখ্যাত। আরেকটু এগিয়ে গিয়ে থামতেই হলো। কয়েকটি দোকানে সাজানো হলুদ আর লাল রঙের রাম্বুটান!
দেখতে ফুলের মতো আকর্ষণীয় রঙের এই ফল সবার নজর কাড়ছে। ক্রেতারা দাম জানতে চাইছেন। কেউ কেউ কিনছেনও। জানতে চাইলাম, এই রাম্বুটান কোথা থেকে এল? দোকানির উত্তর শুনে চোখ ছানাবড়া। নরসিংদীর কয়েকটি গ্রামেই নাকি ইদানীং চাষ হচ্ছে রাম্বুটান। দারুণ ব্যাপার। এ খবর জানা ছিল না।
কাছাকাছি দূরত্বে কোনো গ্রামে গেলে কি রাম্বুটানের বাগান দেখতে পাওয়া যাবে? এ প্রশ্নের উত্তর দিলেন স্থানীয় কৃষি উদ্যোক্তা মো. সুজন মিয়া। তিনি জানালেন,Ñকাছেই বেলাব উপজেলার লাখপুর গ্রামে চমৎকার একটি বাগান আছে।
আমরা দ্রুত বাগানের পথ ধরি। বাগানে যেতে যেতে মনে হলোÑ ঘন গাছপালার ছাউনির ভেতর দিয়ে ক্রমেই যেন হারিয়ে যাচ্ছি! এখানকার বেশির ভাগ গাছই লটকনের। বাগানগুলো এতই বড় যে এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত ভালোভাবে দেখা যায় না।
অল্প সময়ের মধ্যে পৌঁছে গেলাম লাখপুর গ্রামে। উয়ারী ও বটেশ্বর–লাগোয়া এই গ্রামে রাম্বুটানের বাগানে গিয়ে চমকে উঠি। বেশ বড় বড় অনেক গাছ। গাছে গাছে দুই রঙের রাম্বুটান। চমৎকার দৃশ্য।
এ রংবাহারি ফল দেখার জন্য সারা দিন অনেক মানুষ ভিড় করেন সেখানে। কেউ কেউ দেখছেন, আবার কিনছেনও। একটু সময় নিয়ে বাগানটি ঘুরে দেখি। ছয়-সাত বছর বয়সী সব গাছই ফলভারে আনত। পাকা ফলগুলো দেখতে রঙের ঝরনাধারার মতো, বহুবর্ণিল। বাগান থেকে তরতাজা কিছু ফল কিনি। মন ভরে ছবি তুলি।
একসময় রাম্বুটান চিনতাম না। ২০০৫ সালে হংকংয়ে বেড়াতে গিয়ে বন্ধু মোস্তাফিজুর রহমান শাহিনের বাসায় প্রথম এ ফল খাই। পরে কুয়ালালামপুর শহরের আশপাশে রাম্বুটানের অনেক গাছ দেখেছি। দুই বছর পর বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারে গাছভর্তি রাম্বুটান দেখে চমৎকৃত হয়েছিলাম। বীজ থেকে তৈরি চারাগুলো সেখানে প্রথম লাগানো হয় ১৯৯৮ সালে। প্রায় সাত বছর পর গাছগুলোতে ফল আসতে শুরু করে। আকৃতি ও স্বাদের দিক থেকেও ফলগুলো সমমানের।
বাগানে সুদর্শন হলুদ রঙের রাম্বুটান