সকালবেলায় চৈত্র মাসের বাতাস বইছে। মনু নদের ওপর আপনমনে উড়ছে কিছু ধূসর ডানার চিল। নদের হাঁটুজলে টানা হাতা জাল দিয়ে মাছ ধরছেন এক শৌখিন মাছশিকারি। বর্ষায় প্রাণকাঁপানো মনু নদের অবস্থা এখন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘আমাদের ছোট নদী’র মতো। জল শুকিয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। নদের বুকের ভেতর বালুর চর জেগেছে। দেখে মনে তো পড়তেই পারে ‘আমাদের ছোট নদী চলে আঁকেবাঁকে/ বৈশাখ মাসে তার হাঁটুজল থাকে.
মৌলভীবাজার শহরসংলগ্ন নদটির পাড়ে এই বসন্তের কালে অনেকগুলো চেনা-অচেনা ফুল ফুটেছে। যার কিছু এই অঞ্চলেই শুধু নয়, দেশেও নতুন। যেসব ফুল এদিকে এর আগে কোথাও ফুটেছে কি না, বলা মুশকিল। ফুটন্ত ফুলগুলো সকালবেলার মৃদু বাতাস ও আলোয় আরও উজ্জ্বল, ফোটার আনন্দে যেন আরও চনমনে হয়ে আছে। ফোটা ফুলকে ঘিরে গুনগুন করছে, উড়ছে কালো ভোমরার দল।
মৌলভীবাজার শহরের শান্তিবাগ ওয়াকওয়ে ধরে হাঁটতে গেলে একটু পরপরই কোনো না কোনো ফুলের দেখা মিলেছে। ফুটেছে চিরল সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে হলুদ কল্কে ফুল। পাতাঝরা ডালের কোথাও সাদা, কোথাও সাদা-গোলাপি কাঠগোলাপ ফুটে আছে। কোথাও হলুদ সোনার মতো ফুটে আছে অশোকমঞ্জরী। ওতে কালো ভোমরার দল টানা গুনগুন করছে। কোথাও ফুটেছে রক্তকাঞ্চন, ফুটেছে অর্কিড কাঞ্চন। আর আছে একাধিক রঙের রাধাচূড়া, তারাও হাসছে। সবাই যার যার মতো ফুটে আছে এই বসন্তের কালে।
শাখা-প্রশাখায় ফুটেছে গ্লিরিসিডিয়া। মৌলভীবাজারের শান্তিবাগ ওয়াকওয়েতেউৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
জ্বালানিসাশ্রয়ী ও পরিবেশবান্ধব হওয়ায় বর্তমানে বিশ্বব্যাপী বৈদ্যুতিক গাড়ির উৎপাদন ও ব্যবহার বাড়ছে। তবে এসব গাড়ি বাসা বা নির্দিষ্ট স্থানেই শুধু চার্জ করা যায়। ফলে দূরে ভ্রমণের সময় গাড়ির চার্জ শেষ হয়ে গেলে বিপদে পড়েন অনেকেই। এ সমস্যা সমাধানে তারের সংযোগ ছাড়াই বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম ১ দশমিক ৫ কিলোমিটার দীর্ঘ ‘ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক’ চালু করেছে ফ্রান্স। প্যারিসের উপকণ্ঠে চালু হওয়া সড়কটিতে চলাচলের সময় বিভিন্ন ধরনের বৈদ্যুতিক গাড়ি, বাস ও ভারী ট্রাকের ব্যাটারি স্বয়ংক্রিয়ভাবে চার্জ হয়ে যাবে।
বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার জন্য সড়কটিতে নিরবচ্ছিন্নভাবে ২০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হবে। প্রয়োজনে সেটি ৩০০ কিলোওয়াট পর্যন্ত পৌঁছাতে পারে, যা টেসলার ভি থ্রি সুপারচার্জারের মতো বিশ্বের দ্রুততম চার্জারগুলোর সমান শক্তি সরবরাহ করতে সক্ষম। এই সড়কের নিচে স্থাপন করা হয়েছে অসংখ্য তামার কুণ্ডলী। এসব কুণ্ডলী চৌম্বক ক্ষেত্র তৈরি করে, যা বিশেষ রিসিভারযুক্ত বৈদ্যুতিক গাড়িতে শক্তি স্থানান্তর করে। পদ্ধতিটি অনেকটা ওয়্যারলেস চার্জিং প্রযুক্তির মতো, যেখানে পাওয়ার ব্যাংক বা চার্জিং প্যাডে মোবাইল ফোন রেখে চার্জ নেওয়া হয়। চৌম্বক ক্ষেত্রের মাধ্যমে বিদ্যুৎ স্থানান্তর হওয়ায় ভারী বৃষ্টি, বরফ বা তুষারপাতেও চার্জিং প্রক্রিয়ায় কোনো ব্যাঘাত ঘটে না। দ্রুত চার্জিং সুবিধার ফলে গাড়ি ও ট্রাক এখন দীর্ঘ পথ পাড়ি দিতে পারবে, মাঝপথে চার্জ নিতে থামার প্রয়োজন হবে না। ফলে গাড়িতে বড় ও ভারী ব্যাটারি বহনের প্রয়োজনীয়তা অনেক কমে যাবে।
এরেনা ইভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, এই স্বয়ংক্রিয় চার্জিং সড়কে মাত্র কয়েক মিনিট চললেই বৈদ্যুতিক গাড়ির রেঞ্জ বা চলার সক্ষমতা উল্লেখযোগ্যভাবে বাড়ে। ফলে বৈদ্যুতিক গাড়ির দীর্ঘ যাত্রায় চার্জ ফুরিয়ে যাওয়ার আশঙ্কা সমাধানে প্রযুক্তিটি নতুন সম্ভাবনা দেখাচ্ছে। প্রযুক্তিটি যদি ব্যাপকভাবে চালু করা যায়, তবে তুলনামূলকভাবে হালকা, সাশ্রয়ী এবং কম ব্যাটারিসমৃদ্ধ বৈদ্যুতিক গাড়ি তৈরি করা সম্ভব হবে। এতে গাড়ির উৎপাদন খরচও কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।
প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ইলেকট্রিওনের তৈরি সড়কটির নকশাতেও রয়েছে বাড়তি সুবিধা। বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করার প্রযুক্তি রাস্তার ভেতরের অংশে থাকায় ক্ষয়ক্ষতির ঝুঁকি কম। ফ্রান্সের পরিবহন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ২০৩৫ সালের মধ্যে দেশজুড়ে প্রায় ৯ হাজার কিলোমিটার ওয়্যারলেস চার্জিং সড়ক নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে, যাতে বৈদ্যুতিক যানবাহন চলাচল আরও সহজ, কার্যকর ও পরিবেশবান্ধব হয়ে ওঠে।
সূত্র: ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস