রাতারাতি বড়লোক হওয়ার স্বপ্নে বেশির ভাগ তরুণ অনলাইন জুয়াতে ঝুঁকছেন। তাতে করে অনেকেই হারজিতের খেলায় মেতেছেন। এই জুয়াতে নেমে নিঃস্ব অনেকে। গুগলের তথ্য অনুসারে, রংপুর বিভাগে সবচেয়ে বেশি মানুষ এই ক্যাসিনোর একাধিক সাইট গুগলে খুঁজেছেন। সারা দেশের তুলনায় এখানকার সার্চের হার সবচেয়ে বেশি রংপুর বিভাগ থেকে, যার স্কোর ১০০ মধ্যে ১০০। রাজশাহী বিভাগ রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে, যার স্কোর ১০০ মধ্যে ৪৬। এরপর চট্টগ্রাম (৪১), খুলনা ও বরিশাল স্কোর (৩৬)।  

গুগল ট্রেন্ডস কী এবং এটি কীভাবে কাজ করে

গুগল ট্রেন্ডস হলো একটি ফ্রি অনলাইন টুল, যা গুগলে করা বিভিন্ন অনুসন্ধানের জনপ্রিয়তা বিশ্লেষণ করতে সাহায্য করে। এতে দেখা যায়, কোন বিষয় বা কি–ওয়ার্ড শতকরা হারে কতবার সার্চ করা হয়েছে, কোন অঞ্চলে বেশি জনপ্রিয় এবং সময়ের সঙ্গে সার্চের হার কীভাবে পরিবর্তিত হয়েছে। সার্চকে হিসাব করে ০ থেকে ১০০-এর মধ্যে একটি নম্বর (স্কোর) দেয় গুগল। ১০০ স্কোর মানে ওই বিষয়টি সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় ছিল। ০ মানে সার্চের পরিমাণ একদমই কম। এটি অঞ্চলভিত্তিক তথ্যও দেখায়, যা থেকে বোঝা যায় কোন এলাকাতে কোন বিষয়টি বেশি সার্চ করা হচ্ছে।

অনলাইন ক্যাসিনো কী

ক্যাসিনো হলো একধরনের জুয়ার ব্যবস্থা, যেখানে মানুষ টাকা বিনিয়োগ করে বিভিন্ন ধরনের গেম খেলতে পারে এবং জিতলে মূল টাকাসহ লাভ পায়, হারলে পুরো টাকা খোয়া যায়। সাধারণত ক্যাসিনো হোটেল, বার, রিসোর্ট বা অনলাইন প্ল্যাটফর্মে পরিচালিত হয়।

অনলাইন ক্যাসিনো হলো ডিজিটাল মাধ্যম, যেখানে মানুষ ঘরে বসেই বিভিন্ন ক্যাসিনো গেম খেলতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম হলো ‘বাবু৮৮’। এ ছাড়া অন্যান্য অনলাইন ক্যাসিনো সাইট রয়েছে, যা মূলত বাজির মাধ্যমে টাকা জেতার সুযোগ করে দেয় এবং হারলে পুরো নিঃস্ব হয়ে যেতে হয়।  

কোন বয়সের মানুষ ক্যাসিনোতে আসক্ত

তথ্যমতে, ১৮ থেকে ৪০ বছর বয়সী তরুণেরাই অনলাইন ক্যাসিনোর প্রতি বেশি আকৃষ্ট হচ্ছেন। বিশেষ করে, শিক্ষার্থী, তরুণ কর্মজীবী এবং বেকার যুবকদের মধ্যে এর ব্যবহার বেশি দেখা যায়।  

বাংলাদেশে ক্যাসিনোর জনপ্রিয়তা কখন বাড়ল

বাংলাদেশে ক্যাসিনো সংস্কৃতি ২০১৯ সালে আলোচনায় আসে, যখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনী রাজধানীর বেশ কয়েকটি অবৈধ ক্যাসিনোতে অভিযান চালায়। এর পর থেকেই অনলাইন ক্যাসিনোর দিকে ঝুঁকেছে অনেকে। গত কয়েক বছরে স্মার্টফোন, ইন্টারনেট সহজলভ্য হওয়ায় এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও অনান্য অনলাইন মাধ্যমগুলোতে ক্যাসিনোর বিজ্ঞাপন বেড়ে যাওয়ায় তরুণদের মধ্যে এটি আরও জনপ্রিয় হয়েছে। বিভিন্ন বয়সের মানুষেরা আসক্ত হয়েছে।

বাংলাদেশে অনলাইন ক্যাসিনো আইনত নিষিদ্ধ। এসব মাধ্যম ব্যবহারে আর্থিক ও আইনগত ঝুঁকি রয়েছে। ক্যাসিনোতে জড়িত হয়ে অনেক মানুষ আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই সাবধান থাকা ও সচেতন হওয়া জরুরি। অনলাইন পেমেন্ট মাধ্যমগুলো দিয়ে আর্থিক লেনদেন হয়ে থাকে, যা ঝুঁকিপূর্ণ। কিছু ক্ষেত্রে দেখা যায় বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমগুলোর গ্রুপের মাধ্যমে লেনদেন সম্পূর্ণ হয়ে থাকে।

প্রথম আলোর এসইও হেড মাজহারুল হক বলেন, ‘গুগল সার্চের তথ্য থেকে বোঝা যায় যে বাংলাদেশের সব বিভাগের মধ্যে রংপুর ও রাজশাহী বিভাগ থেকে অনলাইন জুয়া বা ক্যাসিনো সম্পকিত সার্চ বেশি হয়ে থাকে, যা থেকে প্রতীয়মান হয় যে এই দুটি এলাকার শিক্ষার্থী, তরুণ কর্মজীবী এবং বেকার যুবকেরা অনলাইন জুয়া বা ক্যাসিনোতে বেশি আসক্ত হচ্ছেন। পরিবার ও প্রশাসন এই বিষয়গুলোর ওপর বিশেষ নজরদারি বাড়ানো উচিত।’

রংপুরের তরিকুল ইসলাম, একজন এসইও বিশেষজ্ঞ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবে ভাইরাল টপিক বা আলোচিত বিষয়গুলো সব সময় গুগল ট্রেন্ডসের শীর্ষে দেখা যায়। কিন্তু এবার প্রথমবারের মতো ক্যাসিনো ওয়েবসাইটগুলো সেখানে উঠে আসা আমাকে সত্যিই অবাক করেছে। আমি লক্ষ করেছি, তরুণদের একটি বিশাল অংশ এই অনলাইন ক্যাসিনোর প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, রংপুর এখন অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবহারকারীর দিক থেকে শীর্ষে রয়েছে। এমনকি গ্রামবাসীরা, যারা একসময় ইন্টারনেটের নামও শোনেনি, তারাও এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে এক ভিন্ন জগতে হারিয়ে যাচ্ছে। দুঃখজনক বিষয় হলো, তারা নিজেরাও জানে না, তারা কোন পথে হাঁটছে। এই প্রবণতা ভবিষ্যতে ভয়াবহ সমস্যার কারণ হতে পারে, যা এখনই আমাদের সচেতনভাবে বুঝতে হবে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।’

বাংলাদেশে শতাধিক অনলাইন জুয়ার সাইট ও অ্যাপের মাধ্যমে প্রায় ৫০ লাখ মানুষ জুয়া খেলেন। ২০২০ সালের চেয়ে ২০২৬ সালে বাংলাদেশে অনলাইন জুয়ার বাজার বাড়তে পারে ৪ দশমিক ৭ শতাংশ। কিন্তু অনলাইন জুয়ার সাইট ও অ্যাপ বন্ধে কার্যকর আইনি উদ্যোগ না থাকায় আর্থিক ক্ষতির ঝুঁকিতে রয়েছেন লাখ লাখ তরুণ-তরুণী। আর তাই অনলাইনে জুয়া খেলাসহ বিভিন্ন নিষিদ্ধ কাজ করা থেকে বিরত রাখতে তরুণ-তরুণীদের সচেতন করতে হবে।

গত ২৫ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর বনানীর একটি হোটেলে জাগো ফাউন্ডেশন ও টিকটকের উদ্যোগে আয়োজিত ‘যুব সমাজ ও অনলাইন নিরাপত্তা’ শীর্ষক এক সংলাপে দুজন বক্তা তাঁদের মতামত জানিয়েছেন। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের (আইআইটি) অধ্যাপক শামীম আল মামুন বলেন, ‘বাংলাদেশে ডিজিটাল নিরাপত্তার গুরুত্ব দিন দিন বাড়ছে। অনলাইন মাধ্যমের ব্যবহার যেমন তরুণদের জন্য নতুন সুযোগ তৈরি করছে, তেমনি সাইবার অপরাধের ঝুঁকিও বাড়াচ্ছে। আমাদের শিক্ষাব্যবস্থার মধ্যে অনলাইন নিরাপত্তা সম্পর্কে জ্ঞান অন্তর্ভুক্ত করা অত্যন্ত জরুরি।’
জাগো ফাউন্ডেশনের প্রকল্প ব্যবস্থাপক তানভীর চৌধুরী বলেন, ‘তরুণ-তরুণীরা যেন অনলাইনে নিরাপদ থাকতে পারেন এবং দায়িত্বশীল ডিজিটাল নাগরিক হিসেবে গড়ে উঠতে পারেন, সে জন্য আমাদের সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।’

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবহ র জনপ র য় ব যবস থ আর থ ক সবচ য়

এছাড়াও পড়ুন:

ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ক্ষমা চাওয়ার পরই খেলতে রাজি হয়েছিল পাকিস্তান

সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে বাঁচা-মরার ম্যাচে টসের আগ পর্যন্ত দারুণ নাটকীয়তায় ঘেরা ছিল পাকিস্তানের ড্রেসিং রুম। ম্যাচ রেফারি অ্যান্ডি পাইক্রফ্টকে দায়িত্ব থেকে সরানোর দাবি তোলে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি)। তবে আইসিসি সে দাবি আমলে নেয়নি। শেষ পর্যন্ত নিজের ভুল স্বীকার করে পাকিস্তান অধিনায়ক সালমান আলী আগা ও দলের ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান পাইক্রফ্ট। এরপরই মাঠে নামতে রাজি হয় পাকিস্তান দল।

ঘটনার সূত্রপাত ১৪ সেপ্টেম্বরের ভারত-পাকিস্তান ম্যাচ থেকে। টসের সময় দুই অধিনায়কের করমর্দন হয়নি। আরও বড় বিতর্ক তৈরি হয় ম্যাচ শেষে। জয়ী ভারতের ক্রিকেটাররা করমর্দন এড়িয়ে দ্রুত ড্রেসিং রুমে ফিরে যান। সালমান আলী আগার নেতৃত্বে পাকিস্তানের খেলোয়াড়রা দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করলেও সূর্যকুমার যাদব, শিভাম দুবেসহ পুরো ভারতীয় দল সেই শিষ্টাচার মানেনি।

আরো পড়ুন:

আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

এমন ঘটনার প্রতিবাদে পাকিস্তান অধিনায়ক পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান বর্জন করেন। পরে আইসিসির কাছে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জানায় পিসিবি। তাদের দাবি ছিল, ম্যাচ রেফারি পাইক্রফ্ট ইচ্ছাকৃতভাবেই দুই অধিনায়কের হাত মেলানো আটকান, যা আইসিসির আচরণবিধি ও ক্রিকেটের স্পিরিটের পরিপন্থী।

যদিও আইসিসির ব্যাখ্যা ছিল ভিন্ন। তারা জানায়, এসিসির কর্মকর্তাদের নির্দেশেই কাজ করেছেন পাইক্রফ্ট। কিন্তু পাকিস্তান নড়েচড়ে বসে। এমনকি জানিয়ে দেয়, পাইক্রফ্ট দায়িত্বে থাকলে সংযুক্ত আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামবে না তারা। এই হুমকির কারণে ম্যাচের শুরুর সময় এক ঘণ্টা পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয় আয়োজকরা।

লাহোরে রমিজ রাজা, নাজাম শেঠিসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে জরুরি বৈঠক করেন পিসিবি চেয়ারম্যান মহসিন নাকভি। পরে সমঝোতার পথ খোঁজা হয়। অবশেষে পাইক্রফ্ট স্বীকার করেন, ভুল বোঝাবুঝির কারণেই পরিস্থিতি এতদূর গড়ায়, এবং তিনি পাকিস্তান অধিনায়ক ও ম্যানেজারের কাছে ক্ষমা চান। তাতেই সন্তুষ্ট হয়ে মাঠে নামার সিদ্ধান্ত নেয় পাকিস্তান দল।

বুধবার রাতে ‘এ’ গ্রুপে নিজেদের সেই শেষ ম্যাচে আরব আমিরাতকে ৪১ রানের ব্যবধানে হারিয়ে সুপার ফোরে ভারতের সঙ্গী হয় সালমান-শাহীনরা। দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তান সংগ্রহ করে ৯ উইকেটে ১৪৯ রান। লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ১৭.৪ ওভারে ১০৫ রানেই গুটিয়ে যায় আরব আমিরাত।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ