বুয়েনস এইরেসের সান ইসিদরো আদালতে চলছে মামলার শুনানি। ডিয়েগো ম্যারাডোনার মৃত্যু অসুস্থতার কারণে স্বাভাবিক মৃত্যু, নাকি অবহেলা ছিল চিকিৎসকদের, তা খতিয়ে দেখছেন আদালত। কিংবদন্তির শেষ দিনগুলোয় তাঁর চিকিৎসায় নিয়োজিত ছিলেন যে আটজন চিকিৎসক, তাঁদের মধ্যে সাতজনের বিরুদ্ধে চিকিৎসায় অবহেলাজনিত অপরাধের অভিযোগে চলছে বিচার কার্যক্রম।
বাদীপক্ষ ম্যারাডোনার দুই মেয়ে দালমা ও জিয়ান্নিনার হয়ে আদালতে লড়ছেন আর্জেন্টাইন আইনজীবী ফের্নান্দো বার্লান্দো। এক টিভি অনুষ্ঠানে তিনি বলেছেন, ‘পশুর সঙ্গে যেমন আচরণ করে, ডিয়েগোর সঙ্গে সেটাই করা হয়েছে। আদালতে যা কিছু দেখা গেছে, সেটাই প্রমাণ করে।’
আরও পড়ুনমেসির দেহরক্ষীকে নিষেধাজ্ঞা৪ ঘণ্টা আগেআর্জেন্টিনার টিভি চ্যানেল এলত্রেসে প্রচারিত অনুষ্ঠান ‘লা নোচে দে মিরথা’য় বার্লান্দো ব্যাখ্যা করেন, ২০২০ সালের ২৫ নভেম্বর ম্যারাডোনাকে হত্যা করা হয়েছিল—এটা প্রমাণ করাই তাঁর আইনি দলের লক্ষ্য, ‘অবহেলার বিষয়টি আমরা আগেই পেরিয়ে এসেছি। এখন তা বিচারিকভাবে প্রমাণের চেষ্টা করছি।’
এই পৃথিবীতে ডিয়েগোর অনুপস্থিতিতে লাভটা তৃতীয় পক্ষের, যারা তাঁর উত্তরাধিকার নয়। কিছু লোক আছে, যারা কিছু সন্দেহজনক চুক্তিপত্র সইয়ের মাধ্যমে তাঁর মৃত্যুর পরও লাভবান হচ্ছে, এমনকি তাঁর ওপর ভর করে জীবিকা নির্বাহ করছে।ফের্নান্দো বার্লান্দো, ম্যারাডোনার মেয়ে দালমা ও জিয়ান্নিনার পক্ষের আইনজীবীবার্লান্দোর দাবি, পরিকল্পনা করে ছিয়াশির বিশ্বকাপ কিংবদন্তিকে মেরে ফেলা হয়েছে। চিকিৎসাজনিত অবহেলা তাঁর মৃত্যুর কারণ নয়, ‘আমি একমত, কোনো সন্দেহ নেই তাঁকে হত্যা করা হয়েছে।’ অনুষ্ঠানের উপস্থাপিকা আর্জেন্টাইন অভিনেত্রী ও সঞ্চালক মিরথা লেগ্রান্দ আইনজীবী বার্লান্দোর কাছে জানতে চান, ম্যারাডোনাকে মৃত্যুমুখে পতিত করা হয়েছে, নাকি হত্যা করা হয়েছে?’ বার্লান্দোর উত্তর, ‘ম্যারাডোনার মানসিক ও শারীরিক চিকিৎসার দায়িত্বে থাকা আটজন ইচ্ছাপ্রসূত হত্যার দায়ে জড়িত। কেউ যখন সবচেয়ে বাজে পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়, এ ক্ষেত্রে যেটা মৃত্যু এবং তাদের আচরণে মনে হয় কিছুই হয়নি, তখন এটা হত্যা।’
ম্যারাডোনার দুই মেয়ে দালমা ও জিয়ানিন্নার পক্ষের আইনজীবী ফের্নান্দো বার্লান্দো.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে দেশ টিভির আরিফ ও নাসার নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানো হলো
জুলাই গণ–অভ্যুত্থানের সময়ের দুটি মামলায় নাসা গ্রুপের কর্ণধার নজরুল ইসলাম মজুমদার ও দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরিফ হাসানকে সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
রাজধানীর গুলশান থানা এলাকায় কামাল হোসেন প্রকাশ সবুজ হত্যা মামলায় নাসা গ্রুপের কর্ণধার ও এক্সিম ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মজুমদারকে গ্রেপ্তার দেখিয়েছেন আদালত।
আর গণ–অভ্যুত্থান চলাকালে গত বছরের ৫ আগস্ট কোতোয়ালি থানার সিএমএম কোর্ট এলাকায় রোফায়েদ হাসানসহ ২৫–৩০ জন আন্দোলনকারীর ওপর গুলি চালানোর ঘটনায় হত্যাচেষ্টা মামলায় সন্দিগ্ধ আসামি হিসেবে দেশ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আরিফ হাসানকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
পুলিশের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. জুয়েল রানার আদালত আজ সোমবার এই আদেশ দেন।
রাষ্ট্রপক্ষের পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী জানান, গত ২৮ ও ৩০ অক্টোবর মামলার তদন্ত কর্মকর্তারা আরিফ ও কামালকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন। ওই দিন আদালত আসামির উপস্থিতিতে শুনানির জন্য আজকের দিন ধার্য করেন। আজ শুনানির জন্য তাঁদের আদালতে হাজির করা হয়। শুনানি নিয়ে আদালত গ্রেপ্তার আবেদন মঞ্জুর করেন। পরে তাঁদের কারাগারে পাঠানো হয়।
আজ সকাল সাড়ে ৯টার দিকে বুলেটপ্রুফ জ্যাকেট, হাতকড়া ও হেলমেট পরিয়ে তাঁদের আদালতের হাজতখানায় আনা হয়। আরিফ ও নজরুল আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলেন।
আজ সকাল ১০টা ৫২ মিনিটের দিকে বিচারক আসেন। আরিফ হাসানকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি থানার উপপরিদর্শক অনুপ ঘোষ। তাঁর আইনজীবী জামিন শুনানির জন্য পাওয়ার চান এবং আইনজীবীর সঙ্গে কথা বলার অনুমতি চান। আদালত সেটি মঞ্জুর করেন।
নাসার নজরুলের মামলার শুনানি শুরু হলে তাঁরা দুজন কাঠগড়ার সামনের অংশের দিকে যান। এরপর নাসার নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করা হয়। এ সময় আসামিপক্ষের আইনজীবী আরিফুর রহমান বলেন, ‘জিডির মাধ্যমে এ মামলা হয়েছে। ফরোয়ার্ডিংয়ের সঙ্গে সাপোর্টিভ কোনো ডকুমেন্টস নেই। এ মামলায় কোনো ১৬৪ ও ১৬১ ধারার জবানবন্দি নেই। ঘটনাস্থলে থাকার কোনো ভিডিও ফুটেজ নেই। কেউ বলেনি, উনি আওয়ামী লীগকে টাকা দিয়েছেন। তাহলে এ মামলার সন্দিগ্ধ আসামি কীভাবে হন? এটা গ্রেপ্তার দেখানো আইনের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন।’
ডিএমপি পরিদর্শক আসাদ আদালতকে বলেন, ‘মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা সংশ্লিষ্টতার তথ্য পেয়েছেন। আন্দোলনকে দমন করার জন্য তিনি অর্থসহায়তা দিয়েছেন। সে জন্যই গ্রেপ্তারের আবেদন করেছেন।’
পরে আসামিপক্ষের আইনজীবী বলেন, ‘কোনো ডকুমেন্টস আছে? তথ্য দেন। এমনিতে বললে তো হবে না।’ এরপর বিচারক নজরুলকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করেন। তাঁদের দুজনকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
গত বছরের ২ অক্টোবর নজরুল ইসলাম মজুমদারকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর পর থেকে বিভিন্ন মামলায় তাঁকে রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে। বর্তমানে তিনি কাশিমপুর কারাগারে আছেন।
গত বছরের ১৭ নভেম্বর দেশ টিভির এমডি আরিফকে গ্রেপ্তার করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে পাঁচটি মামলা রয়েছে।