ঈদের পর দিন তিন জেলায় ভিন্ন ভিন্ন কারণে দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে ১৩০ জন আহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) বিভিন্ন সময় এসব সংঘর্ষ হয়।
সংঘর্ষে সবচেয়ে বেশি আহত হয়েছে হবিগঞ্জে, ৭০ জন। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ আহত গোপালগঞ্জে, ৪০ জন। রাইজিংবিডির প্রতিনিধিরা এ সংক্রান্ত খবর পাঠিয়েছেন।
হবিগঞ্জ
হবিগঞ্জের লাখাই উপজেলায় সালিশ বৈঠক চলাকালে দু’পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে অন্তত ৪০ জন আহত হয়েছেন। উপজেলার পূর্ব তেঘরিয়া দর্জিহাটি গ্রামে এ ঘটনা ঘটে।
লাখাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) বন্দে আলী বলেন, ‘‘দুপক্ষের সংঘর্ষের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। বর্তমানে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ওই এলাকায় অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।’’
অপরদিকে, হবিগঞ্জ জেলার মাধবপুরে মাজারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে ৩০ জন আহত হয়েছেন। মাধবপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) শাহনূর বলেন বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, উপজেলার বাঘাসুরা ইউনিয়নের কালিকাপুর মাজার নিয়ন্ত্রণ করতেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা মাজারটি নিয়ন্ত্রণে নেওয়া চেষ্টা করেন। এর এক পক্ষে নেতৃত্ব দেন যুবদল নেতা নজরুল গাজী, অপর পক্ষে বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট সাজিদুল ইসলাম সজল। মঙ্গলবার দুই পক্ষ সংঘর্ষে জড়ায়।
গোপালগঞ্জ
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। কোটালীপাড়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো.
তিনি বলেন, ‘‘সকালে বর্ষাপাড়া গ্রামের সিরাজ ফকির বাড়ির পাশের একটি জমিতে মাছের ঘের করতে যান। এসময় একই বংশের গাউস ফকির বাঁধা দিলে উভয়ের মধ্যে প্রথমে কথা কাটাকাটি ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। পরে উভয়পক্ষের লোকজন দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। প্রায় ঘন্টাব্যাপী ধরে চলা এ সংঘর্ষে উভয়পক্ষের অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছেন। এর মধ্যে, ১২ জনকে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।’’
অপরদিকে, গোপালগঞ্জে টুঙ্গিপাড়ায় মসজিদের জায়গায় রাস্তা নেওয়াকে কেন্দ্র করে দুই পক্ষের সংঘর্ষে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।
টুঙ্গিপাড়া থানার পরিদর্শক (তদন্ত) নয়ন দেবনাথ বলেন, ‘‘প্রায় ৩৫ বছর আগে সড়াইডাঙ্গা গ্রামের আবু তালেব বিশ্বাস ননীগোপালপুর সড়াইডাঙ্গা মাদ্রাসায় ৪ কাঠা জমি দান করেন। মঙ্গলবার স্থানীয়রা মাদ্রাসার জায়গায় সীমানা খুঁটি লাগাতে গেলে আবু তালেব বিশ্বাসের ছেলে হাসান বিশ্বাস বাধা দিয়ে জায়গা দিতে অস্বীকার করে রাস্তা বানাতে চান। এ নিয়ে হাসান বিশ্বাসের সঙ্গে স্থানীয়দের কথা কাটাকাটি হয়। পরে হাসান বিশ্বাসের সমর্থকদের সঙ্গে স্থানীয়দের সংঘর্ষ হয়। এতে কমপক্ষে ১৫ জন আহত হয়েছেন।’’
সুনামগঞ্জ
সুনামগঞ্জের শান্তিগঞ্জে ধান শুকানোর জায়গা দখল নিয়ে দু’পক্ষের সংঘর্ষে অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন। শান্তিগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো. আকরাম আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ জানায়, রঘুনাথপুর গ্রামের জাকির হোসেন ও শাহ আলম পক্ষের মধ্যে পূর্ব বিরোধ ছিল। মঙ্গলবার ধান শুকানোর জায়গা দখল নিয়ে দুপক্ষের মধ্যে কথা-কাটাকাটি হয়। একপর্যায়ে দেশীয় অস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে জড়ান তারা। এতে উভয়পক্ষের অন্তত ২০ জন আহত হয়েছেন।
ঢাকা/মামুন/বাদল/মনোয়ার/রাজীব
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ প লগঞ জ
এছাড়াও পড়ুন:
পা পিছলে ট্রেনের নিচে সবজি বিক্রেতা, চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু
চলন্ত ট্রেনের সামনে দিয়ে দৌড়ে যাচ্ছেন এক মধ্যবয়সী ব্যক্তি। পাশাপাশি দুটি ট্রেন তুলনামূলক কম গতিতে চলছিল। হঠাৎ একটি ট্রেনের সামনে গিয়ে পা পিছলে পড়ে যান তিনি। ট্রেনটি চলে যায় তাঁর শরীরের ওপর দিয়ে। এ ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাঁকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ওই ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে।
নিহত ব্যক্তির নাম জালাল উদ্দিন ওরফে জালু (৪০)। তিনি ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে চরআলগী ইউনিয়নের নিধনিয়া চর ব্যাপারী পাড়ার বাসিন্দা ও পেশায় সবজি বিক্রেতা ছিলেন। গতকাল রোববার রাত সাড়ে ১১টার দিকে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে তাঁর মৃত্যু হয়। এর আগে গতকাল রাত ৮টা ৪০ মিনিটের দিকে গাজীপুরের শ্রীপুর রেলস্টেশন এলাকায় দুর্ঘটনার শিকার হন তিনি।
দুর্ঘটনার পর জালাল উদ্দিনকে প্রথমে শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেওয়া হয়। পরে তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেন শ্রীপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা বিজন মালাকার।
স্বজনেরা জানিয়েছেন, জালাল উদ্দিন এলাকায় কৃষিকাজ করেন এবং সেখান থেকে কৃষিপণ্য নিয়ে গাজীপুরের শ্রীপুরে বিক্রি করেন। তিনি প্রায়ই ট্রেনে চেপে শ্রীপুর যান এবং রাতের ট্রেনে বাড়ি ফেরেন। গতকাল দুপুরে শাকসবজি নিয়ে ট্রেনে শ্রীপুর যান। ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা জামালপুরের দেওয়ানগঞ্জগামী ব্রহ্মপুত্র এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে ধরতে রাত পৌনে ৯টার দিকে তিনি দৌড় দেন। এ সময় ট্রেনটি শ্রীপুর স্টেশনে প্ল্যাটফর্ম থেকে ছেড়ে যাচ্ছিল। সেটি ধরতে গিয়ে পাশের রেললাইনে থাকা ঢাকাগামী মহুয়া এক্সপ্রেসের ট্রেনের নিচে পড়ে যান জালাল উদ্দিন।
নিহত ব্যক্তির প্রতিবেশী ও গফরগাঁও কৃষক দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ার হোসেন ব্যাপারী জানান, আজ সোমবার বেলা ১১টার দিকে জানাজা শেষে জালাল উদ্দিনকে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে। এ দুর্ঘটনায় তাঁর পরিবার একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তিটিকে হারাল।
ময়মনসিংহ রেলওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আকতার হোসেন বলেন, স্বজনদের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশটি পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এ বিষয়ে রেলওয়ে পুলিশ তদন্ত করছে বলে জানিয়েছেন শ্রীপুর থানার ওসি মহম্মদ আবদুল বারিক।