ফাতিমা বিনতে আসাদ (রা.) ছিলেন রাসুলের (সা.) চাচি। তিনি ছিলেন আবু তালিবের স্ত্রী, আলীর (রা.) মা। (তাবাকাতে ইবনে সাদ, ৮/১৫৬)

আবু তালিব ছিলেন ফাতিমার (রা.) চাচাতো ভাই। তাঁর বাবার নাম আসাদ ইবনে হিশাম, দাদার নাম হিশাম ইবনে আব্দে মানাফ। তাঁর বংশধারা রাসুলুল্লাহ (সা.) বংশধারার সঙ্গে মিলিত হয়েছে। (ড. মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, আসহাবে রাসুলের জীবনকথা: ৬/১৬১)

প্রথম পর্বে মক্কা থেকে যেসব সাহাবি মদিনায় হিজরত করেন, তিনি ছিলেন তাঁদের মধ্যে অন্যতম। দাদার ইন্তেকালের পর রাসুল (সা.

) তাঁর চাচা আবু তালিবের গৃহে লালিত-পালিত হন। ফাতিমা বিনতে আসাদ (রা.) শৈশবে তার (সা.) দেখাশোনা করেন। তিনি তাঁকে ‘মায়ের পর মা’ বলে মনে করতেন। (ড. মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, আসহাবে রাসুলের জীবনকথা: ৬/১৬২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর চাচিকে শ্রদ্ধা করতেন, মাঝেমধ্যে চাচির কাছে উপহার পাঠাতেন। একবার তাঁর কাছে উন্নতমানের দুটি নতুন কাপড় আসে। তিনি কাপড়গুলো আলী (রা.)-কে দিয়ে বললেন, ‘এই দুটিকে নিকাবের কাপড় বানিয়ে ফাতিমাদের মধ্যে ভাগ করে দাও।’

আরও পড়ুনবিনয় সম্পর্কে আল্লাহ ও রাসুল (সা.) যা বলেন০৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

সেই সময় মদিনায় বিখ্যাত ২৪ জন ফাতিমা ছিলেন। আলী (রা.) চারজন ফাতিমাকে হিজাবের কাপড় দেন। তারা হলেন ফাতিমা বিনতে আসাদ (রা.), নবীজির মেয়ে ফাতিমা (রা.), ফাতিমা বিনতে হামজা (রা.) ও ফাতিমা বিনতে শায়বা (রা.)। (ইমাম ইবনে হাজার আসকালানি, আল-ইসাবা: ৮/২৬৮, ইবনুল আসির, উসুদুল গাবা: ৭/২১২)

রাসুলুল্লাহ (সা.) তাঁর চাচির মৃত্যুসংবাদ শুনে বললেন, ‘তোমরা সবাই আমার মায়ের কাছে চলো।’ তিনি বাড়ি পৌঁছে তাঁর জামা খুলে দিয়ে বললেন, ‘তাঁর গোসল করানো শেষ হলে এটা তাঁর কাফনের নিচে দিয়ে দেবে।’ (ড. মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, আসহাবে রাসুলের জীবনকথা: ৬/১৬৭)

তিনি তাঁর অনুগ্রহের কথা কখনও ভোলেননি। ফাতিমা বিনতে আসাদ (রা.) অভুক্ত থেকে রাসুলের (সা.) খাওয়ার ব্যবস্থা করতেন। এটা তিনি শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন। রাসুল (সা.) তাঁর খাটিয়া ধরে কবর পর্যন্ত নিয়ে যান, কবরে নেমে গড়াগড়ি করেন এবং দাফন শেষে দোয়া করেন, ‘আমার মা ও প্রতিপালনকারিণী, আল্লাহ আপনাকে ভালো প্রতিদান দান করুন। আপনি ছিলেন আমার একজন চমৎকার মা ও চমৎকার প্রতিপালনকারিণী।’

সাহাবিরা রাসুলের দুটি কাজ দেখে অবাক হন। একটি হলো তাঁর জামা খুলে দেওয়া, আরেকটি হলো কবরে নামা। জিজ্ঞেস করলেন, আল্লাহর রাসুল (সা.) কেন এগুলো করলেন? তিনি বললেন, জামাটি এই কারণে দিয়েছেন, যাতে তাঁকে জাহান্নামের আগুন স্পর্শ না করে। আর কবরে গড়াগড়ি করেছেন, যাতে তাঁর কবরটি প্রশস্ত করে দেওয়া হয়। (ইমাম আয-যাহাবি, সিয়ারু আলামিন নুবালা: ২/১১৮)

রাসুল (সা.) মোট ৫ জন ব্যক্তির কবরে নেমে দাফন করেন। এর মধ্যে তিনজন ছিলেন নারী। তাঁদের মধ্যে একজন হলেন তাঁর চাচি ফাতিমা বিনতে আসাদ (রা.)। (ড. মুহাম্মদ আবদুল মাবুদ, আসহাবে রাসুলের জীবনকথা: ৬/১৬৭)

আরও পড়ুনঘুমের সঠিক আদবকেতা০৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বলল ন

এছাড়াও পড়ুন:

অমর একুশে বইমেলা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক

অমর একুশে বইমেলা বাংলাদেশের মানুষের প্রাণের মেলা। মূলত প্রকাশকদের উদ্যোগে মুক্তিযুদ্ধ উত্তর বাংলাদেশে এই বইমেলার সূত্রপাত। সম্প্রতি এই বইমেলা নানা কারণে-অকারণে ডিসেম্বরে করার কথা শোনা যাচ্ছে। এ প্রেক্ষিতে সুস্পষ্টভাবে বলতেই হচ্ছে -ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলা করা যাবে না। কারণ সেসময় সারাদেশে শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষা চলবে।

বইমেলার প্রধান পাঠক আমাদের শিক্ষার্থী। তারা ডিসেম্বরে কিছুতেই মেলায় আসতে পারবে না। প্রধান পাঠকই যদি মেলায় আসতে না পারে তাহলে মেলা প্রাণহীন হয়ে পড়বে। বইমেলায় অংশগ্রহণকারি প্রকাশকরাও ভয়াবহ ক্ষতির মুখে পড়বে। তাছাড়া একুশের চেতনাকে ধারণ করে যে অমর একুশে বইমেলা, সেটা ফেব্রুয়ারিকে স্পর্শ করুক। ভাষা শহীদদরর প্রতি বইমেলার মাধ্যমে আমাদের যে শ্রদ্ধাঞ্জলি, তা অক্ষুন্ন থাকুক। 

আরো পড়ুন:

রাজশাহীতে বইপড়ায় কৃতিত্বের পুরস্কার পেল ২৩০৩ শিক্ষার্থী

‘গল্পকারের পছন্দের ৫০ গল্প’ গ্রন্থ প্রকাশিত

সর্বোপরি ৫ জানুয়ারি থেকে ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, এই সময়ে বইমেলা হতে কোন সমস্যা হওয়ার কথা নয়। অথবা তারিখ দুই একদিন এদিক-সেদিক করে নেয়া যেতে পারে। এ সময়ে রোজা নেই, নির্বাচনও নেই। নির্বাচনী ক্যাম্পেইন চলবে। এই মাঠে বইমেলা চলাকালীন সর্বদলীয় সিদ্ধান্তে কেউ সভা-সমাবেশ না করার সিদ্ধান্ত নিলে অনায়াসে এই সময়টাতে বইমেলা করা যেতে পারে। আমার বিশ্বাস- সব দলই অমর একুশে বইমেলার জন্য এই ছাড়টুকু দেবেন।

প্রায় পঞ্চাশ বছরের অধিক সময়ের  প্রচেষ্টায় অমর একুশে বইমেলা মহিরুহ হয়ে আমাদের কাছে আবির্ভূত, হঠকারি কোন সিদ্ধান্তে তা যেনো ধ্বংস হওয়ার উপক্রম না হয়। জেনে শুনে বাঙালির এতো বড় একটি সাংস্কৃতিক উৎসবকে ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্থ না করে বরং তা যে কোন মূল্যে আমাদের রক্ষা করা উচিত।

জানুয়ারিতে বাণিজ্যমেলায়ও হয়ে থাকে। এতে অমর একুশে বইমেলার ওপর কোনো বিরূপ প্রভাব পড়বে বলে আমি তা মনে করি না। বইমেলার প্রধান পাঠক শিক্ষার্থী। তারা বইমেলায় আসার জন্য মুখিয়ে থাকে। বাণিজ্য মেলায় যাওয়ার লোকজন বেশির ভাগই আলাদা। তবে অনেকেই বইমেলা এবং বাণিজ্যমেলা দুটোতেই যান। এটা তারা ম্যানেজ করে নিতে পারবেন বলে আমার বিশ্বাস।

আমি বলেছি শুধুমাত্র মেলার মাঠ প্রাঙ্গনে সভা-সমাবেশ না করার মাধ্যমে যদি সর্বদলীয় একটা সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় তাহলে জানুয়ারি- ফেব্রুয়ারি মিলিয়ে  বইমেলা করা সম্ভব।আমার মনে হয়, বইমেলা চলাকালীন এই মাঠ কোন দলকে সভা-সমাবেশের জন্য সরকার বরাদ্দ না দিলে, অথবা বইমেলা চলাকালীন দলগুলো নিজের থেকেই এই মাঠের বরাদ্দ না চাইলে সমস্যা আর থাকে না।

লেখক: প্রকাশক পাঞ্জেরী পাবলিকেশন্স লিমিটেড

ঢাকা/লিপি

সম্পর্কিত নিবন্ধ