আমার বাংলাদেশ (এবি) পার্টির সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার আসাদুজ্জামান ফুয়াদ বলেছেন, একাত্তরের ১৬ ডিসেম্বর দেশ স্বাধীন হয়নি। পাকিস্তানিদের কাছ থেকে বাংলাদেশের দখল নিয়েছিল ভারতীয়রা। তৎকালীন দেশের ১৯টি মহকুমায় ভারতের কেবিনেট থেকে প্রশাসক (ডিসি) নিয়োগ করা হয়েছিল। দেশের সব থানায় ওসি হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছিল ভারতীয় সেনারা। মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনী। সামরিক-বেসামরিক মানুষ মিলে দীর্ঘ ৯ মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করেছিল। অথচ বিজয় ছিনতাই করেছিল ভারত।

বুধবার বিকেলে বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাব মিলনায়তনে ঈদ পুনর্মিলনী উপলক্ষ্যে সাংবাদিক ও সুশীল সমাজের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় তিনি এমন মন্তব্য করেন।

ব্যারিস্টার ফুয়াদ দাবি করে বলেন, ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানের আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে থাকতে দেওয়া হয়নি আমাদের মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল এম.

এ.জি ওসমানীকে। তাহলে সেই দিবসটি কীভাবে বাংলাদেশের বিজয় দিবস হয়? ওটা ছিল পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ভারতের বিজয় দিবস।

ব্যারিস্টার ফুয়াদ আরও বলেন, ১৯৭২ সালের ৩০ মার্চ আমরা সত্যিকারের বিজয় অর্জন করেছিলাম। শেখ মুজিবুর রহমানের অনুরোধে সেদিন বাংলাদেশ থেকে সব ভারতীয় সৈন্য প্রত্যাহার করে নিয়েছিলেন ইন্দিরা গান্ধী। ১৯ মার্চ এক কুচকাওয়াজের মাধ্যমে ভারতীয় সেনাদের আনুষ্ঠানিক বিদায় জানানো হয়েছিল। তাই বাহাত্তরের ১৯ কিংবা ৩০ মার্চ বাঙালির বিজয় দিবস হওয়া উচিত ছিল। ভারতীয় সেনারা যাওয়ার সময় পাকিস্তানের জমা দেওয়া অস্ত্র, গোলাবারুদ আর বাংলাদেশের সব পাটকল, চিনিকল ও শিল্প কলকারখানার যন্ত্রপাতি খুলে নিয়ে যায়। স্বাধীন দেশের সব সম্পদ লুট করে নিয়ে যায়। অথচ ১৬ ডিসেম্বর সেই ভারতের চাপিয়ে দেওয়া একটা মিথ্যা বিজয় দিবস পালন করে যাচ্ছি আমরা। তাই এটা নিয়ে এখন নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। এটা নিয়ে আলোচনা হওয়া দরকার।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন, আওয়ামী লীগ ভারতের এজেন্ট হিসেবে গত ১৬ বছর দেশ শাসন করেছিল। ভারতের একটা কলোনি বানিয়েছিল দেশকে। ভোটসহ দেশের মানুষের সব নাগরিক অধিকার হরণ করেছিল। তাই নতুন করে আবার চব্বিশের স্বাধীনতা যুদ্ধ হয়েছে। আমাদের ৪৭, ৫২, ৭১ আর ২৪ একই সূত্রে গাঁথা। যে কারণে ৪৭ থেকে ৫২ হয়ে ৭১-এর জন্ম হয়েছে, ঠিক একই কারণে ২৪-এর সৃষ্টি হয়েছে। সময় এবং পরিবেশ ভিন্ন হলেও প্রতিটি সংগ্রাম ছিল বাঙালির অধিকার আদায়ের লড়াই। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি দেশে এখনো চাঁদাবাজি, দখলবাজি, লুটপাট চলছে। শুধু দলীয় ব্যানার-সাইনবোর্ড বদল হয়েছে। কিন্তু সমস্যার সমাধান হয়নি। আগে একদল অপকর্ম করতো, এখন আরেকদল করছে। ঘুরেফিরে এই একই রাজনীতির অবসান চাই আমরা। রাজনীতিতে আজ একটা রেনেসাঁ বিপ্লব দরকার। রাজনীতি হতে হবে জনগণের কল্যাণের। মানুষের সমস্যা সমাধানের রাজনীতি করতে চায় এবি পার্টি।

বাবুগঞ্জ প্রেসক্লাব সভাপতি সাইফুর রহিমের সভাপতিত্বে মতবিনিময় সভায় আরও বক্তব্য রাখেন বরিশাল জেলা এবি পার্টির আহবায়ক প্রকৌশলী কল্লোল চৌধুরী, সদস্য সচিব জি.এম রাব্বি, বীরশ্রেষ্ঠ ক্যাপ্টেন মহিউদ্দিন জাহাঙ্গীর ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা সেক্রেটারি আমানুল্লাহ খান নোমান, বাবুগঞ্জ উপজেলা প্রেসক্লাবের সাবেক সভাপতি আরিফ আহমেদ মুন্না, সাইফুল ইসলাম, সহ-সভাপতি শাহাব উদ্দিন বাচ্চু, সম্পাদক আরিফ হোসেন, ইসলামী আন্দোলনের সমন্বয়ক শেখ নজরুল ইসলাম মাহবুব প্রমুখ।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র জন ত র ব জয় কর ছ ল

এছাড়াও পড়ুন:

আরিফুলসহ সিলেট বিএনপির নেতাদের লন্ডন সফর, নানা আলোচনা

গত রোববার হঠাৎ লন্ডন সফরে যান সিলেট সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। এ নিয়ে সিলেটের রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা আলোচনা। শুধু আরিফুল নন, ইতোমধ্যে সিলেটের একাধিক নেতা প্রকাশ্যে বা গোপনে লন্ডন সফর করেন। শোনা যাচ্ছে, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে সাক্ষাত করতেই তারা লন্ডন যাচ্ছেন।

সরকার পরিবর্তনের পর বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মুক্তি পেয়ে লন্ডন যান। খালেদা জিয়ার সঙ্গে লন্ডনে যান উপদেষ্টা ড. এনামুল হক চৌধুরী। তিনি যুক্তরাজ্যে বসবাসরত সিলেট-৬ আসনের (গোলাপগঞ্জ-বিয়ানীবাজার) প্রবাসীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। দেশে এসেও নিবার্চনী এলাকায় সাধারণ ভোটারদের সঙ্গে মতবিনিময় করে চলেছেন।  

সম্প্রতি লন্ডন থেকে দেশে ফিরে সিলেট-৪ আসনের বিভিন্ন এলাকায় প্রচারণা চালাচ্ছেন মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জমান সেলিম। তিনি তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করে এসেছেন  বলে জানা যায়।

একই আসনে দলের মনোনয়ন প্রত্যাশী গোয়াইনঘাট উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান ও জেলা বিএনপি নেতা আব্দুল হাকিম সম্প্রতি লন্ডন সফর করেন। তিনি দেশে ফিরে বিভিন্ন সভা সমাবেশে যোগ দিচ্ছেন। একই আসনে আরও একাধিক নেতা তারেক রহমানের সঙ্গে দেখা করতে লন্ডন যাচ্ছেন বলে জানা যায়।
 
সর্বশেষ গত রোববার লন্ডনে যান আরিফুল হক চৌধুরী। তিনি লন্ডনে যাওয়ার পর সিলেট বিএনপির রাজনীতি বইছে নতুন হওয়া। শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, দুটি মিশন নিয়ে গেছেন আরিফুল হক। এর একটি হচ্ছে- সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রশাসক হিসেবে দায়িত্ব নেওয়া, অপরটি হচ্ছে জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রস্তুতি। লন্ডনে গিয়ে তিনি বলেন, 'আমি আপনাদের দেখতে এসেছি। ৪-৫ দিন লন্ডনে থাকবো।'

আরিফুল হক সিটি নির্বাচনে নাকি সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন তা নিয়ে এখন চলছে আলোচনা। তার ঘনিষ্ঠরা জানিয়েছেন, সার্বিক বিষয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের পরামর্শ নিতে তিনি লন্ডনে গেছেন। তার পরামর্শ পাওয়ার পর সিলেটের নির্বাচনী মাঠে নামবেন তিনি। 

এদিকে, সোমবার রাতে লন্ডনে আরিফুল হক তার ঘনিষ্ঠ শতাধিক নেতাকর্মীকে নিয়ে একটি রেস্টুরেন্টে বৈঠক করেন। বৈঠকে তিনি বর্তমানে মাঠে থাকা রাজনৈতিক প্রতিপক্ষকে নিয়ে বিস্ফোরক মন্তব্য করেন। কোনো রাজনৈতিক দলের নাম না বললেও নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের কথা সরাসরি বলেন। তার বক্তব্য ঘিরে সিলেটে জামায়াত ঘরানার রাজনৈতিক নেতারা স্যোশাল মিডিয়ায় সরব হয়ে উঠেছেন।  কেউ কেউ প্রশ্ন করছেন, অন্য পার্টি বলতে সাবেক মেয়র আরিফ কি জামায়াতকে বোঝাতে চেয়েছেন? 

ভার্চ্যুয়াল মিডিয়ায় প্রচারিত হওয়া ভিডিওতে আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘আমাদের দু-একটা তুচ্ছ ঘটনাকে কিছু রাজনৈতিক অন্য পার্টি, অন্য প্ল্যাটফরমে যা আপনারা ভালোভাবেই বুঝতেছেন, যারা এখনই বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সময় বিভিন্ন ইউনিভার্সিটি, বিভিন্ন ইনস্টিটিউশন, বিভিন্ন হাই-অফিসিয়াল পোস্টে তাদের নিজেদের লোক সেটআপ করে ফেলছে। সেখানে আমাদের মানুষগুলো নেই। আমাদের দু-চার জন অ্যাটর্নি জেনারেল, আর দু-চারটা পোস্ট দেখলেই মনে করবেন না সব আমাদের। তারা ভালো করে জানে ভোটে গেলে বিএনপি’র সঙ্গে কোনোভাবেই রিটার্ন করতে পারবে না। কাজেই তারা ওই ম্যাকানিজম শুরু করেছে সেখানে নির্বাচনকে একটু দূরে ঠেলে দিয়ে বিভিন্ন প্রশাসনে তাদের লোকগুলোকে সেটআপ করা।' 

সম্পর্কিত নিবন্ধ