জুনেই ঋণের দুই কিস্তি ছাড়ের আশায় সরকার
Published: 5th, April 2025 GMT
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ঋণের চতুর্থ কিস্তি পাওয়ার কথা ছিল গত ডিসেম্বরে। তবে এখনও তা পায়নি বাংলাদেশ। সংস্থাটির একটি প্রতিনিধি দল গত ডিসেম্বরে ঢাকায় আসে। এর পর ঋণের এ কিস্তি অনুমোদনের জন্য আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের সভায় ওঠার কথা থাকলেও দু’দফায় তা পিছিয়ে যায়।
এদিকে ঋণের অন্যতম শর্ত কর আহরণের লক্ষ্যমাত্রা থেকে সরকার অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। অন্যদিকে মুদ্রার বিনিময় হার পুরোপুরি বাজারের ওপর ছেড়ে দেওয়ার বিষয়েও সংস্থাটির প্রত্যাশা অনুসারে অগ্রগতি হয়নি। তবে অন্যান্য শর্ত পূরণ হওয়ায় আগামী জুনেই ঋণের চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের আশা করছে সরকার। এ অবস্থায় ঋণের শর্ত বাস্তবায়ন পরিস্থিতি পর্যালোচনায় ফের ঢাকায় আসছে আইএমএফ মিশন।
আজ শনিবার আইএমএফ প্রতিনিধি দলটি ঢাকায় পৌঁছাবে। রোববার থেকে টানা দুই সপ্তাহ সরকারের বিভিন্ন দপ্তরের সঙ্গে আলোচনা করবে তারা। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ, জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর), বিদ্যুৎ বিভাগ, বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি), জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সঙ্গে তাদের বৈঠক হওয়ার কথা রয়েছে। অর্থ উপদেষ্টা ড.
আইএমএফের সঙ্গে ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ কর্মসূচি শুরু হয় ২০২৩ সালের ৩০ জানুয়ারি। ২০২৬ সাল নাগাদ পুরো অর্থ পাওয়ার কথা। ইতোমধ্যে তিন কিস্তি বাবদ ২৩০ কোটি ডলার ছাড় হয়েছে। এ ঋণ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশকে প্রতিটি কিস্তি পেতে কিছু শর্ত পরিপালন করতে হচ্ছে। চতুর্থ কিস্তির সাড়ে ৬৪ কোটি ডলারের জন্য গত বছরের জুনভিত্তিক বিভিন্ন শর্ত বাস্তবায়ন করতে বলা হয়েছিল।
চতুর্থ কিস্তির জন্য দেওয়া শর্তের বাস্তবায়ন অগ্রগতি দেখতে গত বছরের ৩ ডিসেম্বর ঢাকা সফরে আসে আইএমএফের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল। গত ৫ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকে এ প্রস্তাব ওঠার কথা ছিল। পরে তারিখটি পিছিয়ে করা হয় ১২ মার্চ। ওই তারিখেও প্রস্তাব ওঠেনি। আবার তা পিছিয়ে গেছে আগামী জুনে।
এদিকে গত ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিবৃতিতে বলা হয়, সরকার ও আইএমএফের যৌথ সম্মতিতে চতুর্থ ও পঞ্চম দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের সিদ্ধান্ত হয়েছে। বাজেট সাপোর্ট প্রোগ্রামের আওতায় যে সব সংস্কার কার্যক্রম নেওয়া হয় তার মধ্যে কিছু কার্যক্রম বাস্তবায়নে নির্ধারিত সময়ের চেয়ে বেশি সময় প্রয়োজন হতে পারে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কিছু শর্ত পূরণ না হলেও আগের কয়েকটি কিস্তি তারা বাংলাদেশের অনুরোধে দিয়েছে। তবে সর্বশেষ ঢাকা সফর করে যাওয়া আইএমএফ প্রতিনিধি দল কর অব্যাহতি সুবিধা কমিয়ে রাজস্ব বাড়ানোর তাগিদ দিয়েছে। শর্ত অনুসারে, চলতি অর্থবছরের লক্ষ্যমাত্রা ১২ হাজার কোটি টাকা বেড়ে হয়েছে ৪ লাখ ৯২ হাজার কোটি টাকা। বাড়তি রাজস্ব আহরণের কৌশল হিসেবে উচ্চ মূল্যস্ফীতির মধ্যেই গত জানুয়ারিতে শতাধিক পণ্য ও সেবার ওপর ভ্যাট ও সম্পূরক শুল্ক বাড়ায় সরকার। অবশ্য পরে কিছু পণ্য ও সেবায় শুল্ক-কর কমানো হয়।
জানা গেছে, আইএমএফ ঋণের শর্ত হিসেবে গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত কর আহরণের যে লক্ষ্যমাত্রা ছিল তা থেকে ৫২ হাজার কোটি টাকার বেশি পিছিয়ে ছিল সরকার। এর আগে গত বছরের জুন পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রাও অর্জন হয়নি। মূলত কর সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা পূরণ না হওয়া এবং মুদ্রার বিনিময় হার আপাতত পুরোপুরি বাজারভিত্তিক করতে রাজি না হওয়ায় ঋণের চতুর্থ কিস্তি পিছিয়ে যায়। তবে দুই কিস্তি একসঙ্গে ছাড়ের বিষয়ে সরকার ইতোমধ্যে আইএমএফের সঙ্গে আলোচনা করেছে। রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে আগের মতো কিছুটা ছাড় দিলে এবং নতুন করে কোনো শর্ত না এলে আগামী জুনে অর্থ ছাড়ের আশা করছেন অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
এ পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন শর্তের বাস্তবায়ন পর্যালোচনায় ঢাকায় আসছে আইএমএফ প্রতিনিধি দল। সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে বৈঠক শেষে আগামী ১৭ এপ্রিল সংবাদ সম্মেলন করবে আইএমএফ মিশন। এর আগে অর্থ উপদেষ্টার সঙ্গে তারা আরও একটি বৈঠক করবে বলে জানা গেছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আইএমএফ আইএমএফ ঋণ আইএমএফ র গত বছর র ড স ম বর সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদার ছয় সন্তানের পাঁচজনই মারা গেল
একসঙ্গে জন্ম দেওয়া মোকসেদা আক্তারের ছয় সন্তানের মধ্যে পাঁচজনই মারা গেল। গতকাল রোববার সকালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে জন্ম নেওয়ার পরপরই একটি শিশু মারা যায়। আজ সোমবার দুপুর পর্যন্ত চিকিৎসাধীন অবস্থায় একে একে আরও চার নবজাতকের মৃত্যু হয়।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ কর্মকর্তা মো. ফারুক প্রথম আলোকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার খাজুরিয়া গ্রামের মোকসেদা আক্তার রোববার সকালে একসঙ্গে এই ছয় সন্তানের জন্ম দেন। তাঁর স্বামী মো. হানিফ কাতারপ্রবাসী। মোকসেদা আক্তারের ননদ লিপি বেগম আজ প্রথম আলোকে বলেন, বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকের অবস্থাও বেশি ভালো নয়।
ঢামেক হাসপাতালের গাইনি বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, মোকসেদা তিন ছেলে ও তিন মেয়েসন্তান প্রসব করেন। সন্তানেরা ২৭ সপ্তাহ পূর্ণ হওয়ার আগেই জন্ম নেয়। জন্মের সময় প্রত্যেকের ওজন ছিল ৬০০ থেকে ৯০০ গ্রামে মধ্যে। এ কারণে তাদের সবার অবস্থাই ছিল সংকটজনক।
আরও পড়ুনঢাকা মেডিকেলে একসঙ্গে ছয় সন্তানের জন্ম, নবজাতকদের অবস্থা সংকটাপন্ন২২ ঘণ্টা আগেঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নবজাতক বিভাগে আইসিইউতে পর্যাপ্ত শয্যা খালি না থাকায় তিনজনকে অন্য একটি বেসরকারি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বর্তমানে বেঁচে থাকা একমাত্র নবজাতকটি বেসরকারি হাসপাতালে আছে।