ফ্লাইওভার থেকে ছিটকে নিহত দুই তরুণের পরিচয় মিলেছে
Published: 5th, April 2025 GMT
রাজধানীর পল্লবীর কালশী ফ্লাইওভারে প্রাইভেটকার ও মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে ফ্লাইওভার থেকে ছিটকে পড়ে নিহত দুই তরুণের পরিচয় মিলেছে। তাদের নাম তোফাজ্জাল ও রিয়াদ। তারা দুজন বন্ধু। শুক্রবার রাত ১০টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
পল্লবী থানার এস আই আতিকুর রহমান সমকালকে জানান, তোফাজ্জাল ঢাকায় থাকতেন। রিয়াদ ঢাকায় বেড়াতে এসেছিলেন।
প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাতে পল্লবী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, দুই তরুণ মোটরসাইকেলে করে ফ্লাইওভারে উঠছিলেন। এ সময় একটি টয়োটা সিএইচ-আর মডেলের প্রাইভেটকারের সঙ্গে সংঘর্ষ হয়। এতে পেছনে বসা আরোহী প্রায় ২৫ ফুট নিচে রাস্তায় ছিটকে পড়েন। আশপাশের পথচারীরা তাঁকে দ্রুত উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠান। ঘটনাস্থলে মোটরসাইকেলটি দুমড়েমুচড়ে যায়। এ ছাড়া চালক ফ্লাইওভারের ওপরে ছিটকে পড়েন।
প্রত্যক্ষদর্শী আরেক প্রাইভেটকারচালক আহসান হাবিব বলেন, মোটরসাইকেলে করে যাচ্ছিলেন দুই তরুণ। একটি প্রাইভেটকারের সঙ্গে সংঘর্ষের পর মোটরসাইকেলের পেছনে বসা তরুণ ফ্লাইওভার থেকে নিচে পড়ে যান। আশপাশের লোকজন এসে তাঁকে উদ্ধার করেন। দুর্ঘটনায় মোটরসাইকেলটি ভেঙেচুরে যায়। আহত চালক ফ্লাইওভারে পড়েছিলেন। তাঁর অবস্থা ছিল আশঙ্কাজনক। সংঘর্ষের পর গাড়িটি ফ্লাইওভারের রেলিংয়ে ধাক্কা লেগে দুমড়েমুচড়ে গেছে।
নাইম মাহমুদ নামে আরেক প্রত্যক্ষদর্শী ফেসবুকে লেখেন, ‘ইসিবি থেকে মিরপুর ডিওএইচএসের দিকে কালশী ফ্লাইওভার হয়ে গাড়ি চালিয়ে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ শুনি পেছনে গাড়ির চাকা ফেটে যাওয়ার আওয়াজ। লুকিং গ্লাসে দেখলাম, পেছনে একটা কালো গাড়ি রাস্তার বাঁয়ে লেগে গেল। বাইকের একজন লোক উড়ে ফ্লাইওভার থেকে নিচে রাস্তায় পড়ে গেল। আরেকজন বাইকার গুরুতর আহত।’
তিনি আরও লেখেন, একজন ঘটনাস্থলে মারা যায়। জাতীয় জরুরি সেবা ৯৯৯-এ বারবার কল দেওয়া হয়। তবে তারা সাড়া দিতে অনেক দেরি করে। পরে কিছু লোক পল্লবী থানায় যায়। ততক্ষণে থানা পুলিশ রওনা হয়ে গিয়েছিল।
পুলিশ জানায়, গুরুতর আহত অবস্থায় দু’জনকে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাদের স্থানান্তর করা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে। সেখানে রাত ১২টার দিকে চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন।
হাসপাতাল সূত্র জানায়, নিহত দুই তরুণের বয়স আনুমানিক ২০ বছর।
ঢামেক হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ পরিদর্শক মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন হত ফ ল ইওভ র থ ক স ঘর ষ
এছাড়াও পড়ুন:
এই সরকারও আমলাতন্ত্রের চাপে!
চব্বিশের গণ-অভ্যুত্থান নতুন যে জন-আকাঙ্ক্ষা তৈরি করেছে, সেখানে নিশ্চিত করেই জনপ্রশাসন সংস্কারের প্রশ্নটি নাগরিকদের কেন্দ্রীয় একটি চাহিদা। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকার যেভাবে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের মতোই পদ ছাড়া পদোন্নতি দিচ্ছে, তাতে উদ্বিগ্ন না হওয়ার কোনো কারণ নেই। কেননা, আগের সরকার কর্তৃত্ববাদী ও স্বৈরাচারী হয়ে উঠেছিল যে কয়টা স্তম্ভের ওপর দাঁড়িয়ে, তার অন্যতম আমলাতন্ত্র।
জনপ্রশাসনকে রাজনীতিকরণের বৃত্ত ভেঙে জনবান্ধব করার একটা বড় সুযোগ এনে দিয়েছিল অভ্যুত্থান। কিন্তু শুরু থেকেই অন্তর্বর্তী সরকার আমলাতন্ত্রের ওপর অতিনির্ভরশীল হয়ে ওঠায় সেই সুযোগ অনেকটাই হাতছাড়া হয়েছে। সরকারি কর্মকর্তাদের বিরোধিতার কারণে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের বড় কোনো সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে পারেনি সরকার। অন্যদিকে বেতন বাড়াতে গঠন করা হয়েছে বেতন কমিশন। কিছু মুখকে সরিয়ে দেওয়া ছাড়া জনপ্রশাসনে সেই পুরোনো চর্চা অব্যাহত রয়েছে। বিশেষ করে পদ ছাড়া পদায়নের ক্ষেত্রে জনপ্রশাসনে যেভাবে আগের সরকারের চর্চার ধারাবাহিকতা বজায় রাখা হয়েছে, সেটা যারপরনাই দুঃখজনক।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, উপসচিব স্তরে যেখানে আগে থেকেই পদের চেয়ে ৬০০ কর্মকর্তা বেশি রয়েছেন, সেখানে আগস্ট মাসে নতুন করে ২৬৮ জনকে এই পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে। অতিরিক্ত সচিব পদেও পদোন্নতির আলোচনা শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক সরকারের আমলে জনপ্রশাসনে হরেদরে পদোন্নতি দেওয়ার অনেক নজির আছে। এর কারণ একটাই, আমলাতন্ত্রকে তুষ্ট রাখা। অন্তর্বর্তী সরকার এই চর্চায় ছেদ ঘটাতে পারবে, সেটাই সবাই প্রত্যাশা করেছিল।
পরিহাসের বিষয় হচ্ছে, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়ার পর বেশির ভাগ কর্মকর্তাকে আগের জায়গাতেই রেখে দেওয়া হয়। এর মানে হচ্ছে তাঁরা আগের দায়িত্বই পালন করেন, কিন্তু মাঝখান থেকে বেতন-ভাতা বাড়ে। উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তারা তিন বছর চাকরি পাওয়ার পর বিনা সুদে গাড়ি কেনার জন্য ঋণসুবিধা পান। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অবসরে যাওয়া সরকারি কর্মকর্তাদের যেভাবে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে, তার দৃষ্টান্তও খুব বেশি নেই। অবসরে যাওয়া প্রশাসন ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৬৪ জন কর্মকর্তাকে পদোন্নতি দেওয়া হয়েছে ও অন্য ক্যাডারের ‘বঞ্চিত’ ৭৮ জন অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে ভূতাপেক্ষ পদোন্নতির সুপারিশ করা হয়েছে।
জনপ্রশাসনের মেধাবী ও যোগ্য কর্মকর্তারা পদোন্নতি পেয়ে পরের ধাপে যাবেন, সেটা স্বাভাবিক বিষয়। কিন্তু পদ না থাকার পরও কেন পদায়ন করা হবে? এ ক্ষেত্রে সরকারকে পর্যালোচনা করে দেখা প্রয়োজন, জনপ্রশাসনের বিভিন্ন স্তরে পদ বাড়ানো যায় কি না। আবার যেখানে এমনিতেই পদের বিপরীতে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তার সংখ্যা বেশি, সেখানে অবসরে যাওয়া কর্মকর্তাদের নিয়োগ দেওয়া কতটা যৌক্তিক?
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লোকপ্রশাসন বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও জনপ্রশাসনবিশেষজ্ঞ সালাউদ্দিন এম আমিনুজ্জামান বলেছেন, জনপ্রশাসনে পদ ছাড়া পদোন্নতি দেওয়া যায় না। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে মেধাবীদের পদোন্নতি দেওয়ার সুযোগ রয়েছে। এরপরও কেন এমন পদোন্নতি—সেই ব্যাখ্যায় তিনি বলেছেন, সরকার সম্ভবত আমলাতন্ত্রের চাপে রয়েছে। এই ধারণা শুধু তাঁর একার নয়, নাগরিক পরিসরের
বিস্তৃত একটি ধারণাও। অন্তর্বর্তী সরকারকে অবশ্যই এর পরিষ্কার ব্যাখ্যা হাজির করা উচিত।
মাথাভারী আমলাতন্ত্র সরকারি সেবা নাগরিকের কাছে ঠিকভাবে পৌঁছানোর ক্ষেত্রে বড় একটা বাধা। অন্যদিকে সরকারকে এখানে বিশাল ব্যয়ের বোঝা বহন করতে হয়। ফলে মাঠ প্রশাসন থেকে শুরু করে সিনিয়র সচিব পর্যন্ত একটি সামঞ্জস্যপূর্ণ ও গতিশীল জনপ্রশাসনই সবাই প্রত্যাশা করে। জনপ্রশাসনের সব স্তরে পদোন্নতি রাজনৈতিক বিবেচনায় নয়, মেধার ভিত্তিতেই হতে হবে।