জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের ক্যাম্প শুরু হবে ১৩ এপ্রিল সিলেটে। ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের শেষ রাউন্ডের ম্যাচ খেলে ১২ এপ্রিল রাত থেকে ক্যাম্পে যোগ দেবেন নাজমুল হোসেন শান্তরা। ক্যাম্পের সময় ঘনিয়ে এলেও বিসিবি এখন পর্যন্ত দল ঘোষণা করেনি। নির্বাচক প্যানেল ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের কাছে গতকাল পর্যন্ত চূড়ান্ত স্কোয়াড হস্তান্তর করেনি বলে জানা গেছে।
তবে জাতীয় দল-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, ১৫ না ১৪ জনের দল দেবে এ আলোচনায় আটকে আছেন নির্বাচকরা। মূলত ঢাকা প্রিমিয়ার ক্রিকেটের সুপার লিগের খেলা থাকায় অতিরিক্ত ক্রিকেটার টেস্ট দলে রাখতে চায় না গাজী আশরাফ হোসেন লিপুর নির্বাচক প্যানেল। তবে পেস বোলিং বিভাগে চারজনকে নেওয়া হলে ১৫ জনের স্কোয়াড হতে পারে।
বাংলাদেশের পেস বোলিং এখন শক্তিশালী। দেশের মাটিতেও তিন পেসার নিয়ে খেলার সাহস দেখায়। নির্বাচকরা চান জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তিনজন পেসার নিয়ে খেলুক নাজমুল হোসেন শান্তরা। এ কারণে তাসকিন আহমেদ, হাসান মাহমুদ, নাহিদ রানার সঙ্গে খালেদ আহমেদকে রাখা হতে পারে। তিন পেসার ও দু’জন স্পিনার নিয়ে খেললে বোলার পরিবর্তন করার সুবিধা থাকে।
স্কোয়াডে তিনজন স্পিনার নেওয়া হলেও দু’জনকে খেলানোর পরিকল্পনা। মেহেদী হাসান মিরাজ অলরাউন্ডার হিসেবে আর বাঁহাতি তাইজুল ইসলাম বিশেষজ্ঞ স্পিনার হিসেবে খেলবেন। সে ক্ষেত্রে প্রাথমিক তালিকায় থাকা হাসান মুরাদকে বাদ দেওয়া হলে অফ স্পিনার নাঈম হাসান থাকবেন বিকল্প। অর্থাৎ নাঈম ও মুরাদের যে কোনো একজন জিম্বাবুয়ে সিরিজে থাকবেন।
জিম্বাবুয়ে সিরিজ দিয়ে জাতীয় দলে ফিরবেন মুশফিকুর রহিম ও নাজমুল হোসেন শান্ত। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে খেলা সাহাদাত হোসেন দিপুকে তাই বাদ পড়তে হচ্ছে। মে মাসে নিউজিল্যান্ড ‘এ’ দলের বিপক্ষে হোম সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ ‘এ’। আগস্টে বাংলাদেশ ‘এ’ দল অস্ট্রেলিয়া সফর করবে। দক্ষিণ আফ্রিকা এইচপি দলের বাংলাদেশ সফরের কথা আছে। অমিত হাসানদের এ সিরিজগুলোতে পরখ করে নিতে চান নির্বাচকরা।
সম্ভাব্য স্কোয়াড: নাজমুল হোসেন শান্ত (অধিনায়ক), মেহেদী হাসান মিরাজ, সাদমান ইসলাম, মাহমুদুল হাসান জয়, মুশফিকুর রহিম, মুমিনুল হক, জাকের আলি, মাহিদুল ইসলাম অংকন, তাসকিন আহমেদ, নাহিদ রানা, হাসান মাহমুদ, খালেদ আহমেদ, তাইজুল ইসলাম, নাঈম হাসান ও জাকির হাসান।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
সাকিবের পথে হাঁটছেন মিরাজ
সাকিব আল হাসানের সঙ্গে নিজের তুলনাকে মেহেদী হাসান মিরাজ হয়তো উপভোগই করেন। কারণ, তাঁর স্বপ্ন সাকিবের মতো বিশ্বনন্দিত অলরাউন্ডার হয়ে ওঠা। সেই পথে বোধ হয় গুটি গুটি পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে টেস্টে দেশে-বিদেশে সম্প্রতি ভালো করছেন। পাকিস্তানে দারুণ প্রশংসিত ছিলেন অলরাউন্ড পারফরম্যান্স করে। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দুই টেস্টের হোম সিরিজে উভয় টেস্টে নিজেকে ছাপিয়ে গেলেন। সিলেটের হারের ম্যাচেও ১০ উইকেট ছিল তাঁর। চট্টগ্রামে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট নিয়ে সাকিব ও সোহাগ গাজীর কাতারে নাম লেখালেন। মূলত মিরাজের অলরাউন্ড নৈপুণ্যে ইনিংস ব্যবধানে টেস্ট জেতা সম্ভব হয়।
গতকাল শতকের ঘরে যেতে কম কসরত করতে হয়নি তাঁর। নব্বইয়ের ঘরে গিয়ে তো অনিশ্চয়তায় পড়ে গিয়েছিলেন হাসানের আউটের শঙ্কায়। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হওয়ায় দ্বিতীয় শতকের দেখা পান তিনি। ২০২১ সালে এই চট্টগ্রামেই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরি ছিল মিরাজের। গতকালের পারফরম্যান্স নিয়ে টাইগার এ অলরাউন্ডার বলেন, ‘ব্যাটিংয়ের সময় চেষ্টা করেছিলাম ২ রান নিয়ে ১০০ রানে যেতে। সেভাবে দৌড় দিয়েছিলাম। কিন্তু ফিল্ডারের হাতে বল চলে গিয়েছিল (হাসি)। তার পর তো আল্লাহর ওপর ছেড়ে দিয়েছিলাম। হাসান অনেক ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তানজিমও ভালো সাপোর্ট দিয়েছে। তাইজুল ভাইও। এই তিনজনকেই অনেক অনেক ধন্যবাদ। কারণ, ওদের জন্যই আমি ১০০ রান করতে পেরেছি।’
জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে করা সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট প্রাপ্তিকে নিজের সেরা পারফরম্যান্স দাবি মিরাজের, ‘ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাথে ১০০ করেছিলাম, ৩ উইকেট নিয়েছিলাম। অল্পের জন্য ৫ উইকেট হয়নি। হলে ভালো লাগত। ওই ম্যাচ হেরেছিলাম এই মাঠে। সে জিনিসটা মাথায় ছিল। ভালো লাগছে ম্যাচটি জিতেছি।’ মিরাজ ১৬২ বলে ১১টি চার ও একটি ছয় মেরে ১০৪ রান করেন। ২১ ওভারে ৩২ রান দিয়ে নেন পাঁচ উইকেট।
টেস্টে এ রকম অলরাউন্ড পারফরম্যান্স বাংলাদেশে আর দু’জনের আছে। সাকিব আল হাসান দু’বার ম্যাচে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট পেয়েছেন ২০১১ সালে পাকিস্তানের বিপক্ষে মিরপুরে আর ২০১৪ সালে খুলনায়। সোহাগ গাজী নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে সেঞ্চুরি ও পাঁচ উইকেট শিকার করেন চট্টগ্রামে। সেই মাইলফলক ছোঁয়া মিরাজকে সম্প্রতি অলরাউন্ডার ক্যাটেগরিতে ফেলা হয়। সাকিবের বিকল্প ভাবা হয় তাঁকে এখন।
এ ব্যাপারে মিরাজের অভিমত, ‘দেখেন একটা জিনিস, যখন সাকিব ভাই ছিলেন, ভিন্ন রোল ছিল। এখন ভিন্ন রোল। যেহেতু টিম ম্যানেজমেন্ট, সবাই ব্যাটিংয়ে আস্থা রাখে। আমিও ভেবেছি আমার ব্যাটিংটা গুরুত্বপূর্ণ। এখন হয়তো আমি লিডিং রোল প্লে করছি, আগে সাকিব ভাই করত। এখন আমাদের দায়িত্ব আরও বেশি।’
সিলেটে দুই ইনিংসে পাঁচ উইকেট করে নিয়েও দলকে জেতাতে পারেননি মিরাজ। চট্টগ্রামে সাদমান, তাইজুলের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে ম্যাচ জয়ের নায়ক হন। এই সাফল্য নিয়ে বলেন, ‘সত্যি কথা বলতে, প্রথম ম্যাচ হারার পর যেভাবে কামব্যাক করেছি, এটা খুবই দরকার ছিল। আমাদের সবাই ভেবেছিল, আমরা ভালো করব।’ মিরাজ কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন কোচিং স্টাফ ও সতীর্থের কাছে। আর তাঁর কাছে কৃতজ্ঞতা পুরো দলের।