ফিলিস্তিনের গাজায় এবার স্থানীয় সাংবাদিকদের একটি তাঁবুতে বিমান হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। এতে এক সাংবাদিক নিহত ও নয়জন আহত হয়েছেন। গতকাল সোমবার গাজার দক্ষিণাঞ্চলে এ হামলা চালানো হয়। চিকিৎসক ও স্থানীয় সাংবাদিক ইউনিয়ন এ কথা জানিয়েছে।
ইসরায়েলের হামলায় গাজায় ১৫ প্যারামেডিক ও উদ্ধারকর্মী নিহতের ঘটনায় বৈশ্বিক নিন্দা ও ক্ষোভের মধ্যে এ হামলার ঘটনা ঘটনা ঘটল। এ ঘটনার একটি ভিডিওতে দেখা যায়, ‘ঠান্ডা মাথায়’ তাঁদের হত্যা করে ইসরায়েলি বাহিনী।
খান ইউনিসের নাসের হাসপাতাল কম্পাউন্ডের ভেতরে সাংবাদিকদের অবস্থান করা তাঁবুতে হামলা চালায় ইসরায়েলি বাহিনী। একটি ভিডিওতে হামলার পর লোকজনকে তাঁবুর আগুন নেভাতে দেখা যায়। আরেকটি ভিডিওতে দেখা যায়, আসবাব ও বিভিন্ন সরঞ্জামসহ তাঁবুটি পুড়ে মাটির সঙ্গে মিশে গেছে।
একাধিক ছবিতে দেখা যায়, হামলার পর তাঁবুতে একজন সাংবাদিককে পুড়তে দেখা যায়। তাঁকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন আরেকজন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এসব ছবি ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়ে।
২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা শুরুর পর এ নিয়ে ২১০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।নিহত ওই সাংবাদিক হেলমি আল-ফাকাবি। পরে তাঁর জানাজায় অংশ নেন কয়েক ডজন সাংবাদিক ও তাঁর আত্মীয়-স্বজন। ফাকাবির সহকর্মী আবদ শায়াত বলেন, ‘আমরা খবর সরবরাহ করে যাব এবং গোটা বিশ্বের কাছে সত্য তুলে ধরব। এটা আমাদের মানবিক দায়িত্ব।’
প্যালিস্টিনিয়ান জার্নালিস্ট সিন্ডিকেটের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা শুরুর পর এ নিয়ে ২১০ সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
১ এপ্রিল ওয়াটসন ইনস্টিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড পাবলিক অ্যাফেয়ার্সের প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গাজায় ইসরায়েলের যুদ্ধ স্মরণকালে সাংবাদিকদের জন্য সবচেয়ে প্রাণঘাতী। ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর থেকে ২৩২ সাংবাদিককে হত্যা করেছে ইসরায়েল।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়, এ হিসাব অনুযায়ী দুই বিশ্বযুদ্ধ, ভিয়েতনাম যুদ্ধ, যুগোস্লাভিয়ার যুদ্ধ এবং আফগানিস্তানে যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধ মিলিয়ে যত সাংবাদিক নিহত হয়েছেন, গাজায় তার চেয়েও বেশি সাংবাদিক নিহত হয়েছেন।
মার্কিন– ফিলিস্তিনি কিশোরকে হত্যাএদিকে ফিলিস্তিনের পশ্চিম তীরে ইসরায়েলিদের গুলিতে মার্কিন নাগরিক এক ফিলিস্তিনি কিশোর নিহত হয়েছেন। গত রোববার ফিলিস্তিনি কর্মকর্তারা এ কথা জানিয়েছেন। নিহত ওমর মোহাম্মদ রাবিয়ার বয়স ১৪ বছর।
তুরমুস আয়া শহরের মেয়র আদীব লাফি বলেন, তুরমুস আয়ার প্রবেশমুখে ওমরসহ তিন কিশোরকে গুলি করে এক সশস্ত্র ইসরায়েলি বসতি স্থাপনকারী। এরপর তাকে আটক করে ইসরায়েলি বাহিনী। পরে ওমরকে মৃত ঘোষণা করা হয়।
এ ঘটনাকে শহরে অভিযান চালানোর সময় ইসরায়েলি বাহিনীর বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড আখ্যা দিয়ে নিন্দা জানিয়েছে ফিলিস্তিনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। তারা বলেছে, এটি ইসরায়েলের অব্যাহত দায়মুক্তিরই ফল।
ইসরায়েলের সেনাবাহিনী এক বিবৃতিতে বলেছে, বেসামরিক নাগরিকদের জীবন ঝুঁকিতে ফেলা সন্ত্রাসীদের লক্ষ্য করে সেনারা গুলি ছুড়েছেন। এক সন্ত্রাসীকে হত্যা করা হয়েছে। জখম হয়েছে আরও দুই সন্ত্রাসী।
এদিকে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৫৭ ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১৩৭ জন। গাজার সরকারি গণমাধ্যম দপ্তর গতকাল এ তথ্য জানিয়েছে। গত ১৮ মার্চ নতুন করে হামলা শুরুর পর গাজায় ১ হাজার ৩৯১ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ৩ হাজার ৪৩৪ জন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলা শুরুর পর এখন পর্যন্ত ৫০ হাজার ৭৫২ জন নিহত হয়েছেন। আহত হয়েছেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৪৭৫ জন।
‘হামাস বা ইসরায়েল গাজা শাসন করবে না’মিসর সফররত ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাখোঁ বলেছেন, গাজায় ইসরায়েলের অব্যাহত হামলা এবং যুদ্ধবিরতি লঙ্ঘনের নিন্দা জানায় ফ্রান্স। তিনি অনতিবিলম্বে ইসরায়েলি জিম্মিদের নিঃশর্ত মুক্তি এবং যুদ্ধবিরতির আলোচনায় ফেরার আহ্বান জানিয়েছেন।
গতকাল কায়রোয় এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মাখোঁ বলেন, ‘কোনো বাসিন্দাকে তাঁদের ভূমি থেকে জোরপূর্বক অন্যত্র সরিয়ে দেওয়ার পাশাপাশি গাজা উপত্যকা ও পশ্চিম তীরকে দখলে নেওয়ার বিরুদ্ধে আমাদের অবস্থান।’
গাজা পুনর্গঠনে আরব দেশগুলোর দেওয়া প্রস্তাবের প্রতি সমর্থন জানিয়ে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট বলেন, এটা গাজার প্রতি বাস্তবসম্মত সমর্থন এবং এটি গাজা উপত্যকায় নতুন প্রশাসনের দায়িত্ব গ্রহণের পথ খুলে দেবে। তিনি বলেন, গাজা শাসনে হামাস কিংবা ইসরায়েল অংশ হতে পারবে না।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ জ য় ইসর য় ল ২০২৩ স ল র ইসর য় ল র শ র র পর
এছাড়াও পড়ুন:
আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন হলে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় একসঙ্গে দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ গতকাল শুক্রবার তার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের এ তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের এ বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে হতে পারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আর পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। গত বছরও তাই হয়েছে। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। মার্কিন প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।
পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে শর্ত পরিপালন নিয়ে দর–কষাকষিতে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল মূলত মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চাইলেও করতে চাইছিল না সরকার।
সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।