লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে দুই পক্ষের সংঘর্ষে বিএনপি কর্মী সাইজ উদ্দিন দেওয়ান (৪০) নিহতের ঘটনার জেরে অন্তত ১৫টি বাড়িতে হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মঙ্গলবার (৮ এপ্রিল) সকালে উপজেলার উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের বাবুরহাট এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। এসময় বাড়ির মালামাল লুট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন ভুক্তভোগীরা।

রায়পুর উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব জিএম শামীমের অনুসারীরা হামলার সঙ্গে জড়িত বলে দাবি করেছেন ভুক্তভোগীরা। 

আরো পড়ুন:

কক্সবাজারে রেস্টুরেন্টে হামলার ঘটনায় মামলা, আসামি ৩০০

খুলনায় বাটা ও কেএফসি’র শো রুমে হামলা-ভাঙচুর 

নিহত বিএনপিকর্মী সাইজ উদ্দিন উত্তর চরবংশী ইউনিয়নের চরঘাষিয়া গ্রামের বাসিন্দা। তিনি তিন মাস আগে স্পেন থেকে দেশে আসেন। সাইজ উদ্দিন জিএম শামীম গাজীর অনুসারী ছিলেন।

এলাকাবাসী জানান, আজ সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা রুহুল আমিন খান, আব্দুল গণি খান, কাশেম খান, এমদাদুল্লাহ গাজী, আরিফ ও তারেক মুহুরীসহ কয়েকজনের বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। তারা উপজেলা বিএনপির সদস্য ফারুক কবিরাজের অনুসারী হিসেবে পরিচিত।

প্রত্যক্ষদর্শী ও বিএনপির দলীয় সূত্র জানান, গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর উত্তর চরবংশী ইউনিয়নে উপজেলা কৃষক দলের সদস্য সচিব জিএম শামীম গাজী ও উপজেলা বিএনপির সদস্য ফারুক কবিরাজের লোকজনের মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এর জেরে দুই দফায় শামীম ও ফারুকের নেতাকর্মীদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এ কারণে ওই ইউনিয়ন বিএনপি, যুবদল, ছাত্রদল, কৃষক দলসহ সব সহযোগী সংগঠনের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়। 

গতকাল সোমবার বেঁড়ি ও বাবুরহাট এলাকায় কৃষক দল নেতা শামীম গাজী এবং ফারুক কবিরাজের অনুসারী হিসেবে পরিচতি ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক দলের যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক গাজীর লোকজন সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়ে। এতে একজন নিহত ও অন্তত ১৫ জন আহত হন। এরই জেরে আজ মঙ্গলবার দুপুরে ফের হামলা চালিয়ে শামীম গাজীর অনুসারীরা ফারুক কবিরাজের লোকজনের বাড়িতে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। পরে এলাকাবাসী আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।

দুই পক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষ, হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনায় এলাকায় থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে।

বাড়ি ভাঙচুর হওয়া রুহুল আমিনের ভাই আলা উদ্দিন মাস্টার বলেন, ‍“বাড়ি ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে শামীমের লোকজন। তারা মালামাল লুট করে নিয়ে গেছে। বর্তমানে পরিবার নিয়ে খোলা আকাশের নিচে আছি। প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করছি।” 

রায়পুর থানার ওসি নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, “সংঘর্ষে এক ব্যক্তি নিহত এবং ১৫ জন আহত হন। এ ঘটনায় কাউকে আটক করা সম্ভব হয়নি। কেউ থানায় কোনো মামলাও করেননি। মামলা করলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। ঘটনাস্থলে এখনো উত্তেজনা বিরাজ করছে। কয়েকটি বাড়িতে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। পুলিশ গিয়ে স্থানীয়দের সহযোগিতায় আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে।”

ঢাকা/জাহাঙ্গীর/মাসুদ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এনপ আগ ন অভ য গ জ র অন স র র ল কজন র সদস য য গ কর স ঘর ষ ব এনপ র ঘটন উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস

রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।

‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।

এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।

বর্ষার ফুলের উৎসব

বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!

রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।

এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।

সম্পর্কিত নিবন্ধ