প্রতিষ্ঠার ২৫ বছরে এসেও মাঠপর্যায়ে কোনো কাজ করতে পারেনি বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, এই অধিদপ্তরের প্রয়োজন আছে। তবে এভাবে নিষ্ক্রিয় থাকলে প্রতিষ্ঠানটির থাকা না–থাকা সমান কথা।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত অধিদপ্তর তিনটি প্রকল্প বাস্তবায়ন করেছে, সব কটি সমীক্ষা প্রকল্প। মাঠপর্যায়ে বাস্তবায়নের জন্য কয়েকটি প্রকল্পের প্রস্তাব দেওয়া হলেও সেগুলো ঝুলে আছে। এ ছাড়া মাঠপর্যায়ে কাজ করার মতো জনবল নেই। অধিদপ্তরটিতে বর্তমান নয়জন কর্মকর্তা আছেন, তাঁরাও প্রেষণে এসেছেন। স্থায়ী কর্মচারী ২৯ জন।

অধিদপ্তরের প্রয়োজনীয় অবকাঠামোও গড়ে ওঠেনি। তাদের প্রধান কার্যালয় রাজধানীর পান্থপথসংলগ্ন পানি ভবন প্রাঙ্গণে। সেখানে তাদের কার্যক্রম পরিচালিত হয় আধা পাকা একটি ভবনে। সুনামগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনায় তিনটি আঞ্চলিক কার্যালয় রয়েছে। সেগুলোও কয়েকজন কর্মচারী দিয়ে কোনোরকমে টিকিয়ে রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া এখনো আইনি কাঠামোর ওপর দাঁড়াতে পারেনি এই অধিদপ্তর। ‘বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি সুরক্ষা, উন্নয়ন ও ব্যবস্থাপনা আইন’–এর খসড়া ২০২২ সালে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছে অধিদপ্তর। সেটি মন্ত্রণালয়েই পড়ে আছে।

মাঠপর্যায়ে এখনো কাজ করা সম্ভব হয়নি বলে স্বীকার করেন অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মো.

আখতারুজ্জামান। অবশ্য তিনি প্রথম আলোকে এ–ও বলেন, জনবল ও অবকাঠামোর সক্ষমতা বাড়িয়ে অধিদপ্তরকে কার্যকর করার উদ্যোগ তাঁদের আছে। এ ছাড়া কিছু প্রকল্প বাস্তবায়নের চেষ্টা চলছে। এসবের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্যের সুরক্ষা, জলাভূমি অঞ্চলের গ্রামের সুরক্ষা, সেডিমেন্ট (বালু, বালুমাটি ও নুড়িপাথর) ব্যবস্থাপনা, গাছ লাগানো, মাছ ছাড়া, পর্যটন বিকাশের কাজ বাস্তবায়ন করা হবে।

সক্রিয় থাকলে অধিদপ্তরের প্রয়োজন আছে। তারা অনেক অবদান রাখতে পারবে। আর যদি এভাবে নিষ্ক্রিয় থাকে, তাহলে এর প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না।কাসমির রেজা, সভাপতি, পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থামাত্র তিনটি সমীক্ষা জরিপ

গত বছরের মে, জুন ও জুলাই মাসে তিন দফায় বন্যার কবলে পড়ে সিলেট ও সুনামগঞ্জ। বন্যার অন্যতম কারণ ছিল হাওরাঞ্চল দিয়ে উজানের পানি দ্রুত ভাটিতে নেমে যেতে না পারা। প্রথম আলোকে এমনটাই জানিয়েছিল বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণকেন্দ্র। তাদের ভাষ্য, কয়েক বছর ধরে হাওরাঞ্চল দিয়ে পানি নামার গতি কমে গেছে।

কিশোরগঞ্জ জেলার ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রামে অলওয়েদার সড়কের মতো হাওরাঞ্চলে অনেক সড়ক ও স্থাপনা গড়ে উঠেছে, যা পানিপ্রবাহে বাধা তৈরি করছে। এ কারণে সেডিমেন্ট সাগরে যেতে পারছে না। এ কারণে হাওরাঞ্চল তার বৈশিষ্ট্য হারাচ্ছে। এতে এসব অঞ্চলের মানুষ দুর্ভোগ ও ক্ষতির মুখে পড়ছেন, জীবিকা হারাচ্ছেন।

সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, বছরের পর বছর এমন পরিস্থিতি থাকলেও এর সুরাহা করতে পারছে না হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর। যদিও সরকারের দায়িত্বশীল এই অধিদপ্তরের রূপকল্প হলো হাওর ও জলাভূমি অঞ্চলের জনগণের টেকসই জীবনমান উন্নয়ন ঘটানো। আর লক্ষ্য হলো হাওর ও জলাভূমি অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য সুরক্ষা, বন্যা ব্যবস্থাপনা ও অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি করা।

সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র বলছে, গত ২০ ফেব্রুয়ারি ভূমি মন্ত্রণালয়কে একটি চিঠি দিয়েছে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তর। সেখানে অধিদপ্তর বলেছে, দেশের ৪৩ শতাংশ এলাকা জলাভূমি, যা বর্তমানে মারাত্মক হুমকির মুখে রয়েছে। এর কারণ ব্যাখ্যা করে চিঠিতে বলা হয়েছে, সীমান্তের ওপার থেকে প্রতিবছর বৃষ্টির পানি ও পাহাড়ি ঢলের সঙ্গে প্রায় ১ বিলিয়ন বা ১০০ কোটি টন সেডিমেন্ট দেশে আসছে। এই বিপুল পরিমাণ সেডিমেন্টের বড় অংশই সমুদ্রে যেতে পারছে না। ফলে নদ–নদী, খাল–বিল, হাওর–বাঁওড়সহ সব ধরনের জলাভূমি ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এ কারণে আকস্মিক বন্যা ও মরুকরণের ঝুঁকিও রয়েছে।

এ অবস্থা থেকে উত্তরণের উপায় নিয়মিত সেডিমেন্ট উত্তোলন ও ব্যবস্থাপনা উল্লেখ করে চিঠিতে আরও বলা হয়েছে, দেশে প্রতিবছর প্রায় ১৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন (১৪৫ কোটি) মেট্রিক টন বালু, বালুমাটি ও নুড়িপাথর বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ডে ব্যবহারের প্রয়োজন হয়। উজান থেকে আসা সেডিমেন্ট এখানে ব্যবহার করা যেতে পারে। বাকি অংশ সিঙ্গাপুর, মালদ্বীপসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোয় রপ্তানি করা যেতে পারে।

অধিদপ্তরের শীর্ষস্থানীয় একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে বিভিন্ন বিষয়ে মাঝেমধ্যে চিঠি দিয়ে থাকে অধিদপ্তর। তবে সরকার গুরুত্ব দেয় না। সে কারণে অধিদপ্তরেও কাজ হচ্ছে না।

‘নিষ্ক্রিয় থাকলে প্রয়োজন নেই’

১৯৭৭ সালে গঠিত হয় ‘বাংলাদেশ হাওর উন্নয়ন বোর্ড’। তবে ১৯৮২ সালে সরকারের এক আদেশে তা বিলুপ্ত করা হয়। এর প্রায় দুই দশক পর ২০০০ সালে আবার গঠন করা হয় ‘বাংলাদেশ হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন বোর্ড’। এই বোর্ডকে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের একটি বিভাগ হিসেবে গঠনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় ২০১৪ সালের নভেম্বরে। তবে ২০১৬ সালের জুলাইয়ে এটিকে অধিদপ্তর হিসেবে গঠন করা হয়।

জীববৈচিত্র্য সংরক্ষণ এবং অবকাঠামো ও জীবনমানের উন্নয়নে হাওর ও জলাভূমি উন্নয়ন অধিদপ্তরের কার্যক্রম চোখে পড়েনি বলে জানান পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘সক্রিয় থাকলে অধিদপ্তরের প্রয়োজন আছে। তারা অনেক অবদান রাখতে পারবে। আর যদি এভাবে নিষ্ক্রিয় থাকে, তাহলে এর প্রয়োজন আছে বলে মনে করি না। এভাবে থাকা না–থাকা একই কথা।’

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প রথম আল ক ক র য় থ কল ল দ শ হ ওর ম ঠপর য য় প রকল প অবক ঠ ম

এছাড়াও পড়ুন:

আজ মুখোমুখি শ্রীলঙ্কা-আফগানিস্তান, যে ম্যাচে ঝুলছে বাংলাদেশের ভাগ্য

এশিয়া কাপে আজকের রাত যেন এক নাটকীয় অধ্যায়। ‘বি’ গ্রুপের শেষ ম্যাচে আবুধাবির মাঠে মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৮টায় শুরু হওয়া এই লড়াই কেবল দুই দলের নয়, এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের ভাগ্যও। কোটি টাইগার সমর্থক তাই আজ তাকিয়ে থাকবে টিভি পর্দায়। কারণ, এই ম্যাচেই নির্ধারিত হবে, বাংলাদেশ কি সুপার ফোরে উড়াল দেবে, নাকি গ্রুপ পর্বেই শেষ হবে স্বপ্নযাত্রা।

গ্রুপের সমীকরণ এখন টানটান নাটকের মতো। তিন ম্যাচে পূর্ণ ৪ পয়েন্ট নিয়ে শীর্ষে শ্রীলঙ্কা। সমান ৪ পয়েন্ট থাকলেও রান রেটে পিছিয়ে দ্বিতীয় স্থানে বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের ঝুলিতে আছে ২ পয়েন্ট; এক জয় ও এক হারের ফল। হংকং অবশ্য তিন ম্যাচেই হেরে অনেক আগেই বিদায় নিয়েছে।

আরো পড়ুন:

আমিরাতকে হারিয়ে সুপার ফোরে পাকিস্তান

আরব আমিরাতকে ১৪৭ রানের টার্গেট দিল পাকিস্তান

এখন হিসাবটা এমন—
আফগানিস্তান হেরে গেলে বাংলাদেশ নিশ্চিতভাবেই সুপার ফোরে।
আফগানিস্তান জিতলে সমীকরণ জটিল হবে। তখন শ্রীলঙ্কা, আফগানিস্তান ও বাংলাদেশের পয়েন্ট সমান ৪ হলেও নেট রান রেটে স্পষ্ট এগিয়ে থাকবে আফগানরা (২.১৫০)। শ্রীলঙ্কার রান রেট ১.৫৪৬, আর বাংলাদেশ অনেক পিছিয়ে -০.২৭০-তে।

অর্থাৎ আফগানিস্তান যদি জেতে, তবে বাংলাদেশকে তাকিয়ে থাকতে হবে এক অসম্ভব সমীকরণের দিকে। সেটা হলো- লঙ্কানদের অন্তত ৭০ রানের ব্যবধানে হারতে হবে এবং তা করতে হবে ৫০ বল হাতে রেখে। অন্যথায় রান রেটের খেলায় পিছিয়েই থাকতে হবে টাইগারদের। তবে বৃষ্টি যদি হানা দেয় কিংবা ম্যাচ কোনো কারণে পরিত্যক্ত হয়, তাহলে বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কা দু’দলই নিশ্চিতভাবেই চলে যাবে সুপার ফোরে।

ম্যাচকে ঘিরে দুই শিবিরেই চাপ-উত্তেজনার আবহ। আফগানিস্তানের অভিজ্ঞ অলরাউন্ডার গুলবাদিন নাইব মনে করেন, চাপটা আসলে শ্রীলঙ্কার ওপরই বেশি, “আমরা এসব টুর্নামেন্ট খেলতে অভ্যস্ত, আমাদের কোনো চাপ নেই। শ্রীলঙ্কা ভালো দল ঠিকই, তবে তারাও চাপে থাকবে। আমার মনে হয় দারুণ একটা ম্যাচ হবে।”

অন্যদিকে শ্রীলঙ্কার অলরাউন্ডার দাসুন শানাকা বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টেনে বলেন, “প্রতিটি ম্যাচই আমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। হ্যাঁ, বাংলাদেশের সমর্থকরা আমাদের জয়ের জন্য অপেক্ষা করছে। আমরাও জয়ের লক্ষ্যেই মাঠে নামব।”

হংকংয়ের বিপক্ষে জিতলেও শ্রীলঙ্কাকে ঘাম ঝরাতে হয়েছিল। সেই অভিজ্ঞতা বলছে, আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়টা সহজ হবে না তাদের জন্যও। শেষ পর্যন্ত কারা হাসবে জয়ের হাসিতে, আর কোন সমীকরণে দাঁড়াবে বাংলাদেশের ভাগ্য; এই প্রশ্নের উত্তরই দেবে আজকের আবুধাবির রাত।

ঢাকা/আমিনুল

সম্পর্কিত নিবন্ধ