সোনারগাঁয়ে পুত্রবধূর মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে ভুক্তভোগী শাশুড়ীর সংবাদ সম্মেলন
Published: 9th, April 2025 GMT
সোনারগাঁ উপজেলার চরগোয়ালদী এলাকায় নিলুফা আক্তার নামে এক গৃহবধূর সাজানো মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন, বিভ্রান্তিমূলক সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছেন মালেয়সিয়া প্রবাসী শাহ জালালের বৃদ্ধা মা ও তার স্বজনরা।
সংবাদ সম্মেলনে তারা দাবি করেন, আমাদের পরিবার ও স্বজনদের জড়িয়ে সম্প্রতি মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে যাহা সম্পূর্ণ মিথ্যা বানোয়াট ও উদ্দেশ্য প্রণোদিত।
বুধবার সকালে চরগোয়ালদী এলাকায় মালেয়সিয়া প্রবাসী শাহ জালালের নিজ বাড়িতে মিথ্যা সংবাদ প্রকাশের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেন ভূক্তভোগী পরিবারের লোকজন।
প্রবাসী শাহ জালালের বৃদ্ধা মা বলেন, আমার ছেলে দীর্ঘদিন ধরে প্রবাসে থাকায় আমার পুত্রবধূ নিলুফা আক্তার সংসারে মনোযোগী না হয়ে সময় অসময় বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায়। ছেলের সংসারে আমার দুইজন নাতি নাতনি রয়েছে।
তাদের ঠিকমত লালন পালন না করে বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ায় এতে বাধা দিলে আমাকে মারধর করে। আমার ছেলে প্রবাস থেকে ছেলে মেয়ের লালন পালন ও সংসার খরচের জন্য প্রতি মাসে টাকা পাঠায়।
সম্প্রতি আমার পুত্রবধূ নিলুফার চালচলন বাজে আচরন ও বিভিন্ন জায়গায় ঘুরে বেড়ানোর বিষয় আমার ছেলেকে অবগত করি। এরই সূত্র ধরে পুত্রবধূ নিলুফা আমাকে ও আমার মেয়েকে মারধর করে। কিছু হলেই বলে আমার বাড়িতে চুলা জ্বলবেনা না তুই না খেয়ে মরবি বুড়ি।
এ ব্যাপারে আমার প্রবাসী ছেলেকে আমি যখনই কিছু বলতে যাই তখনই আমার গায়ে হাত তোলে এবং স্থানীয় কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তিদের নিয়ে আমাকে হুমকি-দামকি দিয়ে থাকেন এবং আমার নামে মিথ্যা অভিযোগ করেন।
নিলুফা আক্তার শান্তিনগর পাঁচানী এলাকার মৃত মোস্তফা মিয়ার মেয়ে। এ বিষয়ে সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ওসি বরাবর আবেদন রইল তিনি যেন সঠিক তদন্ত করে দোষীদের আইনের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করেন।
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: স ন রগ ও ন র য়ণগঞ জ প ত রবধ প রব স
এছাড়াও পড়ুন:
খুলনায় এক মাসে ১৩ লাশ উদ্ধার, বাড়ছে উদ্বেগ
বাড়িতে ঝগড়া চলছিল বড় ভাই ও ভাবির। ছোট ভাই এসে ঝগড়া থামানোর চেষ্টা করেন। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে বড় ভাই ছোট ভাইয়ের মাথায় শাবল দিয়ে আঘাত করেন। মাটিতে লুটিয়ে পড়লে ধারালো বঁটি দিয়ে ছোট ভাইকে হত্যা করেন। পরে বড় ভাই শহিদুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তিনি এখন কারাগারে। ঘটনাটি ঘটেছে গত ৩০ মে, খুলনার কয়রা উপজেলার বাগালী ইউনিয়নের উলা গ্রামে।
এর আগে ২৭ মে কয়রার ইসলামপুর গ্রামের কয়রা নদীর চর থেকে শিকলে বাঁধা অবস্থায় আবদুল মজিদ (৬২) নামের এক বৃদ্ধের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়া ৮ জুন কয়রার কাছারিবাড়ি বাজার-সংলগ্ন পুকুর থেকে নমিতা (৪০) নামের এক নারীর লাশ উদ্ধার করা হয়।
১০ জুন কয়রা সদরের গোবরা সড়কে এক ভ্যানচালকের সঙ্গে এক মোটরসাইকেলচালকের কথা-কাটাকাটিকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে সংঘর্ষ হয়। এতে আহত হন অন্তত ১৫ জন। ঘটনায় ১২ জনকে আসামি করে থানায় মামলাও হয়েছে। এ ছাড়া কথা-কাটাকাটির জেরে কয়রার পল্লীমঙ্গল গ্রামে গত তিন দিনে কয়েক দফা মারামারি, হামলা ও ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে।
অসন্তোষ-দ্বন্দ্বের জেরে কয়রা উপজেলাসহ বিভিন্ন এলাকায় হত্যা–সংঘর্ষের ঘটনা ঘটছে। ১০ মে থেকে ৯ জুন পর্যন্ত এক মাসে খুলনার ১০টি থানা এলাকায় হত্যাকাণ্ডের ঘটনাসহ ১৩টি লাশ উদ্ধার হয়েছে। এ নিয়ে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়ছে।
কয়রা কপোতাক্ষ মহাবিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিভাগের শিক্ষক বিদেশ রঞ্জন মৃধা বলেন, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উপাদান কমে যাওয়ায় মানুষ অসহিষ্ণু হয়ে উঠছে। মূল্যবোধ ও ভারসাম্য নষ্ট হয়ে মানুষের মধ্যে মনুষ্যত্ব ও ভালোবাসা কমে যাচ্ছে। এতে খুনখারাবি বাড়ছে। একসময় সমাজের একজনের ভালোতে সবাই আনন্দ পেতেন। নেতিবাচক দিকগুলো ঐক্যবদ্ধভাবে প্রতিরোধ করতেন। এখন সেই ব্যবস্থা উঠেই গেছে বলা যায়। পাশাপাশি রাজনৈতিক আধিপত্যের লড়াইয়ে প্রভাববলয় সৃষ্টি করতেও সহিংসতার ঘটনা ঘটছে।
৩ জুন খুলনা শহরে দুর্বৃত্তের ছুরিকাঘাতে সবুজ হাওলাদার (৩০) নামের এক যুবকের মৃত্যু হয়। ৪ জুন খুলনা সদর থানার মতিয়াখালী খালের মধ্যে আটকে ছিল এক নারীর মরদেহ। পরে পুলিশ গিয়ে মরদেহ উদ্ধার করে। ওই নারীর পরিচয় না পেয়ে বেওয়ারিশ হিসেবে আঞ্জুমান মুফিদুলে দাফন করা হয়। গত ৯ জুন বিকেলে রূপসা উপজেলার আঠারোবেকী নদীতে পাওয়া যায় অজ্ঞাতনামা যুবকের মরদেহ। মরদেহের শ্বাসনালিতে গভীর ক্ষতচিহ্ন ছিল। রূপসা নৌ পুলিশের ওসি আবুল খায়ের বলেন, ধারণা করা হচ্ছে, এটি একটি হত্যাকাণ্ড।
এ বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে রহস্য উদ্ঘাটন ও অপরাধী শনাক্তে দীর্ঘসূত্রতার কারণেই অপরাধ বেড়ে চলেছে বলে মনে করেন বাংলাদেশ মানবাধিকার ব্যুরোর কয়রা উপজেলা শাখার সভাপতি তরিকুল ইসলাম। তাঁর ভাষ্য, প্রতিটি ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্ত শেষে দোষীদের আইনের আওতায় এনে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারলে অপরাধপ্রবণতা কমে আসবে। আইনি প্রক্রিয়ায় দীর্ঘসূত্রতার কারণে অপরাধ বেড়ে চলেছে।
কয়রা উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সভাপতি ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রুলী বিশ্বাস বলেন, সম্প্রতি ঘটে যাওয়া কয়েকটি ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা বাড়ছে, এটা ঠিক। তবে প্রতিটি ঘটনায় পুলিশও তাৎক্ষণিকভাবে আইনি ব্যবস্থা নিয়েছে। আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সবাইকে এগিয়ে আসতে হবে। যে বিষয়গুলো পারস্পরিক সৌহার্দ্য ও সামাজিক ভ্রাতৃত্ববোধের মধ্য দিয়ে সমাধান করা যায়, সেখানে খুনাখুনি, অস্থিরতা, মামলা-হামলার মধ্য দিয়ে একধরনের বিভীষিকাময় পরিবেশ সৃষ্টি করা হচ্ছে; যা সবার জন্যই অকল্যাণকর ও ভয়ানক।