পুলিশ কর্মকর্তা ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে চাঁদা দাবির অভিযোগ
Published: 10th, April 2025 GMT
পুলিশের এএসআই ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে হত্যার হুমকি ও চাঁদা দাবির অভিযোগে শেরপুর আদালতে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার শহরের সজবরখিলা মহল্লায় সংবাদ সম্মেলন করে বিষয়টি জানিয়েছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী।
লিখিত বক্তব্যে ব্যবসায়ী হারুনুর রশিদ বলেন, তাঁর ব্যবসায় আর্থিক সংকট দেখা দিলে গৌরিপুর মহল্লার বাসিন্দা পুলিশ কর্মকর্তা এনামুল কবির ওরফে তোতা ও তাঁর স্ত্রী সদর উপজেলার চৈতাজানী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক শামীমা আক্তার শিল্পীর কাছ থেকে চার লাখ টাকা সুদে ধার করেন। চুক্তি হয় প্রতি মাসে সুদ দিতে হবে ২০ হাজার টাকা। কয়েক মাস সুদের টাকা পরিশোধও করেন। এর মধ্যে শামীমা খাতুন শিল্পী অসুস্থ হয়ে পড়েন। এ সময় তিনি চিকিৎসার জন্য ভারতে যাবেন বলে টাকা ফেরত চান।
এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনজন সাক্ষী রেখে তিনি ৪ লাখ ১০ হাজার টাকা এএসআই এনামুল কবিরকে বুঝিয়ে দেন। এ ঘটনার কয়েক দিন পর গত ৬ এপ্রিল রাত ৯টার দিকে ৩-৪ জন সন্ত্রাসীসহ এনামুল কবীর ফের তাঁর দোকানে যান এবং তাঁর কাছে ৫ লাখ টাকা দাবি করেন। না দিলে তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি এবং মাদ্রাসা পড়ুয়া ছেলেকে অপহরণ করবেন বলে ঘোষণা দেন। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে আতঙ্কিত হয়ে গত ৮ এপ্রিল আদালতে এএসআই এনামুল কবীরকে একমাত্র আসামি করে একটি মামলা করেছেন।
অভিযোগের ব্যাপারে কথা হয় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের শাজাহানপুর থানায় কর্মরত এএসআই এনামুল কবীর তোতার সঙ্গে। তাঁর বিরুদ্ধে আনা সব অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট দাবি করে তিনি বলেন, হারুনর রশিদের সঙ্গে তাঁর কোনো লেনদেন হয়নি। তাঁর স্ত্রী শিল্পীর কাছ থেকে হাওলাত নেওয়া টাকা পরিশোধ করেননি। এখন টাকা না দিয়ে তাঁকে অসম্মান করার জন্য নানা ফন্দিফিকির করছেন।
শামীমা আক্তার শিল্পীর অভিযোগ, পূর্ব পরিচয় থাকার কারণে হারুনের বিপদে সহায়তা করতে তাঁকে টাকা ধার দেওয়া হয়েছিল। সেই টাকা আত্মসাৎ করার জন্য তিনি মিথ্যা মামলা করেছেন। তাঁর স্বামীর সম্মান নষ্ট করছেন। তিনি বলেন, তাঁর কাছে হারুনের স্বাক্ষর করা চেক ও স্ট্যাম্প রয়েছে। তিনি দ্রুত আইনি পদক্ষেপ নেবেন।
.উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।
মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।
এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।
প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।
মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।
নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।