গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে নীলগাই ও ম্যাকাও পাখির পর গত ২২ মার্চ রাতে বেষ্টনির জাল কেটে আফ্রিকান লেমুর নামের প্রাণী চুরি করে নিয়ে যায় দুর্বৃত্তরা। এর ফলে বর্তমানে এই সাফারি পার্কটি লেমুরশূন্য। দেশের আর কোন সাফারি পার্কেও এ বিলুপ্ত প্রাণীটি নেই।

গাজীপুর সাফারি পার্ক থেকে আফ্রিকান লেমুর চুরির আলোচনার মধ্যেই পার্কের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজনকে বদলি করা হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১০ এপ্রিল) সকালে এই বদলির খবর নিশ্চিত করেছেন বন্য প্রাণী ব্যবস্থাপনা ও প্রকৃতি সংরক্ষণ বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা শারমিন আক্তার।

তবে তিনি জানান, পার্কে চুরির ঘটনায় অথবা দায়িত্বে অবহেলার কারণে নয়, এটি বদলির স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। 

বুধবার (৯ এপ্রিল) পার্কের ওয়াইল্ডলাইফ সুপারভাইজার মো.

আনিছুর রহমানকে রাজশাহী, ফরেস্টার মো. হারুন অর রশিদকে চট্টগ্রাম এবং জুনিয়র ওয়াইল্ডলাইফ স্কাউট মামুনকে বন্য প্রাণী অপরাধ দমন ইউনিটে বদলি করা হয়েছে।

এদিকে, গাজীপুর সাফারি পার্কের লেমুর চুরির ঘটনার পর বুধবার পার্ক পরিদর্শন করেন অন্তর্বর্তী সরকারের বন, পরিবেশ ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

এ সময় এই উপদেষ্টা সাংবাদিকদের বলেন, “আপনি একটা হরিণের কথা বলতে পারেন। বনাঞ্চল থেকে বেরিয়ে এলে মানুষ তা ধরে খেয়ে ফেলেছে। সেটা এক বিষয়, কিন্তু লেমুরের মতো এমন একটা প্রজাতি কী জন্য নিখোঁজ হয়ে যাবে? কেন হারিয়ে গেল? সেটার সঙ্গে যারা প্রহরায় ছিল তাদের দায়িত্ব কতটুকু পালন করেছে? এটা অবশ্যই দেখতে হবে। আর এ জায়গাটা খুবই সংবেদনশীল।” 

রিজওয়ানা হাসান বলেন, “বারবার যেখানে এমন দুর্লভ প্রাণীগুলো হারিয়ে যাচ্ছে, সেই জায়গাগুলোতে কেন সিসিটিভি ক্যামেরা কাজ করছে না? সিসিটিভি ক্যামেরা বসাতে কত টাকা লাগবে? এখানকার নিরাপত্তার বিষয়টিও আমাকে দেখতে হবে। আমি মনে করি, এখানে যেভাবে দায়িত্ব পালন করা উচিত ছিল, সেভাবে পালন করা হয়নি। আর এ রকম দুর্লভ প্রাণী হারিয়ে গেলে ১৪ দিন পর মামলা করে অনুসন্ধান শুরু করলে পাওয়ার সম্ভাবনা ক্ষীণ হয়ে আসে। এখানে যে সংগঠিত অপরাধ চক্র রয়েছে, এটা কিন্তু প্রমাণিত। চক্রটি কী করে ধরা যায়, সে কাজটিও করা হচ্ছে।”

উপদেষ্টা আরো বলেন, “যতটুকু সম্ভব বিস্তারিত তদন্ত করা হবে। বাইরের বিশেষজ্ঞ যুক্ত করা হবে। কী করে এমন ঘটনা ভবিষ্যতে প্রতিহত করা যায়, তা দেখা হবে। আর জায়গাটি অবশ্যই অরক্ষিত নয়। সেখানে ঢুকে কী করে লেমুর চুরি করল, সেটি খতিয়ে দেখা হবে। সরকারের পক্ষে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। সেখানে বন্য প্রাণী বিশেষজ্ঞের পাশাপাশি অপরাধ বিশেষজ্ঞরা থাকবেন।”

ঢাকা/রফিক/টিপু 

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

প্রথম নারী হাওয়া (আ.)-র জন্ম যেভাবে

আল্লাহ মানুষ বানালেন। প্রথমে বানালেন আদম (আ.)-কে। ফেরেশতারা তাঁকে সিজদা করলেন। জান্নাতেই থাকতেন তিনি। একাকী। তাঁর কোনো সঙ্গী বা স্ত্রী ছিল না, যাঁর কাছে তিনি ভালোবাসা পেতে পারেন, কথা বলতে পারেন, একাকিত্ব ঘোচাতে পারেন, প্রশান্তি লাভ করতে পারেন।

একদিন আদম (আ.) ঘুমিয়ে ছিলেন। জেগে উঠে দেখতে পেলেন, একজন নারী বসে আছেন তাঁর মাথার কাছে। এর আগে তিনি এমন অবয়ব বা মানুষ দেখেননি কোনোদিন। পরিচয় জানতে চাইলেন। তিনি বললেন, ‘আমি নারী।’ জানতে চাইলেন, ‘তোমাকে সৃষ্টির কারণ কী?’ বললেন, ‘আপনার প্রশান্তির জন্য।’

আল্লাহ সুরা নিসার ১ নম্বর আয়াতে বলেন, ‘হে মানুষ, তোমরা তোমাদের প্রতিপালককে ভয় করো, যিনি তোমাদের এক ব্যক্তি থেকে সৃষ্টি করেছেন এবং যিনি তা থেকে তাঁর স্ত্রী সৃষ্টি করেন, যিনি তাঁদের দুজন থেকে বহু নারী-পুরুষ ছড়িয়ে দেন।’

আরও পড়ুনমুসা (আ.)-এর বিয়ের শর্ত১৫ এপ্রিল ২০২৫

এ আয়াতের মাধ্যমে বোঝা যায়, আল্লাহুতাআলা হাওয়া (আ.)-কে আদম (আ.) থেকে সৃষ্টি করেছেন। এখানে দুই ধরনের সম্ভাবনা রয়েছে। ১. আল্লাহুতাআলা পুরুষের সঙ্গে তারই স্বজাতীয় অপর এক নারী সৃষ্টি করেছেন, যে পুরুষের জীবনসঙ্গিনী হয়ে থাকে। ২. হাওয়া (আ.)-কে আদম (আ.)-এর পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে। (কাসাসুল কোরআন, ১/৪০)

তাফসিরবিদরা প্রথম ব্যাখ্যাকেই সমর্থন করছেন। এর সারমর্ম হলো, নারী জাতি পুরুষেরই স্বজাতীয় এবং একইভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে।

নারীকে পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টির কথা বলা আছে হাদিসে। আবু হুরায়রা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘তোমরা নারীদের সঙ্গে সদ্ব্যবহার করো। তাদের পাঁজরের হাড় থেকে সৃষ্টি করা হয়েছে এবং হাড়ের মধ্যে সর্বাপেক্ষা বাঁকা হাড় হলো এটা (আর তা থেকেই নারীদের সৃষ্টি করা হয়েছে)। তুমি যদি তা সোজা করতে যাও, তাহলে তা ভেঙে যাবে আর যদি ছেড়ে দাও, তাহলে সব সময় তা বাঁকাই থাকবে। কাজেই নারীদের উত্তম উপদেশ দিতে থাকো।’ (বুখারি, হাদিস: ৫,১৮৫)

আরও পড়ুনস্বজাতিকে বাঁচাতে চাইল যে কাঠমিস্ত্রি১৬ এপ্রিল ২০২৫

আদম ও হাওয়া (আ.)-এর বসবাস শুরু হলো জান্নাতে। তাঁরা সেখানে একসঙ্গে থাকতে লাগলেন। তাঁদের জন্য অফুরন্ত নেয়ামতের ব্যবস্থা ছিল সেখানে। তাঁরা নেয়ামতের মধ্যে ডুবে ছিলেন। ইচ্ছামতো ঘুরতেন। পছন্দমতো খেতেন। এর মধ্যে আল্লাহ একটি গাছ দেখিয়ে বললেন, ‘তোমরা এর কাছে যেয়ো না।’ পবিত্র কোরআনে এরশাদ হয়েছে, ‘আর আমি বললাম, হে আদম, তুমি তোমার সঙ্গিনীকে নিয়ে জান্নাতে বাস করো এবং যেখানে ইচ্ছা যাও বা যা ইচ্ছা খাও, কিন্তু ওই গাছের কাছে যেয়ো না, গেলে তোমরা সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তর্ভুক্ত হবে।’ (সুরা আরাফ, আয়াত: ১৯)

কিন্তু ইবলিসের প্রবঞ্চনায় আদম (আ.)-কে নিয়ে খেয়ে ফেলেন নিষিদ্ধ সেই গাছের ফল—আল্লাহ যা নিষেধ করেছিলেন। সীমালঙ্ঘন করায় আল্লাহ তাআলা আদমকে (আ.) তাঁর সঙ্গীনি হাওয়া (আ.)-সহ দুনিয়ায় পাঠিয়ে দেন। শুরু হলো পৃথিবীতে মানুষের বসবাস।

 লেখক: আলেম

আরও পড়ুনশীতল অগ্নি১৬ এপ্রিল ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ