কীভাবে বুঝবেন, আপনি লং কোভিডে ভুগছেন
Published: 10th, April 2025 GMT
কাদের ঝুঁকি বেশি
যেসব নারীর গুরুতর বা তীব্র কোভিডে সংক্রমণ হয়েছিল।
৬৫ বছরের বেশি বয়সীদের।
যাঁদের হৃদ্রোগ, ফুসফুসের সমস্যা, ডায়াবেটিস ছিল ও টিকা নেননি।
কীভাবে বুঝবেনলং কোভিড শনাক্তের জন্য কোনো টেস্ট নেই, লক্ষণ দেখেই বুঝতে হবে। নারী ও পুরুষের মধ্যে লং কোভিডের লক্ষণে ভিন্নতা পাওয়া গেছে। নারীদের লক্ষণগুলোর মধ্যে চুল পড়ে যাওয়া, পরিপাকতন্ত্রের সমস্যা, চোখের শুষ্কতা, ঘ্রাণ ও স্বাদ কমে যাওয়া ইত্যাদি অন্যতম। পুরুষদের ক্ষেত্রে এসব সমস্যা প্রকট নয়, তবে তাঁদের ক্ষেত্রে যৌন সমস্যাই প্রধান।
সাধারণত যেসব লক্ষণ নারী–পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রেই আছে, সেসব হলো চিন্তা করার বা একাগ্রতায় সমস্যা, ভুলে যাওয়ার প্রবণতা, মাথাব্যথা, হাত–পা কাঁপা, নাড়ির গতি বেড়ে যাওয়া, দাঁড়ালে মাথা ঘোরা। কোভিডের অব্যবহিত পরে বা অনেক দিন পর থেকে অনেকেই এসব লক্ষণে হয়তো ভুগছেন।
যেসব নারীর লং কোভিড হয়েছে বা যাঁদের কোনো ভাইরাল ইনফেকশনের পর অটোইমিউন ডিজিজ হয়েছে, তাঁদের মধ্যে একধরনের জিনগত পরিবর্তনও লক্ষ করা গেছে।
গবেষণায় দেখা গেছে, ১৮-৩৯ বছরের নারীদের লং কোভিডের ঝুঁকি ১ দশমিক শূন্য ৪ গুণ। সব বয়সী নারীদের ঝুঁকি পুরুষদের চেয়ে ১-৫ গুণ। মেনোপজের পর ঝুঁকি ১ দশমিক ৪৫ গুণ। দেখা গেছে, ৪০–৫৪ বছর বয়সী নারীরা ৩ গুণ বেশি আক্রান্ত হয়েছেন পুরুষদের তুলনায়। মেনোপজে যেহেতু এস্ট্রোজেন হরমোনের অভাব থাকে, সে জন্য এই ঝুঁকি বেশি হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
আরও পড়ুনগুরুত্বপূর্ণ কোনো কাজ করার আগে পেটব্যথা হয়? কারণ ও প্রতিকার জানুন০৭ এপ্রিল ২০২৫আরেক গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষদের চেয়ে নারীদের লং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি ৩১ শতাংশ বেশি। যেহেতু লং কোভিডে আক্রান্ত হওয়ার সঙ্গে হরমোনের একটা প্রভাব থাকতে পারে, তাই হরমোন রিপ্লেসমেন্ট করলে হয়তো উপকার মিলতে পারে। কারও কারও ক্ষেত্রে খুব স্বল্প পরিমাণ টেস্টোস্টেরন দিয়েও এ ধরনের লং কোভিডের উপসর্গ বা অটোইমিউন ডিজিজ প্রতিরোধ করা যায় কি না, তা নিয়ে ভাবা হচ্ছে। তবে এ বিষয়ে আরও গবেষণা প্রয়োজন।
চিকিৎসা কীলক্ষণ অনুযায়ী মাথাব্যথা, কাশি, দুশ্চিন্তা, বিষণ্নতার ওষুধ গ্রহণ।
স্টেলেট গ্যাংলিয়ন ব্লক।
ফিজিওথেরাপি।
শ্বাসকষ্ট থাকলে পালমোনারি রিহ্যাবিলিটেশন।
মানসিক সমস্যার জন্য কাউন্সেলিং।
আরও পড়ুনআত্মীয়দের কাছ থেকে রক্ত নেওয়া কি ভালো০৫ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
গাজীপুরে মুখ থুবড়ে পড়েছে ২৪ কোটি টাকার পানি প্রকল্প
গাজীপুরের শ্রীপুর পৌরসভার বাসিন্দাদের সুপেয় পানি সরবরাহের জন্য প্রায় ২৪ কোটি টাকার একটি প্রকল্প গ্রহণ করে সরকার। কিন্তু প্রকল্প শেষ হওয়ার বহু বছর পরও পৌরবাসীর ঘরে পৌঁছায়নি এক ফোঁটা পানিও। নিন্মমানের কাজ, অব্যবস্থাপনা ও তদারকির অভাবে মাটির নিচে নষ্ট হয়ে পড়ে আছে পুরো প্রকল্প।
২০১৯-২০ অর্থবছরে জাতীয় পর্যায়ের পানি সরবরাহ প্রকল্পের অংশ হিসেবে শ্রীপুর পৌরসভায় কাজ শুরু হয়। নির্ধারিত সময়ে ২০২১ সালে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা টেনে নেয় ২০২৩-২৪ অর্থবছর পর্যন্ত। পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে মোট ১৩৮ কিলোমিটার পাইপলাইন বসানো ও ১০টি পাম্প হাউস নির্মাণের পরিকল্পনা ছিল। এর মধ্যে পাইপলাইনের জন্য বরাদ্দ হয় প্রায় ১৫ কোটি টাকা এবং পাম্প হাউসের জন্য ৮ কোটি টাকারও বেশি। মনিরা ট্রেডার্স পাইপলাইন ও জিলানী ট্রেডার্স পাম্প হাউস নির্মাণের কাজ করে। তদারকির দায়িত্বে ছিল জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তর।
কাগজে-কলমে কাজ শেষ দেখালেও বাস্তবে অধিকাংশ পাইপলাইন ভেঙে অকার্যকর হয়ে পড়েছে। ১০টির মধ্যে মাত্র ৯টি পাম্প হস্তান্তর করা হলেও সেগুলোও বিকল হয়ে আছে। একটি পাম্প হাউস এখনো নির্মাণাধীন।
পৌরসভার ৪ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মো. শফিকুল ইসলাম বলেন, “এত কোটি টাকা খরচ হলো, কিন্তু আমাদের ঘরে একদিনও পানি আসেনি। পাইপলাইন মাটির নিচে পচে গেছে, বাসাবাড়ির গ্যাস লাইন কিংবা সড়ক সংস্কারের সময়ও এগুলো কেটে একাকার করা হয়েছে। পুরো বিষয়টি আসলে টাকার লুটপাট ছাড়া কিছু নয়।”
৯ নম্বর ওয়ার্ডের আরেক বাসিন্দা খোরশেদ আলমের ক্ষোভ, “২৪ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে, অথচ একটি ফোঁটা পানিও মানুষ পায়নি। নিম্নমানের পাইপ বসানো হয়েছিল, সেগুলো সব ভেঙে গেছে। প্রকল্প চালু হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।”
প্রকল্পের কাজ শেষ হয়েছে বলে দেখানো হলেও, বাস্তবে শ্রীপুর পৌরবাসীর ঘরে এখনো পৌঁছায়নি পানি। কোটি কোটি টাকা খরচ করেও শুধু মাটির নিচে চাপা পড়েছে স্বপ্নের এই পানি সরবরাহ প্রকল্প। নাগরিকরা বলছেন, সরকারের মূল্যবান অর্থ অপচয়ের এমন নজির দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে দীর্ঘদিন।
শ্রীপুর পৌরসভার সহকারী প্রকৌশলী (পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন) আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, “আমি দায়িত্বে থাকলেও শুরুতে কোনো দায়িত্ব দেওয়া হয়নি। তবে সত্যি বলতে, নিম্নমানের পাইপ ব্যবহার হয়েছে। ১৫০০ সংযোগ দেওয়া হয়েছিল, এখন একটিও চালু নেই।”
গাজীপুর জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. মশিউর রহমান বলেন, “২০২৩ সালে কাজ পৌরসভার কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজের মান খারাপ হলে তারা কেন গ্রহণ করলো?”
পৌর নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সাহেদ আখতার বলেন, “কাজ বুঝে নেওয়ার পরও বাস্তবে পানি সরবরাহ চালু করা যায়নি। পাইপ নষ্ট হয়ে গেছে। প্রকল্প চালু হবে কিনা তা নিয়েই সন্দেহ রয়েছে।”
শ্রীপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও পৌর প্রশাসক সজীব আহমেদ বলেন, “প্রকল্প হস্তান্তর হয়েছে আমার দায়িত্ব নেওয়ার আগেই। আমি আসার পর থেকে পুরো প্রকল্প বিকল অবস্থায় রয়েছে। চালু হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।”
ঢাকা/রফিক/এস