ইরানের সঙ্গে বাণিজ্য: ভারতীয় নাগরিক ও তাঁর চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা
Published: 11th, April 2025 GMT
সংযুক্ত আরব আমিরাতভিত্তিক ভারতীয় ব্যবসায়ী ও তাঁর মালিকানাধীন চার প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের অপরিশোধিত তেল ও পেট্রোলিয়াম পণ্যের বাণিজ্যের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা থাকার অভিযোগে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তরের বৈদেশিক সম্পদ নিয়ন্ত্রণ–সংক্রান্ত কার্যালয়ের (ওএফএসি) তথ্য অনুসারে, ভারতীয় নাগরিক জুগবিন্দর সিং ব্রার একাধিক শিপিং কোম্পানির মালিক। এসব কোম্পানিতে সব মিলে প্রায় ৩০টি জাহাজ আছে। এর অনেকগুলোই ইরানের কাজে ব্যবহার করা হয়ে থাকে।
ব্রারের পাশাপাশি তাঁর মালিকানাধীন যে চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে সেগুলো হলো, ভারতভিত্তিক গ্লোবাল ট্যাংকার্স, বিঅ্যান্ডপি সলিউশনস এবং আরব আমিরাতভিত্তিক প্রাইম ট্যাংকার্স ও গ্লোরি ইন্টারন্যাশনাল। ইরানের ওপর ‘সর্বোচ্চ চাপ প্রয়োগে’ ট্রাম্প প্রশাসনের চলমান পদক্ষেপের অংশ হিসেবে এ নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এমন চাপ প্রয়োগের অংশ হিসেবে তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে ইরানি স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে পাঁচ দফায় নিষেধাজ্ঞা ঘোষণা করেছে ট্রাম্প প্রশাসন।
ইরানের তেল–বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচারণা শুরুর আগেও কয়েকটি ভারতীয় কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। যেমন গত অক্টোবরে ভারতভিত্তিক গাব্বারো শিপ সার্ভিসেসকে ইরানি তেল পরিবহনে জড়িত থাকার অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে, রাশিয়ার আর্কটিক এলএনজি ২ প্রকল্প থেকে এলএনজি পরিবহনে জড়িত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের নিবন্ধিত তিন শিপিং সংস্থাকে নিষেধাজ্ঞা দেয়। প্রকল্পটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে।উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গত ফেব্রুয়ারিতে ওএফএসি ও মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বিভিন্ন দেশের ৩০–এর বেশি ব্যক্তি ও বিভিন্ন জাহাজের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এর মধ্যে ভারতভিত্তিক চারটি প্রতিষ্ঠান আছে। গত মার্চে ইরান থেকে বিপুল পরিমাণে তেল কেনা ও প্রক্রিয়াজাতকরণের অভিযোগে একটি চীনা শোধনাগারের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। প্রেসিডেন্ট হিসেবে ট্রাম্পের প্রথম মেয়াদে ২০১৮ সাল থেকে বিভিন্ন নিষেধাজ্ঞার মধ্যে আছে শোধনাগারটি।
ওএফএসি বলছে, ব্রারের যে চারটি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে সেগুলোর মালিকানাধীন জাহাজ দিয়ে ইরানের তেল বহন করা হতো। ন্যাশনাল ইরানিয়ান অয়েল কোম্পানি (এনআইওসি) ও ইরানি সেনাবাহিনীর হয়ে তেল আনা নেওয়ার কাজ করত এগুলো।
ইরানের তেল–বাণিজ্যের বিরুদ্ধে ট্রাম্প প্রশাসনের প্রচারণা শুরুর আগেও কয়েকটি ভারতীয় কোম্পানির ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছিল। যেমন গত অক্টোবরে ভারতভিত্তিক গাব্বারো শিপ সার্ভিসেসকে ইরানি তেল পরিবহনে জড়িত থাকার অভিযোগে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আগস্ট ও সেপ্টেম্বরে, রাশিয়ার আর্কটিক এলএনজি ২ প্রকল্প থেকে তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) পরিবহনে জড়িত থাকার অভিযোগে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের নিবন্ধিত তিনটি শিপিং সংস্থাকে নিষেধাজ্ঞা দেয়। প্রকল্পটি মার্কিন নিষেধাজ্ঞার আওতায় আছে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: প রকল প পর বহন র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
জ্বালানি খাতে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন
দফায় দফায় দাম বাড়িয়েও চাহিদামতো গ্যাস সরবরাহ করতে না পারায় যখন শিল্প উৎপাদন মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে, তখন গ্যাসকূপ খননে অগ্রগতি কম হওয়ার বিষয়টা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। গত কয়েক বছরে, বিশেষ করে ২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পর থেকে দেশের অর্থনৈতিক সংকট এবং বিনিয়োগের গতি থমকে যাওয়ার পেছনে নিশ্চিতভাবেই জ্বালানিসংকটের বড় ভূমিকা আছে।
দেশীয় উৎস থেকে গ্যাস অনুসন্ধান ও উৎপাদন না বাড়িয়ে বিগত সরকার উচ্চ মূল্যের এলএনজি আমদানির যে নীতি নিয়েছিল, তারই প্রতিফল এটা। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে সেই ধারা থেকে বেরিয়ে আসার চিন্তা থাকলেও বাস্তব প্রচেষ্টা ও উদ্যোগে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে। ফলে গ্যাস–সংকটের বৃত্ত থেকে আমরা এখনো বেরিয়ে আসতে পারিনি।
প্রথম আলোর খবর জানাচ্ছে, বিদ্যুৎ, শিল্প, ব্যবসা ও বাসাবাড়ির জ্বালানিতে বর্তমানে দেশে দৈনিক গ্যাসের চাহিদা প্রায় ৩৮০ কোটি ঘনফুট। বর্তমানে গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে ২৭০-২৮০ কোটি ঘনফুট। এর মধ্যে দেশে উৎপাদিত হচ্ছে ১৭৭ কোটি ঘনফুট। এলএনজি আমদানি করা হচ্ছে ১১০ কোটি ঘনফুটের মতো। সব মিলিয়ে দৈনিক গ্যাসের ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়াচ্ছে ১০০ থেকে ১১০ কোটি ঘনফুট।
দেশের অর্থনীতির প্রাণ ফেরাতে এবং শিল্প ও বিনিয়োগের স্থবিরতা কাটাতে হলে গ্যাসের সরবরাহ বাড়ানোর বিকল্প নেই। ২০১৭ সালে দেশীয় উৎস থেকে সর্বোচ্চ ২৭০ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হয়েছিল। এর পর থেকে এলএনজি আমদানির ওপর নির্ভরতা শুরু হয়। বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ সংকট, বিশ্ববাজারে এলএনজির দামের অনিশ্চয়তা ও অবকাঠামোগত সক্ষমতার ঘাটতিতে চাহিদামতো এলএনজি আমদানি সম্ভব হচ্ছে না।
এ বাস্তবতায় জ্বালানিবিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দেশীয় উৎস থেকে গ্যাসের উৎপাদন বাড়ানোটাই সবচেয়ে ভালো সমাধান হতে পারে। স্থল ও সমুদ্রে নতুন গ্যাসক্ষেত্র অনুসন্ধান এবং পুরোনো গ্যাসক্ষেত্রগুলোতে নতুন কূপ খনন সমানতালে করা প্রয়োজন। সংকটে পড়ে বিগত সরকার ২০২২ সালে চার বছরে ৫০টি কূপ উন্নয়ন, সংস্কার ও অনুসন্ধানের কাজ হাতে নিলেও সেটি ধীরগতিতে এগোয়।
অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন বাতিল করা হয়। দরপত্র ডেকে চুক্তি করায় সময় বেশি লেগেছে, কিন্তু খরচ কমেছে। এ বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে কূপ খননের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও মাত্র ২০টি কূপ খননের কাজ শেষ হয়েছে। ফলে দৈনিক যেখানে ৬২ কোটি ঘনফুট গ্যাস নতুন উত্তোলন হওয়ার কথা ছিল, সেখানে ২১ কোটি ঘনফুট গ্যাস উৎপাদিত হচ্ছে। এ ছাড়া অন্তর্বর্তী সরকার নতুন করে ১০০টি কূপ খনন প্রকল্পও হাতে নিয়েছে।
গ্যাস উৎপাদন বাড়াতে কূপ খননের প্রকল্প নেওয়া হলেও দেশে রিগ বা খননযন্ত্রের ঘাটতি রয়েছে। বাপেক্স, বিজিএফসিএলসহ গ্যাস অনুসন্ধান ও উত্তোলনের সঙ্গে যুক্ত দেশীয় কোম্পানিগুলোর সক্ষমতা বাড়ানোর কথা বহুদিন ধরে বলা হলেও বিগত কোনো সরকারই তাতে কর্ণপাত করেনি। এ ক্ষেত্রে নীতিনির্ধারণী জায়গায় দুর্বলতা রয়েছে বলে আমরা মনে করি। এ ছাড়া দ্বীপজেলা ভোলায় প্রায় ১ হাজার ৪৩২ কোটি ঘনফুট গ্যাসের সম্ভাব্য মজুত থাকলেও সক্ষমতা অনুসারে গ্যাস উৎপাদন করা হচ্ছে না। সেখানকার উৎপাদিত গ্যাস বাইরে আনার জন্য এখনো পাইপলাইন স্থাপন করা হয়নি, আবার সেখানেও শিল্পায়নের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়নি। সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান প্রক্রিয়াও থমকে আছে।
জ্বালানি নীতিতে অবশ্যই জাতীয় সক্ষমতা ও দেশীয় উৎস থেকে জ্বালানি সরবরাহের বিষয়টিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। সমস্যায় পড়লে তাৎক্ষণিক সমাধানের যে টোটকা, সেখান থেকে জ্বালানি খাতকে বের করে আনতে হবে, দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করতে হবে। স্থল ও সমুদ্রে গ্যাস অনুসন্ধান, কূপ খনন, উন্নয়ন ও সরবরাহের অবকাঠামো তৈরিতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।