মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বৃদ্ধি করে ১২৫ শতাংশ করার পর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ক্রমবর্ধমান বাণিজ্যযুদ্ধ নিয়ে প্রথম প্রকাশ্যে কথা বলেছেন চীনা নেতা সি চিন পিং। তিনি বলেছেন, তাঁর দেশ ‘ভয় পায় না।’

বিশ্বের শীর্ষ দুই অর্থনীতির দেশ যুক্তরাষ্ট্র ও চীন সম্প্রতি শুল্ক বৃদ্ধি নিয়ে ইটের বদলে পাটকেল নিক্ষেপের যুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। ডোনাল্ড ট্রাম্প গতকাল বৃহস্পতিবার চীনা পণ্য আমদানিতে ১৪৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন। এর জবাবে আজ শুক্রবার মার্কিন পণ্যে নতুন করে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিল চীন।

আগামীকাল শনিবার থেকে চীনের ঘোষিত এই শুল্ক কার্যকর হবে। তবে চীন ইঙ্গিত দিয়েছে, ১২৫ শতাংশের বেশি শুল্ক বাড়ানোর ইচ্ছা নেই তাদের। শুল্ক এর চেয়ে বেশি বাড়ানো অর্থহীন হবে বলেও মনে করছে দেশটি।

চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র আজ শুক্রবার এক বিবৃতিতে বলেছেন, চীনের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের ধারাবাহিকভাবে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ একটি সংখ্যার খেলা ছাড়া আর কিছুই নয়, যার কোনো বাস্তব অর্থনৈতিক তাৎপর্য নেই।

ওই মুখপাত্র আরও বলেন, ‘এটি কেবল যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ককে হুমকি ও বলপ্রয়োগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করার অনুশীলনকে আরও প্রকাশ্যে এনেছে, যা কৌতুকে পরিণত হয়েছে।’

নতুন শুল্ক ঘোষণার আগে শুক্রবার বেইজিংয়ে স্পেনের প্রধানমন্ত্রী পেদ্রো সানচেজের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে সি বলেন, ‘বাণিজ্যযুদ্ধে কেউ বিজয়ী হয় না। আর বিশ্বের বিরুদ্ধে যাওয়ার চেষ্টা কেবল আত্মবিচ্ছিন্নতার দিকে ঠেলে দেবে।’

আরও পড়ুনএবার মার্কিন পণ্যে ১২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করল চীন২ ঘণ্টা আগে

চীনের রাষ্ট্রীয় সম্প্রচারমাধ্যম সিসিটিভিতে প্রচারিত বক্তব্যে সি বলেন, ‘৭০ বছরের বেশি সময় ধরে চীনের উন্নয়ন আত্মনির্ভরতা এবং কঠোর পরিশ্রমের ফল। অন্যদের অনুদানে এই উন্নয়ন হয়নি। চীন কোনো অন্যায্য দমন-পীড়নকে ভয় পায় না।’

এর আগপর্যন্ত চীনের এই নেতা শুল্কযুদ্ধ প্রসঙ্গে প্রকাশ্যে চুপ ছিলেন। কিন্তু তিনি তাঁর প্রথম বক্তব্যে কঠোর কথা বলেছেন। সি চিন পিং বলেন, ‘বাহ্যিক পরিবেশ যতই পরিবর্তিত হোক না কেন, চীন আত্মবিশ্বাসী থাকবে, মনোযোগী থাকবে এবং নিজস্ব বিষয়গুলো সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার দিকে মনোনিবেশ করবে।’

আরও পড়ুনট্রাম্পের বাণিজ্যযুদ্ধে চীনের ‘অস্ত্রের’ মোকাবিলায় কি জিততে পারবে যুক্তরাষ্ট্র০৯ এপ্রিল ২০২৫.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শ ল ক আর বল ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

যে কারণে ইরানের তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা

ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কিছু তেল ও গ্যাস স্থাপনায় হামলা চালিয়েছে ইসরায়েল। মধ্যপ্রাচ্যের এ দুই প্রতিদ্বন্দ্বী দেশের মধ্যে কয়েক দশক ধরে বৈরিতা চলছে। তবে এবারই প্রথম ইসরায়েল ইরানে হামলা চালানোর পর দুই পক্ষ সরাসরি সংঘাতে জড়িয়ে পড়েছে। দুই পক্ষে পাল্টাপাল্টি হামলা তীব্র হতে থাকায় বিশ্বজুড়ে জ্বালানি তেলের বাজারে অস্থিরতা তৈরির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।

গত শনিবার গভীর রাতে ইরানের পেট্রোলিয়াম মন্ত্রণালয় জানায়, ইসরায়েল একটি গুরুত্বপূর্ণ জ্বালানি ডিপোতে হামলা চালিয়েছে। একই সঙ্গে রাজধানী তেহরানে একটি তেল শোধনাগারেও আগুন ধরে যায়। সেখানে ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা আগুন নিয়ন্ত্রণ করেছেন।

বিশ্বের অন্যতম বড় গ্যাসক্ষেত্র ‘সাউথ পার্স’-এ ইসরায়েলের হামলায় আগুন লাগার পর ইরান আংশিকভাবে এ ক্ষেত্রে উৎপাদন বন্ধ করে দিয়েছে। ইরান কাতারের সঙ্গে ভাগাভাগি করে এই গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করে থাকে।

ইসরায়েল নজিরবিহীনভাবে ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা চালানোয় মধ্যপ্রাচ্য থেকে তেল সরবরাহ ব্যাহত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। এতে বিশ্ববাজারে জ্বালানির দাম আরও বাড়তে পারে। দুই দেশই একে অন্যের ভূখণ্ডে আরও বড় ধরনের হামলার হুমকি দিচ্ছে।

ইরান বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম প্রাকৃতিক গ্যাস ও তৃতীয় বৃহত্তম অপরিশোধিত তেল মজুতের অধিকারী– এই তথ্য যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি তথ্য প্রশাসনের (ইআইএ) দেওয়া। ফলে দেশটির জ্বালানি অবকাঠামো দীর্ঘদিন ধরে ইসরায়েলের লক্ষ্যবস্তু ছিল। তবে এতদিন ইসরায়েল ইরানের জ্বালানি স্থাপনাগুলোতে হামলা এড়িয়ে চলছিল, বিশেষ করে তার মিত্র যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশের চাপ ছিল। কিন্তু এবার তা বদলে গেছে।

গত শনিবার রাতে তেহরানের উত্তর-পশ্চিমে শাররান জ্বালানি ডিপো ও শহরের দক্ষিণে শার-রে অঞ্চলে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ তেল শোধনাগারে বড় ধরনের আগুন লাগে।  এ ছাড়া ইরানের দক্ষিণ বুশেহর প্রদেশের উপকূলীয় এলাকায় অবস্থিত বিশ্বের সবচেয়ে বড় গ্যাসক্ষেত্র সাউথ পার্স লক্ষ্য করে বিমান হামলা চালায় ইসরায়েল। 

হামলায় সাউথ পার্সের ‘ফেইজ ১৪’ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রে আগুন লাগে। ফলে এখানে দৈনিক ১ দশমিক ২ কোটি ঘনমিটার গ্যাস উৎপাদনকারী একটি অফশোর প্ল্যাটফর্ম বন্ধ হয়ে গেছে।

ইসরায়েলের হামলার প্রথম দিনে তেল ও গ্যাস স্থাপনা বাদ পড়লেও বাজারে তেলের দাম প্রায় ৯ শতাংশ বেড়ে যায়। সোমবার  বিশ্ববাজারে তেলের দামে আরও বড় উল্লম্ফন হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

মধ্যপ্রাচ্য ইনস্টিটিউটের গবেষক অ্যালান এয়ার বলেন, ইসরায়েল চায়, ইরানের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্রও জড়িয়ে পড়ুক। তাদের লক্ষ্য, ইরানের এই সরকারের পতন ঘটানো। ইরানের সামরিক প্রতিক্রিয়া ছাড়া উপায় নেই। কারণ, দেশের অভ্যন্তরে সম্মান রক্ষার বিষয় আছে। কিন্তু ইসরায়েলে বড় ধরনের ক্ষতি করার মতো ক্ষমতা ইরানের নেই। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ইরানের বন্ধুর সংখ্যা কম। আর থাকলেও ইসরায়েল পরিষ্কারভাবে দেখিয়েছে, তারা আন্তর্জাতিক মতামতকে পাত্তা দেয় না– বলেন তিনি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ