মিরাজ বর্ষসেরা, দর্শকের হৃদয়ে জায়গা করে নিলেন ঋতুপর্ণা
Published: 11th, April 2025 GMT
বাংলাদেশ স্পোর্টস প্রেস অ্যাসোসিয়েশন (বিএসপিএ) আয়োজিত ‘কুল-বিএসপিএ স্পোর্টস অ্যাওয়ার্ড ২০২৪’ এ জয়ের মুকুট পড়েছেন দেশের শীর্ষ ক্রীড়াবিদরা। রাজধানীর এক অভিজাত হোটেলে অনুষ্ঠিত জমকালো অনুষ্ঠানে সম্মাননা পেয়েছেন ১৫ ক্যাটাগরিতে ১৩ জন ক্রীড়াবিদ, সংগঠক, সংস্থা ও দল।
বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ মেহেদী হাসান মিরাজ:
জাতীয় ক্রিকেট দলের অলরাউন্ডার মেহেদী হাসান মিরাজ পেয়েছেন ‘‘স্পোর্টস পারসন অব দ্য ইয়ার ২০২৪’’ খেতাব। তিনি পেছনে ফেলেছেন জাতীয় নারী ফুটবল দলের মিডফিল্ডার ঋতুপর্ণা চাকমা ও প্যারিস অলিম্পিকে কোয়ালিফাই করা আর্চার সাগর ইসলামকে। মিরাজ বলেছেন, “এই পুরস্কার প্রতিটি অ্যাথলেটের জন্য এক ধরনের অনুপ্রেরণা। বিভিন্ন ডিসিপ্লিনের ক্রীড়াবিদদের সঙ্গে দেখা হওয়ার সুযোগও তৈরি হয়।”
জনপ্রিয়তার শীর্ষে ঋতুপর্ণা:
ভোটে দর্শকের পছন্দ হিসেবে ‘‘পপুলার চয়েজ অ্যাওয়ার্ড’’ পেয়েছেন ঋতুপর্ণা চাকমা। তিনি জনপ্রিয়তার দৌড়ে হারিয়ে দিয়েছেন মিরাজ এবং উদীয়মান ক্রিকেটার নাহিদ রানাকে। ঋতুপর্ণা ভিডিও বার্তায় জানান, “বিএসপিএকে কৃতজ্ঞতা জানাই। ভুটানে খেলতে যাওয়ার কারণে থাকতে পারিনি, কিন্তু এই স্বীকৃতি আমাকে আরও ভালো খেলোয়াড় হয়ে ওঠার প্রেরণা দেবে।”
১৯৬২ সালে যাত্রা শুরু করা বিএসপিএ ১৯৬৪ সাল থেকে নিয়মিতভাবে দেশসেরা ক্রীড়াবিদদের স্বীকৃতি দিয়ে আসছে। এবারও সেই ধারাবাহিকতায় প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে বসে তারার মেলা। অনুষ্ঠানটি উপস্থাপন করেন বিএসপিএ সভাপতি রেজওয়ান উজ জামান রাজিব।
অনুষ্ঠানে গেস্ট অব অনার হিসেবে উপস্থিত ছিলেন যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও স্কয়ার টয়লেট্রিজ লিমিটেডের এমডি অঞ্জন চৌধুরী।
উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ বলেন, “খেলাধুলায় ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে সরকার কাজ করে যাচ্ছে। বাজেট বৃদ্ধির বিষয়েও আমরা সুপারিশ করেছি।” অঞ্জন চৌধুরী যোগ করেন, “জেলার খেলাধুলা অনেকটাই থেমে গেছে। সেখানেও যেন প্রাণ ফেরে, সেটাই কামনা করি। বিএসপিএ’র পাশে আগামীতেও থাকবো।”
২০২৪ সালের পুরস্কার বিজয়ীদের তালিকা:
বর্ষসেরা ক্রীড়াবিদ: মেহেদী হাসান মিরাজ (ক্রিকেট)।
পপুলার চয়েজ অ্যাওয়ার্ড: ঋতুপর্ণা চাকমা (ফুটবল)।
বর্ষসেরা ফুটবলার: ঋতুপর্ণা চাকমা।
বর্ষসেরা আর্চার: সাগর ইসলাম
বর্ষসেরা অ্যাথলেট (ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ড): জহির রায়হান।
উদীয়মান ক্রীড়াবিদ: নাহিদ রানা (ক্রিকেট)।
বর্ষসেরা দাবাড়ু: মনন রেজা নীড়।
সেরা দলগত সাফল্য: অনূর্ধ্ব-২১ জাতীয় হকি দল।
সক্রিয় সংস্থা: যশোর শামস-উল-হুদা অ্যাকাডেমি।
বর্ষসেরা কোচ: মওদুদুর রহমান শুভ (হকি)।
তৃণমূল ক্রীড়াব্যক্তিত্ব: বীরসেন চাকমা (ফুটবল সংগঠক, রাঙামাটি)।
বর্ষসেরা সংগঠক: মো.
বর্ষসেরা আম্পায়ার: শরফুদ্দৌলা ইবনে শহীদ সৈকত।
বিশেষ সম্মাননা: হামিদুল ইসলাম (২০১০ এসএ গেমস সোনাজয়ী ভারোত্তোলক)।
ঢাকা/আমিনুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব এসপ এ অন ষ ঠ ফ টবল
এছাড়াও পড়ুন:
যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন
যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।
যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে
২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।
শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’
গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।
অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’