পহেলা বৈশাখে আনন্দ শোভাযাত্রার জন্য নির্মাণাধীন ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতিতে অগ্নিসংযোগের ঘটনার সঠিক তদন্ত দাবি করে জড়িতদের শাস্তি দাবি করেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ও ছাত্রদল।

শনিবার (১২ এপ্রিল) পৃথক বিবৃতিতে সংগঠন দুইটির পক্ষ থেকে এ দাবি জানানো হয়েছে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি সাদেকুল ইসলাম সাদিক এবং সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক স্বাক্ষরিত যৌথ বিবৃতিতে বলা হয়েছে, শোভাযাত্রার মোটিফ পোড়ানোর ঘটনা প্রমাণ করে, এতবড় একটি আয়োজনকে কেন্দ্র করে যথাযথ নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয়নি। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িতদের তদন্ত সাপেক্ষে অবিলম্বে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। বর্ষ বরণের আয়োজনকে সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে আরো সক্রিয় এবং জোরদার করতে আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং রাষ্ট্রীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানাই।

আরো পড়ুন:

মার্চ ফর গাজা: মজলুমদের পাশে থাকার আহ্বান ঢাবি উপাচার্যের

সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ছাড়িয়ে জনসমাগম ঢাবিতে

নেতৃবৃন্দ বলেন, সাধারণত বর্ষবরণ অনুষ্ঠান প্রতিবছর চারুকলার নির্দিষ্ট ব্যাচের শিক্ষার্থীদের তত্ত্বাবধানে এবং শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের সম্মিলিত উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। কিন্তু এবার আয়োজনের শুরু থেকেই চারুকলার শিক্ষার্থী এবং শিক্ষার্থী প্রতিনিধিদের মতামত উপেক্ষা করার ঘটনা আমাদের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। ঐতিহাসিক এই র‍্যালিটির নাম পরিবর্তনের ক্ষেত্রেও কারো মতামত নেওয়া হয়নি। অথচ সিদ্ধান্তগ্রহণ প্রক্রিয়ায় শিক্ষার্থী এবং ক্রিয়াশীল বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনগুলোকে আরো যত্নের সঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করা দরকার ছিল।

আয়োজনের শুরু থেকেই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয় ও গোয়েন্দা সংস্থার নগ্ন হস্তক্ষেপও লক্ষণীয়– যা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন এবং বৈশাখ উদযাপনের যে ঐতিহাসিক ধারাবাহিকতা, তার সঙ্গে সাংঘর্ষিক। বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট আমলে বৈশাখ উদযাপনকে কেন্দ্র করে নানাভাবে রাষ্ট্রীয় হস্তক্ষেপ আমরা লক্ষ্য করেছি। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী বাংলাদেশে আমরা এসব ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখতে চাই না।

সন্ধ্যায় দেওয়া প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তার বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে ছাত্রদলে পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’- প্রতিপাদ্যে জুলাই-আগস্টে গণঅভ্যুত্থানের চেতনাকে সামনে রেখে পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ ১৪৩২ উদযাপন করা হবে। এ লক্ষ্যে আনন্দ শোভাযাত্রার অংশ হিসেবে নানা ধরনের প্রতিকৃতি তৈরির কাজে যুক্ত আছেন চারুকলা অনুষদের সম্মানিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীবৃন্দ।

বিগত কিছুদিন যাবৎ আনন্দমুখর পরিবেশে এ কার্যক্রম চলমান থাকলেও শনিবার ভোর ৫টার দিকে কতিপয় দুর্বৃত্ত ঢাবির চারুকলা অনুষদ প্রাঙ্গণে নির্মিতব্য ফ্যাসিবাদের মুখাকৃতি ও শান্তির পায়রার প্রতিকৃতিতে অগ্নিসংযোগ করেছে।

এতে আরো বলা হয়েছে, এ ন্যাক্কারজনক ঘটনাটি ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে ঢাবির অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবহেলা এবং ক্যাম্পাসে ফ্যাসিস্ট মুক্ত পদচারণার বিষয়ে ঢাবি শাখা ছাত্রদল এর আগে উদ্বেগ প্রকাশ করেছিল। এখন সেটার সত্যতা প্রমাণ করে সবার কাছে একটি ভয়াবহ বার্তা দিয়ে গেল।

দুঃখজনকভাবে, জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে শিক্ষার্থীদের উপর হামলাকারী ছাত্রলীগের চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এবং বিগত ফ্যাসিবাদী শাসনামলের বিভিন্ন সময়ে শিক্ষার্থীদের উপর নৃশংস হামলাকারীরা এখনো আবাসিক হলগুলোতে অবস্থান করছে। বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের বাইরে অবস্থান করে নিষিদ্ধ ঘোষিত সন্ত্রাসী সংগঠন ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা দেশের পরিস্থিতিকে অস্থিতিশীল করার চক্রান্ত নিয়ে অনলাইনে ও বাস্তবে নানাবিধ বিশৃঙ্খলা ও আইন লঙ্ঘনকারী কার্যক্রমে জড়িত হচ্ছে। এসব ফ্যাসিবাদী সন্ত্রাসীদেরকে দ্রুত গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করার বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর যে চরম উদাসীনতা রয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে দ্রুত সঠিক তদন্তের মাধ্যমে এ ন্যাক্কারজনক ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে বিচারের আওতায় আনার দাবি জানানো হয়েছে। পাশাপাশি ঢাবিতে পহেলা বৈশাখ ও বাংলা নববর্ষ শান্তিপূর্ণভাবে উদযাপনের জন্য নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা নিশ্চিত করার  লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে।

বিজ্ঞপ্তিতে ঢাবি শাখা ছাত্রদলের সভাপতি গণেশ চন্দ্র রায় সাহস এবং সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন স্বাক্ষর করেছেন।

ঢাকা/সৌরভ/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ছ ত রদল চ র কল র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

প্রেম ছিল না তবু কেন মধুবালাকে বিয়ে করেছিলেন কিশোর কুমার

দিলীপ কুমারের সঙ্গে বিচ্ছেদের কিছুদিন পরই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন অভিনেত্রী মধুবালা। তবে তখন তিনি ছিলেন অসুস্থ। কিশোর কুমার জানিয়েছিলেন, ভালোবাসা থেকে নয়, বরং কথা রাখতেই তিনি এ বিয়ে করেছিলেন।
মধুবালা ও দিলীপ কুমারের প্রেম নিয়ে একসময় মুখর ছিল মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি। কিন্তু অভিনেত্রীর বাবার বাধার কারণে সে সম্পর্কে ফাটল ধরে এবং দুজনের বিচ্ছেদ ঘটে। কিছুদিন পরেই কিশোর কুমারকে বিয়ে করেন মধুবালা। তাঁদের এই বিয়ে অনেককে চমকে দিয়েছিল। কারণ, তাঁদের প্রেমের কথা তখনো গোপন ছিল। তবে মধুবালার শরীর তখন ভালো যাচ্ছিল না। বলা হয়, দীর্ঘ রোগভোগের সময় কিশোর কুমার তাঁকে মায়ের বাড়িতে রেখেই চলে যান।

দ্য ইলাস্ট্রেটেড উইকলি অব ইন্ডিয়াকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেছিলেন, ‘বিয়ের আগেই জানতাম, ও খুব অসুস্থ। কিন্তু কথা তো দিয়েছিলাম। তাই সে কথা রেখেই ওকে ঘরে এনেছিলাম স্ত্রী হিসেবে। জানতাম, ওর জন্মগত হৃদ্‌রোগ আছে। তবু ৯ বছর ধরে সেবা করেছি। চোখের সামনেই ওকে মরতে দেখেছি। কেউ বুঝবে না এর যন্ত্রণা, না ভুগলে। ও অসম্ভব সুন্দরী ছিল। আর কত যন্ত্রণায় মারা গেছে, সেটা চোখে না দেখলে বিশ্বাস হবে না। হতাশায় চিৎকার করত, কান্নাকাটি করত। এত প্রাণোচ্ছল মানুষ নয়টা বছর বিছানায় শুয়ে থাকবে—এ কল্পনাই করা যায় না। ডাক্তার বলেছিল, ওকে হাসিখুশি রাখতে হবে। আমি তা–ই করেছি—ওর শেষনিশ্বাস পর্যন্ত। কখনো হেসেছি, কখনো কেঁদেছি ওর সঙ্গে।’

তবে কিশোর কুমারের এই বক্তব্য নিয়ে সংশয় তৈরি হয়। কারণ, পরে ফিল্মফেয়ার সাময়িকীতে দেওয়া সাক্ষাৎকারে একেবারে ভিন্ন কথা বলেন তিনি। সেই সাক্ষাৎকারে কিশোর কুমার বলেন, ‘মধুবালার সঙ্গে আমি প্রেমে পড়িনি কখনো। বরং ওর প্রেমিক ছিল আমার বন্ধু দিলীপ কুমার। আমি তো শুধু ওদের বার্তা পৌঁছে দিতাম। বিয়ের প্রস্তাবটা দিয়েছিল মধুবালাই। এমনকি, যখন আমার প্রথম স্ত্রী রুমা তখনো আমার সঙ্গে ছিল, তখনো মধু বলত, “ওকে কখনো ছেড়ো না, না হলে আমি তোমার হয়ে যাব।”’

আরও পড়ুনকিশোর কুমার কি সত্যিই ঘরে কঙ্কাল আর মাথার খুলি নিয়ে ঘুমাতেন২৭ মে ২০২৫

মধুবালার পরিবারের ভাষ্য অনুযায়ী, চিকিৎসকেরা তখন বলেছিলেন, অভিনেত্রীর পক্ষে শারীরিক সম্পর্ক কিংবা সন্তানধারণ কোনো কিছুই সম্ভব নয়। সেই বাস্তবতা হয়তো প্রভাব ফেলেছিল কিশোরের সিদ্ধান্তে। এক ঘনিষ্ঠজন বলেন, ‘আমরা বলছি না কিশোরদা ভুল করেছিলেন। ডাক্তার তো স্পষ্ট বলেছিল—শারীরিক সম্পর্ক বা সন্তান কোনোটাই সম্ভব নয়। তবে একজন নারীর তো মানসিক সঙ্গীও দরকার হয়।’
ওই ঘনিষ্ঠজন আরও জানান, কিশোর কুমার তিন মাসে একবার আসতেন মাত্র। বলতেন, ‘আমি এলে তুমি কাঁদবে, আর এতে তোমার হৃদ্‌যন্ত্রের ক্ষতি হবে। তুমি বিষণ্ন হয়ে পড়বে।’ সে সময় মধু অনেক ছোট ছিলেন, ঈর্ষাও ছিল স্বাভাবিক। হয়তো এ দূরত্বই ধীরে ধীরে তাঁকে শেষ করে দিয়েছিল।
১৯৬৯ সালে মাত্র ৩৬ বছর বয়সে না ফেরার দেশে পাড়ি জমান বলিউড অভিনেত্রী মধুবালা

সম্পর্কিত নিবন্ধ