ট্রাম্পের জন্য লজ্জায় পড়েছেন ফ্রান্স সফররত মার্কিন পর্যটকেরা
Published: 13th, April 2025 GMT
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের তুইলেরিস উদ্যানের পরিচ্ছন্ন নুড়িপাথরের ওপর দিয়ে ঝলমলে রোদে হেঁটে বেড়াচ্ছিলেন বারবারা ও রিক উইলসন দম্পতি। তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের ওরেগন অঙ্গরাজ্যের ডালাস শহর থেকে প্রথমবারের মতো ফ্রান্স ভ্রমণে এসেছেন। মার্কিন পর্যটক হিসেবে ভ্রমণে এলেও তাঁরা ঠিক ছদ্মবেশ ধারণ করেননি। তবে ৭৪ বছর বয়সী রিক সাতসকালেই বাড়তি সতর্কতা গ্রহণ করেছিলেন।
বারবারা ও রিক উইলসন প্যারিসের একটি হোটেলে উঠেছেন। হোটেল থেকে বের হওয়ার আগে ছোট্ট একটি কালো টেপ দিয়ে মাথার সাদা–কালো বেসবল ক্যাপে থাকা তারকাখচিত ও ডোরাকাটা মার্কিন পতাকা ঢেকে দিয়েছেন।
বারবারা ও রিক উইলসন প্যারিসের একটি হোটেলে উঠেছেন। হোটেল থেকে বের হওয়ার আগে ছোট্ট একটি কালো টেপ দিয়ে মাথার সাদা-কালো বেসবল ক্যাপে থাকা তারকাখচিত ও ডোরাকাটা মার্কিন পতাকা ঢেকে দিয়েছেন।বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকস্মিক পাল্টা শুল্ক আরোপের ঘোষণায় মার্কিন নাগরিক হিসেবে যে লজ্জা ও বিব্রতকর অনুভূতি অনুভব করছেন, তা নিয়ে ভাবছিলেন এই দম্পতি। রিক বলেন, ‘বিষয়টি (শুল্ক) নিয়ে আমাদের খারাপ লাগছে। এটা ভয়ানক। শুধুই আতঙ্কের।’
শুধু রিক নন, ৭০ বছর বয়সী বারবারাও তাঁর পকেটে একটি কানাডীয় ল্যাপেল পিন রেখে দিয়েছেন। আরেকজন পর্যটক তাঁকে এটি উপহার দিয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন, ফ্রান্স ভ্রমণে কিছু আড়াল করার দরকার হলে এটি কাজে লাগাতে পারবেন।
বিষয়টি (ট্রাম্পের নতুন শুল্ক আরোপ) নিয়ে আমাদের খারাপ লাগছে। এটা ভয়ানক। শুধুই আতঙ্কের।রিক উইলসন, ফ্রান্স ভ্রমণে যাওয়া মার্কিন পর্যটকবারবারা বলেন, ‘আমাদের দেশ নিয়ে আমি হতাশ। শুল্ক নিয়ে আমরা বিরক্ত।’
কয়েক গজ দূরে বিখ্যাত ল্যুভর জাদুঘরের সামনে মানুষের জটলা দেখা গেল। সেখানে আরেক মার্কিন দম্পতি নিজেদের পরিচয় কিছুটা লুকিয়ে রাখার চেষ্টা করছিলেন; যেমনটা সাধারণত দেখা যায় না। কথা হয় ক্রিস এপসের (৫৬) সঙ্গে। তিনি নিউইয়র্কে অ্যাটর্নি হিসেবে কাজ করেন। এবারের ফ্রান্স সফরে তিনি একটু ভিন্ন পোশাক পরবেন বলে ঠিক করেছিলেন।
ক্রিস এপস বলেন, ‘(আমার সঙ্গে) নিউইয়র্কের কোনো ইয়াঙ্কি হ্যাট নেই। সেটি হোটেলে রেখে এসেছি। (হ্যাট দেখে) মানুষ আমাদের আলাদা মনে করতে পারে।’
খোলাখুলি বলে রাখা ভালো, ফ্রান্সে মার্কিনদের আগের চেয়ে কম অভ্যর্থনা জানানো হচ্ছে, এমন কোনো লক্ষণ নেই। ট্রাম্প তাঁর নতুন শুল্ক ঘোষণা স্থগিত করার আগে দ্বৈবচয়নের ভিত্তিতে কিছু পর্যটকের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়েছিল।
কথা হয় ফিলিপ গ্লোয়াগুয়েন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। ফ্রান্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রাভেল গাইড লে গাইড দু রুতার্দের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। গ্লোয়াগুয়েন প্যারিসে একটি ডেস্কে বসে ছিলেন। তিনি জানান, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে তাঁর লেখা বইয়ের ফরমাশ ২৫ শতাংশ কমে গেছে। ‘এটা একটা বড় পতন,’ বলেন তিনি।মার্কিনরা তাঁদের সরকারের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হওয়া থেকে বহু দূরে রয়েছেন। তাঁদের মনোভাবে যে পরিবর্তন ঘটছে, সেটির সপক্ষে বেশির ভাগ প্রমাণই কল্পনাপ্রসূত। তবে ইতিমধ্যে ভ্রমণ, পর্যটন, শিক্ষা ও অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রভাব পড়ার বিষয়টি বোধগম্য হয়ে উঠেছে।
কথা হয় ফিলিপ গ্লোয়াগুয়েন নামের এক ব্যক্তির সঙ্গে। ফ্রান্সের সবচেয়ে জনপ্রিয় ট্রাভেল গাইড লে গাইড দু রুতার্দের প্রতিষ্ঠাতা তিনি। গ্লোয়াগুয়েন প্যারিসে একটি ডেস্কে বসে ছিলেন। তিনি জানান, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে তাঁর লেখা বইয়ের ফরমাশ ২৫ শতাংশ কমে গেছে। ‘এটা একটা বড় পতন,’ বলেন তিনি।
ল্যুভর জাদুঘরের সামনে পর্যটকদের ভিড়.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ক উইলসন ব রব র আম দ র ভ রমণ
এছাড়াও পড়ুন:
জামিন দেওয়াকে কেন্দ্র করে আদালতে হাতাহাতি, স্টেনোগ্রাফার আহত
লক্ষ্মীপুরে আদালতে একটি জামিনের ঘটনাকে কেন্দ্র করে একজন বিচারকের আদালত বর্জন করেছে আইনজীবীরা। এ সময় আইনজীবীদের সাথে আদালতের কর্মচারীদের হাতাহাতি ও এজলাসে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। এতে আহত হন ওই এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান।
রবিবার (১৫ জুন) দুপুর ১২টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। আদালত বর্জন করায় ভোগান্তিতে পড়েন বিচারপ্রার্থীরা।
জানা গেছে, রায়পুর প্রিন্সিপাল কাজী ফারুকী স্কুল অ্যান্ড কলেজের ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক আহম্মেদ কাউসার উদ্দিন জামান (৩৫) এর বিরুদ্ধে গত ৬ জুন সদর থানায় চুরির মামলা দায়ের করেন তারই প্রতিবেশি জেলা জজ আদালতের আইনজীবী আবু তৈয়ব। মামলায় আরও দুইজনকে আসামি করা হয়। ওই মামলায় আসামি কাউসার ও রুবেল গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন। এরপর গত ১০ জুন সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-৩ এর বিচারক এম সাইফুল ইসলাম তাদের জামিন মঞ্জুর করেন। এ নিয়ে তাৎক্ষণিক ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানায় আইনজীবী সমিতির নেতৃবৃন্দসহ আইনজীবীরা।
মামলায় অভিযোগ আনা হয়, বাদী এবং আসামিদের মধ্যে পূর্ব বিরোধ রয়েছে। ৫ জুন দিবাগত গভীর রাতে আসামিরা পৌরসভার ৭ নম্বর ওয়ার্ডে বাদীর ভবনের সামনে থাকা একটি লোহার গেট কেটে নিয়ে এবং গেটের পিলার ভেঙে একটি পিক-আপ গাড়িতে করে রায়পুরের দিকে নিয়ে যায়। রায়পুর বাসাবাড়ি এলাকায় গেলে পিকআপ গাড়িটি টহল পুলিশ আটক করে। পরে গাড়িটি জব্দ ও চালক রুবেলকে আটক করে পুলিশ। মামলায় বাদী আড়াই লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে উল্লেখ করেন।
আদালত সূত্র জানায়, গত ৯ জুন আসামিদের জামিন প্রার্থণা করা হয়। এতে আসামিপক্ষ উল্লেখ করেন, মামলার বাদি আইনজীবী হওয়ায় আদালতে তাদের পক্ষে কোন আইনজীবী জামিন শুনানিতে অংশ নিতে ইচ্ছুক নয়। আসামিরা তাদের পক্ষে আইনজীবী না পেয়ে জামিন শুনানির জন্য লক্ষ্মীপুর লিগ্যাল এইড অফিসে আইনি সহায়তা চান। সেখান থেকে দুইজন আইনজীবীকে শুনানি করতে বলা হলেও তারা অন্য আইজীবীদের দ্বারা হেনস্তার ভয়ে জামিন শুনানিতে অংশ নেননি। অন্যদিকে বাদী পক্ষের আইনজীবী আসামিদের বিরুদ্ধে জামিনের বিরোধিতা করেন।
আদালত সূত্র আরও জানায়, আসামিরা ৯ জুন জামিনের জন্য আবেদন করলে পরদিন ১০ জুন নথি প্রাপ্ত সাপেক্ষে জামিন শুনানির জন্য রাখা হয় এবং তদন্তকারী কর্মকর্তা ৫ দিনের রিমান্ডের আবেদন করেন।
বিষয়টি নিয়ে আদালতের পর্যালোচনায় উঠে আসে, ঈদুল আজহার বন্ধে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় এবং গ্রেপ্তারের পর থেকে আসামিরা জামিনের শুনানির সুযোগ পাননি। চারদিন তাদের হাজতবাস হয়েছে। ৬ জুন আসামি গ্রেপ্তার হলেও বাদী একজন আইনজীবী হওয়ায় আসামিরা জামিন শুনানির জন্য কোন আইনজীবী পাননি এবং লিগ্যাল এইড অফিসের আইনজীবীরাও শুনানিতে অংশ নিতে অনীহার বিষয়টি পরিষ্কার হওয়ায় ১৪ জুন পর্যন্ত ঈদের ছুটিতে আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম বন্ধ থাকায় জামিন অযোগ্য ধারায় গুরুতর অভিযোগ না থাকায় উভয় পক্ষের শুনানি অন্তে উভয় দরখাস্ত নিষ্পত্তি করা হলো।
আদালত আসামিদের রিমান্ড না মঞ্জুর করে চারদিনের হাজতবাস ও ঈদ বিবেচনা করে আসামি কাউসার ও রুবেলকে ১০০ টাকা বন্ডে একজন গণ্যমান্য ব্যক্তির জিম্মায় জামিন মঞ্জুর করেন। তাদের জামিন হওয়ায় পর থেকেই আইনজীবীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করে। এ ঘটনায় তারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে বিচারকের অপসারণের দাবি জানান।
ঈদের বন্ধ শেষে রবিবার (১৫ জুন) আদালতের স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়। আইনজীবী সমিতি বৈঠক করে ওই আদালতের বিচারক এম সাইফুল ইসলামের আদালতের বর্জনের ঘোষণা দেন। এদিন সকাল থেকে ওই বিচারকের কক্ষে বিচারপ্রার্থীরা এসে উপস্থিত হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী কয়েকজন বিচারপ্রার্থী জানান, আদালতের বিচারক এজলাসে বসা ছিলেন। এ সময় ৭-৮ জন আইনজীবী কক্ষে ঢুকে আদালত বর্জনের ঘোষণা দেন। এতে হট্টগোল দেখা দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বিচারক আদালত কর্মচারীদের দরজা বন্ধ করে দিতে বলেন। এ সময় আইনজীবী ও কর্মচারীদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। আহত হন এজলাসের স্টেনোগ্রাফার আশরাফুজ্জামান। এতে বিচারকার্য সম্পন্ন না করেই এজলাস থেকে নেমে যান বিচারক।
আহত আশরাফুজ্জামান বলেন, ‘‘আইনজীবীরা হট্টগোল করায় বিচারকের নির্দেশে আমি দরজা বন্ধ করতে গেলে আমার ওপর আইনজীবীরা হামলা করে। এতে আমার বাম চোখের পাশে রক্তাক্ত জখম হয়।’’
উপস্থিত আইনজীবীদের মধ্যে অ্যাডভোকেট আশিকুর রহমান জানান, কয়েকজন আইনজীবী এজলাসে গিয়ে আদালত বর্জনের বিষয়টি জানিয়ে দিতে গিয়েছেন। আদালত কর্মচারীরা উল্টো তাদের ওপর হামলা করেছে। এতে তিনি নিজেও আহত হন।
ঢাকা/লিটন/টিপু