যুক্তরাজ্যের একটি বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতালের শল্যচিকিৎসকেরা গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশে আন্দোলন চলাকালে আহত ২০ জনের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর দৃষ্টি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছেন।

মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট। 

প্রতিবেদনে বলা হয়, লন্ডনের মুরফিল্ডস চক্ষু হাসপাতালের পরামর্শক চক্ষু বিশেষজ্ঞ মাহি মুকিত এবং নিয়াজ ইসলাম গত মাসে ঢাকা সফর করেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে তারা ঢাকায় এসেছিলেন। 

আরো পড়ুন:

ফ্ল্যাট ইস্যুতে যুক্তরাজ্যে ‘মিথ্যাচার’ করার অভিযোগ টিউলিপের বিরুদ্ধে

হিথ্রো বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু

মাহি মুকিত এবং নিয়াজ ইসলাম ঢাকায় এসে ১৪ থকে ৩০ বছর বয়সী ১৫০ জন রোগীর চিকিৎসা মূল্যায়ন করেন। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় ওই রোগীদের চোখে গুলির আঘাত লাগে। তাদের বেশির ভাগই গত বছর প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছিলেন।

যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ শল্যচিকিৎসকেরা দুই দিনে ২৪ জন রোগীর দৃষ্টিশক্তি বাঁচাতে অস্ত্রোপচার করেন। যাদের অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি, তাদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা দেওয়া হয়।

মুরফিল্ডসের জ্যেষ্ঠ ভিটেরিওরেটিনাল পরামর্শক মাহি মুকিত বলেন, “এই মানুষদের সাহায্য করার জন্য আমন্ত্রিত হতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। এটি আমাদের সবার জন্য এক ব্যাপক অভিজ্ঞতা ছিল।” তিনি আরো বলেন, “যারা মাসের পর মাস ধরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে জীবনযাপন করছিলেন, তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনতে পারাটা সত্যিই এক সৌভাগ্যের।”

মাহি মুকিত জানান, তিনি যেসব রোগীর চিকিৎসা করেছেন তাদের মধ্যে একজনের নাম রোহান। তার দুই চোখেই গুলি লেগেছিল। তিনি বলেন, “তার দুই চোখই অন্ধ হয়ে গিয়েছিল, যার মধ্যে একটি চোখের অবস্থা ছিল একেবারে আশাহীন। অন্য চোখে আমাদের অস্ত্রোপচার তার রেটিনাল ডিটাচমেন্ট বা রেটিনার বিচ্যুতি ঠিক করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু সরিয়ে ফেলেছে। আমরা আশা করছি, অস্ত্রোপচারের পর তার দৃষ্টি ক্রমশ উন্নত হবে।”

মাহি মুকিত আরো জানান, রোমেল নামে আরেকজন রোগীও গুলির আঘাতে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তারও একটি চোখের রেটিনা ডিটাচমেন্টও মেরামত করা হয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা আরো জানতে পারেন যে, মিনহাজ নামের ২০ বছর বয়সী এক রোগীর চোখে গত জুলাইয়ের ঢুকে পড়া বুলেট এখনো রয়ে গেছে। সেগুলো অপসারণ এবং এর ফলে চোখের যে ক্ষতি হয়েছে, তা সারিয়ে তোলার জন্য অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়।

দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বিক্ষোভের সময় আনুমানিক ১,০০০ জন চোখে আঘাত পেয়েছিলেন। ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইওএইচ) চিকিৎসকদের কাছ থেকে জরুরি চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন প্রায় ৭০০ জন।

মুরফিল্ডস হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা ঢাকার এনআইওএইচ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা জোরদার করার জন্য স্থানীয় ডাক্তারদের চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার প্রশিক্ষণও প্রদান করেছেন।

মুরফিল্ডসের সিনিয়র মেডিকেল রেটিনা বিশেষজ্ঞ নিয়াজ ইসলাম বলেন, “এনআইওএইচ-এর সহকর্মীদের সাথে আমাদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে পেরে আমি আনন্দিত।”

ঢাকা/ফিরোজ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর জ য র জন য

এছাড়াও পড়ুন:

যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন

যশোরের ভৌগোলিক নির্দেশক (জিআই) পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহের জন্য খেজুরগাছ প্রস্তুতের (রস সংগ্রহের উপযোগী করা) আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করা হয়েছে। আজ রোববার দুপুরে চৌগাছা উপজেলার হায়াতপুর গ্রামে অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিনুর আক্তার।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোরের উপপরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, রস-গুড় সংগ্রহের জন্য গত বছরের তুলনায় এ বছর বেশি খেজুরগাছ প্রস্তুত করা হবে। এ বছর জেলায় অন্তত তিন লাখের বেশি গাছ প্রস্তুত করা হবে। যশোরে খেজুরের রস ও গুড়ের ১০০ কোটির বেশি টাকার বাজার রয়েছে। অন্তত ছয় হাজার কৃষক এই পেশায় যুক্ত।

যশোরের খেজুর গুড় জিআই পণ্য হলো যেভাবে

২০২২ সালে চৌগাছার তৎকালীন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (বর্তমানে যশোরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট) ইরুফা সুলতানা খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য সংরক্ষণে খেজুর গুড়ের মেলা, গাছিদের প্রশিক্ষণ, গাছি সমাবেশ, গাছিদের সমবায় সমিতি গঠন, খেজুরগাছ রোপণ ও সংরক্ষণের উদ্যোগ নেন। একই বছর জিআই পণ্য হিসেবে স্বীকৃতির জন্য যশোরের খেজুর গুড়ের আবেদন করেন তিনি। তাঁর আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৪ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি সেটি জিআই পণ্যের স্বীকৃতি পায়।

শতকোটি টাকার বাজার ধরতে ব্যস্ত গাছিরা

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, যশোরের প্রায় ছয় হাজার গাছি খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় উৎপাদনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইতিমধ্যে খেজুরগাছ প্রস্তুতির কাজ শুরু হয়েছে। গাছ প্রস্তুতে ব্যস্ত সময় পার করছেন গাছিরা। খেজুরগাছ সংরক্ষণ, রোপণ, গাছিদের প্রশিক্ষণ, প্রণোদনাসহ নানাভাবে সহযোগিতার মাধ্যমে গুড় উৎপাদন বৃদ্ধি ও বাজার সম্প্রসারণে কাজ করছে কৃষি বিভাগ, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয়ের তথ্যমতে, ২০২৪-২৫ অর্থবছরে যশোর জেলায় খেজুরগাছের সংখ্যা ২৩ লাখ ৩০ হাজার ৬৯৫টি। এর মধ্যে রস আহরণের উপযোগী গাছের সংখ্যা ৩ লাখ ৭ হাজার ১৩০টি। গাছ থেকে ৩ কোটি ৭১ লাখ ৩ হাজার লিটার রস ও ২ হাজার ৭৪২ মেট্রিক টন গুড় উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। বাজারদর অনুযায়ী প্রতি লিটার রসের দাম ৩৫ টাকা ও গুড়ের কেজি ৩৪০ টাকা। সেই হিসাবে রস ও গুড়ের বাজার দর ৯৯ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।

চৌগাছা উপজেলার চাকলা গ্রামের গাছি আবদুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমার দাদা খেজুরগাছের রস থেকে পাটালি গুড় বিক্রি করে জীবিকা নির্বাহ করতেন। দাদার সঙ্গে বাবাও যুক্ত ছিলেন। বাবার পেশায় আমিও যুক্ত হয়েছি। বাবা আর আমি এবার ৩০০টি খেজুরগাছ থেকে রস-গুড় তৈরির প্রস্তুতি নিচ্ছি। গতবছর ভালো দাম পেয়েছি। এবারও ভালো দাম পাব বলে আশা করি।’

গাছিরা জানান, কার্তিক মাস শুরুর সঙ্গে সঙ্গেই খেজুরগাছ ছেঁটে রস ও গুড় তৈরির প্রস্তুতি শুরু করেন তাঁরা। শীত মৌসুমে এ অঞ্চলের কৃষকদের অন্যতম আয়ের উৎস এটি। এখানকার কারিগরদের দানা পাটালি তৈরির সুনাম রয়েছে। পাটালি ও ঝোলা গুড় তৈরি ছাড়াও চাষিরা শীতের ভোরে ফেরি করে কাঁচা রস বিক্রি করেন। কাঁচা রস প্রতি মাটির ভাঁড় ১৫০-২০০ টাকা, দানা গুড় ৩৫০-৪০০ টাকা আর পাটালি প্রতি কেজি ৪৫০-৬০০ টাকায় বিক্রি হয়।

অনলাইন প্ল্যাটফর্ম কেনারহাটের উদ্যোক্তা তরিকুল ইসলাম বলেন, ‘গত বছর আমাদের কাছে ভোক্তার চাহিদা ছিল সাড়ে ছয় হাজার কেজি পাটালি গুড়। সরবরাহ করতে পেরেছিলাম দুই হাজার কেজি। প্রাকৃতিক দুর্যোগ, অতিবৃষ্টি, শীত কম হওয়ায় চাহিদা অনুযায়ী পাটালি গুড় সরবরাহ করতে পারিনি। এ বছর ইতিমধ্যে অর্ডার আসতে শুরু করেছে।’

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • লরা উলভার্ট: হিমালয়ের চূড়ায় এক নিঃসঙ্গ শেরপা
  • বিশ্বের সবচেয়ে বয়স্ক অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নের মৃত্যু
  • শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম বর্ষের ভর্তি পরীক্ষার তারিখ ঘোষণা
  • যশোরে জিআই পণ্য খেজুর গুড় তৈরির রস সংগ্রহে গাছ প্রস্তুতির উদ্বোধন