জুলাই অভ্যুত্থানে আহত শিক্ষার্থীদের দৃষ্টিশক্তি ফেরালেন ব্রিটিশ
Published: 15th, April 2025 GMT
যুক্তরাজ্যের একটি বিশেষায়িত চক্ষু হাসপাতালের শল্যচিকিৎসকেরা গত বছরের জুলাইয়ে বাংলাদেশে আন্দোলন চলাকালে আহত ২০ জনের বেশি বাংলাদেশি শিক্ষার্থীর দৃষ্টি ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছেন।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট।
প্রতিবেদনে বলা হয়, লন্ডনের মুরফিল্ডস চক্ষু হাসপাতালের পরামর্শক চক্ষু বিশেষজ্ঞ মাহি মুকিত এবং নিয়াজ ইসলাম গত মাসে ঢাকা সফর করেন। বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের আমন্ত্রণে তারা ঢাকায় এসেছিলেন।
আরো পড়ুন:
ফ্ল্যাট ইস্যুতে যুক্তরাজ্যে ‘মিথ্যাচার’ করার অভিযোগ টিউলিপের বিরুদ্ধে
হিথ্রো বিমানবন্দরে ফ্লাইট চলাচল শুরু
মাহি মুকিত এবং নিয়াজ ইসলাম ঢাকায় এসে ১৪ থকে ৩০ বছর বয়সী ১৫০ জন রোগীর চিকিৎসা মূল্যায়ন করেন। ২০২৪ সালের জুলাইয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন আয়োজিত বিক্ষোভে অংশ নেওয়ার সময় ওই রোগীদের চোখে গুলির আঘাত লাগে। তাদের বেশির ভাগই গত বছর প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছিলেন।
যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞ শল্যচিকিৎসকেরা দুই দিনে ২৪ জন রোগীর দৃষ্টিশক্তি বাঁচাতে অস্ত্রোপচার করেন। যাদের অস্ত্রোপচার করা সম্ভব হয়নি, তাদের পুনর্বাসনের পরিকল্পনা দেওয়া হয়।
মুরফিল্ডসের জ্যেষ্ঠ ভিটেরিওরেটিনাল পরামর্শক মাহি মুকিত বলেন, “এই মানুষদের সাহায্য করার জন্য আমন্ত্রিত হতে পেরে আমি সম্মানিত বোধ করছি। এটি আমাদের সবার জন্য এক ব্যাপক অভিজ্ঞতা ছিল।” তিনি আরো বলেন, “যারা মাসের পর মাস ধরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে জীবনযাপন করছিলেন, তাদের দৃষ্টিশক্তি ফিরিয়ে আনতে পারাটা সত্যিই এক সৌভাগ্যের।”
মাহি মুকিত জানান, তিনি যেসব রোগীর চিকিৎসা করেছেন তাদের মধ্যে একজনের নাম রোহান। তার দুই চোখেই গুলি লেগেছিল। তিনি বলেন, “তার দুই চোখই অন্ধ হয়ে গিয়েছিল, যার মধ্যে একটি চোখের অবস্থা ছিল একেবারে আশাহীন। অন্য চোখে আমাদের অস্ত্রোপচার তার রেটিনাল ডিটাচমেন্ট বা রেটিনার বিচ্যুতি ঠিক করেছে এবং ক্ষতিগ্রস্ত টিস্যু সরিয়ে ফেলেছে। আমরা আশা করছি, অস্ত্রোপচারের পর তার দৃষ্টি ক্রমশ উন্নত হবে।”
মাহি মুকিত আরো জানান, রোমেল নামে আরেকজন রোগীও গুলির আঘাতে দৃষ্টিশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলেন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তারও একটি চোখের রেটিনা ডিটাচমেন্টও মেরামত করা হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা আরো জানতে পারেন যে, মিনহাজ নামের ২০ বছর বয়সী এক রোগীর চোখে গত জুলাইয়ের ঢুকে পড়া বুলেট এখনো রয়ে গেছে। সেগুলো অপসারণ এবং এর ফলে চোখের যে ক্ষতি হয়েছে, তা সারিয়ে তোলার জন্য অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়।
দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্টের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে ২০২৪ সালের জুলাই মাসে বিক্ষোভের সময় আনুমানিক ১,০০০ জন চোখে আঘাত পেয়েছিলেন। ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে (এনআইওএইচ) চিকিৎসকদের কাছ থেকে জরুরি চিকিৎসা সেবা নিচ্ছেন প্রায় ৭০০ জন।
মুরফিল্ডস হাসপাতালের বিশেষজ্ঞরা ঢাকার এনআইওএইচ হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা জোরদার করার জন্য স্থানীয় ডাক্তারদের চিকিৎসা ও অস্ত্রোপচার প্রশিক্ষণও প্রদান করেছেন।
মুরফিল্ডসের সিনিয়র মেডিকেল রেটিনা বিশেষজ্ঞ নিয়াজ ইসলাম বলেন, “এনআইওএইচ-এর সহকর্মীদের সাথে আমাদের দক্ষতা এবং অভিজ্ঞতা ভাগ করে নিতে পেরে আমি আনন্দিত।”
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর য ক তর জ য র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।
মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স।
গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’
পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।
হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।
আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।
সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’
প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’
জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’
তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।
রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।
ঢাকা/ফিরোজ