খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) শিক্ষার্থীদের নামে মামলা এবং বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত প্রত্যাহারের দাবিতে বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একদল প্রাক্তন শিক্ষার্থী। এই কর্মসূচিতে সংহতি প্রকাশ করে অংশ নিয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী।

আজ মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মিছিলটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাজু ভাস্কর্যে গিয়ে শেষ হয়। পরে সেখানে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশ হয়।

সমাবেশে কুয়েটের ২০১৪–১৫ সেশনের যন্ত্রকৌশল বিভাগের প্রাক্তন শিক্ষার্থী মাইনুল হক বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান উপাচার্যের পদত্যাগ দাবি করেন। তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা মনে করেন উপাচার্য তাঁর দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছেন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি বিএনপি–সমর্থিত সন্ত্রাসীরা হামলা চালালে তিনি নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ হয়েছেন। সেনাবাহিনীকে ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেননি। এর পরিপ্রেক্ষিতে আন্দোলন যখন আরও জোরালো হলো, ছাত্রছাত্রীরা অপরাধীদের বিচারের দাবি জানালেন, তখন উপাচার্য ক্যাম্পাস বন্ধ করে দিলেন। এরপরেও শিক্ষার্থীরা যখন থাকার চেষ্টা করলেন, তিনি তখন হলের বিদ্যুৎ ও পানি বন্ধ করে দিলেন, ফলে শিক্ষার্থীরা বাধ্য হয়ে বাড়ি চলে যান।

কুয়েটের এনার্জি সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ১৭-১৮ সেশনের শিক্ষার্থী জিহাদুল হক তালুকদার বলেন, ‘আমরা প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা বর্তমান শিক্ষার্থীদের এক দফা দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করছি। ভিসি যেই কাজ করেছেন, এরপর আর তাঁর পদে থাকার নৈতিক অধিকার নেই। তিনি সেই নৈতিক অধিকার হারিয়েছেন।’

আরও পড়ুন৩৭ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার, ২ মে হল খোলার সিদ্ধান্ত২১ ঘণ্টা আগে

সমাবেশে সংহতি প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী মুসাদ্দিক আলী ইবনে মোহাম্মদ বলেন, ‘যারা ছাত্রদল, বিএনপি ও যুবদল সন্ত্রাসীদের হাতে মার খেলো, রক্তাক্ত হলো, মিথ্যা বানোয়াট মামলা খেলো, তাদেরকেই এখন বহিষ্কার করা হলো। বহিষ্কৃত ৩৭ শিক্ষার্থীর মধ্যে বেশির ভাগই হামলার শিকার হয়েছিলেন।’

গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েটে ছাত্ররাজনীতি বন্ধের দাবিকে কেন্দ্র করে সংঘর্ষের ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তি আহত হন। পরদিন প্রশাসনিক ভবনসহ সব একাডেমিক ভবনে তালা ঝুলিয়ে দেন শিক্ষার্থীরা। ওই দিন দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় কুয়েটে সব ধরনের রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত হয়। সংঘর্ষের ঘটনা তদন্তে কমিটি করা হয়। ওই দিন রাতেই খানজাহান আলী থানায় অজ্ঞাতপরিচয় ৪০০ থেকে ৫০০ জনকে আসামি করে মামলা করে প্রশাসন। ২৫ ফেব্রুয়ারি সব আবাসিক হল অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করা হয়। এর মধ্যে ১০ এপ্রিল কুয়েটের ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেটের আমলি আদালতে মামলা করেন নগরের মহেশ্বরপাশা উত্তর বণিকপাড়া এলাকার হোচেন আলী নামের এক ব্যক্তি।

মামলার পরপরই ১৩ এপ্রিল রাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট সভায় ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।

আরও পড়ুনকুয়েটের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন৭ ঘণ্টা আগে.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

স‌চিবাল‌য়ে কর্মচারী‌দের বি‌ক্ষোভ, চল‌বে মঙ্গলবারও 

ঈদের ছুটির পর সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫ বাতিলের দাবিতে আবারও আন্দোলন শুরু ক‌রে‌ছেন সচিবালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা।

সোমবার (১৬ জুন) সচিবালয়ে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ ক‌রে‌ছে। দা‌বি আদা‌য়ে একজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি শে‌ষে মঙ্গলবার বেলা ১১টায় সচিবালয়ে বি‌ক্ষোভ কর্মসুচী ঘোষণা ক‌রে‌ছেন তারা।

এদিকে, আন্দোলন কর্মসূচি থে‌কে বিরত থাক‌তে অনু‌রোধ জা‌নি‌য়ে‌ছেন এ সংক্রান্ত ক‌মি‌টির আহ্বায়ক আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

আরো পড়ুন:

গুম বিষ‌য়ে আইন প্রণয়ন ও কমিশন গঠন কর‌বে সরকার: আইন উপদেষ্টা

সচিবালয় ও যমুনার পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

অন‌্যদি‌কে নেতারা অভিযোগ ক‌রে‌ছেন, আধ‌্যা‌দেশ বা‌তিল না ক‌রে সরকার তা‌দের স‌ঙ্গে সাপ লুডু খেলা খেল‌ছে। দা‌বি মানা না হ‌লে আন্দোলন কর্মসূচি আরো ক‌ঠোর হ‌বে। দা‌বি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তারা মা‌ঠে থাক‌বে।

ঈদের ছু‌টির পর সোমবার (১৬ জুন) বেলা ১১টার পর সচিবালয়ের ছয় নম্বর ভবনের সামনে বাদাম তলায় কর্মচারীরা জ‌ড়ো হন। সেখান থে‌কে বাংলাদেশ সচিবালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য ফোরামের নেতৃত্বে বিক্ষোভ মিছিল শুরু করেন।

মি‌ছি‌লে নেতৃত্ব দেন ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবির ও মো. নুরুল ইসলাম।

তারা এ সময় ‘আমার সোনার বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’, ‘লেগেছে রে লেগেছে, রক্তে আগুন লেগেছে’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, সচিবালয় জেগেছে’, ‘মানি না মানব না’, ‘ফ্যাসিবাদী কালো আইন’, ‘মানি না মানব না, অবৈধ কালো আইন’, ‘ফ্যাসিবাদের দালালেরা, হুঁশিয়ার সাবধান’ স্লোগান ধ‌রেন।

এরপর তারা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের নতুন ভবনের নিচে এসে সমাবেশ ক‌রেন।
ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. নুরুল ইসলাম বলেন, “সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ ২০২৫ বাতিলের দাবিতে আমরা মাঠে ময়দানে ঘুরতেছি। অনেক ক্যাডার সার্ভিস থেকে অনেকেই আন্দোলনে নেমে গেছে। আমরা একটা জিনিস বুঝে গেছি সরকার আমাদের সঙ্গে সাপ-লুডু খেলা খেলছে। আমরা চাইলাম মহার্ঘ ভাতা, পদ-পদবি পরিবর্তন, সচিবালয় ভাতা। সেটা ঠেকানোর জন্য সরকার করল অভিন্ন নিয়োগবিধি। তারপর এটা নিয়ে সচিবালয়ে বিশাল হুলুস্থুল শুরু হলে সেটা আমরা থামিয়ে দিলাম।”

তিনি বলেন, “যদি আমাদের কথায় কান না দেন তাহলে আমরা বিভাগীয় পর্যায়ে সম্মেলন ডাকতে বাধ্য হব। প্রজ্ঞাপনে বলা আছে, অধ্যাদেশ জারির আগে আমাদের সঙ্গে আলোচনা করতে হবে। এ পর্যন্ত আমরা কেউ কোনো আলোচনার প্রস্তাব পাইনি। তাহলে প্রজ্ঞাপন জারির মধ্যেও লুকোচুরি আছে। আজ আমরা রোদে পুড়ে আন্দোলন করছি, আপনারা এসিতে বসে আছেন। আমার এক বন্ধু বলেছে উপদেষ্টার দপ্তর, সচিবের দপ্তর, প্রশাসনের শাখায় খবর নেবেন তারা আমাদের মিটিংয়ে আসে কিনা। যদি না আসে আমরা তাদের আসতে বাধ্য করব। আমরা ধরে নেবে তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের আইন প্রণেতাদের সহযোগী।”

নুরুল ইসলাম বলেন, “আমরা এগুলো দেখতে, শুনতে ও বুঝতে চাই না। আমরা শুধু দেখতে চাই এই অধ্যাদেশ বাতিল হয়েছে। আমরা সংশোধন, পরিবর্তন, পরিবর্ধন বুঝি না। আমরা শুধু বুঝি এই অধ্যাদেশ বাতিল করতে হবে। আমাদের পিছু হঠার কোনো সুযোগ নেই।”

তি‌নি ব‌লেন, “মঙ্গলবার সচিবালয়ের বাদাম তলায় বেলা ১১টায় জমায়েত হব। প্রতিটি মন্ত্রণালয় থেকে আলাদা আলাদা মিছিল নিয়ে আসবেন। যদি না আসেন তাহলে ধরে নেব তারা ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর। এরপর যদি আমরা আলোচনার আমন্ত্রণ না পাই, তাহলে আমাদের দাবির সঙ্গে নতুন নতুন দাবি যুক্ত হবে।”

নুরুল ইসলাম বলেন, “এই অধ্যাদেশ বাতিল করলে আমরা নীরবে ঘরে ফিরে যাব। যদি আমাদের আগুনে জ্বালিয়ে আপনারা খেলা করতে চান, তাহলে আমরা এমন খেলা খেলব আপনারা ঘরে ঢুকতে পারবেন না। আপনারা সে কাজ করতে বাধ্য করবেন না।”

এ সময় ঐক্য ফোরামের কো-চেয়ারম্যান মো. বাদিউল কবির, কো-মহাসচিব নজরুল ইসলাম, নিজাম উদ্দিন আহ‌মেদসহ অন্যান্য নেতারা বক্তব‌্য রা‌খেন। 

এরপর নেতারা আধ‌্যা‌দেশ বা‌তি‌লের দা‌বি‌তে দুপুর পৌঁনে ১টার দিকে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয় এবং শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আদিলুর রহমান খানকে স্মারকলিপি দেন।

সরকারি চাকরি অধ্যাদেশের খসড়া বাতিলের দাবিতে গত ২৪ মে আন্দোলনে নামেন সচিবালয়ের কর্মচারীরা।

আন্দোলন চলাকা‌লে গত ৪ জুন ‘সরকারি চাকরি (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০২৫’ পর্যালোচনা করে সুপারিশ দিতে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে আহ্বায়ক করে একটি কমিটি গঠন করে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। কমিটি সোমবার বিকেলে প্রথম বৈঠকে বসছে। কমিটির সুপারিশ দেওয়া পর্যন্ত কর্মচারীদের আন্দোলন কর্মসূচি থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন আইন উপদেষ্টা।

এর আগে কর্মচারীদের আন্দোলনের মধ্যেই ২৫ মে রাতে এই অধ্যাদেশ জারি করে সরকার। অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চার ধরনের শৃঙ্খলা ভঙ্গের অপরাধের জন্য বিভাগীয় মামলা ছাড়াই শুধুমাত্র কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়ে চাকরিচ্যুত করা যাবে।

অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সর্বশেষ ঈদের ছুটির আগে তিন জুন পর্যন্ত সচিবালয়ে বিক্ষোভ করেন কর্মচারীরা। চাকরি অধ্যাদেশ বাতিলের দাবিতে সরকারের সাতজন উপদেষ্টাকে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা। ১৫ জুনের মধ্যে চাকরি অধ্যাদেশ বাতিল না করলে ১৬ জুন থেকে কঠোর আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণার হুমকিও দিয়েছিলেন কর্মচারী নেতারা।

ঢাকা/নঈমুদ্দীন/সাইফ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • সাংবাদিক পরিচয়ে হোটেলে তল্লাশি চালানো যুবক গ্রেপ্তার 
  • সংবাদপত্রের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে: তারেক রহমান
  • মামলা থেকে বৈষম্যবিরোধী নেতাকে বাদ দেওয়ার অভিযোগ, ওসির অপসারণ চেয়ে ঝাড়ুমিছিল
  • স‌চিবাল‌য়ে কর্মচারী‌দের বি‌ক্ষোভ, চল‌বে মঙ্গলবারও 
  • বোচাগঞ্জ থানার ওসির অপসারণ দাবিতে মানববন্ধন 
  • গৃহশ্রমিকদের সাপ্তাহিক ও মাতৃত্বকালীন ছুটি শ্রম আইনে রাখতে হবে
  • মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির ২৮তম বার্ষিকী পালিত
  • রূপগঞ্জে মামুন হত্যা : মাহবুবের বিরুদ্ধে অপপ্রচারের অভিযোগে মানববন্ধন
  • খুলনায় আওয়ামী লীগ নেতাকে বেধড়ক পেটানোর পর পুলিশে সোপর্দ
  • সাইক্লিস্ট হত্যার বিচার দাবিতে রাজধানীতে মানববন্ধন