চিকিৎসকের ওএসডির আদেশ বাতিলের দাবিতে সেবা বন্ধ করে মানববন্ধনে ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা
Published: 17th, April 2025 GMT
চিকিৎসককে ওএসডি করার আদেশ বাতিলের দাবিতে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে চিকিৎসা কার্যক্রম বন্ধ রেখেছেন ইন্টার্ন চিকিৎসক ও নার্সরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে প্রশাসনিক ভবনের সামনে প্রায় দুই ঘণ্টা মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন তাঁরা।
মানববন্ধনে অংশ নেওয়া ইন্টার্ন চিকিৎসক সুবর্না, মো. বায়জিদ ও মিমি আক্তার বলেন, এক শিক্ষার্থী মৃত্যুর ঘটনায় জেলা প্রশাসন তদন্ত কমিটি করেছে। কমিটির কাজ শেষ না হতেই দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে কার্ডিওলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট এ এস এম শামীম আল আজাদকে ওএসডি করা হয়েছে, যা অযৌক্তিক। ওএসডির আদেশ বাতিল না হওয়া পর্যন্ত জরুরি বিভাগ ও ওয়ার্ডে তাঁরা কোনো চিকিৎসা দেবেন না।
কয়েকজন ইন্টার্ন চিকিৎসক দাবি করেন, ১৪ এপ্রিল বিকেলে পানিতে ডুবে যাওয়া এক রোগীকে ওয়ার্ডে নিয়ে সঙ্গে সঙ্গে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। কিন্তু রোগীর সঙ্গে ওয়ার্ডে জড়ো হওয়া ৩০ থেকে ৪০ যুবকের বিশৃঙ্খলার কারণে অনেকের মধ্যে ভয়ভীতি ছড়িয়ে পড়ে। তাঁরা এ সময় ওয়ার্ডে ভাঙচুরের চেষ্টা ও চিকিৎসকদের গালমন্দ করেন। রোগী নিয়ে আসার পর তাঁর মুখ থেকে প্রচণ্ড রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। এ লক্ষণ পানিতে ডোবার সঙ্গে সংগতিপূর্ণ ছিল না। রোগীর মৃত্যুর পরে তাঁর মরদেহের সুরতহাল ও ময়নাতদন্তের দাবি করেছিলেন তাঁরা। কিন্তু রোগীর সঙ্গে আসা লোকজন তা না করে মরদেহ নিয়ে যান।
পটুয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক দিলরুবা ইয়াসমিন বলেন, ইন্টার্ন চিকিৎসকেরা তাঁদের জায়গা থেকে একটি দাবি তুলে সেবা বন্ধ রেখেছেন। তিনি তাঁদের সঙ্গে কথা বলেছেন, যাতে রোগীরা কোনো সেবা থেকে বঞ্চিত না হন। এ ছাড়া ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
১৪ এপ্রিল পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পবিপ্রবি) কৃষি অনুষদের ২০২৩–২৪ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী হুসাইন মোহাম্মদকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসেন তাঁর বন্ধুরা। জানানো হয়, পানিতে ডুবে অসুস্থ হওয়ার কথা। পরে ওয়ার্ডে আশিকের মৃত্যু হলে চিকিৎসকের বিরুদ্ধে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগ তোলা হয়। কয়েক দফায় বিক্ষোভ করেন তাঁরা। এতে উত্তেজনা সৃষ্টি হলে সেনাবাহিনী ও পুলিশ মোতায়ন করে পরিস্থিতি শান্ত রাখা হয়।
ওই রাতেই জেলা প্রশাসক আবু হাসনাত মোহাম্মদ আরেফীন, পবিপ্রবির উপাচার্য অধ্যাপক কাজী রফিকুল ইসলাম ও পুলিশ সুপার মো.
গতকাল বুধবার স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সহকারী সচিব মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন স্বাক্ষরিত আদেশে পটুয়াখালী ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালের চিকিৎসক ও কার্ডিওলজি বিভাগের জুনিয়র কনসালট্যান্ট এ এস এম শামীম আল আজাদকে ওএসডি করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরে সংযুক্ত করা হয়।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
শিবচরে তরুণকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা, বিচারের দাবিতে মানববন্ধন
মাদারীপুরের শিবচরে জামিনে থাকা আসামি রাকিব মাদবরকে (২৫) প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যার ঘটনায় মামলা হয়েছে। এতে ২২ জনকে এজাহারভুক্ত ও অজ্ঞাত আরও ৭ জনকে আসামি করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার সকালে নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বাদী হয়ে শিবচর থানায় মামলাটি করেন।
এর আগে গত রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের প্রধান সড়কে একটি ব্যাংকের সামনে রাকিব মাদবরকে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। রাকিব শিবচর উপজেলার চরশ্যামাইল এলাকার নাসির মাদবরের ছেলে। তিনি সরকারি বরহামগঞ্জ কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের স্নাতক শেষ বর্ষের ছাত্র ছিলেন।
দুই দিন পার হয়ে গেলেও এই ঘটনায় কোনো আসামিকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ। এর প্রতিবাদে আজ দুপুরে শিবচর পৌর বাজারের সদর রোডে মানববন্ধন ও বিক্ষোভ করেছেন শিক্ষার্থী ও স্থানীয় লোকজন। এ সময় বক্তারা বলেন, প্রকাশ্যে শত শত মানুষের সামনে হত্যাকাণ্ড কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। একটা সভ্য স্বাধীন দেশে এমন নৃশংস হত্যাকাণ্ড হতে পারে না। হত্যাকারীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার না করা হলে ভবিষ্যতে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেবেন তাঁরা।
মামলার বাদী নিহত ব্যক্তির চাচি পারুল আক্তার বলেন, ‘রাকিবরে এতগুলো মানুষের সামনে কুপাইয়া মাইরা ফালাইলো। কেউ বাঁচাতে এগিয়ে আসলো না। যারা খুন করছে, তারা রাকিবের পূর্বশত্রু। আবুল কালাম সরদারের নির্দেশে তার লোকজন এই খুন করেছে। পুলিশ এ ঘটনায় কোনো আসামি এখন অবধি গ্রেপ্তার করে নাই। আসামিগো গ্রেপ্তার চাই, ফাঁসি চাই।’
স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, শিবচর উপজেলার শিরুয়াইল ইউনিয়নের চরশ্যামাইল গ্রামের আবুল কালাম সরদারের লোকজনের সঙ্গে নিহত রাকিব মাদবরের লোকজনের আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত ৬ মে সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষে প্রতিপক্ষের হামলায় আবুল কালাম সরদারের ছেলে ইবনে সামাদ নিহত হন। ইবনে সামাদ হত্যা মামলার আসামি রাকিব সম্প্রতি জামিন নিয়ে জেল থেকে বের হয়ে এলাকায় আসেন। রোববার রাত আটটার দিকে শিবচর পৌর বাজারের একটি সড়কে দাঁড়িয়ে ছিলেন রাকিব। এ সময় ৪ থেকে ৫ জনের একটি দল ধারালো অস্ত্র দিয়ে তাঁর ওপর অতর্কিত হামলা চালায়। হাসপাতালে নেওয়ার পথে রাকিবের মৃত্যু হয়।
শিবচর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রকিবুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, প্রকাশ্যে হত্যার ঘটনায় ২২ জনকে আসামি করে মামলা হয়েছে। নিহত ব্যক্তির স্বজন ও স্থানীয় লোকজন মানববন্ধন করে এ ঘটনার প্রতিবাদ ও বিচার দাবি করেছেন। আসামিদের গ্রেপ্তারের জন্য সব ধরনের চেষ্টা অব্যাহত আছে।
আরও পড়ুনশিবচরে হত্যা মামলায় জামিনে থাকা আসামিকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে হত্যা১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫