দুবাই ডার্মায় আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে সিওডিল
Published: 17th, April 2025 GMT
বিশ্বের সর্ববৃহৎ ডার্মাটোলজি প্রদর্শনী দুবাই ডার্মায় অংশ নিয়েছে মেডিকেটেড স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড সিওডিল। ত্বক সুরক্ষায় ডক্টর রেকমেন্ডেড এই ব্র্যান্ডের পণ্যের গ্রহণযোগ্যতা বিশ্বব্যাপী। ত্বক ও চর্মরোগবিদ্যার ক্ষেত্রে বিশ্বের সবচেয়ে বড় এই আয়োজনে রিমার্ক এলএলসি ইউএসএর মেডিকেটেড ব্র্যান্ড হিসেবে অংশ নিয়েছে সিওডিল। এবারই প্রথম কোনো বিদেশি ব্র্যান্ডের বাংলাদেশে উৎপাদিত পণ্য নিয়ে এ ধরনের প্রদর্শনীতে অংশ নিয়েছে রিমার্ক। সিওডিলের এই প্রতিনিধিত্ব দক্ষিণ এশিয়ার স্কিনকেয়ার খাতের জন্য মাইলফলক।
সোমবার (১৪ এপ্রিল) দুবাই ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে শুরু হওয়া দুবাই ওয়ার্ল্ড ডার্মাটোলজি অ্যান্ড লেজার কনফারেন্স অ্যান্ড এক্সিবিশন (দুবাই ডার্মা) ১৬ এপ্রিল শেষ হয়।
মেলার শুরু থেকেই সিওডিলের স্টল ছিল বিশেষজ্ঞ ডাক্তার, টেকনিশিয়ান ও দর্শনার্থীদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে। বিশেষ করে, মেডিকেটেড স্কিনকেয়ার যেসব পণ্য বাংলাদেশে উৎপাদিত হচ্ছে, তা নিয়ে আলোচনা ছিল। দর্শনার্থীদের সামনে পণ্য সম্পর্কে বিস্তারিত বিবরণ ও প্রেজেন্টেশন দিতে দেখা গেছে সিওডিলের কর্মীদের।
মেলায় অংশ নেওয়া বাংলাদেশি বিশেষজ্ঞ ডার্মাটোলজিস্ট ডা.
ডা. জেসমিন মঞ্জুর বলেন, আমাদের পণ্যের এমন প্রদর্শনী আমাদের দেশের সক্ষমতার প্রমাণ দিয়েছে। এজন্য সিওডিলকে শুভেচ্ছা এবং অভিনন্দন। এই ব্র্যান্ডের কাছে বাংলাদেশসহ বিশ্ব ডার্মাটোলজি বাজারের প্রত্যাশা আরো বেড়ে গেল।
ডা. কিউ এম মাহবুবুল্লাহ স্টল পরিদর্শনে এসে বলেন, আমরা অনেকগুলো স্টল দেখেছি। তবে, উদ্ভাবনী পণ্যের তালিকায় দক্ষিণ এশীয় দেশ থেকে উৎপাদিত হিসেবে সিওডিলকেই এগিয়ে রাখব।
ডা. রাশেদ মাহমুদ খান বলেন, সম্প্রতি মেডিকেল খাতের অন্যতম প্রভাবশালী ‘ওয়ার্ল্ড জার্নাল অব অ্যাডভান্স রিসার্চ অ্যান্ড রিভিউস’-এ প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে সিওডিল শীর্ষ নির্ভরযোগ্য স্কিনকেয়ার পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। দুবাই ডার্মায় অংশ নেওয়ায় আশা করছি, বিশ্ব দরবারে বাংলাদেশে উৎপাদিত গ্লোবাল ব্র্যান্ডের স্কিনকেয়ার পণ্যের বড় বাজার তৈরী হবে।
এবারের আয়োজনে ১১৪টি দেশের ২৫ হাজারের বেশি দর্শনার্থী এবং পৌনে ২ হাজার ব্র্যান্ড অংশ নিয়েছে। বরাবরের মতো এবারের আয়োজনেও ছিল বৈজ্ঞানিক সম্মেলন, চর্মরোগ ও কসমেটিকস এবং প্লাস্টিক সার্জারির ক্ষেত্রে নানা প্রযুক্তিগত উন্নয়ন নিয়ে কর্মশালা এবং সেমিনার।
এবারের আয়োজনে সিওডিল তাদের পণ্যের প্রদর্শনীসহ ত্বকের রোগ নিরাময় ও ত্বক সুরক্ষায় উদ্ভাবিত নতুন পণ্য প্রদর্শন করছে। সিওডিলের হেড অফ বিজনেস সুকান্ত দাস বলেছেন, এবার দুবাই ডার্মায় উদ্ভাবনী পণ্যের তালিকায় অন্যতম আকর্ষণ সিওডিল। এতে অংশ নিয়েছেন রিমার্ক এলএলসি ইউএসর প্রতিনিধি অলগা ইয়াকাভেনকা ও ওলা জ্যাজাক্সকাওক্সা।
তিনি আরো বলেন, অ্যাকনি, এজিং, ড্রাইনেস, স্ক্যাল্পের সমস্যাসহ ত্বকের যাবতীয় সমস্যা সমাধানের পাশাপাশি বিভিন্ন ফলপ্রসূ কর্মসূচির মাধ্যমে নিজের ত্বক সম্পর্কে সচেতন হতে সিওডিল ভোক্তাদের উৎসাহিত করছে। সিওডিল ছাড়াও রিমার্কের অপরাপর ত্বক সুরক্ষা ব্র্যান্ডগুলোর মধ্যে হালাল সার্টিফিকেশন-প্রাপ্ত পণ্যও বিশ্বের সামনে তুলে ধরা হয়েছে। আশা করছি, মধ্যপ্রাচ্যসহ হালাল কসমেটিকসের বিশ্ববাজারে প্রবেশ করতে পারব আমরা।
সুকান্ত দাস জানান, ইতোমধ্যে সিওডিল মেডিকেল খাতের অন্যতম প্রভাবশালী ‘ওয়ার্ল্ড জার্নাল অব অ্যাডভান্স রিসার্চ অ্যান্ড রিভিউস’-এ প্রকাশিত গবেষণা নিবন্ধে সিওডিল শীর্ষ নির্ভরযোগ্য স্কিনকেয়ার পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে। স্কিনের নানা সমস্যার কার্যকরী সমাধান সিওডিল ব্র্যান্ডের পণ্যই দিতে পারে বলে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওই রিসার্চ জার্নালে বলা হয়েছে। আশা করছি, এ মেলায় গ্লোবাল মার্কেটে সিওডিল কাঙ্ক্ষিত রপ্তানি আদেশ পাবে।
বাংলাদেশে স্কিনকেয়ার ও কসমেটিকসের অথেন্টিক রিটেল শপ হারল্যান স্টোরসহ সবগুলো সেলস চ্যানেলে সিওডিল পণ্য পাওয়া যাচ্ছে।
হারল্যান স্টোরের উপ-ব্যবস্থাপনা পরিচালক গিয়াস উদ্দিন বিশ্বাস বলেছেন, আন্তর্জাতিক মানের এ পণ্য বাজারে সহজলভ্য ও সাশ্রয়ী করায় সিওডিলকে ধন্যবাদ জানাই। সিওডিল এখন স্কিনকেয়ার খাতে শীর্ষ বিক্রিত ব্র্যান্ড হিসাবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। অন্য দেশে তৈরী পণ্যের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাংলাদেশি পণ্য শক্ত অবস্থান নিশ্চিত করেছে। দামেও সাশ্রয়ী। অন্য দেশের পণ্য আমদানি হয়ে আসতে আসতে মেয়াদ চলে যায়। তাই, মান নিশ্চিত এবং দামে সাশ্রয়ী হওয়ায় ক্রেতাদের কাছে সিডিলের কদর বাড়ছে।
লাখো ভোক্তার আস্থা অর্জন করে রিমার্ক এইচবি দক্ষিণ এশিয়ায় মেডিকেটেড স্কিনকেয়ার পণ্য উৎপাদনের কেন্দ্রবিন্দু হওয়ার পথে এগিয়ে চলেছে। গুণগত মান, সাশ্রয়ী মূল্য ও বৈজ্ঞানিক গবেষণাকে অগ্রাধিকার দিয়ে প্রতিষ্ঠানটি এই শিল্পে একটি নতুন সংজ্ঞা রচনা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় ত্বকের নানা সমস্যার সমাধানে বিশ্ব স্কিনকেয়ার বাজার অগ্রণী ভূমিকা রাখছে রিমার্কের মেডিকেটেড স্কিনকেয়ার ব্র্যান্ড সিওডিল।
ঢাকা/রফিক
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর উৎপ দ ত ত বক স আম দ র সমস য
এছাড়াও পড়ুন:
‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা
লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।
সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।
স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।
জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’
ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।
জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।
জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।
লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।