প্রাচীন বাংলার রাজধানী ঐতিহাসিক সোনারগাঁয়ে বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের সুবর্ণ জয়ন্তী ও পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে ১৫ দিনব্যাপী বৈশাখী মেলার আয়োজন করা হয়েছে। 

গত সোমবার (১৪ এপ্রিল) বৈশাখের সকালে লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশন প্রাঙ্গণে সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব মিজ ইলিয়া সুমনা এ মেলার উদ্বোধন করেন। আগামী ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত চলবে এ মেলা। 

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী মাহবুবুল আলমের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি ছিলেন, জাতীয় কারুশিল্প পরিষদের সভাপতি ও বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালনা বোর্ডের সদস্য চন্দ্র শেখর সাহা, সোনারগাঁ উপজেলা নির্বাহী অফিসার ফারজানা রহমান প্রমুখ। এ সময় বিপুল সংখ্যক দেশী ও বিদেশি দর্শণার্থী উপস্থিত ছিলেন। 

বাংলাদেশ লোক ও কারুশিল্প ফাউন্ডেশনের পরিচালক কাজী মাহবুবুল আলম বলেন, বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রার মাধ্যমে এ উৎসবের আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। পাশাপাশি ফাউন্ডেশনের ৫০ বছর পূর্তি উপলক্ষে সুবর্ণজয়ন্তী উৎসব পালিত হয়। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে জামদানি, শতরঞ্জি, নকশিকাঁথা, মৃৎশিল্প, দারুশিল্প, হাতপাখা, কাঠখোদাই শিল্প, পটচিত্রশিল্প, শোলা শিল্প, বাঁশ-বেত শিল্প এবং ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর কারুশিল্পীদের সৃষ্টিশীল কর্মের উপস্থাপন এবং বিপণনের সুযোগ রয়েছে।

এছাড়াও উৎসব চলাকালীন প্রতিদিনই থাকবে বাউল গান ও লোকজ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, পুতুলনাচ, হালখাতা, বায়স্কোপ, সাপের খেলা, নাগরদোলাসহ গ্রামীণ বিনোদনের নানা আয়োজন। থাকছে হারিয়ে যাওয়া গ্রামীণ খেলা—তিন গুটি, সাত গুটি, বাঘবন্দ, কানামাছি, গোল্লাছুট, বউচি ও কপাল টোক্কা। আর রসনা তৃপ্তির জন্য থাকবে মুখরোচক সব বাঙালি খাবার।

নববর্ষের মেলা উপলক্ষে ফাউন্ডেশনের প্রধান ফটক থেকে শুরু করে উৎসব প্রাঙ্গণ পর্যন্ত রঙ-বেরঙের বাতি ও বিভিন্ন প্রাচীন মোটিফ দিয়ে সাজানো হয়েছে ফাউন্ডেশন চত্বর। তাছাড়া বিভিন্ন সড়কে ভ্রাম্যমাণ গাড়িতে চলছে বৈশাখী প্রচারণা এবং ফাউন্ডেশন চত্বরে থাকছে জমকালো আয়োজন ও লোকজ মঞ্চে থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ স ন রগ উপলক ষ

এছাড়াও পড়ুন:

বকুলতলায় বৃষ্টির সুর

নীল-সাদা পোশাকে সজ্জিত হয়ে নানা বয়সী মানুষ এসে জড়ো হতে থাকেন। যেন শহরের হৃদয়ে নেমে আসে গ্রামবাংলার ঘ্রাণ। মেঘলা আকাশের নিচে কণ্ঠে সুর, পায়ে তাল, কল্পনায় বর্ষার রূপই দেখা যায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের বকুলতলায় গতকাল রোববার এভাবে উদযাপন হলো ‘বর্ষা উৎসব ১৪৩২’।
বর্ষা উৎসব উদযাপন পরিষদের আয়োজনে আষাঢ়ের প্রথম দিনে রাগ, রস ও রং মিলে তৈরি হলো এক বর্ষামুখর ক্যানভাস। এবারের আয়োজনে সহযোগিতায় ছিল সংস্কৃতিবিষয়ক মন্ত্রণালয়।
সকাল ৭টা ১৫ মিনিটে অনুষ্ঠানের সূচনা করেন নবীন সংগীতশিল্পী সোহানী মজুমদার। সেতারের কোমল তারে বেজে ওঠে রাগ ‘আহীর ভৈরব’। রাগভিত্তিক এ পরিবেশনার মধ্য দিয়ে মিলে যায় প্রাচ্যের সংগীত ঐতিহ্য ও বর্ষার আধ্যাত্মিকতা। সেই মুহূর্তে বকুলতলায় যেন ভেসে বেড়ায় বৃষ্টির সুর আর আকাশের নরম আলো।
‘বর্ষাকথন’ পর্বে বর্ষার ভাবনা, পরিবেশ ও সময়ের প্রেক্ষাপটে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের সভাপতি শিল্পী কাজী মিজানুর রহমান।
ঘোষণা পাঠ করেন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মানজার চৌধুরী সুইট এবং সভাপতিত্ব করেন লেখক ও গবেষক অধ্যাপক ড. নিগার চৌধুরী। সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন সংস্কৃতিকর্মী নুসরাত ইয়াসমিন রুম্পা।
ঘোষণাপত্র পাঠে জানানো হয়, ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশে আজ ঋতুচক্রে দেখা দিচ্ছে অসামঞ্জস্য। গ্রীষ্ম হয়ে উঠছে খরতর, বর্ষা রুষ্ট, বসন্ত ক্ষীয়মাণ। এই পরিবর্তনের মূলে রয়েছে মানুষের সীমাহীন ভোগবাদী আচরণ, প্রকৃতির ওপর অনবরত অনাচার। ভূপৃষ্ঠ উত্তপ্ত, সমুদ্রজল স্ফীত, ওজোনস্তর ক্ষতিগ্রস্ত– প্রকৃতি আজ সংকটে।
এ প্রসঙ্গে মানজার চৌধুরী সুইট সমকালকে বলেন, এ উৎসব শহুরে জীবনে আমরা প্রায় ১৮ বছর ধরে পালন করে আসছি। উৎসবের শিকড় নিহিত রবীন্দ্রনাথের ‘বর্ষামঙ্গল’-এ। আমরা তারই উত্তরসূরি হয়ে আষাঢ়ের প্রথম দিনটিকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিই। এতে শুধু প্রকৃতির সৌন্দর্য নয়, বরং তার সংকটও তুলে ধরা হয়। আমরা চাই, আমাদের পরবর্তী প্রজন্ম প্রকৃতির সঙ্গে সম্পর্ক 
গড়ুক, তার বিপন্নতাকে বুঝুক এবং তা রক্ষায় সক্রিয় হোক।
তিনি আরও বলেন, মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে আমরা যে অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখেছিলাম, এ ধরনের উৎসবই সেই স্বপ্নের বাস্তব রূপ। শিকড়ের দিকে ফিরে যাওয়ার মধ্যে নিহিত আমাদের সংস্কৃতি ও চেতনার পুনর্জাগরণ।
বর্ষা মানে নতুন জন্মের বারতা। সেই বারতা ছড়িয়ে দিতে উৎসবে প্রতীকীভাবে শিশু-কিশোরের হাতে তুলে দেওয়া হয় বনজ, ফলদ ও ঔষধি গাছের চারা। এই চারাগুলো শুধু বৃক্ষ নয়, বরং হয়ে উঠেছে সবুজ ভবিষ্যতের আশ্বাস।
উৎসবে একক সংগীত পরিবেশন করেন ইয়াসমিন মুশতারী, সালাউদ্দিন আহমেদ, বিজন চন্দ্র মিস্ত্রী ও নবনীতা জাইদ চৌধুরী অনন্যা।
রবীন্দ্রসংগীত পরিবেশন করেন অণিমা রায়, শামা রহমান, মকবুল হোসেন ও ফেরদৌসী কাকলি। লোকসংগীত পরিবেশন করেন বিমান চন্দ্র বিশ্বাস, শ্রাবণী গুহ রায় ও এস এম মেজবাহ। আধুনিক গান গাইতে মঞ্চে ওঠেন রত্না সরকার।
দলীয় সংগীতে অংশ নেয় সীমান্ত খেলাঘর আসর (শিশু-কিশোর), সুর বিহার, বহ্নিশিখা, সুর নন্দন এবং সত্যেন সেন শিল্পীগোষ্ঠী। আবৃত্তি পরিবেশন করেন নায়লা তারাননুম চৌধুরী কাকলি ও আসান উল্লাহ তমাল। শিল্পবৃত্ত শিশু-কিশোর দল পরিবেশন করে আবৃত্তি ও নৃত্য কোলাজ।
নৃত্য পরিবেশনায় অংশ নেয় ধৃতি নর্তনালয়, নৃত্যাক্ষ, স্পন্দন, বেমুকা ললিতকলা কেন্দ্র, সিনথিয়া একাডেমি অব আর্টস ও নৃত্যম।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বকুলতলায় বৃষ্টির সুর
  • নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতি রয়েছে: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
  • ১০ দিন পর বাংলাবান্ধা স্থলবন্দরে বাণিজ্য শুরু 
  • ঈদের ছুটি শেষে ব্যাংক খুলেছে, ভিড় নেই তেমন
  • ছুটি শেষে ব্যাংক ও শেয়ারবাজারে লেনদেন শুরু হচ্ছে কাল
  • টানা ১০ দিনের ছুটি শেষ, রবিবার খুলছে সরকারি অফিস
  • চেনা রূপে বরিশাল নদীবন্দর, ঈদফেরত যাত্রীদের ভিড়
  • রাজশাহীতে ঢাকাগামী টিকিটে বাড়তি ভাড়া আদায়, ৩ কাউন্টারকে জরিমানা
  • কাহালুর জামাই মেলায় মানুষের ঢল
  • ইউটিউব ট্রেন্ডিংয়ে ঈদের সেরা চার নাটক