২০২৩ সালে অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মেয়র পদে বিজয়ী ঘোষণা করতে নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে মামলার আবেদন করেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির মুফতি সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। বৃহস্পতিবার দুপুরে তিনি বরিশাল সিটি নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালের বিচারক ও সদর জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ আদালতে এই আবেদন করেন।

সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম ২০২৩ সালের ১২ জুন অনুষ্ঠিত বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলনের প্রার্থী হিসেবে মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনের ঘোষিত ফলাফলে তিনি দ্বিতীয় হয়েছিলেন।

নির্বাচনের প্রায় ২২ মাস পর সৈয়দ ফয়জুল করীমের পক্ষে আদালতে আবেদনটি দাখিল করেন তাঁর আইনজীবী শেখ আবদুল্লাহ নাসির। সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম এ সময় আদালতে উপস্থিত ছিলেন। আইনজীবী শেখ আবদুল্লাহ নাসির প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা আবেদনটি আদালতে জমা দেওয়ার পর বিচারক (মো.

হাসিবুল হাসান) আমাদের বক্তব্য শুনেছেন। আমরা আবেদনের পক্ষে সব যুক্তি তুলে ধরেছি। বিচারক আমাদের বক্তব্য শুনে আবেদনটি পরবর্তী আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছেন।’

এত দিন পর মামলা করার কারণ সম্পর্কে এই আইনজীবী বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে এই মামলা দায়ের করার মতো পরিবেশ-পরিস্থিতি ছিল না। এরপর ফ্যাসিস্ট সরকারের পতনের পর মানসিক প্রস্তুতি নিতে সময় লেগেছে। এসব কারণ আদালতে উপস্থাপন করা হয়েছে।

আরও পড়ুনহাতপাখা প্রতীকের মেয়রপ্রার্থী হামলায় আহত, কর্মীদের বিক্ষোভ১২ জুন ২০২৩

মামলার আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ২০২৩ সালের ১২ জুন বরিশাল সিটি করপোরেশনের নির্বাচনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। ওই নির্বাচনে এক নম্বর প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে আবুল খায়ের আবদুল্লাহ প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নির্বাচনে ভোট গ্রহণকালে নগরের ২২ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেরা খাতুন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কেন্দ্র পরিদর্শনে গেলে সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমের ওপর হামলা চালান আওয়ামী লীগের প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকেরা। এতে তিনি রক্তাক্ত জখম হয়েছিলেন। একই সঙ্গে নগরের ২৫ নম্বর ওয়ার্ডের জাগুয়া কলেজ কেন্দ্র থেকে ইসলামী আন্দোলন প্রার্থীর এজেন্টকে বের করে দেওয়া হয়েছিল। এসব বেআইনি কর্মকাণ্ড চালিয়ে দরখাস্তকারীকে (সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম) প্রাপ্ত ভোটের চেয়ে কম দেখিয়ে (৩৩ হাজার ৮২৮ ভোট) পরাজিত দেখানো হয় এবং এক নম্বর প্রতিপক্ষ আওয়ামী লীগের প্রার্থী আবুল খায়ের আবদুল্লাহকে ৮৭ হাজার ৮০৮ ভোট দেখিয়ে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল।

আবেদনে নির্বাচনী ফলাফল বাতিল করে সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীমকে মেয়র হিসেবে ঘোষণা করার আদেশ প্রদানের জন্য আবেদন করা হয়। একই সঙ্গে মামলার ব্যয়ভার সুদসহ প্রতিপক্ষের প্রতিকূলে ডিক্রি দেওয়ারও আবেদন করা হয়।

গত বছরের ১৯ আগস্ট পৃথক প্রজ্ঞাপনে দেশের ১২টি সিটি করপোরেশনের মেয়র, ৬০টি জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান এবং সারা দেশের সব উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান, নারী ভাইস চেয়ারম্যান ও পৌরসভার মেয়রদের অপসারণ করে অন্তর্বর্তী সরকার। স্থানীয় সরকারের এই চার স্তরে সব মিলিয়ে ১ হাজার ৮৭৬ জন জনপ্রতিনিধিকে অপসারণ করা হয়। অপসারণ করা মেয়র ও চেয়ারম্যানদের জায়গায় সরকারি কর্মকর্তাদের প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে সরকার।

আরও পড়ুনবরিশাল–খুলনায় ফলাফল প্রত্যাখ্যান, সিলেট–রাজশাহীতে ভোট বর্জনের ঘোষণা ইসলামী আন্দোলনের১২ জুন ২০২৩

গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর আত্মগোপনে চলে যান বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র আবুল খায়ের আবদুল্লাহ ও বেশির ভাগ কাউন্সিলর। এরপর গত বছরের ১৯ আগস্ট তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার মো. শওকত আলী সিটি করপোরেশনের প্রশাসকের দায়িত্ব নেন। বর্তমানে প্রশাসকের এই দায়িত্ব পালন করছেন বিভাগীয় কমিশনার মো. রায়হান কাওছার।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: বর শ ল স ট আবদ ল ল হ সরক র র হয় ছ ল আওয় ম ইসল ম

এছাড়াও পড়ুন:

আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ

২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন হলে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় একসঙ্গে দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ গতকাল শুক্রবার তার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের এ তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।

অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের এ বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে হতে পারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।

এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।

আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।

আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আর পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। গত বছরও তাই হয়েছে। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। মার্কিন প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।

পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে শর্ত পরিপালন নিয়ে দর–কষাকষিতে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল মূলত মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চাইলেও করতে চাইছিল না সরকার।

সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ১৫ মাসে খেলাপি ঋণ বেড়ে তিন গুণ
  • টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের নতুন চক্রে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ কারা
  • শাহরুখের পারিশ্রমিক ৪২৩ কোটি টাকা!
  • অন্য বছরের চেয়ে এই জুনে ডেঙ্গু বেশি
  • ইরানকে পরমাণু জগতে ঠেলে দিয়েছে ইসরায়েলই
  • আগামী সপ্তাহে বাংলাদেশের কিস্তির প্রস্তাব উঠছে আইএমএফ পর্ষদে
  • আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
  • সামরিক শক্তিতে ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে কে এগিয়ে  
  • চার দেশের পাঁচ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র ছাড়ার নির্দেশ
  • চার দেশের পাঁচ লাখ অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র ত্যাগ করার নির্দেশ