‘মৃত্যুর দিন গুনতে থাক গুলি করুম ঠিক মাথায়’
Published: 18th, April 2025 GMT
আধিপত্য বিস্তার ও স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মুন্সীগঞ্জের টঙ্গিবাড়ী উপজেলার পাঁচগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন হালদারকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। ২০২৪ সালের ৭ জুলাইয়ের এ ঘটনায় পদটি শূন্য হওয়ায় ১ নম্বর ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আবু সিদ্দিক বেপারিকে ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। কয়েক মাস যেতেই ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকেও গুলি করে হত্যার হুমকি দিয়ে পোস্টার সাঁটানো হয়েছে দেয়ালে দেয়ালে।
পোস্টারে লেখা হয়েছে, ‘মৃত্যুর দিন গুনতে থাক, মৃত্যু খুব কাছে তোর। এবার আমি তোরে গুলি করুম, ঠিক মাথায়। আইতাছি কিছুদিন পরে প্রস্তুতি নে মরার জন্য আপ্পু বেপারি।’ এমন হুমকি পেয়ে পাঁচগাঁও ইউপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক বেপারি ওরফে আপ্পু বেপারি ইউএনওকে বিষয়টি জানান। তাঁর পরামর্শে টঙ্গিবাড়ী থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেছেন তিনি। পুলিশ তদন্ত শুরু করলেও বৃহস্পতিবার পর্যন্ত এতে কারা জড়িত, তা শনাক্ত করতে পারেনি।
এ পরিস্থিতিতে ভারপ্রাপ্ত ইউপি চেয়ারম্যান নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন থাকলেও ইউনিয়ন পরিষদের কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন বলে জানা গেছে। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে হত্যার হুমকির পর আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই গত মঙ্গলবার রাতে কাপড় পেঁচিয়ে ইউনিয়ন পরিষদের বৈদ্যুতিক মিটারে আগুন দেওয়ার ঘটনা ঘটেছে। বুধবার সকালে ইউপি সচিব এ দৃশ্য দেখে ইউএনওকে জানান। পরে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন। পরিষদের নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। এসব ঘটনায় কারা জড়িত, তা কেউ বলতে পারছেন না।
এমন পরিস্থিতিতে ইউনিয়ন পরিষদের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, সচিব, কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা উদ্বেগে রয়েছেন বলে জানিয়েছেন। ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান আবু সিদ্দিক বেপারি বলেন, ‘আমাকে গুলি করে হত্যার হুমকি দেওয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদের বৈদ্যুতিক মিটারে কাপড় পেঁচিয়ে আগুন লাগিয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এতে মিটারের চারপাশ আগুনে
পুড়ে গেছে। বুধবার সকালে পরিষদে গিয়ে ইউপি সচিব আগুন দেওয়ার ঘটনা দেখতে পেয়ে আমাকেসহ উপজেলা প্রশাসনকে জানিয়েছেন। খবর পেয়ে ইউএনও মহোদয় সরেজমিন ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।’
জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৭ জুলাই বেলা দেড়টার দিকে আধিপত্য ও স্কুল ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পাঁচগাঁও ইউপি চেয়ারম্যান এইচ এম সুমন হালদারকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করা হয়। ঘটনার পরদিন ৮ জুলাই তাঁর ছোট ভাই ইমন হালদার বাদী হয়ে সাবেক চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সদস্য মিলেনুর রহমান মিলনসহ সাতজনের নাম উল্লেখ ও অজ্ঞাতপরিচয় তিন-চারজনকে আসামি করে মামলা করেন। এ মামলায় তিন আসামিকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। অন্যরা এখনও ধরাছোঁয়ার বাইরে।
টঙ্গিবাড়ী থানার ওসি মো.
বৈদ্যুতিক মিটারে আগুন এবং হত্যার হুমকির বিষয়টি ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান অবহিত করেছেন বলে জানান ইউএনও মো. মোস্তাফিজুর রহমান। তিনি বলেন, থানায় সাধারণ ডায়েরির পাশাপাশি নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে ইউনিয়ন পরিষদে দ্রুত সিসি ক্যামেরা স্থাপনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
জাতিসংঘ স্থায়ী মিশনে জুলাই অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিশেষ অনুষ্ঠান
জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনে জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তিতে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে। জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশন ও নিউ ইয়র্কস্থ বাংলাদেশের কনস্যুলেট জেনারেল কর্তৃক যৌথভাবে আয়োজিত এই বিশেষ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন।
মঙ্গলবার (২৯ জুলাই) এই বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, যুবসমাজ শুধু আমাদের ভবিষ্যৎই নয়, বাংলাদেশে তারা আমাদের ‘বর্তমান’। এক বছর আগে, তাদের হাত ধরেই সমতা, স্বচ্ছতা এবং ন্যায়ভিত্তিক সমাজ গঠনের দাবি সার্বজনীন জন-আকাঙ্ক্ষায় রূপ নেয়।
আরো পড়ুন:
জাতিসংঘ মানবাধিকার কমিশনের অফিস খোলার সিদ্ধান্ত সরকারের বড় অসতর্কতা: মঞ্জু
গাজাকে নিশ্চিহ্ন করার কোনো ন্যায্যতা থাকতে পারে না: গুতেরেস
তৌহিদ হোসেন আরো বলেন, ২০২৪ সালের জুলাই মাসে শুরু হওয়া এই আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান লক্ষ্য- সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য ব্যাপক প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার।
তিনি তার বক্তব্যে বিগত এক বছরে বর্তমান সরকারের গৃহীত গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপগুলোর কথা তুলে ধরেন।
বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অভিজ্ঞতাকে বৈশ্বিক বাস্তবতার সঙ্গে অত্যন্ত সঙ্গতিপূর্ণ মন্তব্য করে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্দেশ্যে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন বলেন, তারুণ্যের প্রতি আস্থা রাখলে তারা জাতি গঠনের কেন্দ্রে দাঁড়াতে পারে। তিনি বলেন, যারা এক সময় মিছিলের অগ্রভাগে ছিল, আজ তারা নীতিনির্ধারণে অংশ নিচ্ছে, আর আগামী দিনের দিকনির্দেশনা ঠিক করতে সামনে থেকেই নেতৃত্ব দিচ্ছে। বাংলাদেশে তারুণ্যের নেতৃত্ব জাতিসংঘের যুববিষয়ক নীতি ও কার্যক্রমের সঙ্গে দৃঢ়ভাবে সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার সফল গণআন্দোলনের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে জাতীয় পর্যায়ের অনুষ্ঠানমালার আলোকে জাতিসংঘে বাংলাদেশ স্থায়ী মিশনের মিলনায়তনে আয়োজিত এই অনুষ্ঠানে জুলাই গণঅভ্যুত্থান সম্পর্কিত তথ্যচিত্র এবং পোস্টার, দেয়াললিখন ও আলোকচিত্র প্রভৃতির প্রদর্শনীর মাধ্যমে বাংলাদেশের রাজনৈতিক নবযাত্রায় যুব সমাজের অনন্য অবদানকে উদযাপন করা হয়। বিভিন্ন দেশের কূটনীতিক, জাতিসংঘের কর্মকর্তাবৃন্দসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণে এই বিশেষ আয়োজনে জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি এবং জাতিসংঘের ইয়ুথ অফিসের প্রতিনিধি ড. সুধা বালাকৃষ্ণণ বক্তব্য রাখেন।
ড. বালাকৃষ্ণণ তার বক্তব্যে বলেন, জাতিসংঘ সমাজ পরিবর্তনে যুবসমাজের সত্যিকারের অংশগ্রহণকে সর্বদাই উৎসাহিত করে থাকে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় পরিবর্তনের অগ্রভাগে থাকা যুবশক্তি তাই অন্যান্য সমাজের জন্যও অনুপ্রেরণার উৎস হতে পারে।
উল্লেখ্য, ফিলিস্তিন সমস্যার দুই-জাতি-ভিত্তিক সমাধানের লক্ষ্যে জাতিসংঘের একটি উচ্চ-পর্যায়ের সভায় অংশগ্রহণের জন্য পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বর্তমানে নিউ ইয়র্কে অবস্থান করছেন।
ঢাকা/হাসান/ফিরোজ