‘ঢং ঢং ঢং’ শব্দে বেজে উঠল ঘণ্টাধ্বনি। শ্রেণিকক্ষ থেকে বের হয়ে মাঠের সবুজ ঘাসে ছোটাছুটি ও হইহুল্লোড় শুরু করল খুদে শিক্ষার্থীরা। একদিকে ভলিবল নিয়ে মাতামাতি, অন্যদিকে চলছে ‘ইচিংবিচিং খেলা’। বিদ্যালয়ের প্রাচীর ঘেঁষে থাকা দোলনায় দুলছে কেউ কেউ। টংঘরের কাঠামোয় বানানো ‘স্লিপারে’ উঠতে সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে পড়েছে আরও কিছু শিক্ষার্থী। প্রতিটি দলের সঙ্গে আছেন শিক্ষকেরাও। ছোট্ট খেলার মাঠটি যেন হয়ে উঠল আরেকটি শ্রেণিকক্ষ।

দিনাজপুরের চিরিরবন্দর উপজেলার কুশলপুর গ্রামের সুব্রত খাজাঞ্চী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেল এ চিত্র। টিফিনের বিরতিতে সেখানে খেলাধুলায় মেতে উঠেছিল শিক্ষার্থীরা।

ব্যতিক্রমী পাঠদান, শিশুবান্ধব নির্মল পরিবেশ, সহশিক্ষা কার্যক্রম, ভালো ফলের কারণে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি রংপুর বিভাগের স্কুলশিক্ষকদের কাছেও পরিচিতি পেয়েছে এই বিদ্যালয়। মাত্র ১০ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টি গত বছরের ডিসেম্বরে বিভাগের শ্রেষ্ঠ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের স্বীকৃতিও পেয়েছে।

প্রতিটি ছবির পাশে সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তুর নাম লেখা হয়েছে বাংলা ও ইংরেজিতে। দেয়ালগুলো যেন একেকটি বইয়ের পাতা হয়ে ধরা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছে।

পাশ দিয়ে যাতায়াতের সময় বিদ্যালয়ের পরিবেশ দেখে থমকে যেতে হয়। বিদ্যালয় ঘুরে দেখা যায়, প্রধান ফটক দিয়ে প্রবেশ করতেই ইট বিছানো পথের দুই পাশে ঝাউগাছের সারি। সীমানাপ্রাচীরের সঙ্গে চারপাশে নানা রঙের ফুলের গাছ। বিদ্যালয়ের প্রাচীর, ভবনের দেয়াল, এমনকি ভবনের ছাদেও আঁকা হয়েছে বিভিন্ন ফুল, ফল, পশুপাখি, বিশিষ্ট ব্যক্তি, সৌরজগৎ ও মানচিত্রের ছবি। প্রতিটি ছবির পাশে সংশ্লিষ্ট বিষয়বস্তুর নাম লেখা হয়েছে বাংলা ও ইংরেজিতে। দেয়ালগুলো যেন একেকটি বইয়ের পাতা হয়ে ধরা দিয়েছে শিক্ষার্থীদের কাছে। শিক্ষার্থী-উপযোগী এমন পরিবেশ দেখতে স্থানীয় লোকজনের পাশাপাশি আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকেও আসছেন শিক্ষক-অভিভাবকেরা।

অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বিরাজ খাজাঞ্চী ও সুনীল কুমার সরকার নামের দুই ব্যক্তি। বিরাজের বড় ভাই সুব্রত খাজাঞ্চী ছিলেন দিনাজপুর জিলা স্কুলের শিক্ষক। ২০০৯ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর নামেই বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়।বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার গল্প

২০১১-১২ অর্থবছরে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ‘বিদ্যালয়বিহীন গ্রামে ১৫০০ প্রাথমিক বিদ্যালয় স্থাপন’ শীর্ষক একটি প্রকল্প গ্রহণ করে। শর্ত ছিল, বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য কেউ জমি দান করলে ভবন ও শিক্ষক নিয়োগের দায়িত্ব নেবে সরকার। এ প্রকল্পের আওতায় কুশলপুর গ্রামে বিদ্যালয় স্থাপনের জন্য ৬৩ শতক জমি দেন অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বিরাজ খাজাঞ্চী ও সুনীল কুমার সরকার নামের দুই ব্যক্তি। বিরাজের বড় ভাই সুব্রত খাজাঞ্চী ছিলেন দিনাজপুর জিলা স্কুলের শিক্ষক। ২০০৯ সালে তাঁর মৃত্যু হয়। তাঁর নামেই বিদ্যালয়ের নামকরণ করা হয়।

একতলা একটি ভবন নির্মাণ শেষে ২০১৪ সালে শিক্ষার্থী ভর্তি ও পাঠদান কার্যক্রম শুরু হয়। প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পান জগদীশ চন্দ্র রায়। তিনি জানান, বদরপাড়া ও পুশুনাথপাড়া মিলে কুশলপুর গ্রামে ১৭৬টি পরিবারের বসবাস। পাশাপাশি দুটি গ্রামে দুটি প্রাথমিক বিদ্যালয় আছে। এর মধ্যেই সুব্রত খাজাঞ্চী স্কুলটি চালু হয়। শুরুতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে ৩৩ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তবে উপবৃত্তির আওতায় না আসায় তিন মাসের মাথায় ১১ জন স্কুল ছেড়ে যায়। এমন অবস্থায় অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ ও বিদ্যালয়ের উন্নয়নে অর্থ সংগ্রহের কাজ শুরু করেন প্রধান শিক্ষক। শিক্ষার্থীদের আগ্রহ বাড়াতে বাগান করাসহ নানা কার্যক্রম শুরু করেন। ধীরে ধীরে স্থানীয় লোকজনও তাঁর সহযোগী হয়ে ওঠেন। মাত্র ১০ বছর শেষে বিদ্যালয়ে এখন শিক্ষার্থীর সংখ্যা ৩২০। শুধু কুশলপুর নয়, আশপাশের পাঁচ-ছয়টি গ্রামের শিশুরাও আসছে এ বিদ্যালয়ে।

শুরুতে প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় শ্রেণিতে ৩৩ শিক্ষার্থী ভর্তি হয়। তবে উপবৃত্তির আওতায় না আসায় তিন মাসের মাথায় ১১ জন স্কুল ছেড়ে যায়। এমন অবস্থায় অভিভাবকদের সঙ্গে যোগাযোগ ও বিদ্যালয়ের উন্নয়নে অর্থ সংগ্রহের কাজ শুরু করেন প্রধান শিক্ষক।ব্যতিক্রমী পাঠদান

সেদিন (২০ ফেব্রয়ারি) তৃতীয় শ্রেণির ক্লাসে শিক্ষক নুরুল ইসলাম ভাষা আন্দোলন বিষয়ে পড়াচ্ছিলেন। তিনি প্রজেক্টরে শিক্ষার্থীদের ভাষা আন্দোলন, ভাষাশহীদ ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসবিষয়ক বিভিন্ন ছবি দেখাচ্ছেন, সঙ্গে গল্প বলছেন। পাঠদানের শেষে শিক্ষক জানতে চান, একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসবে কি না। শিশুরা সমস্বরে বলে ওঠে, ‘আসব, স্যার।’

নুরুল ইসলাম বলেন, ‘বাচ্চারা শোনার চাইতে দেখতে বেশি আগ্রহী। যেকোনো বিষয়ের পাঠদানের ক্ষেত্রে আমরা চেষ্টা করি সংশ্লিষ্ট বিষয়ের ছবি বা উপকরণ তাদের সামনে উপস্থাপন করতে। এতে বাচ্চারা স্মৃতিতে ধরে রাখতে পারে।’

নিচতলার একটি কক্ষে শিশুশ্রেণির ক্লাস। মেঝেতে মাদুর বিছানো। সেখানে শিক্ষক আঁখি আক্তার যেন খেলায় মেতেছেন শিশুদের সঙ্গে। কক্ষে কয়েকটি র‌্যাকে সাজানো নানা ধরনের খেলনা। রয়েছে ইলেকট্রনিক ম্যাজিক শ্লেট, বর্ণমালার বাড়ি-গাড়ি, কাঠ ও প্লাস্টিকের খেলনা বর্ণমালা, সংখ্যা, পাজল বই, বিজ্ঞানবাক্স, রং চেনার জিওমেট্রিক স্টিকার, ছবি আঁকার সামগ্রী, বিল্ডিং ব্লকসহ নানা খেলনা।

আঁখি আক্তার বলেন, এসব উপকরণ দিয়ে খেলার ছলে বাচ্চাদের বর্ণমালা, রঙের ধারণা দেওয়া ও গণিত শেখানো সহজ হয়। পড়ালেখা এবং স্কুলে আসার প্রতি তাদের আগ্রহ তৈরি হয়।

পাঠদানের শেষে শিক্ষক জানতে চান, একুশে ফেব্রুয়ারি শহীদ মিনারে ফুল দিতে আসবে কি না। শিশুরা সমস্বরে বলে ওঠে, ‘আসব, স্যার।’

বিদ্যালয়ের উত্তর-পূর্ব প্রান্তে পুরোনো একটি টিনশেড হলরুম। সেখান থেকে হারমোনিয়াম ও তবলার আওয়াজের সঙ্গে ভেসে আসছে ‘এই যে আমার মাতৃভূমি এই যে আমার দেশ,/ এই দেশেরই ধুলোবালি ভালোই লাগে বেশ’। প্রতি বৃহস্পতিবার ভবনের হলরুমে শিক্ষার্থীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক নানা আয়োজন করা হয়। হলরুমের সামনে বড়দের জন্য রয়েছে ফুটবল খেলার মাঠ। স্থানীয় উদ্যোগে সহশিক্ষা কার্যক্রমের জন্য বিদ্যালয়ে সংগীত ও চারুকারুবিষয়ক দুজন শিক্ষকও নিয়োগ করা হয়েছে।

পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাম্মির আহমেদ বলে, ‘আমি স্কুল কামাই করি না। স্কুলে অনেকগুলো খেলনাসামগ্রী আছে। খেলাধুলার পাশাপাশি নিয়মিত গান, কবিতা আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতার আয়োজনও হয়। আমাদের স্কুলটা সাজানো-গোছানো একটা পার্কের মতো।’

স্বল্প সময়ে সফলতা

শিক্ষার্থীদের পরীক্ষার ফল ও অন্যান্য সফলতার প্রসঙ্গ তুলতেই নিজ ডেস্কে বসে ল্যাপটপ খুলে বসলেন প্রধান শিক্ষক। জানালেন, ২০১৭ সালে প্রথমবার বিদ্যালয়ের ১৫ শিক্ষার্থী সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নেয়। প্রতি শিক্ষার্থীই জিপিএ–৫ পেয়েছে। দুজন সাধারণ গ্রেডে এবং একজন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তিও পায়। ২০১৮ সালে ৩৬ জনের মধ্যে ৩১ জন এবং ২০১৯ সালে ৩৮ জনের মধ্যে ৩৫ জন জিপিএ–৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। ২০২২ সালে বিশেষ বৃত্তি পরীক্ষায় ১০ শতাংশ হারে ওই বিদ্যালয় থেকে ৭ জন অংশ নিয়ে ২ জন ট্যালেন্টপুলে বৃত্তি পেয়েছে।

আমি স্কুল কামাই করি না। স্কুলে অনেকগুলো খেলনাসামগ্রী আছে। খেলাধুলার পাশাপাশি নিয়মিত গান, কবিতা আবৃত্তি, উপস্থিত বক্তৃতার আয়োজনও হয়। আমাদের স্কুলটা সাজানো-গোছানো একটা পার্কের মতো।পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থী তাম্মির আহমেদ

শুধু পড়ালেখা নয়, খেলাধুলায়ও সাফল্য এসেছে বিদ্যালয়ে। ২০১৭ সালে ছেলেদের ফুটবল টুর্নামেন্টে জেলা পর্যায়ে রানার্সআপ হওয়ার গৌরব অর্জন করে বিদ্যালয়টি।

সহকারী শিক্ষক শাহীনা আক্তার বলেন, ‘কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে না এলে তার বাড়িতে যাই, ফোনে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলি। তবে এখন অভিভাবকেরাই ফোন করে সন্তান স্কুলে না আসার কারণ জানান। খুবই ভালো লাগে, যখন অন্য স্কুলের শিক্ষকেরা আমাদের স্কুলে আসেন। আমরা একটি ভালো পরিবেশে শিশুদের বেড়ে ওঠাটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি।’

প্রাথমিক বিদ্যালয়কে শিক্ষার্থীদের গোড়াপত্তনের জায়গা হিসেবেই মনে করেন প্রধান শিক্ষক জগদীশ চন্দ্র রায়। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের বেশি সময় দিয়ে, স্থানীয় লোকজনের সহযোগিতা নিয়ে আমরা স্কুলের প্রতি বাচ্চাদের ভালো লাগা তৈরি করতে পেরেছি। এ গ্রামে ঝরে পড়া শিক্ষার্থীর হার শূন্য শতাংশ। শিক্ষার্থী বেড়ে যাওয়ায় বর্তমানে বিদ্যালয়ে শ্রেণিকক্ষের সংকট রয়েছে।’

পাশে আছেন স্থানীয় বাসিন্দারা

২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠার সময় স্কুলে শুধু একতলা ভবনটিই ছিল। এরপর নির্মাণ করা হয়েছে সীমানাপ্রাচীর, ফটক, শহীদ মিনার, অভিভাবক বিশ্রামাগার, লাইব্রেরি কর্নার, সততা স্টোর, ছাদবাগান, ভবনের ছাদে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান মঞ্চ, ওয়াশ ব্লক, মাল্টিমিডিয়া শ্রেণিকক্ষ। শুধু তা-ই নয়, সপ্তাহে এক দিন শিক্ষার্থীদের জন্য বিশেষ খাবারের ব্যবস্থা করা হয়। শিক্ষার্থীদের বিনা মূল্যে স্কুলের পোশাকও দেওয়া হয়। সরকারি বেতনভুক্ত পাঁচজন শিক্ষকের পাশাপাশি নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় অতিরিক্ত চারজন শিক্ষক নিয়োগ করা হয়েছে। এসব উদ্যোগে অর্থের জোগানসহ নানাভাবে সহযোগিতা করেন বিদ্যালয়ের জমিদাতা পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

কোনো শিক্ষার্থী স্কুলে না এলে তার বাড়িতে যাই, ফোনে মা-বাবার সঙ্গে কথা বলি। তবে এখন অভিভাবকেরাই ফোন করে সন্তান স্কুলে না আসার কারণ জানান। খুবই ভালো লাগে, যখন অন্য স্কুলের শিক্ষকেরা আমাদের স্কুলে আসেন। আমরা একটি ভালো পরিবেশে শিশুদের বেড়ে ওঠাটা নিশ্চিত করার চেষ্টা করেছি।সহকারী শিক্ষক শাহীনা আক্তার

কুশলপুর গ্রামের বাসিন্দা মিঠুন রায় বলেন, শিক্ষকদের আন্তরিকতায় স্কুলটির উন্নতি চোখে পড়ছে। ধীরে ধীরে স্থানীয় অনেকেই তাঁদের পাশে দাঁড়ান। যিনি জমিদাতা আছেন, তাঁর পরিবারের লোকজন সব সময় স্কুলের খোঁজ নেন। শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় অতিরিক্ত শিক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সবচেয়ে বড় কথা, শিশুরা দারুণ নিয়মশৃঙ্খলার মধ্যে বেড়ে উঠছে এখানে।

মুঠোফোনে অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বিরাজ খাজাঞ্চী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রধান শিক্ষকসহ অন্যরা আন্তরিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন। এলাকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হয়ে উঠছে, এটা অনেক বড় আনন্দের। শিক্ষার্থীদের পোশাক, অতিরিক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানসহ বিদ্যালয়টিকে সরকারের পাশাপাশি আমরাও শিশুবান্ধব করে তোলার চেষ্টা করছি।’ তিনি জানালেন, ভবিষ্যতে সব শিক্ষার্থীকে বিশেষ বৃত্তির আওতায় আনার কাজ শুরু করা হয়েছে।

উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মিনারা বেগম বলেন, ‘সুব্রত খাজাঞ্চী স্কুলটি উপজেলায় শুধু নয়, রংপুর বিভাগে বেশ সুনাম কুড়িয়েছে। আমরা আশা করছি, জাতীয় পর্যায়ে সেরা স্কুলের স্বীকৃতিও পাবে। বর্তমানে ওই বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েছে। আমরা বিদ্যালয়ের ভবন সম্প্রসারণের জন্য অধিদপ্তরে প্রস্তাবও পাঠিয়েছি।’

এলাকার ছেলেমেয়েরা শিক্ষিত হয়ে উঠছে, এটা অনেক বড় আনন্দের। শিক্ষার্থীদের পোশাক, অতিরিক্ত শিক্ষকদের বেতন-ভাতা প্রদানসহ বিদ্যালয়টিকে সরকারের পাশাপাশি আমরাও শিশুবান্ধব করে তোলার চেষ্টা করছি।অস্ট্রেলিয়াপ্রবাসী বিরাজ খাজাঞ্চী.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: স থ ন য় ল কজন আম দ র স ক ল শ ক ষকদ র ব দ য লয়ট র আওত য় র জন য পর ব শ সরক র ভবন র উপজ ল

এছাড়াও পড়ুন:

খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু

সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।

তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।

দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।

জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।

বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।

ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।

স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।

এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।

এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।

আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’

যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকা

ঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।

বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।

তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।

ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।

ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদা

ঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।

সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।

এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।

১০ নারী প্রার্থী

ঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।

মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধ

মাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।

চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ