মন্টু-ঝন্টু দুই বন্ধু। একই স্কুলে একই শ্রেণিতে পড়ে। থাকেও একই এলাকায়। ঝন্টুর মামা ঢাকায় থাকেন। তবে অন্য এলাকায়। সেদিন ভোরে মামা ফোন দিয়ে জানালেন, তাদের পাশের বাসায় ডাকাত পড়েছে। এমন ঘটনা জানার পর ঝন্টুদের পরিবারের সবাই নড়েচড়ে বসে। ঝন্টুর মা কাজের খালা আফিয়ার মাকে ডেকে বলে দিলেন, ‘খবরদার! হুট-হাট দরজা খুলবা না। বেল বাজলে দরজার আই হোল দিয়ে দেখে পরিচিত হলে দরজা খুলবা; নাহয় আমাদের ডাকবা।’
আফিয়ার মাও মনে হলো ভয় পেয়েছেন। তিনি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলেন, ‘জ্বে আম্মা। আইচ্ছা।’
রঞ্জু মামার পাশের বিল্ডিং-এর পাঁচ তলায় ডাকাতির ঘটনা ইন্টারেস্টিং বলেই মনে হলো ঝন্টুর। দিনে-দুপুরে ডাকাতির কথাটা আগে বই-পুস্তকে পড়েছে। এ ডাকাতিটা বাস্তবেই দিনে-দুপুরে ডাকাতি! ডাকাতরা ঢুকেছে যখন তখন দুপুর ১২টা ৫ মিনিট। একটা বিকট শব্দে পাশের ট্রান্সফরমারটা বিস্ফোরিত হওয়ায় বিদ্যুৎ চলে গিয়েছিলো। জেনারেটরের সাহায্যে লিফট চালু হলেও ডাকাতরা লিফটে না উঠে সিঁড়ি বেয়ে উঠেছিলো। এটি বোঝা গেছে ডাকাতদল চলে যাওয়ার পর অ্যাপার্টমেন্টের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ দেখে। পুলিশ সিসি ক্যামেরার ফুটেজ বিশ্লেষণ করে আসামি ধরার চেষ্টা করছে। বাসায় তখন একমাত্র কাজের খালা ছিলেন। খালা বয়স্ক হওয়ায় আর তাঁর মৃগী রোগ থাকায় ডাকাত দেখে দাঁত কপাটি লেগে গোঁ গোঁ করে জ্ঞান হারিয়ে ফেলায় ডাকাতদের কাজ করতে বেশ সুবিধা হয়েছে!
অজ্ঞান খালাকে বেঁধে রেখে বাসার আলমারির তালা ভেঙে স্বর্ণালংকার, নগদ টাকা সবই নিয়েছে তারা। জেনারেটরের শব্দে ডাকাতদের সুবিধা হয়েছে। কারণ, বাইরের কেউ আলমারির তালা ভাঙার শব্দ পায়নি। জেনারেটরের প্রচণ্ড শব্দ পাঁচতলা থেকে অতি সহজেই পাওয়া যাচ্ছিলো। সিসি ক্যামেরার ফুটেজে দেখা গেছে আপাদমস্তক কালো বোরকায় ঢাকা দুই মহিলা ঢুকছে ওই ফ্ল্যাটে। সম্ভবত কাজের খালার কাছে সহজ প্রবেশাধিকার নিশ্চিত করার জন্য এই বেশ ধারণ। ডাকাতরা লিফটে ওঠেনি। এর কারণ হতে পারে ডাকাত দু’জনের কোনো একজন এই অ্যাপার্টমেন্ট ভবনের সবার কাছে পরিচিত। লিফটে উঠলে বোরকা পরা সত্ত্বেও কারও না কারও চোখে ধরা পড়ার আশঙ্কা থাকে! এই রিস্ক হয়তো ডাকাতরা নিতে চায়নি। ডাকাতির বাকি সব কিছুই ট্র্যাডিশনাল স্টাইলের সাথে মিলে গেছে। যেমন, ঘরে লোকজন কম থাকার সময়কে ডাকাতির জন্য বেছে নেওয়া। কাজের খালার সরলতা বা অসচেতনতার সুযোগে ঘরে ঢুকে পড়া। খালাকে বেঁধে রেখে টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ সব লুটে নেওয়া। শুধু একটা জায়গায় অমিল পাওয়া গেলো–তা হলো পাখি ডাকাতি। ওই ফ্ল্যাটে একটা পোষা তোতা ছিলো। ডাকাতরা তোতাটাকেও নিয়ে গেছে। ডাকাতদের মধ্যে কোনো একজনের হয়তো পাখি পছন্দ করতো। সেজন্যই নিয়েছে; মনে মনে ভাবলো ঝন্টু।
ডাকাতদের সবকিছুই খারাপ নয়– এরকম একটি বিষয় নিয়ে আলাপের জন্য মন্টুকে ফোন দেবে মনে করতে মন্টুর ফোন চলে এলো। মায়ের কাছ থেকে ফোনটা নিয়ে ‘হ্যালো’ বলতে উদ্বিগ্ন মন্টুর গলা শোনা গেলো।
একটু আগে আমাদের পাড়ায় একটা অদ্ভুত চুরি হয়েছে। চোর ঘরের কিছুই নেয়নি। শুধু দেয়ালে টাঙ্গানো একটি ছবি নিয়ে গিয়েছে।
বলিস কী! শুধু একটি ছবি নেওয়ার জন্য চোর ঢুকেছে?
হ্যাঁ। ছবিটি যে কোনো দামি ছবি তাও নয়। সাধারণ মোবাইল ক্যামেরায় তোলা ছবি প্রিন্ট করে বাঁধাই করা হয়েছে। একটি ময়না পাখির ছবি।
অবাক কাণ্ড! ঝন্টু আপন মনে বলে ওঠে। ডাকাতরা পাখি ডাকাতি করে; চোর চুরি করে পাখির ছবি। এ আবার কোন রহস্য!
ময়না চুরি না করে তার ছবি চুরি করেছে। কারণ কী? ঝন্টু জিজ্ঞেস করলো।
আরে ময়নাটা বাসায় ছিলো না। ময়নাসহ বাসার লোকজন গ্রামের বাড়িতে গিয়েছিলো বেড়াতে। চোর ঢুকে ছিলো ফাঁকা ঘরে। রান্নাঘরের গ্রিল কেটে ঢুকেছিলো। বাড়ির দারোয়ান শব্দ পেয়ে ওপরে উঠে এসে তালা খুলে দেখে সব ঠিক আছে। শুধু ড্রয়িং রুম থেকে ময়না পাখির ছবিটা উধাও।
আশ্চর্যের বিষয় কি জানিস? মগবাজারে আমার মামার অ্যাপার্টমেন্টের ওপরের তলার এক ফ্ল্যাটেও গতকাল ডাকাতি হয়েছে। ডাকাতরা ঘরের সবকিছু নিয়েছে সাথে পোষা তোতা পাখিটাও।
তাহলে তো দুটো ঘটনার একটা জায়গায় মিল আছে। সেটি হলো পাখি। এবং দুটোই কথা বলা পাখি; টকিং বার্ড। ঝন্টু যোগ করলো।
কারেক্ট। এ থেকে একটি বিষয় পরিষ্কার হচ্ছে। কথা বলা পাখির মধ্যে মূল্যবান কিছু খুঁজে পেয়েছে চোর-ডাকাত সম্প্রদায়।
সিসি ক্যামেরার ভিডিও দেখে অভিযান চালালো দুই বন্ধু। তবে পুলিশ ডাকাত ভেবে তাদের ধরে নিয়ে গেলো থানায়। পরে তাদের কাছ থেকে সব শুনে সবাই তাদের প্রশংসা করে। আসল ডাকাতদের ধরে নেয় পুলিশ। ওদের কৌতূহলী মন আর সাহসের কারণে আন্তঃদেশীয় ডাকাত দলের সদস্যরা ধরা পড়ে। মূলত, এই ডাকাতদলই পাখি বিক্রি করে এবং পাখির মাধ্যমে বিভিন্ন বাসার গোপন তথ্য সংগ্রহ করে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকায় জামায়াতসহ ৭ দলের বিক্ষোভ আজ, কোথায়, কখন, কোন দল
ফেব্রুয়ারিতে জুলাই সনদের ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানসহ কয়েক দফা দাবিতে রাজধানী ঢাকায় আজ বৃহস্পতিবার একযোগে বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াতে ইসলামীসহ সাতটি দল।
বিক্ষোভের আগে বায়তুল মোকাররম, জাতীয় প্রেসক্লাবসহ আশপাশের এলাকায় দলগুলো সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করবে। বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত এসব কর্মসূচি চলবে।
প্রায় অভিন্ন দাবিতে সাতটি দল তিন দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। আজ প্রথম দিনে রাজধানী ঢাকায়, আগামীকাল শুক্রবার বিভাগীয় শহরে এবং ২৬ সেপ্টেম্বর সব জেলা ও উপজেলায় বিক্ষোভ মিছিলের কর্মসূচি রয়েছে দলগুলোর।
জামায়াতে ইসলামী, ইসলামী আন্দোলন, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস, খেলাফত মজলিস, নেজামে ইসলাম পার্টি, বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলন ও জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) এই কর্মসূচি পালন করবে। সাতটি দলের কেউ ৫ দফা, কেউ ৬ দফা, কেউ ৭ দফা কর্মসূচি ঘোষণা করলেও সবার মূল দাবি প্রায় অভিন্ন। দাবিগুলো হচ্ছে
জুলাই সনদের পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন এবং তার ভিত্তিতে জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠান, জাতীয় সংসদের উভয় কক্ষে (কেউ কেউ উচ্চকক্ষে) সংখ্যানুপাতিক (পিআর) পদ্ধতি চালু করা
অবাধ, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন নিশ্চিত করতে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড (সবার সমান সুযোগ) নিশ্চিত করা
বিগত ফ্যাসিস্ট সরকারের সব জুলুম, গণহত্যা ও দুর্নীতির বিচার দৃশ্যমান করা এবং জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা।
সাড়ে চারটায় জামায়াতআজ বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে চারটায় বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদের দক্ষিণ ফটকের সামনে সমাবেশের পর বিক্ষোভ মিছিল করবে জামায়াত। সমাবেশে দলের নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের ও সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ কেন্দ্রীয় ও ঢাকা মহানগর কমিটির নেতারা বক্তব্য দেবেন। জামায়াতের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখার উদ্যোগে এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হবে।
জামায়াতের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সেক্রেটারি শফিকুল ইসলাম মাসুদ প্রথম আলোকে জানিয়েছেন, বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।
বায়তুল মোকাররম মসজিদের দক্ষিণ ফটক থেকে মিছিল বের হয়ে পুরানা পল্টন মোড়, জাতীয় প্রেসক্লাব ও মৎস্য ভবনের পাশ দিয়ে শাহবাগ পর্যন্ত যেতে পারে।জোহরের পর ইসলামী আন্দোলনজোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ। মিছিলে নেতৃত্ব দেবেন দলের জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির সৈয়দ মুহাম্মাদ ফয়জুল করীম। ইসলামী আন্দোলনের ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ শাখা যৌথভাবে এ কর্মসূচির আয়োজন করেছে।
জোহর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তরে প্রাঙ্গণে বিক্ষোভ মিছিল করবে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ।আসরের পর বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসআসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস। গতকাল এক বিবৃতিতে দলের মহাসচিব মাওলানা জালালুদ্দীন আহমদ কর্মসূচিতে সবাইকে স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
এ ছাড়া খেলাফত মজলিস বেলা তিনটায় জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনের সড়কে বিক্ষোভ সমাবেশ করবে। এতে দলের মহাসচিব আহমদ আবদুল কাদের প্রধান অতিথির বক্তব্য দেবেন।
একই সময়ে, একই জায়গায় মিছিল করবে বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনও। বিকেল চারটায় একই জায়গায় বিক্ষোভ করবে বাংলাদেশ নেজামে ইসলাম পার্টি।
আসর নামাজের পর বায়তুল মোকাররম মসজিদের উত্তর ফটকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস।জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর মধ্য এলাকায় একযোগে সাতটি দলের বিক্ষোভের কর্মসূচি ঘিরে নেতা-কর্মীদের সমাগমে সড়কে যানজটের সৃষ্টি হতে পারে। এ জন্য নগরবাসী দুর্ভোগের সম্মুখীন হতে পারেন। যদিও আজ ও আগামীকাল সকালে বিসিএস পরীক্ষা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠানের জন্য এই সাত দল কর্মসূচি বিকেলে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
জাতীয় গণতান্ত্রিক পার্টি (জাগপা) বিকেল সাড়ে চারটায় বিজয়নগর পানির ট্যাংকের সামনে বিক্ষোভ মিছিল করবে।