গণমাধ্যমে নারীকে ইতিবাচক উপস্থাপন নিশ্চিত করার সুপারিশ করেছে নারী বিষয়ক সংস্কার কমিশন।

শনিবার (১৯ এপ্রিল) বিকালে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে এই প্রতিবেদন হস্তান্তর করে কমিশন।

এ সময় কমিশনের সদস্যরা প্রতিবেদনের সারসংক্ষেপ প্রধান উপদেষ্টার সামনে তুলে ধরেন। ১৫টি মূল বিষয়ে ৪৩৩টি সুপারিশ করেছে কমিশন।  সুপারিশগুলোর মধ্যে আছে–  জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা ২০১৪ অনুসরণ করে সব ধরনের গণমাধ্যমে নারীর নেতিবাচক উপস্থাপন বন্ধ করা।

আরো পড়ুন:

প্রথমবার সরকারপ্রধানের রাষ্ট্রীয় সফরসঙ্গী হচ্ছেন নারী ক্রীড়াবিদরা

ধান মাড়াইয়ের সময় বজ্রপাত, নারীর মৃত্যু

প্রতিবেদনে সুপারিশ হিসেবে বলা হয়-বৈষম্যমূলক আচরণ, নারীর নেতিবাচক উপস্থাপন ইত্যাদি বিষয়ের জন্য একটি অভিযোগ ও নিষ্পত্তি প্রক্রিয়া চালু করা। গণমাধ্যমের প্রত্যেক শাখা ও স্তরে ৫০ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা।

এছাড়া নারী ও অন্যান্য লিঙ্গ-বিদ্বেষী উপস্থাপন, নেতিবাচক ও মর্যাদা ক্ষুণ্ণ করে-এমন ভাষা পরিহার করার লক্ষ্যে উপস্থাপনের ভাষা ও ধরন সম্পর্কে প্রশিক্ষণ পর্যায় থেকে কর্মজীবনের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়মিত প্রশিক্ষণ ও মূল্যায়নের ব্যবস্থা করারও সুপারিশ করা হয়।

পাশাপাশি বিজ্ঞাপনে নারীর উপস্থাপন সংক্রান্ত একটি মানদণ্ড নির্ধারণ এবং তা বাস্তবায়ন হচ্ছে কিনা, সেজন্য পরিবীক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে সুপারিশে।

বিস্তারিত প্রতিবেদনে গণমাধ্যমে নারী ও শিশুসহ যৌন বা লিঙ্গভিত্তিক সহিংসতার যেকোনও লিঙ্গের ভুক্তভোগী এবং বিচারিক কার্যক্রম সম্পূর্ণ হওয়ার আগে ঝুঁকিপূর্ণ সাক্ষী বা অভিযুক্তদের পরিচয় প্রকাশের ওপর প্রতিবেদন সীমিত করতে বিচার বিভাগ কর্তৃক গণমাধ্যমের জন্য একটি অনুশীলন নির্দেশিকা জারি করার কথা বলা হয়।

এছাড়া অন্যান্য সুপারিশের মধ্যে আছে-সহিংসতার শিকার নারীদের নিয়ে সংবাদ বা অন্যান্য যেকোনও উপস্থাপনায় ভাষার ব্যবহারে সতর্ক থাকা, জেন্ডার স্টেরিওটাইপ আচরণ, যেমন- ঘরের কাজ নারীর অথবা নারীরা ধূমপান করে না-ধরনের উপস্থাপনা করা থেকে বিরত থাকা, যেকোনোও উপস্থাপনায় অহেতুক নারীর প্রসঙ্গ টেনে নারীবিদ্বেষী বয়ান, বক্তব্য, ধারণা বা ছবি পরিবেশন থেকে বিরত থাকা।

প্রতিবেদনে গণমাধ্যমে অংশগ্রহণের জন্য, অথবা কাজ পাওয়ার জন্য নারীকে যৌনবস্তু হিসেবে ব্যবহার না করা, নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধা ও যোগ্যতা বিবেচনা করা, কাস্টিং কাউচ পরিহার করা এবং এ জন্য শাস্তির বিধান রাখার কথাও বলে হয়েছে।

সমাজে নারী সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরি করার জন্য গণমাধ্যমে ভাষার ব্যবহার ও নারীর চিত্রায়নে ইতিবাচক পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে নিয়মিত এ বিষয়ক প্রচারণা, প্রশিক্ষণ ও যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা এবং অহেতুক নারীকে যৌনবস্তু হিসেবে উপস্থাপন থেকে বিরত থাকার কথা বলা হয়েছে।

সমাজে নারীর প্রতি যে বৈষম্য বিরাজ করছে এবং নারী যে নির্যাতন ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছে, সে বিষয়গুলোকে বিশ্লেষণ করে তুলে ধরা, অভিবাসী নারী শ্রমিকদের সম্পর্কে ইতিবাচক ধারণা তৈরিতে তাদের কাজ, জাতীয় অর্থনীতিতে তাদের অবদান ও নিজ জীবনের ইতিবাচক পরিবর্তন প্রতিবেদন আকারে প্রকাশ করা, সামাজিক সম্প্রীতি ও সহনশীলতা বৃদ্ধিতে পাহাড় ও সমতলের আদিবাসী গোষ্ঠীর ভাষা ও সংস্কৃতির ইতিবাচক উপস্থাপন করা, প্রতিবন্ধী নারী ও অন্যান্য প্রান্তিক নারীদের সামাজিক ও অর্থনৈতিক অবস্থা, অবস্থান ও প্রতিবন্ধকতা প্রকাশ করা এবং উপস্থাপনার ভাষা যেন তাদের প্রতি সম্মানজনক ও সংবেদনশীল হয়, সে ব্যাপারে সতর্ক থাকার কথাও বলা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠান হিসেবে সুপারিশে বলা হয়েছে-গণমাধ্যমে নারীর অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করা। এছাড়া  ব্যবস্থাপনা ও সব পর্যায়ের কর্মীদের জেন্ডার-সংবেদনশীলতা নিয়মিত যাচাই করার পদ্ধতি প্রণয়ন করার বিষয়ে বলা হয়েছে-এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের চর্চাকে উদাহরণ হিসেবে দেখা যেতে পারে বলে মনে করে কমিশন।

এছাড়া গণমাধ্যমের প্রত্যেক শাখা ও স্তরে অন্তত ৩৩ শতাংশ নারীর অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা, নীতিনির্ধারণ পর্যায়ে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধির জন্য ইতিবাচক পদক্ষেপ গ্রহণ করার কথাও সুপারিশে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঢাকা/হাসান/সাইফ

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর অন য ন য পর য য র জন য গ রহণ

এছাড়াও পড়ুন:

বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ‌্যে ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান পছন্দ হয়নি স‌্যামির

চট্টগ্রামের সাগরিকায় উপস্থিত থাকা দর্শকরা গতকাল ওয়েস্ট ইন্ডিজকে সাপোর্ট করেছে এমন কথা শুনলে অবাক হবেন নিশ্চিয়ই? অবাক হওয়ার কিছু নেই। সত্যিই এমন কিছুই হয়েছে বীরশ্রেষ্ঠ ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান স্টেডিয়ামে।
ধারাবাহিকভাবে ব‌্যর্থ বাংলাদেশ দল থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন দর্শকরা আপাতদৃষ্টিতে এমনটাই মনে হয়েছে। লাল-সবুজের পতাকা গ‌্যালারিতে উড়তে দেখা যায়নি তেমনটা নয়। কিন্তু ম‌্যাচ যত গড়িয়েছে সেই পতাকা উড়ানোও তত কমেছে। টিকিটের মূল‌্য একেবারে হাতের নাগালে। সাপ্তাহিক ছুটির দিন। তবুও ভরেনি গ‌্যালারি।

লিটন, জাকের, তাসকিন, শরিফুল, সাইফদের পারফরম‌্যান্স এমন গড়পড়তা যে সমর্থকরা প্রতিপক্ষের ব‌্যাটিং-বোলিং দেখেই বেশি আনন্দিত হচ্ছেন। টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটের যে নিবেদন, যে চাহিদা তা রোস্টন চেজ, আকিম আগাস্তের ব‌্যাটে পাওয়া গেলে সমর্থকদের দোষ কোথায়? তাদের চার-ছক্কায় গ‌্যালারিতে তালির ঝড় উঠে। উল্লাস, উদ্দীপনায় মাততে দেখা যায়।
আর স্বাগতিক দলের জন‌্য উড়ে আসে দুয়ো ধ্বনি। ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান চললো পুরো ম‌্যাচ জুড়েই। বিশেষ করে সীমানায় থাকা ক্রিকেটাররা দর্শকদের রোষানলে পড়লেন বেশি। শুধু তা-ই নয়, স্টেডিয়ামের যাওয়া-আসার পথেও সেই সমর্থকরাই ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগানে এলোমেলা করে দেন ক্রিকেটারদের।

বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ‌্যে এসব স্লোগান একেবারেই পছন্দ হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের কোচ ড‌্যারেন স‌্যামির। ক্যারিয়ারে নানা সময় বাংলাদেশে আসায় কিছুটা বাংলা শব্দ তারও জানা। তবে ভুয়া অর্থটা জেনেছেন এবারই। তাইতো তার হৃদয়ে কিছুটা দহনও হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন‌্য, “তারা (দর্শকরা) ক্রিকেটারদের সঙ্গে যেভাবে আচরণ করেছে, সেটা আমার ভালো লাগেনি। আমি শুনেছি তারা ‘ভুয়া, ভুয়া’ বলছে। এর অর্থও আমি জেনেছি। কিন্তু আমি মনে করি না, হোম টিমের দর্শক হিসেবে এমন করা উচিত। কারণ আপনারা তখন সমর্থক। প্রত্যেক ক্রিকেটারই মাঠে আসে তাদের সেরাটা দেওয়ার জন্য। তাই আপনাদের উচিত, তাদের সমর্থন করা।”

ওয়েস্ট ইন্ডিজকে দুইবার বিশ্বকাপ জেতানো স‌্যামি কঠিন সময়ে ক্রিকেটারদের পাশে থাকার কথা বললেন, ‘‘তবুও তারা (দর্শকরা) ভালো। তারা নিজেদের দলকে পারফর্ম করতে দেখতে চায়। তবে যত বেশি সমর্থন ও উৎসাহ দেবেন, তারা তত দূর যেতে পারবে। ক্রিকেটারদের অযথা চাপে ফেলবেন না। ফ্যানদের বলব, তাদের (ক্রিকেটারদের) সঙ্গে সুন্দর আচরণ করুন।”

চট্টগ্রাম/ইয়াসিন

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • হবিগঞ্জে কনসার্টে বিশৃঙ্খলার পর নারীদের হেনস্তা ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ
  • পৃথিবীর দিকে ধেয়ে আসা ভিনগ্রহের বস্তু নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্বে ইলন মাস্ক
  • অতিরিক্ত মোটা হওয়ায় যাত্রীকে তুলতে অস্বীকৃতি উবার চালকের
  • কেউ কটুক্তি করলে কী করবেন?
  • বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উদ্দেশ‌্যে ‘ভুয়া-ভুয়া’ স্লোগান পছন্দ হয়নি স‌্যামির