নাসা আয়োজিত ‘হিউম্যান এক্সপ্লোরেশন রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২৫’-এ অংশ নিয়ে দেশে ফিরেছে ‘ড্রিমস অব বাংলাদেশ’। তরুণদের এ গবেষণা দল অংশ নিয়েছে প্রতিযোগিতার রিমোট কন্ট্রোল ডিভিশনে। এবারই প্রথম এ বিভাগটি চালু হয়েছে এইচইআরসি-তে। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ফিরে ড্রিমস অব বাংলাদেশের দলনেতা মাহাদির ইসলাম লিখেছেন স্বপ্নজয়ের কথা.
গত ২৮ মার্চ ঢাকা ছাড়লেও নাসা আয়োজিত ‘হিউম্যান এক্সপ্লোরেশন রোভার চ্যালেঞ্জ ২০২৫’ বা এইচইআরসি প্রতিযোগিতার প্রধান পর্ব অনুষ্ঠিত হয় ১১ ও ১২ এপ্রিল। নাসার এ প্রতিযোগিতায় প্রথমবার অংশ নেয় মুন ল্যান্ডার রোভার দলটি। নাসার ধূসর মাটিতে উড়িয়েছি আমাদের স্বপ্ন। প্রতিযোগিতার রিমোট কন্ট্রোল ডিভিশনে অংশ নিয়েছি আমরা। প্রথমবার এ বিভাগটি চালু হয়েছে এইচইআরসি-তে। নাসা হিউম্যান এক্সপ্লোরেশন রোভার চ্যালেঞ্জে দুটি প্রধান মিশনে অংশ নিয়েছি আমরা। প্রথমটি হলো মাটির নমুনা সংগ্রহ, যেখানে রোভারকে ক্রস-কন্টামিনেশন এড়িয়ে দুটি আলাদা স্থান থেকে মাটি সংগ্রহ করতে হয়। দ্বিতীয়টি হলো টেরেইন ম্যাপিং, যেখানে রোভার লাইডার ব্যবহার করে আশপাশের অঞ্চলের একটি বিস্তৃত মানচিত্র তৈরি করা। এ ছাড়া ধূলিময়, অসমান ভূমিসহ বিভিন্ন প্রাকৃতিক বাধা অতিক্রম করার ক্ষমতার পরীক্ষা। প্রতিটি বাধার জন্য বিস্তৃত কৌশল তৈরি করেছি আমরা।
যেভাবে অংশগ্রহণ করি
যুক্তরাষ্ট্রের হান্টসভিল, অ্যালাবামায় অবস্থিত ইউএস স্পেস অ্যান্ড রকেট সেন্টারে অনুষ্ঠিত হয় এ প্রতিযোগিতা। এতে অংশগ্রহণের প্রথম ধাপ ছিল একটি বিশেষ প্রপোজাল জমা দেওয়া, যেখানে আমাদের পরিকল্পিত রোভার ডিজাইন, টেকনিক্যাল ধারণা এবং মিশন স্ট্র্যাটেজি বিস্তারিতভাবে তুলে ধরি। বিশ্বের প্রায় ৭৮০০টি দল প্রাথমিকভাবে আবেদন করে। সেখান থেকে বিভিন্ন ধাপ পেরিয়ে নির্বাচিত হয় ৭২টি দল। ড্রিমস অব বাংলাদেশের ব্যানারে আমাদের গড়া বাংলাদেশ মুন ল্যান্ডার রোভার টিম এই কঠিন প্রতিযোগিতা পার করে, বিশ্বসেরা দলের কাতারে জায়গা করে নেয়। এটি ছিল আমাদের জন্য সবচেয়ে বড় আত্মবিশ্বাসের মুহূর্ত।
প্রস্তুতির দিনগুলো
ঘাম, পরিকল্পনা এবং ত্যাগের মাধ্যমে আমরা এই পথে এগোতে থাকি। প্রাথমিকভাবে নির্বাচিত হওয়ার পর শুরু হয় কয়েক মাসের টানা কঠিন প্রস্তুতি। আমাদের দলের প্রত্যেক সদস্য কেউ রোভার ডিজাইনে, কেউ সফটওয়্যার সিমুলেশনে, কেই মেকানিক্যাল স্ট্রাকচার অ্যানালাইসিসে, কেউ ইলেকট্রিক সিস্টেম ইন্টারাকশানে, কেউবা রিমোট কন্ট্রোল প্রোগ্রামিং নিয়ে কাজ করে। এরই মধ্যে আবার কাজের অগ্রগতি জানাতে প্রতি মাসে নাসায় বিভিন্ন মূল্যায়ন রিপোর্ট পাঠাতে থাকি। এই সময়টাতে বাংলাদেশের পরিবেশ, সীমিত রিসোর্স, কিছুই আমাদের থামাতে পারেনি। বরং আমাদের লক্ষ্য ছিল একটাই, তা হচ্ছে নাসার মঞ্চে বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করা।
ভিসা যেন এক সোনার হরিণ!
প্রতিযোগিতায় সরাসরি অংশ নিতে হলে নাসায় যেতে হতো। দলের প্রায় সবাই স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থী। তাই আমাদের জন্য ভিসা পাওয়া সহজ ছিল না। আমাদের টিম ম্যানেজমেন্ট এবং নির্ভুল ডকুমেন্টেশন প্রক্রিয়ার কারণে সবাই সফলভাবে ভিসা পায়। ভিসা হাতে পাওয়ার পর মনে হলো, এটিও এক ধরনের অর্জন বটে! নিজস্ব অর্থায়ন এবং কোনো রকম স্পন্সর ছাড়া আমরা আমাদের পুরো জার্নিটা শেষ করি। তবে স্থানীয় বাংলাদেশি কমিউনিটির ভালোবাসা ও সহযোগিতা আমাদের মনোবল আরও বাড়িয়ে দেয়।
দলের লড়াকু স্বপ্নবাজরা
প্রজেক্ট লিড ও সহদলনায়ক হিসেবে ছিলাম বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সী আবদুর রউফ পাবলিক কলেজের শিক্ষার্থী আমি মাহাদির ইসলাম। ঢাকা রেসিডেনসিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী আন নাফিউ দলের সেফটি অফিসার, মেকানিক্যাল লিড ঢাকার সিপিআই পলিটেকনিকের শিক্ষার্থী মো. রিফাত হোসাইন, টেকনিক্যাল লিড বিএএফ শাহীন কলেজের শিক্ষার্থী মো. ইয়াসিন আরাফাত, সফটওয়্যার লিড দিয়েছে ঢাকা রেসিডেনশিয়াল মডেল কলেজের শিক্ষার্থী অর্কপ্রতীক আচার্য, সাউথ পয়েন্ট স্কুল অ্যান্ড কলেজের শিক্ষার্থী মার্জিয়া আফিফা দলের ইলেকট্রিক লিডার ও রোভারের ডিজাইন লিডার ঢাকা ইমপিরিয়াল কলেজের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল জুনায়েদ। দলের উপদেষ্টা হিসেবে ছিলেন এমআইএসটির মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের প্রভাষক শাহ মো. আহসান সিদ্দিক। এমআইএসটির প্রতিনিধি ও মেন্টর হিসেবে দলকে পথ দেখিয়েছেন জওয়াদুর রহমান ও মো. ফয়সাল হোসেন।
রোভার ডিজাইন ও আমাদের গর্বের টেকনোলজি
আমাদের রোভার ছিল সবার চেয়ে আলাদা। এর কিছু বৈশিষ্ট্য হচ্ছে– এটি বিশ্বের অন্যতম অ্যাডভান্সড সাসপেনশন সিস্টেম ব্যবহার করে রোভার যে কোনো অসমান, পাথুরে পথে সমানভাবে চলতে পারে। তাছাড়া এটি টার্ন করার সময় হুইলের মধ্যে গতি সামঞ্জস্য রাখতে পারে। ফলে কোনো রকম হুইল স্লিপ বা জ্যামিং হয়নি। এর ছয়টি চাকা সম্পূর্ণ স্বতন্ত্রভাবে চালিত ও নিয়ন্ত্রিত ছিল। যার ফলে মাটিতে বিশেষ কোনো প্রতিবন্ধকতায় রোভার কখনও আটকে যায়নি। একটি নয়, আমরা মূলত দুটি সম্পূর্ণ কার্যকর রোভার তৈরি করি। এটি ছিল একমাত্রিক। নাসার বিচারকরাও আমাদের এই চিন্তাশক্তির প্রশংসা করেন।
বিশ্ববিদ্যালয়, টিম পার্টনারশিপ ও আমাদের অর্জন
আমরা পারডু বিশ্ববিদ্যালয়, মিসৌরি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিশ্বের নামি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের রোভার টিমের সঙ্গে সরাসরি কাজ করি। এতে একে অপরের সঙ্গে আইডিয়া শেয়ার ও এক্সপেরিমেন্ট নিয়েও আলোচনা করি। এ ছাড়া হান্টসভিল হাইস্কুল ও নিউ সেঞ্চুরি টেকনোলজি হাইস্কুল রোভার দলের সঙ্গে মিশন স্ট্র্যাটেজিতে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে তুলি। প্রতিযোগিতায় আমাদের বড় অর্জন হচ্ছে বাংলাদেশ থেকে প্রথম বারের মতো অংশগ্রহণ করা। এছাড়া আরসি ডিভিশনের দলগুলোর মধ্যে সেরা দশে নিজেদের অবস্থান তুলে এনেছি আমরা।
আগামীর স্বপ্ন
ড্রিমস অব বাংলাদেশ ২০২৬ সাল থেকে ৪-৫টি দল এই প্রতিযোগিতায় পাঠাতে চায়। এর জন্য স্কুল, কলেজ থেকে মেধাবী শিক্ষার্থী তুলে আনা এবং প্রশিক্ষণ দেওয়ার পর বাংলাদেশ স্পেস রিসার্চ ইনেশিয়েটিভ গঠন করবে। এছাড়া বাংলাদেশের নাম মহাকাশ অভিযানের গর্বিত দেশের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করতে চাই আমরা। আমাদের বিশ্বাস, আগামীতে বাংলাদেশের তরুণরা রোভার মিশন, লুনার মিশন এবং মার্স মিশনে সরাসরি নেতৃত্ব দেবে।
সাহসী স্বপ্নের শুরু
নাসার বিশাল আকাশের নিচে যখন নিজেদের বানানো রোভারের গতি পৃথিবীর কাঁপন অনুভব করাচ্ছিল তখন আমরা থমকে দাঁড়িয়েছিলাম। মনে হয়েছিল, আজ আমরা কেবল মানচিত্রে নয়, প্রযুক্তির অগ্রগতির মানচিত্রে আরও এক ধাপ এগিয়ে গেলাম। আমাদের এই যাত্রা কেবল প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার জন্য নয়; এটি ছিল বাংলার সাহসী তরুণদের সৃষ্টির বিজয়! অসংখ্য ঘুমহীন রাত, অনুশীলনের ঘর্মাক্ত ক্লান্ত শরীর, ভিসা পাওয়ার দুশ্চিন্তা–সব মিলিয়ে আমরা আমাদের স্বপ্ন ছুঁতে পেরেছি। আমরা কোনো স্পন্সর ছাড়া, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে, নিজেদের ঘাম দিয়ে নাসার মাটিতে দাঁড়িয়ে বলেছি, হ্যাঁ, আমরাই পারব।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ল কল জ র শ ক ষ র থ র ড জ ইন য ন এক স র জন য আম দ র
এছাড়াও পড়ুন:
‘লিচুর বাগানে’ যে কারণে ‘পিরিতের বেড়া’ দিতে হয়
‘তাণ্ডব’ সিনেমার গান ‘লিচুর বাগানে’ প্রকাশের পর রীতিমতো হইচই পড়ে গেছে। কফি শফ থেকে বাস, মেট্রোরেল আশপাশে কান পাতলে গানটা শোনা যাচ্ছে। কেউ না কেউ শুনছেন। সামাজিক মাধ্যমের স্টোরি ও রিলসেও গানটি ভেসে বেড়াচ্ছে। চরকি ও এসভিএফের অফিশিয়াল ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশিত গানটির আজ পর্যন্ত (১২ এপ্রিল ২০২৫) ভিউ হয়েছে যথাক্রমে ১২ মিলিয়ন ও ৩ দশমিক ৬ মিলিয়ন।
উচ্ছ্বসিত অনেক দর্শক গানটি নিয়ে মন্তব্যও করেছেন। তাহসিন নামের এক শ্রোতা লিখেছেন, ‘গানটির প্রতিটি সুর, দৃশ্য ও পরিবেশনায় বাঙালির ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির অপূর্ব রূপ ফুটে উঠেছে। যাত্রাপালার ফিল্মের আবহে তৈরি এই গানটি যেন গ্রামীণ বাংলার প্রাণস্পন্দন তুলে ধরেছে। লোকেশন থেকে শুরু করে কস্টিউম, প্রতিটি ডিটেইলে আছে নিখুঁত যত্ন।’
গানটি নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে বন্ধুদের মধ্যে খুনসুটিও চলছে। বন্ধুকে মেনশন দিয়ে কেউ যেমন প্রশ্ন করছেন, ‘কী রে, বেড়া ডিঙাতে পারলি?’ আবার কেউ জিজ্ঞেস করছেন বল তো, ‘“লিচুর বাগানে” কেন “পিরিতের বেড়া” দিতে হয়?’
প্রশ্নটির উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা যাক। শুরুতেই ‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, ‘কে এই ছত্তার পাগলা’ শীর্ষক প্রথম আলোর প্রতিবেদন থেকে কিছু তথ্য জেনে নেওয়া যাক। গবেষক সরোজ মোস্তফার মতে ‘কে দিল পিরিতের বেড়া লিচুরও বাগানে’ পঙ্ক্তির রচয়িতা ও সুরকার ছত্তার পাগলা। তবে সংগীতগবেষক গৌতম কে শুভর মত ভিন্ন। তাঁর মতে, ‘এটি মূলত প্রচলিত ঘেটু গান। “কে দিল পিরিতির বেড়া লিচুর বাগানে?” অংশটি মূল গানের অংশ। ছত্তার পাগলা নিজের মতো করে এর সঙ্গে কথা সংযোজন করেছেন। নেত্রকোনায় ছত্তার পাগলার লেখা রূপটিই বিখ্যাত হয়েছে।’ ২০১৪ সালের এপ্রিলে মারা গেছেন ছত্তার পাগলা। জীবদ্দশায় রচনা ও সুরারোপ করেছেন কয়েক শ গান। মৃত্যুর বছর তিনেক আগে তাঁর কাছ থেকে গানটি শুনে হাতে লিখে রেখেছিলেন আল মামুন চৌধুরী।
আল মামুন চৌধুরীর লেখা অনুযায়ী গানটির কথা:
কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে
লিচুরও বাগানে গো সই…লিচুরও বাগানে …(ঐ)
পাখি খাইছ না লিচু, বন্দে খাইবো
বন্দে লিচু খাইয়া, খুশি হইবো
আমার কাছে আইসা কইবো
কত শান্তি দিবো আমার মনেপ্রাণে (ঐ)
ছোট ছোট লিচুগুলি, বন্দে তুলে আম্বো তুলি
বন্দে দেয় গো আমার মুখে,
আমি দিতে চাই বন্ধুর মুখের পানে…(ঐ)
মিষ্টি লিচু খাইয়া বন্দে, বাঁশি বাজায় মন আনন্দে
আমার মনে লাগে সন্দে বন্ধু সম্ভব জাদু জানে (ঐ)
বাঁশি হাতে পলায় মালা, তারে চায় ছত্তার পাগলা,
করব লইয়া উলামেলা, (২) প্রাণবন্ধুর সনে…(ঐ)
সরল অর্থে ‘বেড়া’ হচ্ছে প্রতিবন্ধকতা তথা বাধা তৈরির উপকরণ। আর ‘পিরিতের বেড়া’ মানে ভালোবাসায় বাধা। কিন্তু ভালোবাসার এই বাধা তথা প্রতিবন্ধকতা ‘লিচুর বাগানে’ কেন? কবিতা তথা গানে অর্থের তারতম্য অর্থের অনুগত না হয়ে বোধ কিংবা ভাবনার পরবশে প্রস্ফুটিত হয়। ব্যক্তিবিশেষে তা ভিন্ন ভিন্ন অর্থ লাভ করে, ভিন্ন ভিন্ন মূল্য পায়।
আরও পড়ুন‘লিচুর বাগানে’ গানটি দিয়ে আলোচিত, কে এই ছত্তার পাগলা ০৬ জুন ২০২৫‘কে দিল পিরিতের বেড়া, লিচুরও বাগানে’ একটি ‘ঘাটু গান’ বা ‘ঘেটু গান’। এই গান প্রসঙ্গে জানা যায়, এই গানের অন্যতম অনুষঙ্গ ছিল নৃত্য। অল্প বয়সী একটি ছেলেকে মেয়ে সাজিয়ে তার নৃত্যের মধ্য দিয়ে ঘেটু গান পরিবেশিত হতো। সঙ্গে থাকত ঢোল, হারমোনিয়াম, বাঁশি ইত্যাদি বাদ্যযন্ত্র। কয়েকটি ‘ঘেটু গানে’র দৃষ্টান্ত দেখা যাক।
(১)
‘তুই আমারে চিনলে নারে
আমি তো রসের কমলা।
বন্ধুর বাড়ি আমার বাড়ি
মধ্যে নলের বেড়া।’
(২)
ঘুমাইলা ঘুমাইলারে বন্ধু
পান খাইলায়না
এক বালিশে দুইটি মাথা
সুন্দর কইরা কওরে কথা।
গানগুলো থেকে উপলব্ধি করতে কষ্ট হয় না যে ‘ঘেটু গানে’ যেমন ভাষার সারল্য আছে, তেমনিভাবে রূপকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়েছে যাপিত জীবনের সঙ্গে আষ্টেপৃষ্ঠে থাকা নানা উপকরণ। আর এ ক্ষেত্রে গান রচনার সময় রচয়িতা তাঁর আশপাশ থেকেই গান নির্মাণের উপকরণগুলো যে নিয়ে থাকবেন, সেই ধারণাও পাওয়া যায়। ‘লিচুর বাগানে’ গানের ক্ষেত্রেও বোধ করি এটা ঘটেছে। তাই এই গানে যেমন ‘লিচু বাগানে’র কথা আছে, একইভাবে আছে ‘পাখি’, ‘বাঁশি’ ও ‘লিচু’র কথাও। পাখিকে লিচু না খাওয়ার অনুরোধ করলেও পাখি যেন খেতে না পারে সে কারণেই যে বেড়া দেওয়া হয়েছে; সেই ব্যথাও গানটিতে ফুটে উঠেছে। সব মিলিয়ে ‘লিচুর বাগান’ শেষ পর্যন্ত ‘লিচুর বাগানে’ সীমাবদ্ধ থাকেনি। হয়ে উঠেছে ভালোবাসার প্রতীক।
কথায় আছে, ভালোবাসা জয় করে নিতে হয়। জিতে নেওয়ার মধ্যেই আছে অপার আনন্দ। ভালোবাসায় প্রতিবন্ধকতা থাকাটা মোটেও দোষের নয়। বরং বাধা না থাকাটাই যেন আশ্চর্যের। একইভাবে ভালোবাসা জিতে নেওয়ার পরও পেয়ে গেছি বলে হাল ছেড়ে দিলে চলে না। ‘লিচুর বাগান’কে এ ক্ষেত্রে ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করলে, ‘লিচুর বাগানে’ ‘পিরিতের বেড়া’ তথা ভালোবাসার বেষ্টনী দেওয়াটাই যুক্তিযুক্ত। কেননা ‘ভালোবাসা’কে ভালোবাসা দিয়েই আগলে রাখতে হয়। প্রবল যত্নে আঁকড়ে রাখতে হয়। যেন কোনো কৌতূহলেই তা দুলে না ওঠে, হারিয়ে না যায়।
আরও পড়ুনসাবিলা তো ‘লিচুর বাগানে’ দিয়ে কী যে আগুন লাগিয়ে দিল...০৫ জুন ২০২৫