ভাত খাওয়ার সময় যুবদলকর্মীকে গুলি করে হত্যা
Published: 20th, April 2025 GMT
চট্টগ্রামের রাউজানে এক যুবদলকর্মীকে গুলি করে হত্যার ঘটনা ঘটেছে। গতকাল শনিবার দিবাগত রাত দেড়টার দিকে উপজেলার বাগোয়ান ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের গরিব উল্লাহপাড়া গ্রামের ভান্ডারী কলোনির একটি বাসায় ভাত খাওয়ার সময় সন্ত্রাসীরা তাঁকে গুলি করে হত্যা করেন। এ ঘটনায় একই দলের প্রতিপক্ষের লোকজন জড়িত বলে সন্দেহ নিহত ব্যক্তির পরিবারের।
নিহত যুবদলকর্মীর নাম মুহাম্মদ মানিক আবদুল্লাহ (৩৬)। তিনি গরিব উল্লাহপাড়া গ্রামের আবদুল মোতালেবের ছেলে। দীর্ঘদিন সংযুক্ত আরব আমিরাতে ছিলেন তিনি। গত বছরের অক্টোবরে তিনি দেশে আসেন। স্থানীয় রাজনীতিতে বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী হিসেবে পরিচিত মানিক আবদুল্লাহ। এলাকার বিভিন্ন স্থানে তিনি গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর ছবিসহ তোরণ নির্মাণ এবং ব্যানার টাঙিয়ে প্রচারণা চালিয়ে আসছিলেন।
পরিবার ও স্থানীয় বাসিন্দাদের সূত্রে জানা গেছে, মানিক আবদুল্লাহ দেশে ফেরার পর স্ত্রী, ১০ বছর বয়সী ১ ছেলে ও ৫ বছরের মেয়েকে নিয়ে চট্টগ্রাম নগরের একটি বাসায় ভাড়ায় থাকতেন। স্ত্রী-সন্তান ছাড়া গ্রামে এলে ভান্ডারী কলোনির ওই বাসাটিতে ভাত খেতেন। গতকাল রাতেও আরেক যুবদলকর্মীসহ তিনি ওই বাসাটিতে ভাত খাচ্ছিলেন। এ সময় বাসাটিতে ঢুকে ১২ থেকে ১৫ জন সন্ত্রাসী গুলি করে তাঁকে হত্যা করেন। তাঁর শরীরের তিনটি স্থানে গুলি লাগে। হত্যার পর সন্ত্রাসীরা অটোরিকশা ও মোটরসাইকেলে চলে যান।
নিহত ব্যক্তির ছোট ভাই সাকিল আহমেদ প্রথম আলোকে বলেন, একই দলের প্রতিপক্ষের কিছু নেতা-কর্মী তাঁর ভাই মানিক আবদুল্লাহর ওপর তিন মাস আগেও হামলা করেছিলেন। ভাইয়ের ওপর ক্ষোভ থেকে তাঁর কোচিং সেন্টার ও তাঁর বোনের বাড়িতেও হামলা করা হয়। ওই সন্ত্রাসীরাই তাঁর ভাইকে ভাত খাওয়ার সময় গুলি করে হত্যা করেছেন। তিনি বলেন, ‘বিগত সরকারের সময় নির্যাতনের শিকার হয়ে বিদেশে থাকতে হয়েছে আমার ভাইকে। দেশে ফেরার পর দলের প্রতিপক্ষের হাতে জীবন দিতে হলো। আমি হত্যাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি চাই।’
পুলিশ জানিয়েছে, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে তিনটি গুলির খোসা উদ্ধার করা হয়েছে। নিহত যুবদলকর্মীর মাথা, ঊরু ও পায়ে গুলি করা হয়। লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করা হয়েছে। লাশটি ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হবে।
জানতে চাইলে রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, একটি বাসায় দুজন রাতের খাবার খাচ্ছিলেন, এ সময় গুলি করে মানিককে হত্যা করা হয়েছে। তবে তাঁর সঙ্গে থাকা অন্যজনের কোনো খোঁজ মেলেনি। সন্ত্রাসীরা তাঁকে অপহরণ করেছেন, নাকি তিনি পালিয়ে গেছেন, সে বিষয়ে খোঁজ নেওয়া হচ্ছে। ওসি আরও বলেন, মানিককে কিছু সন্ত্রাসী হত্যার পরিকল্পনা করছিলেন, এমন খবর তাঁরা আগে জেনেছেন। এ বিষয়ে তাঁকেও সতর্ক করা হয়েছিল। সন্ত্রাসীদের ধরতে অভিযান চলছে বলে জানান ওসি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম ন ক আবদ ল ল হ য বদলকর ম র সময়
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরিতে না ফেরালে রাজপথ ছাড়বেন না ইআরপিপি স্বাস্থ্যকর্মীরা
পাঁচ মাস ধরে বেতন নেই। পরিবার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন কেউ, কেউ আবার চাকরির বয়সসীমা পার করে এখন আর নতুন কোথাও আবেদন করার সুযোগ পাচ্ছেন না। এর মধ্যেই প্রকল্প শেষের অজুহাতে চাকরিচ্যুত হয়েছেন তারা—যারা ২০২০ সালের করোনা মহামারির সময় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে বাংলাদেশের ফ্রন্টলাইন স্বাস্থ্যসেবায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিলেন। এই অবস্থায় নিজেদের চাকরি স্থায়ীকরণ এবং অবিলম্বে বকেয়া বেতনের দাবিতে তৃতীয় দিনের মতো স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন করছেন কোভিড-১৯ ইমার্জেন্সি রেসপন্স অ্যান্ড প্যানডেমিক প্রিপেয়ারডনেস (ইআরপিপি) প্রকল্পের আউটসোর্সিং স্বাস্থ্যকর্মীরা।
আজ সোমবার বেলা ১১টা থেকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রধান ফটকে অবস্থান কর্মসূচি পালন শুরু করেন।
আন্দোলনকারীরা বলছেন, তাদের প্রধান দাবি হলো স্থায়ীকরণের মাধ্যমে চাকরি বহাল রাখতে হবে এবং রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্তির লিখিত নিশ্চয়তা দিতে হবে। সেইসঙ্গে গত চার মাসের বকেয়া ভাতা অবিলম্বে পরিশোধ করতে হবে। তা না হলে অবস্থান কর্মসূচি চলবে, প্রয়োজনে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবেন বলেও হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
বিক্ষোভরত কর্মীদের একজন বলেন, সরকারের ডাকেই তো আমরা এসেছিলাম। ভয়ঙ্কর সময় ছিল সেটা। তখন যদি পেছনে না ফিরে মানুষকে সেবা দিতে পারি, আজ যখন একটু স্থিতি এসেছে—তখন কেন আমরা উপেক্ষিত হবো? ৫ মাস ধরে একটা টাকাও পাইনি, পরিবার চালানো দুঃস্বপ্ন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
নিপসমে কর্মরত ইআরপিপির মেডিকেল টেকনোলজিস্ট আবু সুফিয়ান বলেন, প্রায় পাঁচ বছর এই প্রকল্পে কাজ করেছি। এখন বয়স ৩৫ ছাড়িয়েছে। সরকারি চাকরির আবেদনের শেষ সীমা পেরিয়ে গেছি। এখন আমাদের বাদ দিয়ে নতুন অদক্ষ জনবল নেয়ার চেষ্টা চলছে। এটা শুধু অবিচার না, আমাদের মর্যাদায় আঘাত।
ন্যাশনাল ল্যাবরেটরি সেন্টারের ডাটা অপারেটর আব্দুর রহমান বলেন, ঘরে ছোট বাচ্চা, স্কুলের বেতন দিতে পারিনি। স্ত্রী-সংসার নিয়ে অনিশ্চয়তায় পড়ে গেছি। করোনার সময় এই স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের ডাকেই আমি কাজে গিয়েছিলাম, এখন সেই অধিদপ্তরের সিঁড়িতেই বসে থাকতে হচ্ছে দাবি আদায়ের জন্য।
ইআরপিপি প্রকল্পের আওতায় কর্মরত এসব স্বাস্থ্যকর্মীদের অভিযোগ, করোনার সময় গড়ে তোলা আরটি-পিসিআর ল্যাব, ডেডিকেটেড আইসিইউ বা আইসোলেশন ইউনিটে তারাই প্রথম দিন থেকে দায়িত্ব পালন করেছেন। অথচ আজ তাদের বাদ দিয়ে সেই পদে নতুন লোক নিয়োগের পাঁয়তারা চলছে।
তারা বলছেন, আমরা চাকরি ভিক্ষা চাই না। আমরা যেটুকু প্রাপ্য, সেটুকু চাই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ২০২৫ সালের ৩০ জুন পর্যন্ত প্রকল্প চলবে, তবে আমাদের চাকরি কেড়ে নেয়া হলো কেন? আমাদের রাজস্ব খাতে অন্তর্ভুক্ত না করে অন্যদের সুযোগ দেওয়া মানে অবিচারকে পুরস্কৃত করা।