চট্টগ্রামে চলন্ত একটি সিএনজিচালিত অটোরিকশায় পেট্রলবোমা ছুড়েছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় দুই নারী দগ্ধ হয়েছেন। আজ রোববার ভোররাত সাড়ে চারটার দিকে নগরের মুরাদপুর-অক্সিজেন সড়কের আতুরার ডিপোর তিন রাস্তার মাথা এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।

দগ্ধ দুজন হলেন লায়লা বেগম (৫০) ও তাঁর পুত্রবধূ ঝর্ণা বেগম (৩০)। দুজনকেই প্রথমে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এর মধ্যে লায়লা বেগমকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পুলিশ ফাঁড়ির ইনচার্জ নুরুল আলম। দুজন পেট্রলবোমায় দগ্ধ হওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেন তিনি।

ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী ও দগ্ধ লায়লা বেগমের স্বামী মো.

আব্বাস প্রথম আলোকে বলেন, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া একটি মাজারে যাওয়ার জন্য গ্রামের বাড়ি রাউজান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় রওনা হয়েছিলেন তাঁরা। তাঁদের বহনকারী অটোরিকশাটি আতুরার ডিপো এলাকায় পৌঁছালে সড়কে আগুন দেখতে পান। চালক আগুন পাশ কাটিয়ে গাড়িটি নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন। এ সময় মুখোশ পরা তিন ব্যক্তি গাড়িতে পেট্রলবোমা ছুড়ে মারেন। এতে অটোরিকশার পেছনের সিটে বসা তাঁর স্ত্রী লায়লা ও পুত্রবধূ ঝর্ণা আহত হন।

মো. আব্বাস আরও বলেন, লায়লার শ্বাসনালি পুড়ে গেছে ও দুই আঙুল দগ্ধ হয়েছে। সাদিয়া নামে তাঁর আরেক পুত্রবধূ পেছনের আসনে থাকলেও আঘাত পাননি। অটোরিকশার সামনে তিনি, তাঁর এক ছেলে ও চালক বসা ছিলেন।

সিএনজিচালিত অটোরিকশাটির চালক মো. জামি প্রথম আলোকে বলেন, পেট্রলবোমা ছুড়ে মারার পর কিছু দূর গিয়ে গাড়ি থামান তিনি। এরপর আহত যাত্রীদের গায়ে পানি ঢালেন তাঁরা। ছুড়ে মারা পেট্রলবোমার কাচ গাড়িতে পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. এস খালেদ বলেন, লায়লার শ্বাসনালি পুড়ে গেছে। তাঁকে ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। অন্যজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: প ট রলব ম

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ