মাটি, পানি, খাবার থেকে দেহে ঢুকছে প্লাস্টিক
Published: 22nd, April 2025 GMT
বড় প্লাস্টিক চোখে দেখা যায়। এ কারণে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত বিপদ কেমন হতে পারে– সে ধারণা কম-বেশি সবারই জানা। তবে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণা প্রাণ-প্রকৃতিতে নীরবে বিষ ঢাললেও এর ভয়াবহতা থেকে যাচ্ছে আড়ালেই। বিভিন্ন গবেষণায় প্রমাণ মিলেছে– লবণ, আটা, চিনি, মাছ, মাটি, বাতাস, নদী, সমুদ্র এমনকি খাবার পানিতেও রয়েছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব।
গবেষকরা বলছেন, মাইক্রোপ্লাস্টিকের আকার ৫ মিলিমিটারের চেয়ে ছোট হয়। দিনের পর দিন শরীরে এই বিষ মিশতে থাকলে দেহে মরণব্যাধি বাসা বাঁধতে পারে। বিপজ্জনক মাইক্রোপ্লাস্টিক ঠেকানোর উদ্যোগ হিসেবে বিশ্বের প্রথম দেশ বাংলাদেশ ২০০২ সালে পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করেছিল। উপকূলীয় অঞ্চলে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিকেও লাগাম টানা হয়েছে। পলিথিন আর প্লাস্টিকের বিরুদ্ধে সাম্প্রতিক সময়ে দেশজুড়ে চলছে অভিযান। তবু থামছে না এর ব্যবহার। সরকার এ ব্যাপারে নানামুখী উদ্যোগ নিলেও মানুষকে এখনও সচেতন করা যায়নি।
ওয়ার্ল্ড ওয়াইল্ডলাইফ ফান্ডের তথ্য অনুসারে, প্লাস্টিক দূষণের কারণে প্রতিবছর ১ লাখ সামুদ্রিক প্রাণী মারা যাচ্ছে। ২০৫০ সালে সাগরে যত মাছ থাকবে, তার চেয়ে বেশি থাকবে প্লাস্টিক। প্রতিদিন প্রায় ৭৩ হাজার টন প্লাস্টিক বর্জ্য বাংলাদেশের ভেতর দিয়ে সমুদ্রে গিয়ে পড়ছে। পরিমাণের দিক থেকে এটি বিশ্বে পঞ্চম।
সরকার-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পলিথিন ও মাইক্রোপ্লাস্টিক যে কতটা ক্ষতিকর, তা জনগণকে অনুধাবন করতে হবে। পরিবর্তন আনতে হবে মানুষের মনোজগতে। সবাই মিলে কাজ করলে প্লাস্টিকের সমস্যা থেকে উত্তরণ সম্ভব।
এ পটভূমিতে আজ মঙ্গলবার বিশ্বজুড়ে পালিত হচ্ছে ধরিত্রী দিবস। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য– ‘আমাদের শক্তি, আমাদের পৃথিবী’। এ উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন পরিবেশবাদী সংগঠন নানা কর্মসূচি পালন করবে।
কোথায় নেই মাইক্রোপ্লাস্টিক
ময়মনসিংহের পুরোনো ব্রহ্মপুত্র নদের পানি, মাটি এবং মাছের পেটে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পেয়েছে আন্তঃরাষ্ট্রীয় এক গবেষক দল। গত ১৯ এপ্রিল প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়, ওই নদের প্রতি বর্গকিলোমিটার পানিতে ২৫ লক্ষাধিক ভাসমান কণা এবং তলদেশে প্রতি কেজি মাটিতে সাড়ে ৪০০ কণা মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব মিলেছে। মাছের পেটেও পাওয়া গেছে মাত্রাতিরিক্ত ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র প্লাস্টিক।
গত ২৫ মার্চ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের অর্থায়নে হবিগঞ্জ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় রিসার্চ সিস্টেম পরিচালিত গবেষণায় সেখানকার সুতাং নদের পানিতে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব খুঁজে পাওয়া গেছে। এমনকি হাওরের ধানেও মাইক্রোপ্লাস্টিক থাকার কথা বলছেন গবেষকরা।
গত বছরের এপ্রিলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের বিভাগীয় শহরে প্রতি গ্রাম ধুলায় ৫২টি, ঢাকায় প্রতি গ্রাম ধুলায় ১০৬টি মাইক্রোপ্লাস্টিক উড়ছে।
২০২৩ সালের আগস্টে নেদারল্যান্ডসের সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্ট সাময়িকীতে প্রকাশিত গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশ ও ভারতের গঙ্গা অববাহিকা অঞ্চলের পানি, পলি এবং বাতাসে মাইক্রোপ্লাস্টিকের আশঙ্কাজনক উপস্থিতি দেখা গেছে। গঙ্গা অববাহিকার নদীর প্রতি ২০ লিটার পানিতে অন্তত একটি মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা পাওয়া গেছে। প্রতি কিলোগ্রাম পলিতে মিলেছে ৫৭টি কণা। আর বাতাসে প্রতি বর্গমিটারে মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণার সংখ্যা ছিল ৪১। গবেষণায় অনুমান করা হয়েছে, গঙ্গা নদী এবং এর উপনদীগুলোর মাধ্যমে প্রতিদিন ১০০ থেকে ৩০০ কোটি মাইক্রোপ্লাস্টিকের কণা বঙ্গোপসাগরে যাচ্ছে। মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপাদানের মধ্যে সবচেয়ে বেশি পাওয়া গেছে রেয়ন।
২০২৩ সালের জুনে প্রকাশিত এক গবেষণায় দেখা গেছে, গত কয়েক বছরে দেশে উৎপাদিত সামুদ্রিক লবণে ক্ষতিকর মাইক্রোপ্লাস্টিকের পরিমাণ বেড়েছে। নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (নোবিপ্রবি) গবেষকরা কক্সবাজার ও চট্টগ্রামের ১২টি লবণ উৎপাদনকারী স্থান থেকে সংগ্রহ করা কাঁচা লবণের প্রতি কেজিতে ৫৬০ থেকে ১ হাজার ২৫৩টি প্লাস্টিক কণা শনাক্ত করেছেন।
লবণের ওপর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল পরিবেশ বিজ্ঞানী ২০২১ সালের সেপ্টেম্বর ও অক্টোবরে আরেকটি গবেষণা করেছেন। সেখানে বলা হয়, বাজারের সুপরিচিত ১০টি ব্র্যান্ড ও খোলাবাজার থেকে সংগৃহীত নমুনায় দেখা গেছে প্রতি কেজি লবণে রয়েছে আড়াই হাজারেরও বেশি প্লাস্টিকের কণা। এই হিসাবে দেশের একজন মানুষ প্রতি বছর গড়ে প্রায় ১৩ হাজার মাইক্রোপ্লাস্টিক খাচ্ছে।
শুধু লবণ নয়, চিনি এমনকি টি-ব্যাগেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব মিলেছে। ২০২২ সালের মে মাসে ‘ইজ দেয়ার টি কমপ্লিমেন্টেড উইথ দি অ্যাপেইলিং ফ্লেভার অব মাইক্রোপ্লাস্টিক? এ পায়োনিয়ারিং স্টাডি অন প্লাস্টিক পলিউশন ইন কমার্শিয়ালি এভেইলেবল টি-ব্যাগস ইন বাংলাদেশ’ শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘সায়েন্স অব দ্য টোটাল এনভায়রনমেন্টে’ প্রকাশিত হয়। চিনি ও টি-ব্যাগ নিয়ে দুটি গবেষণাতেই অংশ নেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের একদল শিক্ষক। রাজধানীর বিভিন্ন সুপারমার্কেট থেকে সংগ্রহ করা পাঁচটি ব্র্যান্ড ও দুটি নন ব্র্যান্ডের চিনির প্রতি কেজিতে গড়ে ৩৪৩.
২০২১ সালের সেপ্টেম্বরে প্রকাশিত এক গবেষণা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দেশের ৭৩ শতাংশ মাছে রয়েছে প্লাস্টিকের ক্ষুদ্র কণা। বাজারে পাওয়া যায় এমন দেশি মাছের ওপর গবেষণা করে জানা যায়, ১৫ প্রজাতির মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি রয়েছে।
সমুদ্রের গভীরতা থেকে আর্কটিক বরফ পর্যন্ত সর্বত্র প্লাস্টিকের ঝুঁকি রয়েছে। ফলে সুন্দরবন এর ব্যতিক্রম হবে– এমনটা আশা করা যায় না। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় এবং ব্রাজিলের তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় সুন্দরবনের মাছ নিয়ে যৌথভাবে গবেষণা করে। পশুর, রূপসা ও মোংলা নদী থেকে ২০ প্রজাতির ১৪১টি নমুনা সংগ্রহ করা হয়। ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত ওই গবেষণা প্রতিবদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম ম্যানগ্রোভ বনের তিনটি প্রধান নদী থেকে অন্তত ১৭ প্রজাতির মাছ ও ৩ প্রজাতির সেলফিশ মাইক্রোপ্লাস্টিকে সংক্রমিত।
ঢাকার ১৩টি এলাকা, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জের বাতাসে জরিপ করে অতি ক্ষুদ্র বিষাক্ত প্লাস্টিক কণা পাওয়ার তথ্য উঠে আসে ২০২৩ ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত এক গবেষণায়।
২০২৩ সালে ঢাকা শহরের তিনটি লেকের পানি, মাটি ও মাছের মধ্যে মাইক্রোপ্লাস্টিকের দূষণ নির্ণয়ের জন্য আরেকটি গবেষণা করা হয়। এসব লেকে দূষণের মাত্রা এতটাই বেশি যে মাইক্রোপ্লাস্টিক দূষণ লোড সূচক অনুযায়ী এগুলো ঝুঁকিপূর্ণ স্তরে রয়েছে।
২০২৩ সালের এক গবেষণায় বেঙ্গল ডেল্টার বিভিন্ন আবাসস্থল থেকে ৯টি প্রজাতির ২৭টি ব্যাঙ সংগ্রহ করে তাদের পাচনতন্ত্রে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয়। এতে দেখা গেছে, ব্যাংগুলোর ৯০ শতাংশের পাচনতন্ত্রে মাইক্রোপ্লাস্টিক রয়েছে। ২০২৪ সালের আরেকটি গবেষণায় ভূগর্ভস্থ পানিতেও ব্যাপকভাবে মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্ব শনাক্ত করা হয়, যা প্রতিনিয়ত সেসব এলাকার মানুষ পান করছে।
সাম্প্রতিক বিভিন্ন গবেষণায় পশুর ও বুড়িগঙ্গা নদীর পানি, মাটি ও মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি নিশ্চিত করা হয়েছে, যা জনস্বাস্থ্যের ওপর গুরুতর হুমকির ইঙ্গিত দেয়। এ ছাড়া এ বছর গবেষকরা বাণিজ্যিক খাদ্য আটার মধ্যেও মাইক্রোপ্লাস্টিকের অস্তিত্বের প্রমাণ পান, যা মানুষের খাদ্যচক্রে এ ক্ষতিকর উপাদান প্রবেশের একটি উদাহরণ।
এ ছাড়া কর্ণফুলী নদীর পানি, মাটি ও মাছে মাইক্রোপ্লাস্টিকের উপস্থিতি পাওয়া গেছে। এতে বলা হয়, একজন ব্যক্তি প্রতিবছর এ নদীর মাছ থেকে প্রায় ৪ হাজার থেকে ৭ হাজার ৬৬০টি মাইক্রোপ্লাস্টিক কণা গ্রহণ করতে পারে, যা জনস্বাস্থ্যের জন্য অত্যন্ত বিপজ্জনক।
কারা কী বলছেন
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞান অনুষদের ডিন ও পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. আহমদ কামরুজ্জামান মজুমদার বলেন, আমরা দৈনন্দিন যে প্লাস্টিক ব্যবহার করি, তা ব্যবস্থাপনার আওতায় নেই। ব্যবহার্য প্লাস্টিক ফেলে দেওয়ার পর কোনো না কোনো উপায়ে শেষ পর্যন্ত নদীতে গিয়ে পড়ে। একজন মা যখন সন্তানকে বুকের দুধ পান করান, নদীর মাছ খাওয়ান, তখন এসবের সঙ্গে মাইক্রোপ্লাস্টিকও খাওয়াচ্ছেন। প্লাস্টিক দূষণ রোধে কোম্পানিগুলোরও প্লাস্টিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ নিতে হবে। তাদের শুধু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার দায়িত্বই নয়, তা যেন একটা মূল্যবোধের মাধ্যমে পরিচালিত হয়, সেটাও খেয়াল রাখতে হবে।
এদিকে, পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘ডিম্বাণু-শুক্রাণুতেও মাইক্রোপ্লাস্টিক পাওয়া যাচ্ছে। আপাতদৃষ্টিতে প্লাস্টিক কম দামি মনে হলেও পরিবেশ আর স্বাস্থ্যগত দিক বিবেচনায় মোটেও সাশ্রয়ী নয়। সরকার চেষ্টা করছে, একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিকের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার থেকে মানুষকে সরিয়ে আনতে। পলিথিন শপিং ব্যাগ বন্ধে কাজ করছি। এখন পর্যন্ত সুপারশপে সফল হলেও অন্য জায়গায় আরও কাজ করতে হবে। কারণ পলিথিনের নেতিবাচক দিকগুলো মানুষ জানে না। সেক্ষেত্রে সচেতনতা সৃষ্টি এবং আইন প্রয়োগের মাধ্যমে পলিথিন ব্যাগসহ একবার ব্যবহার্য প্লাস্টিক বন্ধ করার চেষ্টা করব।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ২০২৩ স ল র র ব যবহ র নদ র প ন পর ব শ পল থ ন বলছ ন
এছাড়াও পড়ুন:
আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন হলে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় একসঙ্গে দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ গতকাল শুক্রবার তার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের এ তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের এ বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে হতে পারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আর পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। গত বছরও তাই হয়েছে। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। মার্কিন প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।
পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে শর্ত পরিপালন নিয়ে দর–কষাকষিতে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল মূলত মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চাইলেও করতে চাইছিল না সরকার।
সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।