‘চেন্নাই এক্সপ্রেস’ সিনেমা বিশাল সাফল্যের পর ‘দিলওয়ালে’ সিনেমায় একসঙ্গে কাজ করেছিলেন শাহরুখ খান ও নির্মাতা রোহিত শেঠি। তবে দ্বিতীয় ছবিটি বক্স অফিসে তেমন সফল না হওয়ায় তাঁদের মধ্যে দূরত্ব তৈরি হয়েছে-এমন গুঞ্জন বহুদিন ধরেই বলিউডে ঘুরছে। অবশেষে রোহিত শেঠি নিজেই সে গুঞ্জনের জবাব দিলেন।

‘গেম চেঞ্জার্স’ পডকাস্টে কোমল নাহতার সঙ্গে আলাপচারিতায় রোহিত স্পষ্টভাবে বলেন, ‘না, শাহরুখের সঙ্গে এমন কিছুই হয়নি।’ 

শাহরুখ খানের সঙ্গে তাঁর ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব নেই ব্যাখ্যা করে রোহিত বলেন, “আমাদের মধ্যে পারস্পরিক সম্মান আগেও ছিল সেটা এখনও বজায় রয়েছে। ‘দিলওয়ালে’ সিনেমার পর আমরা ঠিক করি নিজেদের প্রোডাকশন হাউজ খুলব এবং নিজেরাই সিনেমা তৈরি করব। যদি ক্ষতি হয়, সেটাও আমাদেরই হোক। যদিও ‘দিলওয়ালে’ তেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়নি।”

রোহিত জানান, ‘দিলওয়ালে’ হয়তো ভারতের বাজারে প্রত্যাশা অনুযায়ী চলেনি, কিন্তু আন্তর্জাতিকভাবে এটি ছিল একটি বড় সফলতা। ছবিটি শাহরুখ ও গৌরী খানের প্রযোজনা সংস্থা রেড চিলিজ এন্টারটেইনমেন্ট এর ব্যানারে নির্মিত হয়েছিল।

রোহিত শেঠি আরও জানান, চলচ্চিত্র দুনিয়ায় গড়ে ওঠা সম্পর্কগুলো তাঁর কাছে খুব গুরুত্বপূর্ণ। অজয় দেবগনের সঙ্গে তাঁর ভাইয়ের মতো সম্পর্ক, যেখানে অজয়কে তিনি বড় ভাই হিসেবেই দেখেন। পাশাপাশি রণবীর সিং ও দীপিকা পাডুকোনের সঙ্গেও তাঁর গভীর বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে।

দীপিকার পেশাদারিত্বের প্রশংসা করে রোহিত বলেন, “সে ‘সিংগাম এগেইন’ এর শেষ শিডিউলের শুটিং শেষ করেছে যখন সে চার মাসের গর্ভবতী। এমন সম্পর্ক সত্যিই খুব বিরল।”

বর্তমানে শাহরুখ খান তাঁর নতুন ছবি ‘কিং’ সিনেমা নিয়ে ব্যস্ত, যেখানে প্রথমবার তিনি মেয়ে সুহানা খানের সঙ্গে পর্দা ভাগ করতে যাচ্ছেন। সিদ্ধার্থ আনন্দ পরিচালিত এই ছবিতে আরও থাকছেন অভিষেক বচ্চন ও অভয় বার্মা।

অন্যদিকে রোহিত শেঠি ব্যস্ত রয়েছেন ‘সিংহাম এগেইন’ নিয়ে-তাঁর জনপ্রিয় ‘কপ ইউনিভার্স’-এর নতুন কিস্তি, যেখানে দেখা যাবে একঝাঁক তারকাকে।

এই খোলামেলা বক্তব্যের পর রোহিত ও শাহরুখের সম্পর্কে ভাঙনের গুজব কার্যত বন্ধ হয়ে গেল বলেই মনে করছেন বলিউডের অনেকে। সূত্র: বলিউড হাঙ্গামা। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ লওয় ল

এছাড়াও পড়ুন:

বড় বন্দরে ভারী কাজ করেও চলে না সংসার 

দেশের সিংহভাগ আমদানি-রপ্তানি হয় চট্টগ্রামে দেশের প্রধান সমুদ্রবন্দর দিয়ে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে পণ্য আমদানি হওয়ার পর সেগুলো বিভিন্ন লাইটার জাহাজের মাধ্যমে চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন ঘাট হয়ে গুদামজাত হয়। এরপর সেখান থেকে যায় বিভিন্ন বাজারে। লাইটার জাহাজ থেকে পণ্য খালাসের সঙ্গে জড়িত শত শত শ্রমিক দিন রাত পরিশ্রম করেন। তারপরও কষ্টে চলে তাদের সংসার।

চট্টগ্রাম মহানগরীর মাঝিরঘাট এলাকায় ১৭টি ঘাটে আমদানি পণ্য খালাস হয়। আর এসব খালাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত প্রায় ৪ হাজার ঘাট শ্রমিক। এই শ্রমিকরা পালাক্রমে কাজ করেন ঘাটে। দিন-রাত হাড় ভাঙা খাটুনির পরও দিন যায় কষ্টে। সময়ের সঙ্গে তাদের শ্রমের মূল্য বাড়লেও তা বর্তমান বাজার পরিস্থিতির সঙ্গে সামঞ্জস্য নয়।

চট্টগ্রাম গুদাম ও ঘাট শ্রমিক ইউনিয়নের নেতা আবদুল খালেক রাইজিংবিডিকে বলেন, “প্রতি বছর মে দিবসে অনেকেই আমাদের স্মরণ করেন। কিন্তু বছর জুড়ে আমাদের অবহেলা আর বঞ্ছনার জীবন। সারা দিন কাজ করে ঘাট শ্রমিকরা ৭০০ থেকে সর্বোচ্চ ৯০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি পেয়ে থাকে। কিন্তু এর বিনিময়ে ৮ থেকে ১০ ঘণ্টা ভারী বস্তা বহন করে শ্রম দিতে হয়। কখনো কখনো এই পারিশ্রমিকও জোটে না। আবার সব শ্রমিকের প্রতিদিন কাজও জোটে না।” 

ঘাট শ্রমিক আবদুল মতিন জানান, বিভিন্ন দেশ থেকে চট্টগ্রামের বিভিন্ন ঘাটে আমদানি পণ্যের মধ্যে রয়েছে চাল, ডাল, গম, সার, চিনি, সাদা মটর, পাথর, কয়লা, ফ্লাইঅ্যাশ, বল ক্লে, লাইম স্টোন, জিপসাম, সিমেন্ট ক্লিংকারসহ বিভিন্ন ধরনের ভারী পণ্য। এসব পণ্য মাদার ভেসের থেকে লাইটার জাহাজে খালাসের পর মাঝিরঘাটের বিভিন্ন গুদামে আনা হয়। সেখান থেকে শ্রমিকরা খালাস করে বিভিন্ন ট্রাকে লোড করেন, আবার ট্রাক থেকে বিভিন্ন গুদামে মজুদের জন্য আনলোড করেন। প্রতিদিন একজন শ্রমিক একশ’ দেড়শো বস্তা পর্যন্ত পণ্য বহন করেন। ভোর ৬টা থেকে গভীর রাত পর্যন্ত শ্রমিকরা ভারী পণ্য বহনের এসব কাজ করেন। এতে তাদের দৈনিক মজুরি মিলে ৭০০ থেকে ৯০০ টাকা।

মনিরুল মোল্লা নামে আরেক শ্রমিক রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমরা দিনে হাজার টাকা পর্যন্ত মজুরি পেলেও সংসার চালাতে কষ্ট হয়। বস্তা বহন অতি পরিশ্রমের কাজ। এ জন্য আমাদের অনেক খাওয়া-দাওয়া করতে হয়। প্রতিদিন একজন শ্রমিকের ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা খরচ করতে হয় খাওয়ার পেছনে। এতে দিনের আয়ের অর্ধেক চলে যায়। বাকি অর্ধেক টাকা দিয়ে ৫-৬ জন সদস্যের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়। পরিবার সন্তানদের জন্য মাসে এক দুই বার মাছ মাংস খাওয়া সম্ভব হয় না।”

আবদুল সবুর নামের অপর একজন ঘাট শ্রমিক রাইজিংবিডিকে বলেন, “আমাদের শ্রমে-ঘামে দেশের আমদানি রপ্তানি বড় কার্যক্রম চলে চট্টগ্রামে। কিন্তু আমাদের জীবন চলে অনেক কষ্টে। অসুস্থ হলে কাজ জোটে না, খাবার জোটে না। এভাবেই চলছে আমাদের জীবন।”

ঘাট শ্রমিক ফরিদুল মোস্তফা বলেন, “৪ সন্তান ও স্ত্রী নিয়ে ৬ সদস্যের পরিবার। প্রতিদিন যা আয় করি তার অর্ধেক চলে যায় ব্যক্তিগত খরচে। বাকি অর্ধেক দিয়ে পুরো সংসার চালাতে হয়। জিনিসপত্রের যা দাম অর্ধেক আয় দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে তিন বেলা খাওয়াও কষ্ট।”

সফি মোল্লা নামের অপর এক শ্রমিক বলেন, “ভারী কাজ প্রতিদিন করা সম্ভব হয় না। সুরক্ষা সামগ্রী ছাড়া কাজ করতে গিয়ে অনেক শ্রমিক আহত হন। অনেকেই কর্মক্ষমতা হারায়। কিন্তু আমাদের দেখার কেউ নাই। এছাড়া, প্রাকৃতিক দুর্যোগসহ নানা কারণে অনেক সময় ঘাট বন্ধ থাকে। তখন কাজ থাকে না। এতে আমাদের অভাবের শেষ থাকে না।” 

ঢাকা/ইভা 

সম্পর্কিত নিবন্ধ