Samakal:
2025-06-16@05:35:02 GMT

নিছক বায়বীয় নহে

Published: 24th, April 2025 GMT

নিছক বায়বীয় নহে

রাজধানী ঢাকা যথা বিশ্বের শহরগুলির তালিকায় প্রায়শ বায়ুদূষণের শীর্ষ পর্যায়ে অবস্থান করিয়া থাকে, তথায় নির্মল বায়ুপ্রাপ্তি সহজলভ্য নহে। ঢাকাবাসীর জন্য এই নির্মল বায়ু কতটা বিরল, সাম্প্রতিক পরিসংখ্যানই উহার প্রমাণ। ঢাকায় গত ৯ বৎসরে মানুষ মাত্র ৩১ দিবস নির্মল বায়ুতে নিঃশ্বাস গ্রহণ করিয়াছে।

বায়ুর এহেন অস্বাস্থ্যকর পরিস্থিতিতে নগরবাসীর জীবনযাপন কতটা নাজুক, বলিবার অপেক্ষা রাখে না। বস্তুত ঢাকার বায়ুদূষণ এমন ‘অস্বাস্থ্যকর’ পর্যায়ে উপনীত, উহা প্রায় প্রতিদিন সংবাদমাধ্যমের ‘খবর’রূপে উপস্থাপিত হয়। বিশ্বের অপরাপর শহরের তুলনায় বায়ুদূষণ অধিক হইবার কারণে সুইজারল্যান্ডভিত্তিক বায়ুমান পর্যবেক্ষণকারী প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান আইকিউএয়ারের সূচকে কদাচ সর্বাপেক্ষা দূষিত নগরীর মধ্যে শীর্ষস্থানও দখল করিয়া থাকে ঢাকা। কলকারখানার ধোঁয়া, মেয়াদোত্তীর্ণ গাড়ি, নির্মাণকার্য, সড়ক খনন, বর্জ্য দহন ইত্যাদি কারণে বায়ু দূষিত হয়। এতদ্ব্যতীত মানবসৃষ্ট বিবিধ কারণও স্পষ্ট। এমনকি খ্রিষ্টীয় নববর্ষ উদযাপনে যে ব্যাপকভাবে বায়ু দূষিত হইয়া থাকে, উক্ত চিত্রও আমরা প্রত্যক্ষ করি নিয়মিত।

৯ বৎসরের তথ্য বিশ্লেষণ করিয়াছে বায়ুমণ্ডলীয় দূষণ অধ্যয়ন কেন্দ্র-ক্যাপস। সংস্থাটি ঢাকার মার্কিন দূতাবাস হইতে প্রাপ্ত ২০১৬ হইতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ঢাকার বায়ুমানের সূচক তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করিয়া জানাইয়াছে, দেশে প্রতি বৎসর বায়ুদূষণ পূর্বাপেক্ষা বৃদ্ধি পাইয়াছে। ৩ সহস্র ১১৪ দিবসের মধ্যে মাত্র ৩১ দিবস তথা মাত্র ১ শতাংশ দিবসে নির্মল বায়ু নগরবাসী সেবন করিয়াছে। দূষিত বায়ুর সহিত রাজধানীবাসীর বসবাসের কারণে উহা নীরব ঘাতকরূপে অবতীর্ণ হইয়াছে। কিন্তু হতাশাজনক হইলেও সত্য, দূষণ রোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণে কর্তৃপক্ষের তৎপরতা দৃশ্যমান নহে।

ঢাকার বিষাক্ত বায়ুর প্রভাবে অকালমৃত্যু ও মানুষের রোগব্যাধি বিষয়ে বিশেষজ্ঞগণ বিবিধ সতর্কবার্তা প্রকাশ করিয়া আসিতেছেন। বায়দূষণের কারণে স্ট্রোকের ঝুঁকি, হৃদরোগ, ফুসফুসের ক্যান্সার, হাঁপানির ন্যায় তীব্র শ্বাসকষ্টের রোগীদের অধিক সংখ্যায় হাসপাতালে উপস্থিতি আমরা প্রত্যক্ষ করিতেছি। দীর্ঘ মেয়াদে দেশের ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উপর বায়ুদূষণের প্রভাব ভয়ংকররূপে প্রতিভাত। 

বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে মেয়াদোত্তীর্ণ ও অনুপযুক্ত যানবাহন চলাচল বন্ধ করিয়া বৈদ্যুতিক ও সংকরায়িত যানবাহনের ব্যবহার বৃদ্ধি, তৎসহিত ইষ্টক দগ্ধীকরণের পরিবর্তে পরিবেশসম্মত ইষ্টক উৎপাদন ও ব্যবহার বৃদ্ধিতে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ জরুরি। বর্জ্য দহনের ফলে সৃষ্ট বায়ুদূষণ বন্ধে বর্জ্য হইতে বিদ্যুৎ উৎপাদনের ব্যবস্থা করা যাইতে পারে। বিদ্যুৎ উৎপাদন ও শিল্পকারখানায় বিশ্বমানের সহিত সামঞ্জস্যপূর্ণ নিঃসরণ মান নির্ধারণ এবং উহার কঠোর প্রয়োগ নিশ্চিতকরণ অতীব গুরুত্বপূর্ণ। সর্বোপরি নির্মল বায়ু আইন প্রণয়ন জরুরি। 

বলিবার অপেক্ষা রাখে না, বায়ুদূষণ নিছক বায়বীয় নহে; উহা মোকাবিলায় দূষণের সকল উৎসে দৃষ্টিপাত করিতে হইবে। শহরের বিভিন্ন স্থানে সবুজ বেষ্টনী গঠন এবং জলাশয় বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করিতে হইবে। রাজধানীর খালগুলি যেমন অবৈধ দখলে জীর্ণ, উহার সহিত নদীগুলিও দখল-দূষণে শীর্ণ। স্বস্তির বিষয়, ঢাকার দুইটি সিটি করপোরেশন রাজধানীর খালসমূহ সংস্কারে কর্মসূচি গ্রহণ করিয়াছে। উক্ত কর্মসূচি বাস্তবায়িত হইলে উহা বায়ুমান উন্নয়নে ভূমিকা রাখিবে বলিয়া আমাদের বিশ্বাস।

ঢাকা এমনিতেই নানামুখী সমস্যায় জর্জরিত। বায়ু, পানি, শব্দ– সকল দিক হইতে পরিবেশদূষণের আয়োজন হেথায় বিদ্যমান। মানবস্বাস্থ্যের ঝুঁকি বিবেচনায় এই সকল দূষণ প্রতিরোধে প্রশাসনকে পরিকল্পিত পদক্ষেপ লইতেই হবে।

ঢাকার উপর চাপ হ্রাসকল্পে ঢাকামুখী জনস্রোত যদ্রূপ বন্ধ করিতে হইবে, তদ্রূপ দীর্ঘ মেয়াদে রাজধানীর বিকেন্দ্রীকরণেরও বিকল্প নাই। আমরা চাহি, বায়ুদূষণরোধে সংশ্লিষ্ট সকল কর্তৃপক্ষ সমন্বিত পদক্ষেপ গ্রহণ করুক, যাহা আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করিতে অতীব জরুরি। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পদক ষ প কর য় ছ

এছাড়াও পড়ুন:

জীবনের অপচয় রোধ জরুরি

দেশে পানিতে ডুবিয়া শিশুর প্রাণহানির যেই চিত্র শনিবার সমকালের এক প্রতিবেদনে উঠিয়া আসিয়াছে, উহা যথেষ্ট উদ্বেগজনক। ঈদুল আজহার ছুটি আরম্ভ হইবার পূর্বের ১০ দিবসেই বিভিন্ন স্থানে ১৫ জন পানিতে ডুবিয়া প্রাণ হারাইয়াছে, যাহাদের মধ্যে ১৩ জন ছিল শিশু। উপরন্তু, ঈদুল ফিতরের পূর্বাপর ১২ ছুটিতে মোট ৪৯ জন অনুরূপভাবে প্রাণ হারাইয়াছে, যথায় শিশুর সংখ্যা ৪৭। এদিকে ফাউন্ডেশন ফর ডিজাস্টার ফোরামের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ঈদুল ফিতরে ৫৮ জন ও ঈদুল আজহায় ৬৫ শিশু পানিতে ডুবিয়া প্রাণ হারাইয়াছিল। এই ধারণা অমূলক নহে যে ঈদের ছুটিতে শহরবাসী অনেকে ছুটিয়া যায় গ্রামাঞ্চলে, যেইখানকার প্রাকৃতিক পরিবেশ শিশুদের আকৃষ্ট করিয়া থাকে। তাহারা পানির আশপাশে খেলার বিপদ সম্পর্কে সচেতন থাকে না, জানে না খাল-বিল, ডোবা-পুকুর কতটা বিপজ্জনক পরিণতি ডাকিয়া আনিতে পারে। গ্রামের বিস্তৃত ও অপেক্ষাকৃত নির্জন পরিবেশে শিশুদের তদারকির অভাবও প্রকট। অভিভাবকগণ সাধারণত গৃহকর্মে ব্যস্ত থাকেন, তেমন নজর থাকে না শিশুর গতিবিধির উপর। এই সকল কিছু মিলাইয়া সংশ্লিষ্ট শিশুর জন্য সৃষ্টি হয় মৃত্যুফাঁদ। দুর্ভাগ্যজনক হইল, এই সকল বিয়োগান্তক ঘটনার কারণে গ্রামের মুক্ত পরিবেশে অনেক পরিবারে ছুটির উচ্ছ্বাস নিমেষে মাটি হইয়া যাইবার পরও জনচেতনতা পরিলক্ষিত হইতেছে না। ফলস্বরূপ, এহেন হৃদয়বিদারক ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটিয়াই চলিয়াছে।

প্রতিটি শিশুর প্রাণই মূল্যবান। একটি জীবন অকালে ঝরিয়া যাইবার অর্থ একটি সম্ভাবনার অপমৃত্যু, একটি ভবিষ্যতের হারাইয়া যাওয়া। এই ক্ষতি শুধু সংশ্লিষ্ট পরিবারের নহে, সম্পূর্ণ সমাজের এবং রাষ্ট্রের। অথচ এহেন মৃত্যু রোধে রাষ্ট্রীয়ভাবেও কোনো কার্যকর উদ্যোগ দৃশ্যমান নহে। প্রতিবেদনমতে, ২০১১ সালের জাতীয় স্বাস্থ্যনীতিতে পানিতে ডুবিয়া শিশুমৃত্যুর ঘটনাকে জনস্বাস্থ্য সমস্যারূপে চিহ্নিত করিবার পর ২০২২ সালে মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৮ সহস্র কমিউনিটিবেজড চাইল্ড কেয়ার সেন্টার স্থাপনের ঘোষণা দেয়। উদ্দেশ্য ছিল এক হইতে পাঁচ বৎসর বয়সী শিশুর জন্য নিরাপদ পরিবেশ ও সাঁতার শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি। বাস্তবে কয়েকটি প্রশিক্ষণ ব্যতীত কিছুই হয় নাই। ২০১৫ সালে স্কুল-কলেজে সাঁতার শিখাইবার নির্দেশনা প্রদান করা হইলেও তাহা এখনও উপেক্ষিত। জেলা প্রশাসকদের ভূমিকা নির্ধারিত থাকিলেও বাস্তবায়নের চিত্র প্রায় শূন্য। এই অবস্থায় দ্য সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বাংলাদেশ (সিআইপিআরবি) এবং আইসিডিডিআর,বির গবেষণায় ধরা পড়িয়াছে, দেশে প্রতিবৎসর প্রায় ১৪ সহস্র শিশু পানিতে ডুবিয়া মারা যায়। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে ৪০টি শিশু প্রাণ হারায়। তাদের ৭৫ শতাংশের বয়স পাঁচ বৎসরের নিচে। বিশ্বস্বাস্থ্য সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে পানিতে ডুবিয়া প্রতিবৎসর আহত হয় অন্তত এক লক্ষ শিশু। ইহাদের মধ্যে প্রায় ১৩ সহস্র পঙ্গু হইয়া যায়। পরিণামে ঐ শিশুরা পরিবারের পাশাপাশি রাষ্ট্র ও সমাজের বোঝা হইয়া দাঁড়ায়।

বিশেষজ্ঞগণ বলিয়াছেন, দেশে অপঘাতজনিত শিশুমৃত্যুর দ্বিতীয় প্রধান কারণ পানিতে ডুবিয়া যাওয়া। এমনকি নিউমোনিয়া, ডায়রিয়ায় যত শিশু মৃত্যুবরণ করে, ততোধিক শিশু মারা যায় পানিতে ডুবিয়া। এতদসত্ত্বেও এই প্রাণহানি লইয়া কোনো তথ্যপ্রবাহ ব্যবস্থা নাই, অতএব সরকারি কোনো তথ্যভান্ডারও গড়িয়া উঠে নাই। অথচ ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তথ্যাদি নথিভুক্তি শুরু হইলে বৎসরান্তে ইহার অন্তত হিসাব মিলিত। বিলম্বে হইলেও সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের বোধোদয় ঘটুক, ইহাই আমাদের প্রত্যাশা। এই বিষয়ে প্রয়োজনে ইউনিসেফের ন্যায় সংস্থাসমূহকেও কাজে লাগানো যায় বলিয়া আমরা মনে করি।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জীবনের অপচয় রোধ জরুরি