ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে গত মঙ্গলবার যে প্রাণঘাতী সন্ত্রাসী হামলা সংঘটিত হয়েছে তার দায় স্বীকার করে আলোচনায় এসেছে দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)।

এই হামলায় কমপক্ষে ২৬ পর্যটক নিহত হন এবং আরও একাধিক ব্যক্তি আহত হন। হামলার খবর যখন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও টেলিভিশনের পর্দায় ছড়িয়ে পড়েছে, তখন টেলিগ্রাম বার্তায় হামলার দায় স্বীকার করেছে সশস্ত্রগোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ)। সুত্র: আল-জাজিরা।

২০১৯ সালে কাশ্মীর অঞ্চলে স্বল্প-পরিচিতি সশস্ত্র গোষ্ঠী দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট (টিআরএফ) নামের একটি সংগঠন আত্মপ্রকাশ করে। ভারত থেকে কাশ্মীরকে আলাদা করতে লড়াই করা সশস্ত্র বিদ্রোহীরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে পর্যটকদের ওপর তেমন কোনো হামলা চালায়নি। 

হামলার প্রেক্ষাপট

মঙ্গলবার বিকেলে পেহেলগামের বৈসরণে ঘুরতে আসা পর্যটকদের ওপর অতর্কিত হামলা চালানো হয়। প্রত্যক্ষদর্শীদের মতে, বন্দুকধারীরা পার্শ্ববর্তী জঙ্গল থেকে বেরিয়ে এসে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে পর্যটকদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। নিহতদের সকলেই পুরুষ এবং বহিরাগত পর্যটক ছিলেন বলে নিশ্চিত করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ ওই দিনই শ্রীনগরে পৌঁছান এবং গোটা অঞ্চলে নিরাপত্তা জোরদার করার নির্দেশ দেন। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনসহ বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীরা শোকবার্তা জানান এবং এই হামলার তীব্র নিন্দা জানান।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে লেখেন, এই জঘন্য হামলার পেছনে যারা আছে, তাদের কাউকেই ছেড়ে দেওয়া হবে না, তাদের বিচারের আওতায় আনা হবে।

তবে দায় স্বীকার করা সশস্ত্র গোষ্ঠী টিআরএফ এর হামলাকারীরা পলাতক রয়েছে।

টিআরএফ: একটি উত্থানশীল সশস্ত্র সংগঠন

‘দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট’ (টিআরএফ) মূলত নতুন প্রজন্মের একটি বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গি সংগঠন। ২০১৯ সালে কাশ্মীরের স্বায়ত্তশাসন বা ৩৭০ ধারা বিলুপ্তির পর এই জঙ্গি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ ঘটে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সক্রিয় থেকে গোষ্ঠীটি নিজেদের পরিচিতি গড়ে তোলে। 

ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মতে, টিআরএফ আসলে পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী যা পাকিস্তান ভিত্তিক লস্কর-ই-তইবা ও হিজবুল মুজাহিদিনের পৃষ্ঠপোষকতায় গড়ে উঠেছে। টিআরএফ তাদেরই ছদ্মবেশী রূপ, যা কাশ্মীরি জাতীয়তাবাদের নামে ভারতে সহিংসতা চালিয়ে যাচ্ছে।

টিআরএফের মূল দাবি

এদের মূল দাবি, কাশ্মীরকে ভারতের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন করা। ভারতীয় নিরাপত্তা বাহিনী ও প্রশাসনিক কাঠামোকে দুর্বল করতে তৎপর এই গোষ্ঠী। টিআরএফ এক বার্তায় জানিয়েছে, তারা বহিরাগতদের কাশ্মীরে স্থায়ী আবাসন অনুমোদনের বিরোধিতা করে। 

যদিও মঙ্গলবারের নিহতরা কেউ কাশ্মীরের স্থায়ী বাসিন্দা ছিলেন না।

পূর্ববর্তী কার্যক্রম ও নিরাপত্তা হুমকি

২০২০ সাল থেকে টিআরএফ নিয়মিতভাবে টার্গেট কিলিং এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তিকে হত্যার মতো হামলার দায় স্বীকার করে আসছে। এদের লক্ষ্যবস্তু হিসেবে রাজনৈতিক কর্মী, অবসরপ্রাপ্ত নিরাপত্তা সদস্য এবং ভারত সরকারের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা ব্যক্তিরাই নিহত হয়েছে। 

২০২৩ সালের জানুয়ারিতে ভারত সরকার আনুষ্ঠানিকভাবে টিআরএফকে ‘সন্ত্রাসী সংগঠন’ হিসেবে ঘোষণা করে।

২০২৪ সালের জুনে টিআরএফ জম্মুর রেয়াসি এলাকায় হিন্দু তীর্থযাত্রী বহনকারী একটি বাসে হামলার দায় স্বীকার করে। সেই হামলায় অন্তত ৯ জন নিহত এবং ৩৩ জন আহত হন। হামলার পর বাসটি খাদে পড়ে যায়।

গোয়েন্দা তথ্য অনুযায়ী, সংগঠনটি বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলগুলোতে গোপন আস্তানায় অবস্থান করছে এবং ছোট অস্ত্র ব্যবহার করে আশেপাশের এলাকায় হামলা চালানোর চেষ্টা চালাচ্ছে।

পেহেলগামের এই হামলা প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির নেতৃত্বাধীন সরকারের কাশ্মীর নীতির ওপর নতুন করে প্রশ্ন তুলেছে। ২০১৯ সালের পর থেকে সরকার বারবার কাশ্মীরে ‘স্বাভাবিক পরিস্থিতি’ ফিরে আসার দাবি করে আসছিল, যার অংশ হিসেবে পর্যটন উৎসাহিত করার নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। হামলার পরদিন থেকেই পর্যটনখাতে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। বিপুল সংখ্যক পর্যটক তাদের বুকিং বাতিল করেন এবং এলাকাছাড়া করার জন্য ভিড় করেন। শ্রীনগর বিমানবন্দরের পথে যানজট সৃষ্টি হয় এবং বিমানের ভাড়া তিনগুণেরও বেশি বেড়ে যায়। 
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: দ য র জ স ট য ন স ফ রন ট স ব ক র কর সশস ত র ট আরএফ সরক র স গঠন

এছাড়াও পড়ুন:

সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’

পূর্ব সুন্দরবনের নিসর্গঘেরা অভয়ারণ্যে গড়ে তোলা হয়েছে নতুন পর্যটন কেন্দ্র ‘আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার’। সবুজ ম্যানগ্রোভ বনের বুক চিরে, নদীর নোনাজলে ভেসে, প্রকৃতির নীরব সৌন্দর্যে ঘেরা এই কেন্দ্রটি চলতি নভেম্বর মাস থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে ভ্রমণ করতে পারবেন পর্যটকরা।

পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের আওতাধীন আলী বান্দা এরইমধ্যে ভ্রমণপিপাসুদের দৃষ্টি কেড়েছে। শরণখোলা রেঞ্জ অফিস থেকে ট্রলারযোগে মাত্র ৪০ মিনিটের নৌপথ পেরিয়ে পৌঁছানো যায় সেখানে। 

যাত্রাপথে চোখে পড়ে বনের গভীর সবুজ গাছগাছালি, ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে যাওয়া পাখি, কচুরিপানায় ঢাকা জলাশয় এবং সুন্দরী-গেওয়া গাছের সারি যা পর্যটকদের মোহিত করে।

বন বিভাগ জানিয়েছে, ২০২২-২৩ অর্থবছরে আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টারের অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হয়। এখানে তৈরি হয়েছে ছয়তলা ভবনের সমান উচ্চতার একটি ওয়াচ টাওয়ার, যেখান থেকে সুন্দরবনের বিস্তৃত সবুজাভ দৃশ্য চোখে ধরা পড়ে। 

রয়েছে দেড় কিলোমিটার দীর্ঘ ফুট ট্রেইল (ওয়াকওয়ে)। পথের দুই পাশে ঘন বনের মাঝে হাঁটলে দেখা যায় প্রকৃতির আসল রূপ। এছাড়া রয়েছে মিষ্টি পানির পুকুর, হরিণ রাখার সেড, জেটি, বিশ্রামাগার, সুভেনিয়ার শপ এবং পর্যটকদের নিরাপত্তায় বনরক্ষী ও স্থানীয় গাইডের সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধান।

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে আলীবান্দা বরিশাল বিভাগের জেলাগুলোর মানুষের জন্য সবচেয়ে সহজগম্য স্পট হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। কম সময় ও কম ঝুঁকিতে সুন্দরবনের সৌন্দর্য উপভোগ করা যাবে এখানে। স্থানীয় পর্যটকরা এরইমধ্যে আগ্রহ দেখাতে শুরু করেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা শাহিন বলেন, “আলীবান্দা ইকো-ট্যুরিজম সেন্টার চালু হলে স্থানীয় অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে। এতে স্থানীয় গাইড, নৌযানচালক, হোটেল ব্যবসায়ী ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের কর্মসংস্থান বাড়বে। পাশাপাশি পরিবেশবান্ধব পর্যটনের মাধ্যমে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় সচেতনতা বাড়বে।”

তবে পর্যটনকেন্দ্রে প্রবেশ ফি নিয়ে অসন্তোষ রয়েছে। আলীবান্দায় প্রবেশের ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩৪৫ টাকা।

শরণখোলা ট্যুরিজম অ্যাসোসিয়েশনের সাংগঠনিক সম্পাদক রাসেল বয়াতী বলেন, ‘‘আলীবান্দায় প্রবেশ ফি ৩৪৫ টাকা, অথচ একই বনের করমজল পর্যটন পয়েন্টে ফি মাত্র ৪৬ টাকা। অনেকেই আলীবান্দায় যেতে আগ্রহী, কিন্তু ফি বেশি হওয়ায় নিরুৎসাহিত হচ্ছেন।’’

পূর্ব সুন্দরবন বিভাগের বিভাগীয় বন কর্মকর্তা (ডিএফও) রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, “আলীবান্দা এখন প্রায় প্রস্তুত। চলতি মাসেই এখানে হরিণ আনা হবে। বর্তমানে পর্যটকদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে স্পটটি। যেহেতু এটি ২০১৭ সালে ঘোষণা করা অভয়ারণ্য এলাকার অন্তর্ভুক্ত, তাই সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় কিছু বিধিনিষেধ ও প্রবেশ ফি বেশি রাখা হয়েছে। তবে পর্যটকদের দাবির বিষয়টি আমরা সরকারের কাছে জানাব।’’

ঢাকা/শহিদুল/এস

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • জবি শিবিরের মেধাবীদের তালিকায় নেই ৩ বিভাগের শিক্ষার্থী
  • দুই দিনে যেতে পারেননি কোনো পর্যটক, কক্সবাজার-সেন্ট মার্টিন জাহাজ চলাচল অনিশ্চিত
  • অনুমোদনের প্রথম দিন সেন্ট মার্টিন যায়নি কোনো পর্যটকবাহী জাহাজ
  • সেন্টমার্টিনের দ্বার খোলা, ছাড়েনি জাহাজ
  • পর্যটন শিল্প বিকাশে আইকন গ্লোবাল ট্যুর অপারেটর আল মামুন
  • সুন্দরবনের নতুন পর্যটন স্পট ‘আলী বান্দা’
  • কক্সবাজার সৈকতে ঘোড়া, কুকুর ও গরু, স্বাস্থ্যঝুঁকি কতটুকু