রাজশাহীর রাস্তায় নারীদের উদ্দেশ্য করে চার তরুণের অশ্লীল অঙ্গভঙ্গির একটি ভিডিও ছড়ানোর পর জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে অভিযানে নেমেছে পুলিশ। তবে এ ঘটনায় আজ বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত কাউকে গ্রেপ্তার বা আটক করা যায়নি।

এর আগে গতকাল বুধবার বিকেল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ওই ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে।

২২ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, নগরের সিঅ্যান্ডবি মোড় থেকে পদ্মা নদী ধারে যাওয়ার রাস্তার পাশে চার তরুণ বসে আছেন। তাঁদের সামনে দিয়ে নারী শিক্ষার্থীসহ কয়েকজন হেঁটে যাচ্ছিলেন। এ সময় তাঁদের উদ্দেশ্য করে হাতের ইশারায় এক তরুণ অশ্লীল অঙ্গভঙ্গি করেন। আর বাকি তরুণেরা তখন মুখ দিয়ে নানা আওয়াজ করছিলেন।

কবে ওই ভিডিও করা হয়েছে, এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে এটি শেয়ার করে শিবলী নোমানী ইসলাম নামের একজন ফেসবুকে লিখেছেন, ‘যতটুকু খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি, ঘটনাটি ২১ এপ্রিল দুপুরে সিঅ্যান্ডবি মোড় এলাকায় ঘটেছে।’

ভিডিওটি রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের (আরএমপি) নজরে আসার পর ওই চার তরুণের ছবিসহ তাঁদের পরিচয় শনাক্তে সহযোগিতা চাওয়া হয়েছে। রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের ফেসবুক পেজে দেওয়া একটি পোস্টে বলা হয়েছে, ‘ছবিতে দেখা কয়েকজন যুবক রাজশাহী মহানগরীর সিঅ্যান্ডবির মোড় এলাকায় পথচারী নারীদের উত্ত্যক্ত ও হেনস্তা করার পাশাপাশি ভিডিও ধারণ করছেন—এমন কিছু চিত্র ও তথ্য রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের দৃষ্টিগোচর হয়েছে। আরএমপি ইতিমধ্যেই এ ঘটনায় সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের পরিচয় শনাক্তের কাজ শুরু করেছে। এই যুবকদের ছবি দেখে যদি কেউ তাঁদের নাম, ঠিকানা বা অন্য কোনো তথ্য জানেন, তাহলে আরএমপির তথ্য ও সেবাকেন্দ্রের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করার জন্য বিশেষভাবে অনুরোধ করা হলো।’

রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশের মুখপাত্র ও অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার (মিডিয়া) সাবিনা ইয়াসমিন জানান, ওই চারজনকে গ্রেপ্তারে ইতিমধ্যেই অভিযান শুরু করেছে পুলিশ।

.

উৎস: Prothomalo

এছাড়াও পড়ুন:

রাজশাহীতে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমল ৭৫ পয়সা

রাজশাহীতে হিমাগারে আলু সংরক্ষণে নতুন ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে। আজ সোমবার আলুচাষি, ব্যবসায়ী ও হিমাগারমালিকদের উপস্থিতিতে এ সিদ্ধান্ত হয়। নতুন সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, হিমাগারে প্রতি কেজি আলু রাখার জন্য ভাড়া দিতে হবে ৫ টাকা ৫০ পয়সা। এর সঙ্গে যুক্ত হবে শ্রমিকের খরচ ৫০ পয়সা। সেই হিসাবে প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া কমেছে ৭৫ পয়সা।

এর আগে গত মার্চে সরকার প্রতি কেজি আলু রাখার ভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সা নির্ধারণ করে প্রজ্ঞাপন জারি করে। এর পর থেকে এ নিয়ে রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা বাড়তি ভাড়ায় আপত্তি জানিয়ে আসছিলেন। এ নিয়ে কয়েক দফা তাঁরা রাজপথে আন্দোলনও করেছেন। অন্যদিকে হিমাগারমালিকদের দাবি ছিল, প্রতি কেজি আলুর ভাড়া ৮ টাকা করা হোক।

রাজশাহী কোল্ড স্টোরেজ অ্যাসোসিয়েশন এবং রাজশাহী জেলা আলুচাষি ও আলু ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রাজশাহীতে হিমাগার থেকে বাড়তি ভাড়া না দিলে আলু ছাড়া হবে না। এর প্রতিবাদে ঈদের পর নতুন করে আলুচাষি ও ব্যবসায়ীরা আন্দোলন করে আসছেন। তাঁদের দাবি, আলু রাখার খরচ আগের বছরের মতো চার টাকা করতে হবে। এ নিয়ে সড়ক অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তাঁরা। হিমাগার মালিকপক্ষ এ নিয়ে আলোচনায় বসার তাগিদ দিয়ে আসছিল।

এরই মধ্যে আলুচাষিনেতারা ১৪ জুন সেনাবাহিনীর কাছে এ নিয়ে একটি অভিযোগ দেন। পরে বিষয়টি আমলে নিয়ে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে আজ দুপুরে সভা ডাকা হয়। সভায় সব পক্ষের সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয় যে এ বছর সরকার নির্ধারিত প্রতি কেজি আলুর হিমাগারভাড়া ৬ টাকা ৭৫ পয়সার বদলে ৫ টাকা ৫০ পয়সা ও শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা রাখা হবে। আর পেইড বুকিংয়ের ক্ষেত্রে শুধু শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে আলু রাখা চাষি ও ব্যবসায়ীদের। পরে বিকেলে ক্যান্টনমেন্টে হওয়া এই সিদ্ধান্ত প্রশাসনিকভাবে পাস করার জন্য রাজশাহী জেলা প্রশাসকের দপ্তরে সভা হয়।

সভায় আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতি, হিমাগার মালিক সমিতি, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, কৃষি বিপণন অধিদপ্তরের কর্মকর্তা, রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি, পবা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, আগামীকাল মঙ্গলবার রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির পক্ষ থেকে নতুন ভাড়ার বিজ্ঞপ্তি সব হিমাগারে প্রচার করা হবে।

এ ব্যাপারে সেনাবাহিনীর এক কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, এবার আলুর দাম কম। আবার এ নিয়ে দুই পক্ষের সংঘাতের আশঙ্কা ছিল। এ নিয়ে একটি অভিযোগ পান তাঁরা। পরে দুই পক্ষকে নিয়ে সভা হয়। সভায় সবার সম্মতিতে সিদ্ধান্ত হয়। সেই সিদ্ধান্ত বিকেলে জেলা প্রশাসকের দপ্তরে আরেকটি সভার মাধ্যমে পাস হয়েছে।

রাজশাহীর আলুচাষি ও ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মিঠু আহমেদ বলেন, শুরু থেকেই তাঁরা বাড়তি ভাড়ার প্রতিবাদ জানিয়ে আসছিলেন। কয়েক দিন ধরে তাঁরা হিমাগার থেকে আলু নিতে পারছিলেন না। হিমাগারগুলোয় বাড়তি ভাড়া দিতে হচ্ছিল। এ নিয়ে আন্দোলনের পাশাপাশি সেনাবাহিনীকেও অবহিত করেন তাঁরা। শেষ পর্যন্ত একটি ভালো সিদ্ধান্ত হয়েছে।

রহমান সিডস স্টোরেজের ব্যবস্থাপক আবদুল হালিম বলেন, সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, প্রতি কেজি আলু রাখতে খরচ পড়বে ৫ টাকা ৫০ পয়সা আর শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা। এ ছাড়া যাঁরা আগে থেকেই টাকা দিয়ে অগ্রিম বুকিং দিয়েছেন, তাঁদের ক্ষেত্রে আলুর কেজিপ্রতি শ্রমিক খরচ ৫০ পয়সা দিতে হবে।

রাজশাহী চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি মাসুদুর রহমান বলেন, নতুন সিদ্ধান্ত সব হিমাগারমালিকসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের জানানো হবে।

আরও পড়ুনরাজশাহীতে হিমাগারে ভাড়া বাড়ানোর প্রতিবাদে বিক্ষোভ-সমাবেশ১৫ জুন ২০২৫

সম্পর্কিত নিবন্ধ