ঢাকা, দিল্লি ও ইসলামবাদের সংবাদমাধ্যমগুলো যদিও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সিন্ধু চুক্তি ‘স্থগিত’ বা ‘সাসপেন্ড’ হওয়ার কথা বলেছে, বাস্তবে ঠিক সেটি ঘটেনি। কারণ, ১২ দফার এই বিস্তৃত চুক্তির কোথাও কোনো পক্ষের বেরিয়ে আসার বা একপাক্ষিকভাবে স্থগিত করার সুযোগই নেই। যে কারণে ভারতীয় পক্ষ এ ব্যাপারে পাকিস্তানকে যে আনুষ্ঠানিক পত্র দিয়েছে, সেখানে লিখেছে– ‘দ্য গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া হেয়ারবাই ডিসাইডেড দ্যাট দ্য ইন্ডাস ওয়াটার ট্রিটি ১৯৬০ উইল বি হেল্ড ইন অ্যাবিয়েন্স উইথ ইমিডিয়েট এফেক্ট’। লক্ষণীয়- ‘সাসপেন্সন’ নয়, বরং ‘ইন অ্যাবিয়েন্স’। এর অর্থ সাময়িক অকার্যকারিতা, স্থগিত নয়। যেহেতু সিন্ধু চুক্তির আওতায় স্থগিত করার সুযোগ নেই, সেহেতু ভারত কৌশলী উপায়ে ‘ভিয়েনা কনভেনশন অন দ্য ল অব ট্রিটিজ’ থেকে শব্দটি নিয়েছে। যেহেতু দুই দেশই ভিয়েনা কনভেনশনটি স্বাক্ষর করেছে, সেটির আওতায় পেহেলগাম পরিস্থিতিতে অন্য চুক্তি থেকে কোনো এক পক্ষ বেরিয়ে আসতে পারে।    

বস্তুত কাশ্মীরের পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেসব ‘ব্যবস্থা’ নিয়েছিল, সে তালিকায় সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত ছিল সিন্ধুর পানিবণ্টন চুক্তি। পরস্পরের নাগরিকদের দেশত্যাগের নির্দেশ, ভিসা বন্ধ, কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করা প্রভৃতি ব্যবস্থা উভয় দেশই অতীতে অনেকবার নিয়েছে; কিন্তু চুক্তিটির কার্যকারিতা অব্যাহত থেকেছে। এমনকি ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ভারত-পাকিস্তান পশ্চিম সীমান্তের যুদ্ধ, আশির দশকের শিয়াচেন যুদ্ধ এবং ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধেও চুক্তিটি অক্ষত ছিল।
যদিও ২০১৬ সালের উরি হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সিন্ধু চুক্তি বাতিল করার হুমকি দিয়ে বলেছিলেন ‘পানি ও রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না’। সবকিছু সত্ত্বেও চুক্তিটি যে শেষ পর্যন্ত স্থগিত হতে পারে, ২৩ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত কেউ ধারণা করতে পারেনি।

এর একটি কারণ, ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধুর পানিবণ্টন চুক্তিকে আন্তঃসীমান্ত নদী নিয়ে এশিয়ার সেরা দুই চুক্তির অন্যতম বিবেচনা করা হয়। অপর সেরা চুক্তিটি হচ্ছে ১৯৯৫ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চার দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত মেকং চুক্তি। ঢাকায় কিংবা কাঠমান্ডুতে বসেও আমরা যখন বাংলাদেশ-ভারত বা ভারত-নেপালে মধ্যে স্বাক্ষরিত বা স্বাক্ষরযোগ্য চুক্তিগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করি, তখন ঘুরেফিরে সিন্ধু ও মেকং চুক্তির কথা আসে। 

ভারত ও পাকিস্তানের মতো দুই ‘জন্মশত্রু’ রাষ্ট্রের মধ্যে সিন্ধু চুক্তি যে এত বছর টিকে থেকেছে, এর কারণ কিছু অদ্বিতীয় ও অন্তর্গত শক্তিশালী দিক। যেমন, এর নাম ‘সিন্ধু চুক্তি’ হলেও বাস্তবে আরও পাঁচটি উপনদীসহ মোট ছয়টি নদী এর আওতাভুক্ত। এর মধ্যে তিন ‘পশ্চিমা নদী’ সিন্ধু, বিতস্তা ও চন্দ্রভাগা নদীর সম্পূর্ণ অধিকার পাকিস্তানের এবং তিন ‘পূবালী নদী’ শতদ্রু, বিপাশা ও ইরাবতী নদীর সম্পূর্ণ অধিকার ভারতের। দুই দেশ তাদের ভাগের নদী নিজেদের মতো ব্যবহার করবে, কোনো পানি ভাগাভাগি, মাপামাপির ব্যাপার নেই। 
দ্বিতীয়ত, সিন্ধু চুক্তিতে কোনো মেয়াদ নেই। যেমন বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির মেয়াদ ৩০ বছর। যেমন, তিস্তা নিয়ে ২০১১ সালে স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত অন্তর্বর্তী চুক্তিটির মেয়াদ ছিল ১৫ বছর। সিন্ধুর পানিবণ্টন চুক্তি ছিল স্থায়ী।

আবার, দুই পক্ষের মতবিরোধ হলে সিন্ধু চুক্তিতে সালিশির ব্যবস্থা রয়েছে; যেটি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ বা নেপালের চুক্তিগুলোতে নেই। এগুলোতে বলা হয়েছে, মতবিরোধ দেখা দিলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করা হবে। সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী মতবিরোধ দেখা দিলে বিশ্বব্যাংকে মধ্যস্থতা ও সালিশ করবে।

যে কারণে, আমরা বিভিন্ন সময়ে বলে এসেছি, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আসলে তিনটি চুক্তি হওয়া উচিত– গঙ্গা অববাহিকা চুক্তি, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা চুক্তি, মেঘনা অববাহিকা চুক্তি। তাহলে এগুলোর শতাধিক উপনদীও স্বয়ংক্রিয়ভাবে চুক্তির আওতায় আসবে। এছাড়া নদীবিষয়ক চুক্তি হতে হবে স্থায়ী, মেয়াদি নয়। দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলোর ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের সালিশি ব্যবস্থাও থাকতে হবে। বলা বাহুল্য, আমাদের এসব প্রত্যাশার অনুপ্রেরণা আসলে সিন্ধু চুক্তি। এখন খোদ সিন্ধু চুক্তির যখন এমন পরিণতি, তখন আমরা কী করব?


সিন্ধু চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পাকিস্তানের ভাগের তিনটি নদীর–সিন্ধু, বিতস্তা ও চন্দ্রভাগা–উজানে ভারত কোনো স্থাপনা নির্মাণ বা পানি আটকাতে পারবে না। ভারত বলছে, এখন তারা এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করে পানি আটকাবে। আর ছয়টি নদীর বন্যা ও বৃষ্টিপাতসংক্রান্ত যেসব তথ্য পাকিস্তানকে দেওয়ার কথা, সেটিও দেবে না। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, ভারতের ভাগের তিনটি নদীর–শতদ্রু, বিপাশা ও ইরাবতী–ড্যামগুলো বরং আকস্মিকভাবে ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তানে ‘বন্যা অস্ত্র’ ছুড়ে দিতে পারে।

প্রশ্ন হচ্ছে, সিন্ধু চুক্তির এই পরিণতি থেকে বাংলাদেশ কী কী সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেবে? ভারত ও পাকিস্তানের মতো মাত্র ৬টি নয়; রিভারাইন পিপলের গবেষণায় আমরা দেখেছি, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অন্তত ১২৩টি আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র তিনটি নিয়ে চুক্তি ও সমঝোতা রয়েছে: গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি এবং ফেনী ও কুশিয়ারা নিয়ে সমঝোতা। এছাড়া, ১৯৭২ সালের সমঝোতা ও পরবর্তী সংশোধন অনুযায়ী এখন আমরা ছয়টি বন্যাপ্রবণ নদীর–ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা, তিস্তা, মেঘনা, ধরলা, দুধকুমার–১৪টি পয়েন্ট থেকে বন্যার আগাম তথ্য পেয়ে থাকি।
খোদা না খাস্তা, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক যে তলানিতে পৌঁছেছে, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে ভারত যদি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন না করে বা ঝুলিয়ে দেয়? যদি বন্যার আগাম তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকে? সময় থাকতে প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ ভেবে রাখা দরকার। 

প্রথমত, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে, যাতে করে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন এবং তিস্তাসহ ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা এবং মেঘনা অববাহিকাভিত্তিক চুক্তি করা যায়। দ্বিতীয়ত, ভারতের বন্যা পূর্বাভাসের ওপর ভরসা না করে স্যাটেলাইটসহ অন্যান্য প্রযুক্তির সহায়তায় নিজস্ব পূর্বাভাস ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তৃতীয়ত, নদীবিষয়ক আন্তর্জাতিক রক্ষাকবচগুলো যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর সম্পন্ন করতে হবে। 
আমরা নিশ্চয় প্রত্যাশা করি না যে, ভারত-পাকিস্তানের মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশ-ভারতেও দেখা দেবে। সময় থাকতে সাবধান হতে দোষ কী?

শেখ রোকন: লেখক ও নদী গবেষক
skrokon@gmail.

com
 

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব যবস থ অবব হ ক র আওত

এছাড়াও পড়ুন:

ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে

দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী,  অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।

বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে। 

দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’ 

কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি। 

এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’। 

বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে। 

দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা 

আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়। 

মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন। 

বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।

শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের 

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন। 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ 

রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে। 

প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই 

অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি। 

শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড। 

টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে। 

সম্পর্কিত নিবন্ধ