সিন্ধু চুক্তির পরিণতি থেকে গঙ্গাপাড়ের জন্য সতর্কতা
Published: 26th, April 2025 GMT
ঢাকা, দিল্লি ও ইসলামবাদের সংবাদমাধ্যমগুলো যদিও ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার সিন্ধু চুক্তি ‘স্থগিত’ বা ‘সাসপেন্ড’ হওয়ার কথা বলেছে, বাস্তবে ঠিক সেটি ঘটেনি। কারণ, ১২ দফার এই বিস্তৃত চুক্তির কোথাও কোনো পক্ষের বেরিয়ে আসার বা একপাক্ষিকভাবে স্থগিত করার সুযোগই নেই। যে কারণে ভারতীয় পক্ষ এ ব্যাপারে পাকিস্তানকে যে আনুষ্ঠানিক পত্র দিয়েছে, সেখানে লিখেছে– ‘দ্য গভর্নমেন্ট অব ইন্ডিয়া হেয়ারবাই ডিসাইডেড দ্যাট দ্য ইন্ডাস ওয়াটার ট্রিটি ১৯৬০ উইল বি হেল্ড ইন অ্যাবিয়েন্স উইথ ইমিডিয়েট এফেক্ট’। লক্ষণীয়- ‘সাসপেন্সন’ নয়, বরং ‘ইন অ্যাবিয়েন্স’। এর অর্থ সাময়িক অকার্যকারিতা, স্থগিত নয়। যেহেতু সিন্ধু চুক্তির আওতায় স্থগিত করার সুযোগ নেই, সেহেতু ভারত কৌশলী উপায়ে ‘ভিয়েনা কনভেনশন অন দ্য ল অব ট্রিটিজ’ থেকে শব্দটি নিয়েছে। যেহেতু দুই দেশই ভিয়েনা কনভেনশনটি স্বাক্ষর করেছে, সেটির আওতায় পেহেলগাম পরিস্থিতিতে অন্য চুক্তি থেকে কোনো এক পক্ষ বেরিয়ে আসতে পারে।
বস্তুত কাশ্মীরের পেহেলগাম হত্যাকাণ্ডের ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ভারত সরকার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে যেসব ‘ব্যবস্থা’ নিয়েছিল, সে তালিকায় সবচেয়ে অপ্রত্যাশিত ছিল সিন্ধুর পানিবণ্টন চুক্তি। পরস্পরের নাগরিকদের দেশত্যাগের নির্দেশ, ভিসা বন্ধ, কূটনৈতিক সম্পর্ক সীমিত করা প্রভৃতি ব্যবস্থা উভয় দেশই অতীতে অনেকবার নিয়েছে; কিন্তু চুক্তিটির কার্যকারিতা অব্যাহত থেকেছে। এমনকি ১৯৬৫ সালের পাক-ভারত যুদ্ধ, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের শেষদিকে ভারত-পাকিস্তান পশ্চিম সীমান্তের যুদ্ধ, আশির দশকের শিয়াচেন যুদ্ধ এবং ১৯৯৯ সালের কার্গিল যুদ্ধেও চুক্তিটি অক্ষত ছিল।
যদিও ২০১৬ সালের উরি হামলার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সিন্ধু চুক্তি বাতিল করার হুমকি দিয়ে বলেছিলেন ‘পানি ও রক্ত একসঙ্গে বইতে পারে না’। সবকিছু সত্ত্বেও চুক্তিটি যে শেষ পর্যন্ত স্থগিত হতে পারে, ২৩ এপ্রিলের আগ পর্যন্ত কেউ ধারণা করতে পারেনি।
এর একটি কারণ, ১৯৬০ সালে স্বাক্ষরিত সিন্ধুর পানিবণ্টন চুক্তিকে আন্তঃসীমান্ত নদী নিয়ে এশিয়ার সেরা দুই চুক্তির অন্যতম বিবেচনা করা হয়। অপর সেরা চুক্তিটি হচ্ছে ১৯৯৫ সালে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার চার দেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত মেকং চুক্তি। ঢাকায় কিংবা কাঠমান্ডুতে বসেও আমরা যখন বাংলাদেশ-ভারত বা ভারত-নেপালে মধ্যে স্বাক্ষরিত বা স্বাক্ষরযোগ্য চুক্তিগুলো নিয়ে আলাপ-আলোচনা করি, তখন ঘুরেফিরে সিন্ধু ও মেকং চুক্তির কথা আসে।
ভারত ও পাকিস্তানের মতো দুই ‘জন্মশত্রু’ রাষ্ট্রের মধ্যে সিন্ধু চুক্তি যে এত বছর টিকে থেকেছে, এর কারণ কিছু অদ্বিতীয় ও অন্তর্গত শক্তিশালী দিক। যেমন, এর নাম ‘সিন্ধু চুক্তি’ হলেও বাস্তবে আরও পাঁচটি উপনদীসহ মোট ছয়টি নদী এর আওতাভুক্ত। এর মধ্যে তিন ‘পশ্চিমা নদী’ সিন্ধু, বিতস্তা ও চন্দ্রভাগা নদীর সম্পূর্ণ অধিকার পাকিস্তানের এবং তিন ‘পূবালী নদী’ শতদ্রু, বিপাশা ও ইরাবতী নদীর সম্পূর্ণ অধিকার ভারতের। দুই দেশ তাদের ভাগের নদী নিজেদের মতো ব্যবহার করবে, কোনো পানি ভাগাভাগি, মাপামাপির ব্যাপার নেই।
দ্বিতীয়ত, সিন্ধু চুক্তিতে কোনো মেয়াদ নেই। যেমন বাংলাদেশ-ভারতের মধ্যে ১৯৯৬ সালে স্বাক্ষরিত গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তির মেয়াদ ৩০ বছর। যেমন, তিস্তা নিয়ে ২০১১ সালে স্বাক্ষরের জন্য প্রস্তুত অন্তর্বর্তী চুক্তিটির মেয়াদ ছিল ১৫ বছর। সিন্ধুর পানিবণ্টন চুক্তি ছিল স্থায়ী।
আবার, দুই পক্ষের মতবিরোধ হলে সিন্ধু চুক্তিতে সালিশির ব্যবস্থা রয়েছে; যেটি ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশ বা নেপালের চুক্তিগুলোতে নেই। এগুলোতে বলা হয়েছে, মতবিরোধ দেখা দিলে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সুরাহা করা হবে। সিন্ধু চুক্তি অনুযায়ী মতবিরোধ দেখা দিলে বিশ্বব্যাংকে মধ্যস্থতা ও সালিশ করবে।
যে কারণে, আমরা বিভিন্ন সময়ে বলে এসেছি, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে আসলে তিনটি চুক্তি হওয়া উচিত– গঙ্গা অববাহিকা চুক্তি, ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা চুক্তি, মেঘনা অববাহিকা চুক্তি। তাহলে এগুলোর শতাধিক উপনদীও স্বয়ংক্রিয়ভাবে চুক্তির আওতায় আসবে। এছাড়া নদীবিষয়ক চুক্তি হতে হবে স্থায়ী, মেয়াদি নয়। দ্বিপক্ষীয় চুক্তিগুলোর ক্ষেত্রে তৃতীয় পক্ষের সালিশি ব্যবস্থাও থাকতে হবে। বলা বাহুল্য, আমাদের এসব প্রত্যাশার অনুপ্রেরণা আসলে সিন্ধু চুক্তি। এখন খোদ সিন্ধু চুক্তির যখন এমন পরিণতি, তখন আমরা কী করব?
সিন্ধু চুক্তির শর্ত অনুযায়ী পাকিস্তানের ভাগের তিনটি নদীর–সিন্ধু, বিতস্তা ও চন্দ্রভাগা–উজানে ভারত কোনো স্থাপনা নির্মাণ বা পানি আটকাতে পারবে না। ভারত বলছে, এখন তারা এ ধরনের স্থাপনা নির্মাণ করে পানি আটকাবে। আর ছয়টি নদীর বন্যা ও বৃষ্টিপাতসংক্রান্ত যেসব তথ্য পাকিস্তানকে দেওয়ার কথা, সেটিও দেবে না। কেউ কেউ আশঙ্কা করছেন, ভারতের ভাগের তিনটি নদীর–শতদ্রু, বিপাশা ও ইরাবতী–ড্যামগুলো বরং আকস্মিকভাবে ছেড়ে দিয়ে পাকিস্তানে ‘বন্যা অস্ত্র’ ছুড়ে দিতে পারে।
প্রশ্ন হচ্ছে, সিন্ধু চুক্তির এই পরিণতি থেকে বাংলাদেশ কী কী সতর্কতামূলক পদক্ষেপ নেবে? ভারত ও পাকিস্তানের মতো মাত্র ৬টি নয়; রিভারাইন পিপলের গবেষণায় আমরা দেখেছি, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে অন্তত ১২৩টি আন্তঃসীমান্ত নদী রয়েছে। এর মধ্যে মাত্র তিনটি নিয়ে চুক্তি ও সমঝোতা রয়েছে: গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি এবং ফেনী ও কুশিয়ারা নিয়ে সমঝোতা। এছাড়া, ১৯৭২ সালের সমঝোতা ও পরবর্তী সংশোধন অনুযায়ী এখন আমরা ছয়টি বন্যাপ্রবণ নদীর–ব্রহ্মপুত্র, গঙ্গা, তিস্তা, মেঘনা, ধরলা, দুধকুমার–১৪টি পয়েন্ট থেকে বন্যার আগাম তথ্য পেয়ে থাকি।
খোদা না খাস্তা, দুই দেশের কূটনৈতিক সম্পর্ক যে তলানিতে পৌঁছেছে, ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে ভারত যদি গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন না করে বা ঝুলিয়ে দেয়? যদি বন্যার আগাম তথ্য দেওয়া থেকে বিরত থাকে? সময় থাকতে প্রতিকারমূলক পদক্ষেপ ভেবে রাখা দরকার।
প্রথমত, কূটনৈতিক প্রচেষ্টা চালাতে হবে, যাতে করে গঙ্গার পানিবণ্টন চুক্তি নবায়ন এবং তিস্তাসহ ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা এবং মেঘনা অববাহিকাভিত্তিক চুক্তি করা যায়। দ্বিতীয়ত, ভারতের বন্যা পূর্বাভাসের ওপর ভরসা না করে স্যাটেলাইটসহ অন্যান্য প্রযুক্তির সহায়তায় নিজস্ব পূর্বাভাস ব্যবস্থা জোরদার করতে হবে। তৃতীয়ত, নদীবিষয়ক আন্তর্জাতিক রক্ষাকবচগুলো যথাসম্ভব দ্রুততার সঙ্গে স্বাক্ষর ও অনুস্বাক্ষর সম্পন্ন করতে হবে।
আমরা নিশ্চয় প্রত্যাশা করি না যে, ভারত-পাকিস্তানের মতো পরিস্থিতি বাংলাদেশ-ভারতেও দেখা দেবে। সময় থাকতে সাবধান হতে দোষ কী?
শেখ রোকন: লেখক ও নদী গবেষক
skrokon@gmail.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব যবস থ অবব হ ক র আওত
এছাড়াও পড়ুন:
খালেদা জিয়াকে নিয়ে বিএনপির নির্বাচনী যাত্রা শুরু
সব জল্পনার অবসান হলো—বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া নির্বাচন করছেন। তিনি ফেনী-১, বগুড়া-৭ ও দিনাজপুর-৩ আসনে প্রার্থী হবেন। দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানও বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন।
ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের জন্য সোমবার বিএনপি ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীর নাম ঘোষণা করেছে। তাতে দলের দুই শীর্ষ নেতার নির্বাচন করা এবং তাঁদের নির্বাচনী আসনগুলো নিশ্চিত করা হয়। এ ছাড়া দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ঠাকুরগাঁও-১ আসনে নির্বাচন করবেন।
তারেক রহমান বগুড়া-৬ আসন থেকে নির্বাচন করবেন, অনেক আগে থেকেই এমন আলোচনা আছে। তবে অসুস্থতার কারণে এবার খালেদা জিয়ার নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া নিয়ে নেতা-কর্মীদের মধ্যে সংশয় ছিল। আবার তাঁর নিজেরও নির্বাচন করার ব্যাপারে খুব একটা আগ্রহ ছিল না।
দলীয় সূত্র বলছে, নির্বাচন ঘিরে নানামুখী শঙ্কা, বিশেষ করে ৫ আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর পরিবর্তিত রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে নির্বাচনে নেতৃত্ব দিতে রাজি করানো হয়। শেষ পর্যন্ত তাঁর প্রার্থী হওয়ার ঘোষণায় নেতা-কর্মীরা আনন্দিত।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।বিএনপির নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতারা মনে করছেন, নানা কারণে আসন্ন নির্বাচন বিএনপির জন্য খুব স্বস্তিদায়ক না-ও হতে পারে। খালেদা জিয়াকে নির্বাচন করতে রাজি করানোর মধ্য দিয়ে সার্বিকভাবে নির্বাচনের গুরুত্বটা আরও বৃদ্ধি পাবে। পাশাপাশি নির্বাচন নিয়ে নতুন কোনো জটিলতার উদ্ভব হলে, সেটা মোকাবিলায়ও তাঁর ভোটে অংশগ্রহণ পরিস্থিতির ওপর একটা প্রভাব ফেলবে।
জাতীয় সংসদের ৩০০ আসনের মধ্যে সোমবার ২৩৭ আসনে মনোনীত প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করা হয়। বাকি ৬৩টি আসনে প্রার্থিতা পরে ঘোষণা করা হবে।
বিএনপির দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, স্থগিত রাখা কিছু আসনে প্রার্থিতা নিয়ে অভ্যন্তরীণ সমস্যা আছে। আর কিছু আসন জোট ও সমমনা দলগুলোর প্রার্থীদের জন্য রাখা হয়েছে, যাদের সঙ্গে নির্বাচনী সমঝোতা হতে পারে।
ঘোষিত তালিকা অনুযায়ী, বিএনপির চেয়ারপারসন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান, মহাসচিবসহ স্থায়ী কমিটির ১২ জন সদস্য নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছেন। অন্যরা হলেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন (কুমিল্লা-১), মির্জা আব্বাস উদ্দিন আহমেদ (ঢাকা-৮), গয়েশ্বর চন্দ্র রায় (ঢাকা-৩), আবদুল মঈন খান (নরসিংদী-২), আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী (চট্টগ্রাম-১০), ইকবাল হাসান মাহমুদ (সিরাজগঞ্জ-২), সালাহউদ্দিন আহমদ (কক্সবাজার-১), হাফিজ উদ্দিন আহমদ (ভোলা-৩) এবং এ জেড এম জাহিদ হোসেন (দিনাজপুর-১)।
স্থায়ী কমিটির জ্যেষ্ঠ সদস্য জমির উদ্দিন সরকার, সেলিমা রহমান ও নজরুল ইসলাম খান এবার নির্বাচন করছেন না। তবে বয়োজ্যেষ্ঠ নেতা জমির উদ্দিন সরকারের পঞ্চগড়-১ আসনে তাঁর ছেলে মোহাম্মদ নওশাদ জমিরকে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ২৩৭ আসনে প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। তবে তিনি বলেছেন, এটি প্রাথমিক তালিকা। প্রয়োজন বোধ করলে স্থায়ী কমিটি প্রার্থিতা পরিবর্তন করতে পারবে।
সোমবার বিকেল পাঁচটার দিকে প্রার্থী ঘোষণার আগে দলীয় প্রার্থী চূড়ান্ত করতে তারেক রহমানের সভাপতিত্বে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি সভা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে প্রায় পাঁচ ঘণ্টাব্যাপী সভা হয়। সেখানে জুলাই সনদ বা সংস্কার প্রস্তাব বাস্তবায়ন নিয়ে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে করণীয় নিয়েও আলোচনা হয়। পরে স্থায়ী কমিটির সদস্যদের নিয়ে মির্জা ফখরুল ইসলাম সম্ভাব্য প্রার্থীদের নাম ঘোষণা করেন। এ সময় বিএনপির বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ও সহসাংগঠনিক সম্পাদকেরাও উপস্থিত ছিলেন।
এবারের প্রার্থী তালিকায় রয়েছেন বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল আউয়াল মিন্টু। তাঁকে ফেনী-৩ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে।
আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রথম আলোকে বলেন, ‘জীবনে প্রথম সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হচ্ছি। দল আমার ওপর আস্থা রেখেছে, সে আস্থা রাখার জন্য ধন্যবাদ। আমি আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) ম্যাডামের (খালেদা জিয়া) সঙ্গে দেখা করব, সালাম জানাব।’
যে কারণে ঢাকার সাতটি আসন ফাঁকাঢাকার ২০টি আসনের মধ্যে ১৩টিতে প্রার্থী ঘোষণা করা হয়েছে। বাকি সাতটি আসন ফাঁকা রাখা হয়েছে। নেতা-কর্মীরা বলছেন, ঢাকায় প্রার্থিতা নিয়ে মারাত্মক পর্যায়ে অভ্যন্তরীণ কোন্দল নেই। তাঁদের ধারণা, নির্বাচনী সমঝোতার জন্য আসনগুলোতে প্রার্থিতা স্থগিত রাখা হয়েছে।
বিএনপি সূত্রে জানা গেছে, সাতটি আসনের মধ্যে জাতীয় নাগরিক পাটির (এনসিপি) সঙ্গে সমঝোতা হলে তাদের জন্য অন্তত তিনটি আসন ছাড় দেওয়া হতে পারে। এ তালিকায় গণতন্ত্র মঞ্চ, বিজেপি, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসের নামও আছে।
তবে এনসিপির নেতারা যেসব আসনে নির্বাচন করতে চান বলে আলোচনা আছে, সে আসনগুলোর একটি (ঢাকা-৯) ছাড়া বাকিগুলোতে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম (ঢাকা-১১), সদস্যসচিব আখতার হোসেন (রংপুর-৪), জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্যসচিব তাসনিম জারা (ঢাকা-৯), দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ (কুমিল্লা-৪), উত্তরাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম (পঞ্চগড়-১) ও জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক আবদুল হান্নান মাসউদের (নোয়াখালী-৬) স্ব স্ব আসনে তাঁদের কমবেশি তৎপরতা আছে।
ঢাকা-৯ আসন স্থগিত রাখা হলেও সেটা কার জন্য, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি। তবে সেখানে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবীব উন নবী খানকে (সোহেল) প্রার্থী করা হতে পারে বলে দলে আলোচনা আছে।
ঢাকা-১৪: মায়ের ডাক-এর সানজিদাঢাকা-১৪ আসনে এবার প্রার্থী তালিকা থেকে বাদ পড়লেন এস এ খালেকের ছেলে এস এ সিদ্দিক (সাজু)। সেখানে গুম হওয়া ব্যক্তিদের স্বজনদের ব্যক্তিদের সংগঠন ‘মায়ের ডাক’-এর সংগঠক সানজিদা ইসলামকে (তুলি) প্রার্থী মনোনীত করেছে বিএনপি। এই আসনে ইতিমধ্যে জামায়াত প্রার্থী ঘোষণা করেছে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে গুমের শিকার মীর আহমদ বিন কাসেমকে (আরমান)। তিনি আট বছর গুম ছিলেন। গত বছরের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনার পতনের পর গোপন বন্দিশালা ‘আয়নাঘর’ থেকে মুক্তি পান।
সরকারের ঘোষণা অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথমার্ধে জাতীয় সংসদ নির্বাচন হওয়ার কথা। ডিসেম্বরের শুরুর দিকে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হবে বলে নির্বাচন কমিশনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে।
বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকেই বিএনপি জাতীয় নির্বাচনের দাবি জানিয়ে আসছে। এ লক্ষ্যে দলটি অভ্যন্তরীণ জরিপসহ সাংগঠনিক উপায়ে প্রার্থী বাছাই সম্পন্ন করেছে। সোমবার আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁদের নাম প্রকাশ করে নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করল বিএনপি।
এ বিষয়ে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশের মানুষ বিগত ১৫-২০ বছর ভোট দিতে পারেনি। এখন জাতি উৎসাহিত হচ্ছে ভোটের কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে। তিনি বলেন, উৎসবমুখর পরিবেশে ভোট দিতে মানুষের যে আকাঙ্ক্ষা, সেটি পূরণ করার লক্ষ্যে বিএনপি প্রার্থী মনোনয়ন ঘোষণা করে একটা বড় পদক্ষেপ নিল। ইতিমধ্যে অনেকে মাঠে চলে গেছেন, এ ঘোষণার পর বাকিরাও মাঠে যাবেন। এর মাধ্যমে ভোটের একটা উৎসবমুখর পরিবেশ তৈরি হবে।
১০ নারী প্রার্থীঘোষিত ২৩৭ আসনের প্রার্থী তালিকায় নারী রয়েছেন দশজন। এর মধ্যে অন্যতম বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া। বাকিরা হলেন সিলেট-২ আসনে তাহসিনা রুশদীর, ফরিদপুর-২ আসনে শামা ওবায়েদ ইসলাম, ফরিদপুর-৩ আসনে নায়াব ইউসুফ আহমেদ, মানিকগঞ্জ-৩ আসনে আফরোজা খান রিতা, শেরপুর-১ আসনে সানসিলা জেবরিন, ঝালকাঠি-২ আসনে ইসরাত সুলতানা ইলেন ভুট্টো, যশোর–২ আসনে সাবিরা সুলতানা, ঢাকা-১৪ আসনে সানজিদা ইসলাম ও নাটোর-১ আসনে ফারজানা শারমিন।
মনোনয়ন না পেয়ে দুই মহাসড়ক অবরোধমাদারীপুর-১ আসনে বিএনপি প্রার্থী ঘোষণা করে কামাল জামান মোল্লাকে। এর প্রতিবাদে আরেক মনোনয়নপ্রত্যাশী সাজ্জাদ হোসেন লাভলু সিদ্দিকীর অনুসারীরা রাত আটটার দিকে ঢাকা-ভাঙ্গা এক্সপ্রেসওয়ে অবরোধ করে টায়ার জ্বালিয়ে বিক্ষোভ করেন।
চট্টগ্রাম-৪ (সীতাকুণ্ড) আসনে বিএনপির সাবেক যুগ্ম মহাসচিব আসলাম চৌধুরীকে মনোনয়ন না দেওয়ায় তাঁর অনুসারীরা সন্ধ্যায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে অবরোধ করে বিক্ষোভ করেন।