শেরেবাংলা: বাঙালির রাজনীতির বাতিঘর
Published: 27th, April 2025 GMT
শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক এ দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের জীবনমান উন্নয়নের জন্য সারা জীবন কাজ করে গেছেন। তিনি অসম্ভব মেধাবী একজন মানুষ ছিলেন। তাঁর জন্ম ঝালকাঠীর রাজাপুর থানার সাতুড়িয়া গ্রামে ও আদি পৈতৃক নিবাস পটুয়াখালীর বাউফলে। বরিশাল জেলা স্কুল, কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ ও কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করেছেন তিনি।
শেরেবাংলা এ কে ফজলুল হক ১৯১৬ সালে মুসলিম লিগের সভাপতি নির্বাচিত হন। পরের বছর ১৯১৭ সালে তিনি ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সাধারণ সম্পাদক হন। তিনিই ইতিহাসের একমাত্র ব্যক্তি, যিনি একই সময়ে মুসলিম লিগের প্রেসিডেন্ট ও কংগ্রেসের জেনারেল সেক্রেটারি ছিলেন। ১৯১৮-১৯ সালে জওহরলাল নেহেরু ছিলেন ফজলুল হকের ব্যক্তিগত সচিব।
১৯৩৭-এর নির্বাচনে শেরেবাংলা ঘোষণা দিয়েছেন যে নির্বাচনে জিতলে তিনি জমিদারি প্রথা চিরতরে উচ্ছেদ করবেন। তিনি যাতে নির্বাচিত হতে না পারেন, তার জন্য সারা বাংলাদেশ আর কলকাতার জমিদারেরা একত্র হয়ে লাখ লাখ টাকা খরচ করেছেন। কৃষকেরা তাঁদের নেতা শেরেবাংলাকে ভোট দিয়েছেন।
বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার বিল, মুসলিম ছাত্রছাত্রীদের জন্য বাংলার গভর্নরের কাছ থেকে বৃত্তি ও আর্থিক সাহায্য, মুসলিম এডুকেশন ফান্ড গঠন, মাধ্যমিক শিক্ষা বিল উত্থাপন, বরিশালে চাখার কলেজ, আদিনা কলেজ, মুন্সিগঞ্জের হরগঙ্গা কলেজ প্রতিষ্ঠা, নারীশিক্ষা প্রসারের জন্য কলকাতায় লেডি ব্রেবোন কলেজ ও ঢাকায় ইডেন কলেজ প্রতিষ্ঠা, কলকাতার বেকার হোস্টেল (যেখানে থেকে বঙ্গবন্ধু লেখাপড়া করেছেন) কারমাইকেল হোস্টেল এবং ফজলুল হক মুসলিম হল প্রতিষ্ঠাসহ শিক্ষাব্যবস্থার উন্নয়ন ও প্রসারে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন এই নেতা।
অসীম সাহসী এই মানুষ আমাদেরকে সব অন্যায়–অবিচারের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে প্রতিবাদ করার কথা বলেছেন। বাঙালি জাতিকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন অনেক আগেই। তিনি বলতেন, ‘যে জাতি তার বাচ্চাদের বিড়ালের ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ায়, তারা সিংহের সাথে লড়াই করা কীভাবে শিখবে?’১৯৪০ সালের ২২-২৪ মার্চ লাহোরে মুসলিম লীগের সম্মেলন হয়; যেখানে এক ফজলুল হক ঐতিহাসিক লাহোর প্রস্তাব উত্থাপন করেন; যার ভিত্তিতে পরবর্তীকালে পাকিস্তান প্রতিষ্ঠিত হয়। ১৯৫৪ সালের ৭ থেকে ১২ মার্চ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মোট আসন ছিল ৩০৯টি। তার মধ্যে ৭২টি হিন্দু ও তফসিলি। ২৩৭টি মুসলমান আসন। ৯টি বাদে সব আসনে যুক্তফ্রন্ট জয়লাভ করে। ১৯৫৪ সালের ৩ এপ্রিল এ কে ফজলুল হক চার সদস্যবিশিষ্ট মন্ত্রিসভা গঠন করেন। ১৯৫৪ সালের ১৫ মে পূর্ণাঙ্গ যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠন করা হয়।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা, একুশে ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ দিবস’ ও সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা, ভাষাশহীদদের স্মৃতিতে ‘শহীদ মিনার’ নির্মাণ, পয়লা বৈশাখ সরকারি ছুটির দিন ঘোষণা, বর্ধমান হাউসকে বাংলা একাডেমি করা, জমিদারি ব্যবস্থার সম্পূর্ণ উচ্ছেদ তাঁর অবদান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠায় অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন শেরে বাংলা।
তাঁর চারিত্র্য মাহাত্ম্য বর্ণনা করতে গিয়ে আবুল মনসুর আহমদ লিখেছেন, ‘ফজলুল হক মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খাঁটি বাঙালি। সেই সঙ্গে ফজলুল হক মাথার চুল থেকে পায়ের নখ পর্যন্ত খাঁটি মুসলমান। খাঁটি বাঙালিত্বের সাথে খাঁটি মুসলমানত্বের এমন অপূর্ব সমন্বয় আমি আর দেখি নাই। ফজলুল হক আমার ছাত্র বলে বলছি না, সত্য বলেই বলছি। খাঁটি বাঙালিত্ব ও খাঁটি মুসলমানত্বের সমন্বয়ই ভবিষ্যৎ বাঙালির জাতীয়তা’( আমার দেখা দেখা রাজনীতির পঞ্চাশ বছর, পৃষ্ঠা ১৩৫-৩৬)।
একমাত্র রাষ্ট্রপতি হওয়া ছাড়া সব রাষ্ট্রীয় পদে ফজলুল হক অধিষ্ঠিত ছিলেন জীবনের কোনো না কোনো সময়ে। তিনি ছিলেন বাংলার প্রথম প্রধানমন্ত্রী, পূর্ব বাংলার তৃতীয় মুখ্যমন্ত্রী; পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চ্যান্সেলর।
অসীম সাহসী এই মানুষ আমাদেরকে সব অন্যায়–অবিচারের বিরুদ্ধে নির্ভয়ে প্রতিবাদ করার কথা বলেছেন। বাঙালি জাতিকে সতর্ক করে দিয়েছিলেন অনেক আগেই। তিনি বলতেন, ‘যে জাতি তার বাচ্চাদের বিড়ালের ভয় দেখিয়ে ঘুম পাড়ায়, তারা সিংহের সাথে লড়াই করা কীভাবে শিখবে?’
২৭ এপ্রিল, ১৯৬২ এ অবিসংবাদিত নেতা মৃত্যুবরণ করেন। এ মহান নেতার বিদেহী আত্মার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধাঞ্জলি।
সালমা ফাইয়াজ, বিশ্লেষক ও সমাজকর্মী
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ম সলম ন র জন য কলক ত
এছাড়াও পড়ুন:
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ঘেঁষে একের পর এক অঘোষিত ভাগাড়, বর্জ্য ফেলে পরিবেশদূষণ
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের হাড়াতলী এলাকা। কুমিল্লা সদর দক্ষিণ উপজেলার এই এলাকায় গেলে দূর থেকেই নাকে ভেসে আসে উৎকট দুর্গন্ধ। মহাসড়কের ঢাকামুখী লেনের পাশে চোখে পড়ে সারি সারি ময়লার স্তূপ। মহাসড়কের পাশ যেন হয়ে উঠেছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে।
শুধু হাড়াতলী এলাকাই নয়; ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লা অংশের বেশ কয়েকটি স্থানে এমন অঘোষিত ভাগাড় গড়ে উঠেছে। মহাসড়কের প্রায় ১০০ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে রয়েছে কুমিল্লা জেলার অংশ। এর মধ্যে অন্তত ২০টি স্থানে একইভাবে ময়লা ফেলা হচ্ছে। কোথাও কোথাও সিটি করপোরেশন, পৌরসভার মতো স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান মহাসড়কের পাশে তাদের সংগ্রহ করা ময়লা ফেলছে। এতে মহাসড়কের পাশে বিভিন্ন স্থানে আবর্জনার স্তূপ দিন দিন বাড়তে, মহাসড়ক পরিণত হচ্ছে ময়লা-আবর্জনা ফেলার ভাগাড়ে। এভাবে পরিবেশদূষণ বেড়ে যাওয়ার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন পরিবেশবাদীরা।
বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) কুমিল্লার সভাপতি মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি প্রথম আলোকে বলেন, এভাবে বর্জ্য ফেলার কারণে পরিবেশ মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে। বর্জ্য ব্যবস্থাপনা যদি সঠিকভাবে করতে না পারে, তাহলে সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের কাজটা কী? মানুষ তো ট্যাক্স দেয় বর্জ্য ব্যবস্থাপনার জন্য। এভাবে ময়লা-আবর্জনা ফেলা একধরনের অপরাধও। জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পরিবেশ অধিদপ্তরসহ সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে এসব বিষয়ে কঠোর হওয়া দরকার।
হাড়াতলী এলাকার বাসিন্দারা বলছেন, প্রায় দুই বছর আগে স্থানটিতে ময়লা ফেলা শুরু করে কুমিল্লা সিটি করপোরেশন। এরপর সেটি ধীরে ধীরে পরিণত হয় ভাগাড়ে। দিন যত গেছে, ময়লা ফেলার জায়গাটির আকার ততই দীর্ঘ হয়েছে। এ কারণে ওই স্থান দিয়ে হেঁটে চলাচল করা বেশ দুষ্কর হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়েছেন আশপাশের বসবাসকারীরা। ভাগাড়ের আশপাশে অন্তত তিনটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। সেগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও ময়লার দুর্গন্ধে নাকাল।
এভাবে পরিবেশদূষণ বন্ধে আমরা দীর্ঘদিন ধরে সংশ্লিষ্টদের সতর্ক করছি। তবে এ বিষয়ে মূল দায়িত্বটা পালন করতে হবে সংশ্লিষ্ট সিটি করপোরেশন, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদকে।মোসাব্বের হোসেন মোহাম্মদ রাজীব, উপপরিচালক, পরিবেশ অধিদপ্তর কুমিল্লাস্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, ‘ময়লা ফেলতে আমরা বারবার বাধা দিয়েছি, কিন্তু তাতে কোনো কাজ হয়নি। সিটি করপোরেশন সবুজে ঘেরা এলাকাটির বারোটা বাজিয়ে দিয়েছে। এখনো প্রতিদিন ময়লা বাড়ছে। সিটি করপোরেশন বলে, তারা নাকি এখন ময়লা ফেলে না। তাহলে আমাদের প্রশ্ন, ময়লা কারা ফেলছে?’
স্থানীয় একটি প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী তাহমিনা আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, শ্রেণিকক্ষে বসা যায় না দুর্গন্ধের জন্য। একটু বাতাসেই নাকে ভেসে আসে ময়লার দুর্গন্ধ। কলেজে প্রবেশের সময় নাক চেপে ধরে আসতে হয়। এ ছাড়া পরিবেশও মারাত্মকভাবে দূষিত হচ্ছে।
জানতে চাইলে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা মো. আলমগীর হোসেন প্রথম আলোকে বলেন, হাড়াতলীতে তিন মাস ধরে তাঁরা আবর্জনা ফেলছেন না। সিটি করপোরেশনের ফেলা ময়লাগুলো ভেকু দিয়ে সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। এখন রাতের আঁধারে আশপাশের লোকজন এবং বিভিন্ন হোটেল-রেস্তোরাঁসহ ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান মহাসড়কের পাশে ময়লা ফেলছে। যারা ময়লা ফেলছে, তাদের বিরুদ্ধে প্রশাসনের ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুমিল্লার চৌদ্দগ্রাম পৌরসভার প্রবেশমুখ বালুজুড়ি এলাকায় ময়লার ভাগাড়