বর্তমানে নারীর অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে ভীতিকর পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা চলছে। নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ ও ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্প্রতি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিরুদ্ধে নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠী সোচ্চার হয়ে উঠেছে। তবে সমাজ ও নারী আন্দোলন এই অপতৎপরতাকে প্রতিরোধ করবে। সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।

আজ সোমবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে এই ক্ষোভ প্রকাশ করে। সংগঠনের নেতারা বলেন, সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব। নারীর প্রতি বৈষম্য-নির্যাতন দূর করার পক্ষে সমাজের বড় একটি অংশ। তারা চুপ থাকবে না।

রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘সাম্প্রতিক সময়ে নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বক্তব্য’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে বলা হয়, নারীর পোশাক, সাজসজ্জা, চলাফেরা নিয়ে প্রকাশ্যে অপমান করা হচ্ছে। গণপরিসরে নারীকে হেনস্তা করা হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। নারীর অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে ভীতিকর পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা করা হচ্ছে। নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রতিকৃতিতে কালি লেপন, তাঁর নামে করা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের জন্য একটি পক্ষ আন্দোলন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মাত্রা বেড়ে চলেছে। ১৫টি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুসারে, এ বছরের শুধু মার্চ মাসে ৪৪২ জন নারী ও কন্যা ধর্ষণ, হত্যা, নিপীড়ন, আত্মহত্যাসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে।

মূল বক্তব্যে আরও বলা হয়, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রতিবেদনে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় পাঁচ দশকের নারী আন্দোলনের অবাস্তবায়িত মূল দাবিগুলোর প্রতিফলন ঘটেছে। সুপারিশ পেশের সঙ্গে সঙ্গে একটি গোষ্ঠী এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করেছে। মহিলা পরিষদ আশা করে, এই অপতৎপরতা ও অপকৌশলের বিরুদ্ধে নারীর মানবাধিকার রক্ষায় সরকার, সব রাজনৈতিক দল ও সমাজ এগিয়ে আসবে। নারীবিদ্বেষী প্রচার বন্ধ, নারী সহিংসতা ও মব সহিংসতার বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়াসহ ৭ দফা সুপারিশ করা হয়।

সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘নারীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অবরুদ্ধ রাখার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অগ্রহণযোগ্য। নারীবিষয়ক কমিশনের সুপারিশকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলবে বলেছে একটি গোষ্ঠী। কে কাকে ছুড়ে ফেলবে, সেটা আমরা দেখব। সমতাবিষয়ক সব সুপারিশ সরকারকে বাস্তবায়ন করতে হবে। পরবর্তী সময়ে যে রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করবে, তাদেরও ২০৩০ সাল পর্যন্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুসারে নারীর অগ্রগতির জন্য কাজ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, এ দেশের জনগণের ওপর নারী সংগঠনগুলোর আস্থা আছে। সমাজের একটি পক্ষ ও গণমাধ্যম নারী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দিয়েছে, নারী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছে। নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠীর অপতৎপরতাকে প্রতিরোধ করবে সমাজ ও নারী আন্দোলন।

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, আশির দশক থেকে মহিলা পরিষদ অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সম্পত্তি, উত্তরাধিকার, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদে নারী-পুরুষকে সমতা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। দত্তক আইনে সমতা চেয়েছে। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদের (সিডো) দুটি ধারার ওপর বাংলাদেশ সরকারের সংরক্ষণ প্রত্যাহার চেয়েছে। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশে এসব দাবির প্রতিফলন রয়েছে। তবে অতীতেও জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠীর আপত্তি ছিল। এবার কমিশনের সুপারিশের বিরুদ্ধেও তাদের সোচ্চার হতে দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব। বিভিন্ন মতবাদ থাকবেই। রাষ্ট্র পরিচালনায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের উচিত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও মাসুদা রেহানা বেগম। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া বেগম শান্তি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ন র ব ষয়ক র জন ত ক স গঠন র ব ষয়ক স সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

পরিবেশ রক্ষায় ‘বীজ বোমা’

পরিবেশ রক্ষায় অভিনব এক উদ্যোগ নিয়েছেন টাঙ্গাইলের তরুণ পরিবেশকর্মী ও সংগঠক মুঈদ হাসান তড়িৎ। সামাজিক সংগঠন ‘যুবদের জন্য ফাউন্ডেশন’-এর মাধ্যমে এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করছেন তিনি। ‘বীজ বোমা’ নামের এক বিশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বৃক্ষরোপণের নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছেন তড়িৎ। 

সাধারণত মাটি দিয়ে ছোট বলের আকারে তৈরি করা হয় ‘বীজ বোমা’। এর ভেতরে থাকে বীজ, সার ও পুষ্টিকর উপাদান। এগুলো যেকোনো উন্মুক্ত স্থানে ছুড়ে দিলেই বৃষ্টির পর তা থেকে গাছ জন্ম নিতে পারে।

মুঈদ হাসান তড়িৎ বলেছেন, “আমাদের চারপাশে অনেক অনাবাদি জমি পড়ে আছে। এই জমিগুলোতে যদি আমরা সহজ পদ্ধতিতে গাছ লাগাতে পারি, তাহলে দ্রুত সবুজায়ন সম্ভব। সে ভাবনা থেকেই এই ‘বীজ বোমা’। যুবদের জন্য ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে গ্রামে গ্রামে বীজ বোমা ছড়িয়ে দেওয়ার পরিকল্পনা আছে।”

এ উদ্যোগের মাধ্যমে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীদেরও পরিবেশ বিষয়ে সচেতন করার সুযোগ তৈরি হচ্ছে। তারা একত্রিত হয়ে শহরের নানা স্থানে বীজ বোমা ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে যেমন গাছ বাড়ছে, তেমনই পরিবেশ সম্পর্কে তরুণদের সচেতনতাও তৈরি হচ্ছে।

পরিবেশবিদ ও সুশীলসমাজের সদস্যরা এ উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। পরিবেশকর্মী ডা. মুজিব রহমান বলেছেন, “কম খরচে ও সহজ উপায়ে সবুজায়নের কার্যকর পদ্ধতি বীজ বোমা। যদি সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো এ উদ্যোগে সহায়তা করে, তাহলে পরিবেশের ভারসাম্য ফিরিয়ে আনা সম্ভব।”

এছাড়া, বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে মাত্র ১০ টাকায় ফলজ, বনজ ও ওষুধি গাছ বিক্রির উদ্যোগ নিয়েছেন তড়িৎ ও তার সংগঠন। শতাধিক মানুষ পছন্দের গাছ মাত্র ১০ টাকায় ক্রয় করেছেন এ উদ্যোগ থেকে। 

তড়িতের এ উদ্যোগ ইতোমধ্যে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে। অনেকে প্রশংসা করছেন এই অভিনব চিন্তার এবং একে আরো বড় পরিসরে ছড়িয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

পরিবেশ রক্ষায় এক পা সামনে এগিয়েছে তড়িতের ‘বীজ বোমা’। এখন সবার এগিয়ে আসার সময়।

ঢাকা/কাওছার/রফিক

সম্পর্কিত নিবন্ধ