নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠীর অপতৎপরতা প্রতিরোধ করা হবে: মহিলা পরিষদ
Published: 28th, April 2025 GMT
বর্তমানে নারীর অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে ভীতিকর পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা চলছে। নারীর প্রতি বিদ্বেষমূলক আচরণ ও ভাষা ব্যবহৃত হচ্ছে। সম্প্রতি নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশের বিরুদ্ধে নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠী সোচ্চার হয়ে উঠেছে। তবে সমাজ ও নারী আন্দোলন এই অপতৎপরতাকে প্রতিরোধ করবে। সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে।
আজ সোমবার বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ সংবাদ সম্মেলন করে এই ক্ষোভ প্রকাশ করে। সংগঠনের নেতারা বলেন, সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব। নারীর প্রতি বৈষম্য-নির্যাতন দূর করার পক্ষে সমাজের বড় একটি অংশ। তারা চুপ থাকবে না।
রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে ‘সাম্প্রতিক সময়ে নারীর মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের বক্তব্য’ শিরোনামে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মূল বক্তব্যে বলা হয়, নারীর পোশাক, সাজসজ্জা, চলাফেরা নিয়ে প্রকাশ্যে অপমান করা হচ্ছে। গণপরিসরে নারীকে হেনস্তা করা হচ্ছে, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘৃণা ছড়ানো হচ্ছে। নারীর অগ্রগতিকে বাধাগ্রস্ত করতে ভীতিকর পরিবেশ তৈরির অপচেষ্টা করা হচ্ছে। নারী জাগরণের অগ্রদূত রোকেয়া সাখাওয়াত হোসেনের প্রতিকৃতিতে কালি লেপন, তাঁর নামে করা বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম পরিবর্তনের জন্য একটি পক্ষ আন্দোলন করেছে। সাম্প্রতিক সময়ে নারী ও কন্যার প্রতি সহিংসতার মাত্রা বেড়ে চলেছে। ১৫টি পত্রিকায় প্রকাশিত খবর অনুসারে, এ বছরের শুধু মার্চ মাসে ৪৪২ জন নারী ও কন্যা ধর্ষণ, হত্যা, নিপীড়ন, আত্মহত্যাসহ নানা ধরনের নির্যাতনের শিকার হয়েছে।
মূল বক্তব্যে আরও বলা হয়, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশ প্রতিবেদনে নারী-পুরুষের সমতা প্রতিষ্ঠায় পাঁচ দশকের নারী আন্দোলনের অবাস্তবায়িত মূল দাবিগুলোর প্রতিফলন ঘটেছে। সুপারিশ পেশের সঙ্গে সঙ্গে একটি গোষ্ঠী এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে শুরু করেছে। মহিলা পরিষদ আশা করে, এই অপতৎপরতা ও অপকৌশলের বিরুদ্ধে নারীর মানবাধিকার রক্ষায় সরকার, সব রাজনৈতিক দল ও সমাজ এগিয়ে আসবে। নারীবিদ্বেষী প্রচার বন্ধ, নারী সহিংসতা ও মব সহিংসতার বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়াসহ ৭ দফা সুপারিশ করা হয়।
সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, ‘নারীকে ভয়ভীতি দেখিয়ে অবরুদ্ধ রাখার অপচেষ্টা করা হচ্ছে। এটা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, অগ্রহণযোগ্য। নারীবিষয়ক কমিশনের সুপারিশকে ডাস্টবিনে ছুড়ে ফেলবে বলেছে একটি গোষ্ঠী। কে কাকে ছুড়ে ফেলবে, সেটা আমরা দেখব। সমতাবিষয়ক সব সুপারিশ সরকারকে বাস্তবায়ন করতে হবে। পরবর্তী সময়ে যে রাজনৈতিক দল সরকার গঠন করবে, তাদেরও ২০৩০ সাল পর্যন্ত টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অনুসারে নারীর অগ্রগতির জন্য কাজ করতে হবে।’ তিনি আরও বলেন, এ দেশের জনগণের ওপর নারী সংগঠনগুলোর আস্থা আছে। সমাজের একটি পক্ষ ও গণমাধ্যম নারী আন্দোলনের প্রতি সমর্থন দিয়েছে, নারী আন্দোলনকে এগিয়ে নিয়েছে। নারীবিদ্বেষী গোষ্ঠীর অপতৎপরতাকে প্রতিরোধ করবে সমাজ ও নারী আন্দোলন।
বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু বলেন, আশির দশক থেকে মহিলা পরিষদ অভিন্ন পারিবারিক আইনের মাধ্যমে সম্পত্তি, উত্তরাধিকার, বিবাহ ও বিবাহবিচ্ছেদে নারী-পুরুষকে সমতা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে। দত্তক আইনে সমতা চেয়েছে। নারীর প্রতি সব ধরনের বৈষম্য বিলোপ সনদের (সিডো) দুটি ধারার ওপর বাংলাদেশ সরকারের সংরক্ষণ প্রত্যাহার চেয়েছে। নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের সুপারিশে এসব দাবির প্রতিফলন রয়েছে। তবে অতীতেও জাতীয় নারী উন্নয়ন নীতির বিরুদ্ধে একটি গোষ্ঠীর আপত্তি ছিল। এবার কমিশনের সুপারিশের বিরুদ্ধেও তাদের সোচ্চার হতে দেখা যাচ্ছে। তিনি বলেন, সর্বোচ্চ রাজনৈতিক অঙ্গীকার থাকলে এসব সুপারিশ বাস্তবায়ন সম্ভব। বিভিন্ন মতবাদ থাকবেই। রাষ্ট্র পরিচালনায় যাঁরা রয়েছেন, তাঁদের উচিত সুপারিশগুলো বাস্তবায়ন করা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন সংগঠনের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সীমা মোসলেম ও মাসুদা রেহানা বেগম। মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন সংগঠনের আন্দোলন সম্পাদক রাবেয়া বেগম শান্তি। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সংগঠনের অ্যাডভোকেসি ও নেটওয়ার্কিং পরিচালক জনা গোস্বামী।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ন র ব ষয়ক র জন ত ক স গঠন র ব ষয়ক স সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস
স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।
মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’
সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।
বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
অনাহারে মৃত্যু ১৫৪গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।
গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।
ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।
বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।
আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।
গাজায় স্টিভ উইটকফশুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।
সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’
গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।