নোয়াখালীর সোনাপুর থেকে নোয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়গামী (নোবিপ্রবি) সড়কটি বাংলাবাজার পর্যন্ত চার লেনে উন্নীতকরণ বিষয়ে অংশীজন সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। 

বুধবার (৩০ এপ্রিল) বিকেলে নোবিপ্রবি উপাচার্যের কার্যালয়ে প্রোসয়েল ফাউন্ডেশন কনসালটেন্ট এর আয়োজনে এ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।

নোবিপ্রবি উপাচার্য অধ্যাপক ড.

মুহাম্মদ ইসমাইলের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন নোবিপ্রবি উপ-উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ রেজওয়ানুল হক, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ হানিফ, বিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ মহিনুজ্জামান, রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ তামজিদ হোছাইন চৌধুরী ও নোবিপ্রবি প্রধান প্রকৌশলী মো: জামাল হোসেন।

আরো পড়ুন:

নোবিপ্রবির পুকুরে ছাত্র-ছাত্রীদের গোসলের ছবি ভাইরাল, ব্যবস্থা নেবে প্রশাসন

গ্রীষ্মের ছুটি বাতিল করেছে নোবিপ্রবি

এছাড়াও নোয়াখালী জেলা প্রশাসন, জেলা পরিষদ, নোয়াখালী পৌরসভা, গণপূর্ত অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড, নোয়াখালী পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি, বাখরাবাদ গ্যাস ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড, উপকূলীয় বন বিভাগ, পরিবেশ অধিদপ্তর, নোয়াখালী সদর/সুবর্ণচর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়, নোয়াখালী সদর/সুবর্ণচর উপজেলার সহকারী কমিশনারের (ভূমি) কার্যালয়, বাংলাদেশ রেলওয়ে, সোনাপুর, নোয়াখালী প্রেসক্লাব, সোনাপুর পৌরবাজার কমিটি, সোনাপুর পৌর সুপার মার্কেট পরিচালনা কমিটি এবং প্রোসয়েল ফাউন্ডেশন কনসালট্যান্ট এর কর্মকর্তারা সভায় অংশগ্রহণ করেন।

সভায় উপাচার্য অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইসমাইল বলেন, “এই সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত বিশ্ববিদ্যালয়ের দোতলা বাসগুলো শিক্ষার্থীদের নিয়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে চলাচল করছে। ফলে এ সড়কটি চার লেনে উন্নীত করা অত্যন্ত জরুরি। আমরা যেন এ সড়কের কাজ দ্রুত শুরু করতে পারি, তার জন্য আপনাদের সবার সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন।”

তিনি বলেন, “এই সড়ক চার লেনে উন্নীত করার ক্ষেত্রে নানা প্রতিবন্ধকতা আসতে পারে। এ ক্ষেত্রে আমাদের দিক থেকে যতটুকু সহযোগিতা লাগে, আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা করার চেষ্টা করবো। পাশাপাশি আপনাদের সবার সহযোগিতা একান্তভাবে কামনা করছি।”

সভায় সোনাপুর থেকে নোবিপ্রবি (বাংলাবাজার) সড়কাংশ চার লেনে উন্নীতকরণসহ বাংলাবাজার-সুবর্ণচর উপজেলা হেডকোয়ার্টার সড়ক (জেড-১৪৫১) যথাযথ মানে উন্নয়ন শীর্ষক প্রকল্পের ডিপিপি’র এনভায়রনমেন্টাল ইমপ্যাক্ট অ্যাসেসমেন্ট প্রণয়নে মতামত প্রদান করেন বক্তারা। 

এছাড়া বক্তারা ওই সড়ক চার লেনে উন্নীত করার বিষয়ে একমত পোষণ করেন এবং নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সড়কটি নির্মাণের ক্ষেত্রে কোনো প্রকার গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা বাধাগ্রস্ত হবেনা বলে জানানো হয়।

ঢাকা/ফাহিম/মেহেদী

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম হ ম মদ উপ চ র য ন ব প রব

এছাড়াও পড়ুন:

ঘুঘুডাঙ্গার মনোরম তালসড়ক

অক্টোবরের প্রথম দিকে লম্বা এক ছুটিতে বেড়াতে গেলাম বগুড়া। দেশের উত্তরের জনপদ বরাবরই আমার পছন্দ। মানুষ কম, হালকা বসতি। পথে বা হাটবাজারে ততটা ভিড়ভাট্টা নেই। বাজারে কম দামে টাটকা শাকসবজি মেলে। এসব কেনার চেয়ে দেখেই তুমুল আনন্দ পাই। নিঝুম গ্রামের ভেতর ফসলের মাঠে ছড়িয়ে থাকা বৈচিত্র্য দেখতে দেখতে উদ্দেশ্যহীন ঘোরাঘুরি বেশ উপভোগ করি। যত দূর চোখ যায়Ñ গ্রামের পর গ্রাম। মুঠো মুঠো সবুজের ভেতর এঁকেবেঁকে ছুটে চলা মেঠো পথ মাড়িয়ে আমরা প্রতিদিন দূরে কোথাও হারিয়ে যাই। দিনের মুহূর্তগুলো মানুষের জীবনাচারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে কতটা নিপুণভাবে ক্ষণে ক্ষণে বদলে যেতে পারে,Ñ এসব গ্রামে না এলে তা বোঝার উপায় নেই। কৃষিনির্ভর এই জনপদে প্রতিমুহূর্তের ব্যস্ততা যেন অনিবার্য নিয়তি।

বগুড়ার গ্রামীণ জনপদ ঘুরে, দর্শনীয় স্থানগুলো দেখে মনে হলো যথেষ্ট নয়! চোখের তৃষ্ণা মেটেনি। মনের ক্ষুধাও যায়নি! তখনই মনে পড়ল নওগাঁর ঘুঘুডাঙ্গার বিখ্যাত তালসড়কটির কথা। এত কাছে এসে তালসড়কটি দেখতে যাব না, তা কি হয়? স্থানীয় সাংবাদিক আনোয়ার পারভেজ বললেন, ‘বগুড়া থেকে মাত্র ৩ ঘণ্টারই তো জার্নি। ঘুরে আসুন।’ আমারও মনে হলো, এমন একটি অসাধারণ দৃশ্যের জন্য এই দূরত্ব কিছুই না।

সকালে তুমুল বৃষ্টির শব্দে ঘুম ভাঙল। কিছুক্ষণের মধ্যে আবার থেমেও গেল। গাড়িতে ওঠার সময় স্থলপদ্মের গাছটি চোখে পড়ল। গাছভর্তি ফুলগুলো বৃষ্টির দাপটে একেবারে নেতিয়ে পড়েছে। অথচ বিকেলে ভেবে রেখেছিলাম, সকালে শরতের মধুর আলোয় স্থলপদ্মের ছবি তুলব। তা আর হলো না। দ্রুত বেরিয়ে পড়ি। প্রথমে গেলাম নওগাঁর সাপাহারের কৃষি উদ্যোক্তা সোহেল রানার বাগানে। তাঁকে সঙ্গে নিয়ে আমরা যখন স্বপ্নমণ্ডিত সেই তালসড়কে পৌঁছাই, তখন ঠিক দুপুরবেলা।

কিন্তু দুপুর হলেও দর্শনার্থীদের পদচারণে মুখর তালসড়ক। শুধু বৃহত্তর রাজশাহী নয়, দূরদূরান্ত থেকেও পর্যটকেরা এখানে আসেন। নওগাঁ জেলার নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নে এই তালসড়কের অবস্থান। মূলত ঘুঘুডাঙ্গা-শিবপুর সড়কের দুপাশজুড়ে থাকা বীথিবদ্ধ তালগাছের জন্যই সড়কটি ‘তালসড়ক’ বা ‘তালতলী’ নামে পরিচিত হয়ে উঠেছে। হাজীনগর গ্রামের মজুমদার মোড় থেকে ঘুঘুডাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ২ কিলোমিটার সড়কজুড়ে এই তালসড়কের অবস্থান।

বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের তথ্যমতে, ২০০৮ সাল থেকে বিভিন্ন রাস্তা ও খালপাড়ে ৭২০ কিলোমিটারের বেশি জায়গাজুড়ে লাগানো হয়েছে কয়েক লাখ তালগাছ। তখন বরেন্দ্র অঞ্চল হিসেবে পরিচিত নওগাঁর নিয়ামতপুর, পোরশা, পত্নীতলা ও ধামইরহাট, রাজশাহীর তানোর, গোদাগাড়ী, চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোল, রহনপুর উপজেলার রাস্তার দুপাশে রোপণ করা হয়েছে অনেক তালগাছ। সঠিক রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যার অভাবে অনেক গাছই হারিয়ে গেছে। কোথাও কোথাও বিক্ষিপ্তভাবে বেঁচে আছে কিছু। তবে নওগাঁর নিয়ামতপুর উপজেলার ঘুঘুডাঙ্গার এই গাছগুলো এখনো কালের সাক্ষী হয়ে টিকে আছে। বর্তমানে গাছগুলো ৫০ থেকে ৬০ ফুট উঁচু হওয়ায় রাস্তার দুপাশে শোভাবর্ধন করছে।

একসময় নিয়ামতপুর উপজেলার হাজীনগর ইউনিয়নের ঘুঘুডাঙা-শিবপুর সড়কটি ছিল একটি মেঠো পথ। ২০১২ সালের দিকে সড়কটি পাকা করা হয়। বর্তমানে তালসড়কের দুপাশে দিগন্তবিস্তৃত ফসলের মাঠ থাকায় সড়কটি বেশ আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।

ভাদ্র মাসে তাল পাকার মৌসুমে তালসড়ক ঘিরে উৎসবেরও আয়োজন করা হয়। নানা স্বাদের তালের পিঠা এই উৎসবের প্রধান আকর্ষণ। তবে বেড়াতে আসা পর্যটকদের উদ্বুদ্ধ করার জন্য এখানে মানসম্পন্ন পর্যটনসেবা থাকা প্রয়োজন।

শুধু বরেন্দ্র অঞ্চলই নয়, বৃহত্তর ফরিদপুরের বিভিন্ন স্থানেও প্রচুর পরিমাণে তালগাছ চোখে পড়ে। খেতের আলপথ, বাড়ির সীমানা, খালপাড়, পুকুরপাড় বা পথের ধারে এসব সুদৃশ্য তালগাছ প্রকৃতিতে ভিন্ন এক ব্যঞ্জনা তৈরি করেছে। দেশের বিভিন্ন জনপদে ছড়িয়ে থাকা এসব তালগাছের অর্থনৈতিক সম্ভাবনাও আছে। দক্ষিণ ভারতের বিস্তীর্ণ অঞ্চলে দৃশ্যমান তালগাছের রস থেকে ভালো মানের সুস্বাদু গুড় ও মিছরি তৈরি করা হয়। বাজারে এসব গুড়-মিছরির চাহিদাও ব্যাপক। আমাদের দেশেও এসব গাছ থেকে বাণিজ্যিকভাবে তালের গুড় তৈরি করা সম্ভব। প্রয়োজন যথাযথ উদ্যোগ ও পৃষ্ঠপোষকতার।

 মোকারম হোসেন, প্রকৃতি ও পরিবেশবিষয়ক লেখক

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • ঘুঘুডাঙ্গার মনোরম তালসড়ক
  • চলন্ত অবস্থায় বৈদ্যুতিক গাড়ি চার্জ করতে সক্ষম সড়ক চালু ফ্রান্সে
  • আন্দোলনে রাজধানীতে ‘অনাকাঙ্ক্ষিত’ যানজট, ডিএমপির দুঃখপ্রকাশ
  • বরফ গলে মেরু এলাকায় নতুন বাস্তুতন্ত্রের খোঁজ