আওয়ামী লীগের সব কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে: নাহিদ
Published: 2nd, May 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের নয় মাস পরও আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ দাবিতে রাজপথে নেমে আসতে হচ্ছে, যা দুঃখজনক। এটা আমাদের সামষ্টিক ব্যর্থতা। আওয়ামী লীগকে বিচার ও সংস্কারের জন্যই মানুষ রাস্তায় নেমেছিল। আওয়ামী লীগের বিচার চলাকালেই তাদের সব রাজনৈতিক ও সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে।”
রাজধানীর বায়তুল মোকাররমের দক্ষিণ গেটে শুক্রবার (২ মে) বিকেলে জাতীয় নাগরিক পার্টির সমাবেশে এসব কথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানসহ গত ১৬ বছরের সব হত্যাকাণ্ডের বিচার করতে হবে। আওয়ামী লীগ গত ১৬ বছরে সবগুলো আন্দোলনে গণহত্যা চালিয়েছে। আলেমরা মাঠে নেমেছে তাদেরকে হত্যা করেছে, কোটাবিরোধী আন্দোলন, ভ্যাটবিরোধী আন্দোলন, এমনকি নিরাপদ সড়কের আন্দোলনেও হত্যাকাণ্ড চালিয়েছে।”
আরো পড়ুন:
তিনি বলেন, “বাংলাদেশের জনগণ ফ্যাসিবাদ থেকে মুক্তি পেতে ছাত্রদের নেতৃত্বে আন্দোলনে নেমেছিল। আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবিতে দেশের প্রতিটি পাড়ায়, মহল্লায় মঞ্চ তৈরি হবে। এ দাবিতে এনসিপির সদস্যরা দেশের প্রতিটি গ্রামে যাবে।”
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, “আওয়ামী লীগ কোনো রাজনীতির দল নয়, এটি সন্ত্রাসী সংগঠনে পরিণত হয়েছে। আওয়ামী লীগের নেতাদের গ্রেপ্তার করে যারা জামিনে মুক্তি দিচ্ছে, মামলা বাণিজ্য করছে, তাদেরকেও আমরা সতর্ক করে দিতে চাই।”
নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে এই নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। অথচ এই নির্বাচন কমিশন আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বাতিলের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি, আওয়ামী লীগের প্রার্থীদের বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। আপনাদেরকে সতর্ক করে বলতে চাই, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করতে হবে, নৌকা মার্কাকে ব্যান করতে হবে। আর আওয়ামী লীগের বিচার চলাকালে তাদের সব রাজনৈতিক কর্মকাণ্ড এবং সাংগঠনিক কর্মকাণ্ড নিষিদ্ধ করতে হবে।”
সমাবেশে এনসিপির সিনিয়র যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন বলেন, “অন্তর্বর্তী সরকারে কাছে দুটি বিষয় চেয়েছি। বিচার আর সংস্কার। এ দুটো ছাড়া নির্বাচন হতে দেওয়া হবে না। শহীদ পরিবারগুলো বলছে, বিচার আর সংস্কার ছাড়া মাঠ ছাড়া যাবে না। আমরাও জুলাইয়ের মতো মাঠে থাকবে।”
সমাবেশে আব্দুল হান্নান মাসুদ বলেন, “৮ মাস পরও আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের জন্য রাজপথে দাঁড়াতে হলো। শেখ মুজিব গণহত্যা চালিয়েছে। দুর্ভিক্ষ হয়েছে। ১৯৯৬ সালে হাসিনা পট্টি বেধে ভোট চেয়েছে। পাস করে আলেম ওলামাদের ওপর নির্যাতন শুরু করে। রাজনৈতিক কারণে আলেম ওলামাদের হত্যা করেছে। ঘর থেকে তুলে নেওয়া হতো আওয়ামী লীগ আমলে, পরে লাশ পাওয়া যেতো। আওয়ামী লীগ রাজনীতি করবে কিনা, এ সিদ্ধান্ত প্রধান উপদেষ্টার নিতে পারবে না, সিদ্ধান্ত নেবে শহীদ পরিবার। আহতদের পরিবার। রাজনৈতিক দলগুলোকে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের বিষয়ে অবস্থান স্পষ্ট করতে হবে।”
জুলাই শহীদ মুগ্ধের ভাই সিগ্ধ বলেন, “আপনারা কি আওয়ামী লীগকে ফেরত চান? গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতা রায় দিয়েছে আওয়ামী লীগের ফিরে না আসার। যারা শহীদ হয়েছেন, পঙ্গুত্ববরণ করেছে তারা সিদ্ধান্ত নেবে আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধের বিষয়।”
এনসিপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম সদস্য সচিব তাসনিম জারা বলেন, “আমরা আজ সবাই একত্রিত হয়েছি আওয়ামী লীগের বিচারের দাবিতে। যে দল বিগত বছরগুলোতে হাজার হাজার মানুষকে গুম করেছে, খুন করেছে-কোনো কন্যা জানে না, তার পিতা এখনো বেঁচে আছেন না মারা গেছেন। রাস্তা থেকে তুলে নিয়ে গেছে, এখনো জানে না পিতা কোথায়। জুলাই-আগস্টে কয়েকদিনের ব্যবধানে হাজার হাজার মানুষকে নির্মমভাবে আহত করেছে, পঙ্গু করেছে, অন্ধ করেছে। সারা জীবনের জন্য তারা কর্মক্ষমতা হারিয়েছে—সেই দল নাকি নির্বাচন করবে!”
তিনি আরো বলেন, “রক্তের দাগ এখনো শুকায়নি। আমার হাসপাতালের ভাইয়েরা এখনো কাতরাচ্ছে, কোনো বিচার নেই, কোনো অনুসন্ধান নেই-সেই দল নাকি নির্বাচন করবে? আর কত নির্যাতন করলে, আর কত মানুষকে গুম-খুনের শিকার করলে, একটা দলের নিবন্ধন বাতিল হবে? আর কত বাংলাদেশের মানুষকে নিপীড়নের শিকার করলে, একটা দলের নিবন্ধন বাতিল করা হবে?”
যুগ্ম আহ্বায়ক সারোয়ার তুষার বলেন, “আওয়ামী লীগের পুনর্বাসনের দুর্ভিসন্ধি বাস্তবায়ন হবে না। যতদিন ছাত্র-জনতা থাকবে, এনসিপি থাকবে ততদিন আওয়ামী লীগ ফিরে আসতে পারবে না। এদেশে ভারতপন্থি রাজনীতি করতে দেওয়া হবে না। আগামী নির্বাচনে নৌকার ব্যালট থাকতে পারবে না।”
সমাবেশে এনসিপির যুগ্ম মুখ্য সমন্বয়ক তারিকুল ইসলাম বলেন, “গণহত্যাকারী ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধের ব্যাপারে অন্তর্বর্তী সরকার থেকে শুরু করে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আমরা টালবাহানা দেখতে পাচ্ছি, এটা লজ্জাজনক। আমাদের হাইকোর্ট দেখাবেন না। হাইকোর্ট দেখে জুলাই বিপ্লব হয়নি।”
এনসিপির যুগ্ম আহ্বায়ক তাজনূভা জাবীন বলেন, “খুনি হাসিনাকে আমরা বিদায় করেছি। এই বিজয় আমাদের ধরে রাখতে হবে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা চলছে। কিন্তু এই বাংলার মাটিতে আওয়ামী লীগ আর কখনো রাজনীতি করতে পারবে না, ইনশাআল্লাহ।”
যুগ্ম আহ্বায়ক আশরাফ উদ্দীন মাহাদী বলেন, “খুনি হাসিনাকে বাংলাদেশে এনে ফাঁসিতে ঝোলাতে হবে। এছাড়া মৌলিক সংস্কার ছাড়া আবারও একটি নির্বাচনের দিকে যাওয়া হলে শহীদদের রক্তের সঙ্গে গাদ্দারি করা হবে।”
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব হুমায়রা নূর বলেন, “আওয়ামী লীগ দীর্ঘ ১৫ বছর দেশের মানুষকে শোষণ করেছে। দেশের মানুষকে তারা ভোট দিতে দেয়নি। সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি যাতে না হয়, তার জন্য অবশ্যই দুর্নীতিপরায়ন, খুনি-গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে। দিল্লির ‘প্রেসক্রিপশনে’ বাংলাদেশ আর চলবে না।”
এনসিপির যুগ্ম সদস্য সচিব মাহিন সরকার বলেন, “আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা নিয়ে ন্যূনতম টালবাহানা করবেন না। মৌলিক সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন নয়।”
এনসিপির সংগঠক রফিকুল ইসলাম বলেন, “গণহত্যাকারী আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করা অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান অগ্রাধিকার হতে হবে। এটাই হবে এই সরকারের অন্যতম সংস্কার।”
এনসিপির সংগঠক মোস্তাক আহমেদ শিশির বলেন, “এই দেশে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ হবে, সেই সিদ্ধান্ত জনগণ ৫ আগস্টই দিয়ে দিয়েছে। আওয়ামী লীগকে পুনর্বাসনের চেষ্টা করা হলে জুলাই যোদ্ধারা তা প্রতিহত করবে। সংস্কারের আগে কোনো নির্বাচন হবে না।”
পৌনে পাঁচটার দিকে সমাবেশে যোগ দেন এনসিপির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম। মঞ্চে তখন ছিলেন দলের সদস্য সচিব আখতার হোসেন, মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী, জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক সামান্তা শারমিন, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম ও হাসনাত আবদুল্লাহসহ জ্যেষ্ঠ নেতারা।
ঢাকা/সুকান্ত/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন হ দ ইসল ম জ ত য় ন গর ক প র ট এনস প র য গ ম ন হ দ ইসল ম ন ষ দ ধ করত ন ষ দ ধ কর এনস প র স র জন ত ক গণহত য র বল ন র জন য সরক র আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
নারায়ণগঞ্জে আর কোনো মাফিয়ার জন্ম চাই না : নুর
গণঅধিকার পরিষদের সভাপতি নুরুল হক নুর বলেছেন, গণঅধিকার পরিষদের নেতৃত্ব আওয়ামী লীগ দুর্বৃত্তদের সঙ্গে আপস করে নাই, ভবিষ্যতেও কোনো দুর্বৃত্তদের সঙ্গে আপস করবে না। অনতিবিলম্বে নির্বাহী আদেশের মাধ্যমে রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে আওয়ামী লীগের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে।
এখনও রাজপথে শহীদদের রক্ত শুকায়নি, শহীদ ও আহত পরিবারের কান্না থামেনি। ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ ভবিষ্যতে এ দেশে রাজনীতি করার অধিকার রাখে না।
শামীম ওসমানদের আমলে নারায়ণগঞ্জ সন্ত্রাসের নগরী হিসেবে পরিচিত ছিল। সেই শামীম ওসমানরা ফ্যাসিবাদী ক্ষমতার পরিবর্তনের পর পালিয়ে যায়। কিন্তু আবার নব্য শামীম ওসমানরা মাথাচাড়া দিয়ে ওঠার চেষ্টা করে। নারায়ণগঞ্জে আর কোনো মাফিয়ার জন্ম চাই না।
শুক্রবার (২ মে) সন্ধ্যায় নারায়ণগঞ্জের বিসিকে যুব সমাবেশে তিনি এসব কথা বলেন। নারায়ণগঞ্জ জেলা ও মহানগর যুব অধিকার পরিষদের উদ্যোগে এ সমাবেশ হয়।
নুরুল হক নুর বলেন, যে গণঅভ্যুত্থানে দুই সহস্রাধিক মানুষ জীবন দিয়েছে, ৩০ হাজার মানুষ পঙ্গুত্ববরণ করেছে, ইতিহাসের বর্বরতম গণহত্যা ঘটিয়েছে সেই আওয়ামী লীগের নিষিদ্ধকরণ প্রশ্নে ও গণহত্যার বিচারের প্রশ্নে বিগত ৮ মাসে আমরা কোনো অগ্রগতি লক্ষ্য করিনি। অন্তবর্তীকালীন সরকারকে জানিয়ে দিতে চাই, এ বিষয়ে কোনো টালবাহানা চলবে না।
তিনি আরও বলেন, রাজনৈতিক দলগুলো গত ১৬ বছরে লড়াই সংগ্রাম করলেও জনগণ সেভাবে সে লড়াইয়ে শামিল হয়নি। কারণ রাজনৈতিক নেতৃত্বের কর্মকাণ্ডের প্রতি অবিশ্বাস। রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দের প্রতি মানুষের সন্দেহ সংশয় রয়েছে।
তাই গণঅধিকার পরিষদ প্রথাগত রাজনৈতিক দলগুলোর বাইরে রাজনীতিতে পরিবর্তনের অঙ্গীকার নিয়ে মানুষকে রাজনীতিতে ফেরার আহ্বান করেছে। অল্পসময়ের মধ্যে গণঅধিকারের গণজোয়ার তৈরি হয়েছে।
আওয়ামী লীগের পতন থেকে শিক্ষা নেওয়ার আহ্বান জানিয়ে নুর বলেন, ফ্যাসিবাদের পতনের পরেও আমাদের রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের মাঝে পুরোনো বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করছি। বাংলাদেশের কোথাও চাঁদাবাজি, দখলবাজি ও রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নের প্রভাব বিস্তার বন্ধ হয়নি।
এগুলো চললে কেন এতগুলো মানুষ জীবন দিলো, সেই জবাব রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে দিতে হবে। কোনো কোনো দল যদি ভাবেন আমরা একাই একশ, আমরা সব নিয়ন্ত্রণ করবো, আমরাই সব হর্তাকর্তা, তাদের বলবো আওয়ামী লীগের পতন থেকে শিক্ষা নিন।
এসময় গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মো. রাশেদ খান, যুব অধিকার পরিষদের সভাপতি মনজুর মোর্শেদ মামুন ও সাধারণ সম্পাদক নাদিম হাসানসহ বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।