গ্যালারি কায়ায় পটচিত্র প্রদর্শনী শুরু
Published: 2nd, May 2025 GMT
শিল্পী শম্ভু আচার্যের ঐতিহ্যবাহী গাজীর পটচিত্রের একক প্রদর্শনী শুরু হয়েছে উত্তরা গ্যালারি কায়াতে। শুক্রবার বিকেলে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (পূর্ব) মো. নজরুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি ছিলেন ঢাকায় অস্ট্রেলিয়ার হাইকমিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি লারা অ্যাডামস।
প্রদর্শনীতে গত দুই বছরে শম্ভু আচার্যের আঁকা ৩১টি পটচিত্র স্থান পেয়েছে। বাংলার লোকচিত্রকলায় গাজীর পট একটি গুরুত্বপূর্ণ শিল্পমাধ্যম। পটচিত্র অনেক শ্রমসাধ্য। গভীর নিষ্ঠা ও একাগ্রতার প্রয়োজন হয় এই কাজে। ইটের গুঁড়া, তেঁতুলবীজ, বেলের কষ, মাটি, নীল, সিঁদুর, ডিমের কুসুমের মতো অনেক রকম প্রাকৃতিক উপাদান থেকে তৈরি করা রং ব্যবহৃত হয় গাজীর পটচিত্রে। সে কারণে শুধু অঙ্কনই নয়, রং তৈরির দক্ষতাও শিল্পীকে রপ্ত করতে হয়।
পটচিত্রশিল্পী শম্ভু আচার্যের জন্ম মুন্সিগঞ্জের কালিন্দীপাড়া এলাকায়। তিনি পটচিত্রকলার কাজ শিখেছেন তাঁর বাবা বিখ্যাত পটচিত্রশিল্পী সুধীর আচার্যের কাছ থেকে। এই আচার্য পরিবার বংশপরম্পরায় গাজীর পটচিত্রকলার চর্চার ভেতর দিয়ে এই লোকচিত্রকলার ধারাবাহিকতা টিকিয়ে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছেন।
গাজীর পটচিত্রের মাধ্যমে যে গল্প উপস্থাপন করা হয় তা অসাম্প্রদায়িক চেতনাকেও তুলে ধরে। আগের দিনে গ্রামেগঞ্জে লোকশিল্পীরা গাজীর পটচিত্রের চিত্রকর্মগুলোকে অবলম্বন করে গাজী-কালু পীরের কাহিনি উপস্থাপন করতেন।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শম্ভু আচার্য পটচিত্রের ঐতিহ্য তুলে ধরেন। স্বাগত বক্তব্যে গ্যালারি কায়ার পরিচালক শিল্পী গৌতম চক্রবর্তী বলেন, কায়া এ মাসেই ২২তম বছরের কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে। শুরু থেকেই সৃজনশীলতার বিকাশে কাজ করে যাচ্ছেন তাঁরা। এ পর্যন্ত তাঁরা নবীন ও প্রবীণ শিল্পীদের ১৫২টি একক ও দলীয় প্রদর্শনীর আয়োজন করেছেন।
শম্ভু আচার্যের এই পটচিত্রকলা প্রদর্শনীতে তাঁর স্বাক্ষর করা একটি ফোলিও প্রকাশ করা হয়েছে। আগ্রহীরা এটি সংগ্রহ করতে পারেন। প্রদর্শনী চলবে ১৫ মে পর্যন্ত। প্রতিদিন বেলা সাড়া ১১টা থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা পর্যন্ত সবার জন্য খোলা থাকবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গ জ র পটচ ত র পটচ ত র র ত রকল
এছাড়াও পড়ুন:
মাদ্রাসা ছাত্র হত্যার ঘটনায় দুই থানায় পৃথক মামলা, বাদী চিনেনা আসামিদের
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় নারায়ণগঞ্জে মাদরাসা ছাত্র মো. ইব্রাহিম (১৩) হত্যার ঘটনায় দুই থানায় পৃথক পৃথক মামলা হয়েছে। নিহতের বাবা-মাকে মৃত দেখিয়ে কথিত মামা বাদী হয়ে ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এর কিছুদিন পর একই ঘটনায় নিহতের বাবা বাদী মো. হানিফ বাদী হয়ে সোনারগাঁ থানায় মামলা দায়ের করেন। এ নিয়ে বেশ চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।
মামলা সূত্রে জানা গেছে, বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময়ে নিহত ইব্রাহিমের বাবা হানিফ মিয়া ও মা সখিনা বিবি কে মৃত দেখিয়ে তার মামা পরিচয়ে মো. সাইফুল ইসলাম নামে এক ব্যক্তি গত ২২ আগস্ট ফতুল্লা থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এই মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, নারায়ণগঞ্জ-৪ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য একেএম শামীম ওসমান, মানবজমিন পত্রিকার স্টাফ রিপোর্টার ও বেসরকারি টেলিভিশন এনটিভির জেলা প্রতিনিধি বিল্লাল হোসেন রবিন, আইনজীবী কামাল হোসেন সহ ৬১ জন নামীয় আসামি করা হয়। এছাড়া আরও অজ্ঞাত ১৫০-১৬০ জনকে আসামি করা হয়।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ১৯ জুলাই শুক্রবার বিকাল আনুমানিক ৩ টার দিকে কোটা বিরোধী দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ছাত্র-জনতা ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ রোডের পাসপোর্ট অফিসের বিপরীত পাশে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে সমবেত হলে আসামিরা আগ্নেয়াস্ত্র সহ বিভিন্ন দেশিয় অস্ত্র নিয়ে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাথারি গুলি করে ও ককটেল বিস্ফোরণ করে।
এ সময় আমি ও আমার ভাগিনা মোহাম্মদ ইব্রাহিম (১৩) ভয়ে একটি দোকানের আড়ালে আশ্রয় নেই। হঠাৎ আমার ভাগিনা ইব্রাহিমের মাতায় ও বুকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকরা তাকে মৃত ঘোষণা করেন। পরের দিন ২০ জুলাই মাগরিবের নামাজের পূর্বে মাতুআইল কবরস্থানে লাশ দাফন করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মামলার বাদী ও নিহত ইব্রাহিমের কথিত মামা সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘নিহত ইব্রাহিম আমার বাড়ির পাশে কাজ করতো ও মাদ্রসায় পড়াশোনা করতো। তার বাবা-মায়ের সাথে তার সম্পর্ক নেই। আমি একটি সাইডের কন্ট্রাকটারি করি।
সম্প্রতি সে আমার সাথেও ওস্তাকারের সহকারী হিসেবে কাজ করেছে। সেই কাজের সুবাদে সে আমাকে মামা বলে ডাকতো। সে আমার আপন ভাগিনা না। তার হত্যার ঘটনার পর রাজনীতিক মামলা হয়েছে। যারা আন্দোলন করেছে তারা মামলার সবকিছু করেছে, আমি শুধু স্বাক্ষর দিয়েছি। আসামিদের কাউকে আমি চিনি না।
মামলার এজাহারে ইব্রাহিমের বাবা-মাকে মৃত উল্লেখ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ইব্রাহিমের বাবা-মায়ের সংসার অনেক আগে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। কিন্তু মামলায় কেন মৃত লেখেছে তা জানা নেই। তাছাড়া এই মামলায় স্বাক্ষর করা ছাড়া আমি আর কিছু জানিনা। মামলার কাগজে কি লিখছে তা আমি জানিনা।
এই ঘটনার নিহত ইব্রাহিমের বাবা সোনারগাঁ থানায় আরেকটি মামলা করেছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি বলেন, মামলা কী আমারটা আগে হয়েছে নাকি পরে হয়েছে। আপনে ফোন রাখেন ভাই।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ফতুল্লা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. শরিফুল ইসলাম বলেন, ‘এ ঘটনায় সোনারগাঁ থানায়ও মামলা হয়েছে। এক ঘটনায় দুই থানায় মামলা হতে পারেনা। এ কারণে উর্ধ্বতনদের নির্দেশে মামলার কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে।
এদিকে একই ঘটনায় নিহত মো. ইব্রাহিম (১৩) এর বাবা মো. হানিফ (৬৫) বাদী হয়ে গত ২৪ আগস্ট সোনারগাঁ থানায় আরেকটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এ মামলায় ইব্রাহিমের নিহত হওয়ার স্থান ভিন্ন দেখানো হয়েছে।
এই মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, গত ১৯ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনকে পন্ড করার জন্য সোনারগাঁয়ের কাঁচপুর ব্রীজের পূর্ব ঢাল হতে ১৪ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিম দিকে অস্ত্র নিয়ে হামলা করে আওয়ামী লীগ ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মী হামলা চালিয়ে এলোপাথারি গুলি ছুড়ে ও ককটেল বিস্ফোরণ ঘটায়।
বিকেল আনুমানিক সাড়ে ৩ টার দিকে ইব্রাহিমের বাম চোখের ভেতরে দিয়ে মাথায় পেছনের অংশ দিয়ে গুলি বের হয়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসাপাতালে নেওয়া হলে তার মৃত্যু হয়।
মামলার আসামি করা হয়েছে- সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আইনজীবী, রাজনীতিবিদ সহ ২৩৫ জন নামীয় আসামি এবং অজ্ঞাত আরও ৫০-৬০ জনকে আসামি করা হয়।
এ বিষয়ে জানতে সোনারগাঁ থানার মামলার বাদী ও নিহত ইব্রাহিমের বাবা মো. হানিফ কে একাধিকবার ফোন করেও পাওয়া যায়নি।
সোনারগাঁ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মফিজুর রহমান বলেন, এই মামলা আমাদের এখানে ফাইনাল হবে। এই ঘটনার প্রকৃত ঘটনাস্থল যেখানে সেই থানায় মামলা হবে।