দুই ছেলের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগে মা-বাবাকে নাকে খত
Published: 4th, May 2025 GMT
ফেনীর পাঁচগাছিয়ায় দুই ছেলের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগে সালিশে তাদের মা-বাবাকে প্রকাশ্যে নাকে খত দিতে বাধ্য করার ঘটনা ঘটেছে। স্থানীয় বিএনপির এক নেতার তাদের নাকে খত দিতে বাধ্য করেন বলে অভিযোগ উঠেছে। এই ঘটনার একটি ভিডিও সামাজিকমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। গত বৃহস্পতিবার ঘটনাটি ঘটে।
অভিযুক্ত বিএনপি নেতা দেলোয়ার হোসেন দেলু পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন বিএনপির আহ্বায়ক।
পুলিশ বলছে, ভাইরাল ভিডিওর বিষয়ে তারা খোঁজখবর নিচ্ছে, জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
স্থানীয়রা জানান, ভিডিওটি ফেনী সদর উপজেলার পাঁচগাছিয়া ইউনিয়নের মাথিয়ারা গ্রামের খালুর দোকান এলাকার। সেখানকার দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে মুরগি ও কবুতর চুরির অভিযোগে সালিশের আয়োজন করা হয়। এতে আশপাশের মানুষকে জড়ো করেন মুরগি ও কবুতরের মালিক জাহাঙ্গীর আলম। সালিশ বৈঠকে বিএনপি নেতা দেলু ওই দুই ভাইয়ের মা-বাবাকে নাকে খত দেওয়ার নির্দেশ দেন। কয়েকজনকে লাঠি হাতে ওই নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে দেখা যায় ভিডিওতে।
অভিযোগ প্রসঙ্গে দেলোয়ার হোসেন দেলু বলেন, মাথিয়ারা গ্রামের তফাজ্জল মেম্বারের ছেলে জাহাঙ্গীর আলমের বাড়িতে হাঁস, মুরগি চুরির ঘটনা ঘটে। এলাকায় ভাড়াটিয়া একটি পরিবারের দুই ভাইয়ের বিরুদ্ধে চুরির অভিযোগ আসে। পরে স্থানীয়দের অনুরোধে বিষয়টি নিয়ে মাথিয়ারা এলাকার খালুর দোকানের সামনে সালিশ বসে। সালিশে ওই দুই ভাই উপস্থিত হননি। তবে তাদের মা-বাবা উপস্থিত হন। সালিশে অপরাধীদের শাস্তি দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। তখন উপস্থিত মা-বাবা শাস্তি ভোগ করতে রাজি হন।'
এই ঘটনায় মানবাধিকার লঙ্ঘন হয়েছে বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, 'সামাজিক কিছু পরিবেশ-পরিস্থিতিতে অনিচ্ছা সত্ত্বেও কোনো কোনো সময় কাজগুলো করতে হয়।'
ফেনী মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামসুজ্জামান জানান, বিষয়টি তিনি শুনেছেন। এ বিষয়ে খোঁজখবর নিচ্ছেন।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ
এছাড়াও পড়ুন:
কুলাউড়ার প্রতিবন্ধী শিশুটির পাশে প্রশাসন, পেয়েছে ‘সুবর্ণ নাগরিক কার্ড’
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় শারীরিক প্রতিবন্ধী শিশু গোপাল সাঁওতালের পাশে দাঁড়িয়েছে উপজেলা প্রশাসন। গতকাল সোমবার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মহিউদ্দিন শিশুটির বাড়িতে গিয়ে পরিবারের খোঁজখবর নেন। এ সময় গোপালের নামে বরাদ্দকৃত সরকারি প্রতিবন্ধী ভাতার ‘সুবর্ণ নাগরিক কার্ড’ তার স্বজনদের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
সাড়ে তিন বছর বয়সী গোপাল সাঁওতাল উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের মুরইছড়া চা-বাগানের স্কুলটিলা এলাকার বাসিন্দা। সে চা-শ্রমিক অনিল সাঁওতাল ও সনছড়ি সাঁওতাল দম্পতির একমাত্র সন্তান।
উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে জানানো হয়, গতকাল দুপুরে ইউএনও মো. মহিউদ্দিন গোপালের বাড়িতে যান এবং তার স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে শিশুটির শারীরিক সমস্যার বিষয়ে খোঁজখবর নেন। এ সময় উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা প্রণেশ বর্মা, কর্মধা ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হেলাল আহমদ ও ইউপি সদস্য সিলভেস্টার পাঠাং উপস্থিত ছিলেন।
ইউএনও মো. মহিউদ্দিন বলেন, শিশু গোপাল এত দিন প্রতিবন্ধী ভাতার আওতার বাইরে ছিল। ফেসবুক ও বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর বিষয়টি জানা যায়। এরপর গত রোববার স্বজনেরা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে গিয়ে আবেদন করেন। দ্রুততার সঙ্গে ‘সুবর্ণ নাগরিক কার্ড’ তৈরি করে তা হস্তান্তর করা হয়েছে। চলতি মাসের শেষের দিকে শিশুটির পরিবারের বিকাশ নম্বরে এক বছরের ভাতা (প্রতি মাসে ৮৫০ টাকা করে) পাঠানো হবে বলে আশা করা যাচ্ছে।
আরও পড়ুনসন্তান দাঁড়াতে না পারায় গর্তে দাঁড় করিয়ে খাওয়ান মা১৫ জুন ২০২৫ইউএনও আরও বলেন, সমাজসেবা মন্ত্রণালয়ের আওতায় মৌলভীবাজার সদর উপজেলায় প্রতিবন্ধীসেবা ও সাহায্যকেন্দ্র রয়েছে। শিশু গোপালকে নিয়ে স্বজনেরা আগামী বুধবার সেখানে যাবেন। সেখানে চিকিৎসকেরা শিশুটির শারীরিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে প্রয়োজনীয় সহায়তার ব্যবস্থা করবেন। হুইলচেয়ার, অন্যান্য সরঞ্জাম বা ফিজিওথেরাপির প্রয়োজন হলে তা দেওয়া হবে। উপজেলা প্রশাসন এ বিষয়ে সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে।
সম্প্রতি কয়েকজন ভ্রমণকারী মুরইছড়া এলাকায় বেড়াতে গিয়ে শিশু গোপালের কথা জানতে পারেন। জন্মের পর থেকে গোপাল কোমরের নিচের অংশে শক্তি পায় না। চিকিৎসকেরা এ রোগকে ‘সেরেব্রাল পালসি’ হিসেবে শনাক্ত করেন। অর্থসংকটে তার পরিবার চিকিৎসা করাতে পারছিল না। খিদে পেলে শিশুটিকে ঘরের মেঝেতে করা একটি গর্তে দাঁড় করিয়ে খাওয়াতে হতো। এ চিত্র দেখে এক ভ্রমণকারী, স্থানীয় কবি ও শিক্ষক সঞ্জয় দেবনাথ শিশুটির ছবিসহ একটি মানবিক পোস্ট দেন ফেসবুকে। পরে তা ভাইরাল হয়।
এ বিষয়ে ১৫ জুন প্রথম আলো অনলাইনে ‘সন্তান দাঁড়াতে না পারায় গর্তে দাঁড় করিয়ে খাওয়ান মা’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।