রিমান্ডে সাবেক এমপি জাফর, নতুন মামলায় গ্রেপ্তার হাজী সেলিম
Published: 5th, May 2025 GMT
যুবদল নেতা শামীম হত্যা মামলায় কক্সবাজার-১ (চকরিয়া-পেকুয়া) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য (এমপি) জাফর আলমের (৬৯) চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। এদিকে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ঢাকার শাহবাগ থানাধীন এলাকায় মনির নামে এক ব্যক্তি নিহতের মামলায় ঢাকা-৭ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য হাজী সেলিমকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে।
সোমবার (৫ মে) ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট পার্থ ভদ্রের আদালত এ আদেশ দেন।
মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের মতিঝিল জোনাল টিমের সাব-ইন্সপেক্টর ফেরদৌস আলম জাফর আলমের সাত দিন রিমান্ড চেয়ে আবেদন করেন। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা শাহবাগ থানার সাব-ইন্সপেক্টর মাইনুল ইসলাম খান পুলক হাজী সেলিমকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন করেন।
আদালত তাদের উপস্থিতিতে শুনানির দিন সোমবার ধার্য করেন।
এদিন শুনানিকালে তাদের আদালতে হাজির করা হয়। রাষ্ট্রপক্ষে ঢাকা মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর ওমর ফারুক ফারুকী শুনানি করেন। পরে আদালত জাফর আলমের চার দিনের রিমান্ডের আদেশ দেন। আর হাজী সেলিমকে গ্রেপ্তার দেখানোর আবেদন মঞ্জুর করা হয়।
জাফর আলমের মামলার অভিযোগ থেকে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৮ অক্টোবর বিএনপির কেন্দ্রীয় কর্মসূচি অনুযায়ী ঢাকায় মহাসমাবেশ ডাকা হয়। মহাসমাবেশকে পণ্ড করার জন্য একই দিনে আওয়ামী লীগ পাল্টা সমাবেশ ডাকে। বিএনপির মহাসমাবেশে হামলা চালানো হয়। হামলায় যুবদল নেতা শামীম নিহত হন। এ ঘটনায় ২০২৪ সালের ২৪ সেপ্টেম্বর পল্টন থানায় একটি মামলা করা হয়।
হাজী সেলিমের মামলার অভিযোগ থেকে জানা যায়, জুলাই আন্দোলনের শেষ দিন ৫ আগস্ট দুপুরে শাহবাগ থানাধীন মেয়র মোহাম্মদ হানিফ ফ্লাইওভার পলাশী সংলগ্ন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চৌরাস্তায় আন্দোলনকারীরা অবস্থান নেন। এসময় গুলিতে মনির হোসেন নিহত হন। এ ঘটনায় তার স্ত্রী রুজিনা আক্তার গত ১৪ মার্চ সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ৩৫১ জনের নামে আদালতে মামলা করেন।
ঢাকা/এম/ইভা
.উৎস: Risingbd
এছাড়াও পড়ুন:
জুলাইয়ের প্যান্ডোরার বাক্স এবং সহাবস্থান
পি চিদাম্বরম ছিলেন মনমোহন সিংয়ের অর্থমন্ত্রী। হিন্দুত্ববাদের কট্টর সমালোচক; কিন্তু চিদাম্বরমের ‘ডেভেলপমেন্ট’ (উন্নয়ন) ছিল হাসিনার উন্নয়ন দশকের মতো। একদিকে ভারতে বিএমডব্লিউ বাড়ছে, পাঁচতারা হোটেল বাড়ছে, আরেক দিকে কৃষকের আত্মহত্যা বাড়ছে। জিডিপি বাড়ছে, আবার গরিব মানুষের ক্ষুধা আর বিপন্নতাও বাড়ছে। ঝাড়খন্ড আর ছত্তিশগড়ের হাজার হাজার হেক্টর কৃষিজমি কেড়ে নিয়ে উপহার দেওয়া হলো বক্সাইট কোম্পানিগুলোকে। ২০১২ সালে অরুন্ধতী রায় লিখেছিলেন, ‘মিস্টার চিদাম্বরমস ওয়ার’। রায় বললেন, অর্থমন্ত্রী চিদাম্বরম ভারতের কৃষকের বিরুদ্ধে যুদ্ধে নেমেছেন।
তত দিনে বিজেপির উত্থান ঘটেছে। ‘সেক্যুলার’ কংগ্রেসের অত্যাচারে কৃষক অতিষ্ঠ। বিজেপির সামনে সহজ টার্গেট। বিজেপি বলল, সেক্যুলার মানেই হিন্দুর শত্রু, গরিবের শত্রু। আর বিজেপি হলো ভারতের নিম্নবর্গের মানুষের প্রতিনিধি। বিজেপির ভোট বাড়ল।
১০ বছর পর পি চিদাম্বরম বই লিখলেন সেক্যুলারিজম ও গণতন্ত্র নিয়ে। মুসলমান নিধনের বিরুদ্ধে দাঁড়ালেন। কিন্তু কৃষক-মারা চিদাম্বরমের এই সেক্যুলারিজমের ওপর মানুষের ভক্তি উঠে গেছে। তত দিনে ভারতের ভুখানাঙা নিম্নবর্গের পরিচয়হীন মানুষকে পরিচয় দিয়েছে মোদির হিন্দুত্ববাদ। হাড়ভাঙা কোটি কোটি মানুষকে বোঝানো গেছে, হিন্দুর যুদ্ধটা আসলে মাফিয়া সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে নয়, আদানি–আম্বানির রাষ্ট্রীয় সম্পদ দখলের বিরুদ্ধে নয়, যুদ্ধটা আসলে ভারতের মুসলমানদের বিরুদ্ধে, সেক্যুলারদের বিরুদ্ধে।
২.
২০১৯ সালে নেটফ্লিক্সে এল ভারতীয় সিরিজ লেইলা। ২০৪৫ সালের হিন্দুত্ববাদী ভারতের এক শক্তিশালী নরক-কল্পকাহিনি। হিন্দুত্ববাদী রাষ্ট্র আর আর মাফিয়া টেক-কোম্পানিগুলো একসঙ্গে হয়েছে। আর সেকু৵লারদের ধরে ধরে পাঠানো হচ্ছে লেবার ক্যাম্পে। এক ধনী অভিজাত নারী গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাঁকে পাঠানো হয়েছে মন্ত্রীর বাড়িতে বুয়ার কাজ করতে। ঘটনাক্রমে মন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর বন্ধুত্ব হয়। মন্ত্রীকে তিনি বলেন, তাঁর বাড়িতে সুইমিংপুল ছিল, মেয়ে দামি স্কুলে পড়ত। কী করে এমন হয়ে গেল।
মন্ত্রী উত্তর দিলেন, তোমরা যখন ‘আর্ট–কালচার’ করছিলে, ঠিক তখন সমাজের খুব গভীরে এই পরিবর্তনগুলো ঘটে গেছে। তোমাদের আর্ট-কালচার, তোমাদের সেক্যুলার গ্যালারিগুলো জনগণের কাছ থেকে বহু দূরে ছিল। তোমরা কোটি কোটি মানুষের বিপণ্নতা দেখতে চাওনি।
৩.
জুলাইয়ের প্যান্ডোরার বাক্স
জুলাই–আগস্টজুড়ে বিচিত্র রকমের মানুষ রাস্তায় হেঁটেছেন, গুলি খেয়েছেন। জুলাইয়ের পথে পথে মেয়েরা ছিলেন, বৈষম্যবিরোধীরা ছিলেন, বাম-ডান-উত্তর-দক্ষিণ সবাই ছিলেন। কালো বোরকা ছিল, লাল টিপ ছিল। শাপলা ছিল, শাহবাগ ছিল। হিজাব ছিল, শাড়ি ছিল, জিনস ছিল, সাদা জোব্বা ছিল। মামা হালিমের দোকানি ছিলেন, চুল স্পাইক করা টিকটকার ছিলেন। গাজীপুরে ছিলেন কারখানার শ্রমিক, মিরপুরে ছিল যুবদল, যাত্রাবাড়ীতে শিবির কর্মী। মোহাম্মদপুর-বছিলার রাস্তায় নেমে এসেছিলেন চাকরিজীবী, অটোওয়ালা আর শ্রমিক। রামপুরা-উত্তরায় ছিল আমাদের প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়।
আর ছিল আমাদের আম্মুরা। কী ভীষণ মমতায় পথে পথে পানির বোতল নিয়ে তাঁরা দাঁড়িয়ে ছিলেন।
জুলাই সবার ছিল। ছররা গুলির সামনে দাঁড়িয়ে কেউ কাউকে অপর করেনি।
অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের প্যান্ডোরার বাক্সটি খুলে গেল। ক্রোধ, বিদ্বেষ আর বিভক্তির দগদগে ক্ষত। জুলাইয়ের দলগুলো এখন ছিঁড়েখুঁড়ে ফেলতে চায় একে অপরকে। বহু প্রশ্ন, বহু তত্ত্ব, বহু মতবাদ। তত্ত্বের বিপরীতে তত্ত্ব, ক্রিটিক ও পাল্টা ক্রিটিক, পাল্টাপাল্টি ধাওয়া।
এই দেশে কি উগ্র ডানপন্থার উত্থান ঘটেছে? ভারতে যেটা হিন্দুত্ববাদ—মুসলমান ঘৃণা, সেটিই কি ডানপন্থা? ডানপন্থী কারা হন, কেন হন? সমাজ থেকে ছিটকে পড়া মানুষ কি ধর্মকে আঁকড়ে ধরে উগ্রবাদী হন? নাকি এটি রাজনীতির প্লট? নাকি এর পেছনে থাকে টাকার বান্ডিল, ভোটের রাজনীতি, ‘ডিপ স্টেট’?
মাহা মির্জা: শিক্ষক, অর্থনীতি বিভাগ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়