হিলিতে আরনু জুটমিল বন্ধ ঘোষণা, শ্রমিকেরা দিশেহারা
Published: 10th, May 2025 GMT
দিনাজপুরের হিলিতে আরনু জুটমিল আকস্মিকভাবে বন্ধের ঘোষণা দেয়া হয়েছে। এতে সেখানে কর্মরত শ্রমিকেরা বিপাকে পড়েছে। যদিও কর্তৃপক্ষ বলছে, সাময়িকভাবে মিল বন্ধ রাখা হয়েছে।
হিলি পৌরসভার ডাঙ্গাপাড়া এলাকায় অবস্থিত আরনু জুটমিল। মিলটিতে ৪৫০ থেকে ৫০০ নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন। বৃহস্পতিবার (৮ মে) জুটমিলে শ্রমিকরা কাজ শেষে চলে যান। শুক্রবার সাপ্তাহিক ছুটির পর আজ শনিবার (১০ মে) সকালে শ্রমিকেরা মিলে কাজ করতে আসলে গেট বন্ধ পান। গেটে নোটিশ লাগানো আছে। যেখানে লেখা রয়েছে, শনিবার (১০ মে) থেকে আরনু জুটমিল সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। এমন নোটিশ দেখে মিলের শ্রমিকেরা দিশেহারা হয়ে পড়েন।
আর মাত্র কয়েক সপ্তাহ পর পবিত্র ঈদুল আজহা। এমন সময় মিলটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তারা হতাশা প্রকাশ করেন। কয়েকজন পুরুষ শ্রমিক জানান, কেন বন্ধ করলো তারা তা জানেন না। মিল বন্ধ থাকলে শ্রমিকেরা চলবেন কীভাবে? এখানকার উপার্জন দিয়ে তাদের সংসার চলে। মিল বন্ধ থাকলে বউ-বাচ্চা নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে।
আরো পড়ুন:
‘শ্রমিকদের জন্য শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিতে সরকার বদ্ধপরিকর’
সামাজিক-অর্থনেতিক ন্যায় প্রতিষ্ঠায় অন্তর্ভুক্তিমূলক কর্মসংস্থান নীতিতে জোর
তারা আরো বলেন, ‘‘মিল মালিকরা পারিবারিক দ্বন্দ্বে জড়ান, আর খেসারত দিতে হয় আমাদের মতো অসহায়, হতদরিদ্র শ্রমিকদের। আমরা কাজ চাই, পরিবার নিয়ে বাঁচতে চাই।’’
কয়েকজন নারী শ্রমিক বলেন, ‘‘আমরা নারীরা সংসার চালাতে এখানে কাজ করি। কিন্তু মাঝেমধ্যে মিল বন্ধ রাখে। আমরা কাজ না করলে সংসার চালাব কী করে? আর এনজিওর কিস্তি দেবো কীভাবে?’’
শ্রমিক সরদার রহমত আলী বলেন, ‘‘এই আরনু জুটমিলে প্রায় ৫০০ জনের মতো নারী-পুরুষ শ্রমিক কাজ করেন। আজ থেকে মালিক মিল বন্ধের ঘোষণা দিয়েছেন। মিল বন্ধ হলে শ্রমিকেরা খাবে কী, আর চলবে কী করে? আমি চাই, মিল বন্ধ না করে দ্রুত চালু করুক।’’
আরনু জুটমিলের প্রশাসনিক কর্মকর্তা ইসরাইল হোসেন বলেন, ‘‘জুট মিলটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে মালিক পক্ষের সঙ্গে কথা হয়েছে। দু-একদিনের মধ্যে চালু করা হবে।’’
এ বিষয়ে আরনু জুটমিলের চেয়ারম্যান আব্দুল কাইয়ুম আজাদ বলেন, ‘‘মিল থেকে চার গাড়ি মালামাল চুরি হয়ে গেছে। মিলটি সাময়িকভাবে বন্ধ রাখা হয়েছে। পরে বিষয়টি দেখা হবে।’’
ঢাকা/মোসলেম/বকুল
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ম ল বন ধ বন ধ র খ ক জ কর জ টম ল
এছাড়াও পড়ুন:
সাদপন্থীদের ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি
টঙ্গীর বিশ্ব ইজতেমা ময়দানে মাওলানা সাদ কান্ধলভী অনুসারীদের (সাদপন্থী) ইজতেমা আয়োজন করতে না দেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। পাশাপাশি তাঁরা সরকারের প্রস্তাবে রাজি হয়ে আগামী বছরের মার্চ মাসে টঙ্গীতে বিশ্ব ইজতেমা করার কথাও বলেছেন। গত আয়োজনে ইজতেমা মাঠে হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও সাজা নিশ্চিতের দাবিও জানান তাঁরা।
আজ সোমবার জাতীয় প্রেসক্লাবের আব্দুস সালাম হলে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব দাবি জানানো হয়। ‘হযরত ওলামায়ে কেরাম ও দাওয়াত ও তাবলিগের সাথীবৃন্দের’ উদ্যোগে এ সংবাদ সম্মেলন আয়োজন করা হয়।
এর আগে গত রোববার সচিবালয়ে এক ব্রিফিংয়ে ধর্ম উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেন, তাবলিগ জামাতের দুই পক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে নির্বাচনের পর বিশ্ব ইজতেমা আয়োজনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে তাবলিগের শুরায়ে নেজামের সাথী মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘কোরআন ও হাদিসের কথা যারা বিকৃতভাবে উপস্থাপন করে, তাদের ইসলামি দাওয়াতের এই ময়দানে জায়গা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। রাসুল (সা.)-এর তরিকা, সুন্নাহ ও হাদিসের অনুসরণে যারা তাবলিগি কার্যক্রম পরিচালনা করে, কেবল তারাই ইজতেমা করার অধিকার রাখে।’
মুফতি আমানুল হক আরও বলেন, ‘সরকারের ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে জারি করা প্রজ্ঞাপনে সাদপন্থীরা শেষবারের মতো টঙ্গী ময়দানে ইজতেমা করার অনুমতি পেয়েছিল। সেই প্রজ্ঞাপনে তাদের স্বাক্ষরও রয়েছে। সরকার তখনই বুঝেছিল—একই মাঠে দুই পক্ষের ইজতেমা আয়োজন দেশের নিরাপত্তার জন্য হুমকি।’
২০২৪ সালের ডিসেম্বরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে মুফতি আমানুল হক বলেন, ‘গত বছরের ১৮ ডিসেম্বরের রাতে সাদপন্থীদের অনুসারীরা অতর্কিত হামলা চালায়। তাদের বাংলাদেশি নেতা ওয়াসিফ সাহেবের চিঠিতে উল্লেখ ছিল, “যুগটা ব্যতিক্রমী, সবাই প্রস্তুতি নিয়ে আসবে”—এই প্রস্তুতির অংশ হিসেবেই তারা হামলার পরিকল্পনা করেছিল। ঘুমন্ত মুসল্লিদের ওপর টর্চলাইট নিয়ে হামলা চালানো হয়, যা একতরফা সন্ত্রাসী কার্যক্রম ছিল।’ তিনি দাবি করেন, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠকেও প্রমাণিত হয়েছে, ‘এ হামলা একতরফাভাবে সাদপন্থীদের পক্ষ থেকেই হয়েছিল।’
মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী তাঁর লিখিত বক্তব্যে বলেন, কিছু স্বার্থান্বেষী ও ইসলামবিরোধী মহলের প্ররোচনায় তাবলিগ জামাতে বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে। ভারতের মাওলানা সাদ সাহেবের অনুসারীরা বেআইনি পথে টঙ্গী ইজতেমা মাঠ ও কাকরাইল মসজিদে প্রবেশের চেষ্টা করেন। এমনকি তাঁরা সরকারকে বিব্রত করতে ‘যমুনা ভবন ঘেরাও’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় গত বছরের ২৪ ডিসেম্বর বিশৃঙ্খলাকারীদের কাকরাইল মসজিদে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেয় এবং শুরায়ে নেজামপন্থীদের কাকরাইলে দাওয়াত কার্যক্রম চালানোর অনুমতি দেয় বলে জানান মুফতি কেফায়েত উল্লাহ আজহারী। তিনি বলেন, ২০২৫ সালের ৪ ফেব্রুয়ারির ৬৩ নম্বর স্মারকে বলা হয়, সাদপন্থীরা শেষবারের মতো ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে টঙ্গীতে ইজতেমা করতে পারবে, এরপর আর নয়। তারা স্বাক্ষর দিয়ে সেই শর্ত মেনে নিয়েছিল।
শুরায়ে নেজামপন্থীরা বলেন, ‘আমরা সরকারের সিদ্ধান্তকে শ্রদ্ধার সঙ্গে গ্রহণ করছি। আগামী বছরের মার্চে ইজতেমা আয়োজনের জন্য প্রস্তুতি শুরু করা হবে।’
সংবাদ সম্মেলন থেকে সরকারের কাছে ৪ দফা দাবি পেশ করেন তাবলিগ জামাতের শুরায়ে নেজাম (জুবায়েরপন্থী) অনুসারীরা। তাঁদের দাবিগুলো হলো ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহের মধ্যে ইজতেমার তারিখ ঘোষণা, টঙ্গী ইজতেমা মাঠকে অস্থায়ীভাবে ‘কেপিআই’ হিসেবে ঘোষণা, বিদেশি মেহমানদের ভিসা সহজীকরণের পরিপত্র নভেম্বরের শেষ সপ্তাহে প্রকাশ ও গত বছরের ইজতেমা মাঠে সংঘটিত হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেপ্তার ও বিচার।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মাওলানা শাহরিয়ার মাহমুদ, মতিন উদ্দিন আনোয়ার, রুহুল আমিন এবং তাবলিগ জামাত বাংলাদেশের (শুরায়ে নেজাম) মিডিয়া সমন্বয়ক হাবিবুল্লাহ রায়হান।